ডিসেম্ভরের ২ তারিখে Qualcomm এনাউন্স করেছিল নেক্সটজেন ফ্ল্যাগশিপ প্রসেসর Snapdragon 888। এরপর এক মাস না ঘুরতেই জানুয়ারির ৪ তারিখে Qualcomm আরো একটি চিপসেট এনাউন্স করে ফেলে। বেশ কিছু দারণ আপগ্রেড ও চমক নিয়ে হাজির হয় এন্ট্রি লেভেল চিপসেট Snapdragon 480। তো, আজকের আর্টিকেলে নতুন এই চিপসেটের স্পেকস দেখার সাথে সাথে এই লাইনআপের অপর চিপসেট Snapdragon 460 এর সাথে পার্থক্য বের করার চেষ্টা করা হবে এবং লো-এন্ড চিপসেট হলেও আদৌ লো-এন্ড ডিভাইসে এই চিপসেট আসার সম্ভাবনা পর্যালোচনা করা হবে।
সিপিউ
প্রথমেই আমরা যদি কোর এরেঞ্জমেন্ট এর দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যাচ্ছে প্রিডেসরে যেখানে 4+4 ছিল যেখানে Snapdragon 480তে এসে 600-700 সিরিজের সিপিউ এরেঞ্জমেন্ট এর মত 6+2 এরেঞ্জমেন্টও 400 সিরিজে নিয়ে এসেছে, যেটা একটা গুড মুভ বলা চলে। 8টি কোরের মধ্যে ২টি কোর হচ্ছে Cortex A-76 যাদের রান করবে 2.0Ghz ক্লক স্পিডে। অপর ৪টি কোর সচরাচর ইফিশিয়েন্সি কোর বলতে আমরা বিভিন্ন চিপসেটে যে Cortex A-55 কোর গুলো দেখে থাকি তাই এইখানে দেওয়া হয়েছে যাদের ক্লক স্পিড 1.8Ghz করে। পুরো ফ্র্যাবিকেশনটি 8nm প্রসেসে তৈরি যেখানে Snapdragon 460 ছিল 11nm প্রসেসে তৈরি। 400 সিরিজে এই প্রথম কোনো চিপসেট 8nm ফ্র্যাবিকেশন পেল। 8nm প্রসেস ছাড়া বাকি আর্কিটেচার( Kryo 460 ) পুরোটায় মিলে যায় Snapdragon 675 এর সাথে। Snapdragon 460’র Cortex-A73 বাদ দিয়ে Cortex A-76 দেওয়াতে সিংগেল কোর পারফরমেন্স বেশি পাওয়া যাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এমনকি Qualcomm নিজেই দাবি করেছে, এতে আগের চেয়ে দ্বিগুন পারফরমেন্স বেশি পাওয়া যাবে।
জিপিউ
জিপিউ হিসেবে থাকছে Adreno 619 যেটি কিনা আগে ব্যবহার হয়েছিল Snapdragon 750 G 5Gতে। প্রিডেসেসর Snapdragon 460তে দেওয়া হয়েছিল Adreno 610। বরাবরের মতই Qualcomm এইবার তাঁদের কাস্টম জিপিউ নিয়ে বেশি কিছু অর্থাৎ কতগুলো কোর ও কত মেগা হার্টজে রান করবে তার বিস্তারিত জানায় না তবে এটা জানিয়েছে যে, সিপিউ পারফরমেন্স এর মত এইখানেও দ্বিগুন পারফরমেন্স পাওয়া যাবে তার আগের চিপসেট থেকে। নতুন এই চিপসেটে Hexagon 686 DSP, Sensing Hub, scaler ও vector accelerator ইত্যাদির কম্বিনেশনের ফলে আগের চিপসেটের চেয়ে থিওরিটিক্যালি 70% বেশি Ai পারফরমেন্স পাওয়া যাবে বলে জানিয়েছে Qualcomm। ফলে আগের চেয়ে বেশি একুরেট ভয়েস এসিসটেন্ট ও এআর রিলেটেড টাস্কে বেশি পারফরমেন্স পাওয়া যাবে।
র্যাম ও স্টোরেজ
র্যাম সেকশান আগের মতই অর্থাৎ 2x 16-bit LPDDR4X ই রয়েছে। শুধু মাত্র ফ্রিকোয়েন্সি 1866MHz থেকে বাড়িয়ে 2133MHz করা হয়েছে। স্টোরেজ অপশান হিসেবে eMMC 5.1 ও UFS 2.2 থাকছে।
ইমেজ প্রসেসিং
ইমেজ প্রসেসিং এ থাকছে চমক কেননা Qualcomm এর লেটেস্ট ফ্ল্যাগশিপে ইন্ট্রোডিউস করা Triple ISP ফিচারটি এই এন্ট্রি লেভেল চিপসেটেও দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ ৩টি Spectra 345 ISP দেওয়া হয়েছে যারা একইসাথে কাজ করতে পারবে। কিন্তু এন্ট্রি লেভেল চিপসেটে হওয়াতে খুব বেশি একটা হেডরুম পাওয়া যাচ্ছে না অর্থাৎ একই সাথে ৩টি ক্যামেরা সেন্সর ব্যবহার করে 13MP এ ছবি ও 720p এ ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। । হায়েস্ট 64MP সিঙ্গেল ক্যামেরা, ডুয়েল ক্যামেরায় 25MP + 13MP, ট্রিপল ক্যামেরাতে 13MP+13MP+13MP এ ZSL মানে জিরো সাটার ল্যাগে ছবি তোলা যাবে। ভিডিও রেকর্ডিং সেকশানে খুব একটা বেশি ইম্প্রুভমেন্ট নাই অর্থাৎ 4K ভিডিও রেকর্ড করা যাবে না। এখনো হায়েস্ট 1080p@60fps এই রাখা হয়েছে। স্লো-মো ভিডিও রেকর্ড করা যাবে 720 @ 120fps। অন্যদিকে আগের Spectra 340 তে হায়েস্ট 36MP single ও 22MP ডুয়েল ক্যামরায় Zero Shutter Lag এ ছবি তোলা যেত।
অন্যান্য
ডিসপ্লে রেজ্যুলেশন HD+ অর্থাৎ 900 x 1600 ও 2520 x 1080 অর্থাৎ FHD+ সাপোর্ট রয়েছে। মজার ব্যাপার হচ্ছে HD+ ও FHD+ উভয় রেজ্যুলেশনেই সর্বোচ্চ 120Hz রিফ্রেশ রেইট দেওয়া হয়েছে যদিও এটা স্মার্টফোন নির্মাতার ব্যবহার করবে কিনা প্রশ্ন রয়ে যায়। FastConnect 6200 মডিউল ব্যবহার করা হয়েছে যাতে রয়েছে Bluetooth 5.1, Wi-Fi 6, NFC ও Qualcomm’s aptX ও Qualcomm TrueWireless ইত্যাদি। একুরেট পজিশনিং এর জন্য অনেকগুলো স্যাটেলাইট সাপোর্ট রাখা হয়েছে। ফাস্ট চার্জিং সাপোর্ট হিসেবে QuickCharge 4+ দেওয়া হয়েছে যেটি আগে শুধু মাত্র QuickCharge 3 তে সীমাবদ্ধ ছিল। এছাড়া আরো অনেক সিকিউরিটি ফিচারস দেওয়া হয়েছে।
সবশেষে 5G
সবচেয়ে বড় চমক হচ্ছে এই চিপসেট X51-RF 5G মডেম সংযোজন। লাস্ট ইয়ারে Qualcomm 690 এ 5G ইন্ট্রোডিউসের মাধ্যমে মিড বাজেট স্মার্টফোনে গুলোতে 5G সুবিধা উনক্ত করেছিল। এইবার 400 সিরিজে একটি চিপসেটে 5G লো-এন্ড ফোন গুলোতেও 5G এর রাস্তা খুলে দিল। যেখানে Qualcomm 690 এ 5G শুধু sub-6GHz spectrum সাপোর্ট ছিল কিন্তু Snapdragon 480 এ sub-6GHz এর সাথে সাথে mmWave ব্যান্ড দেওয়া হয়েছে অর্থাৎ ট্রু 5G সাপোর্ট দেওয়া হয়েছে। 5G দিয়ে হায়েস্ট 2500 Mbps ডাউনলোড ও 660 Mbps আপলোড স্পিড পাওয়া যাবে। যদিও আমাদের দেশে এখনো 5G নিয়ে সিগনিফিক্যান্ট কোনো আপডেট নাই বললেই চলে।
লো-এন্ড ডিভাইসে এই চিপসেট আসার সম্ভাবনা
400 সিরিজ মূলত এন্ট্রি লেভেল চিপসেটের জন্য পরিচিত হলেও এটি কেমন রেঞ্জের ফোনে ব্যবহার করবে সেটা সম্পূর্ন স্মার্টফোন নির্মাতাদের উপর নির্ভরশীল। প্রিভিয়াস Snapdragon 460 নিয়ে oppo realme oneplus এর কয়েকটি ফোন লঞ্চ হয়েছিল সবার প্রাইস ছিল ১৫০০০ এর উপরে অফিশিয়ালি আনঅফিশিয়ালি আমাদের দেশে। সেইখানে Snapdragon 480 অনেক বেশি আপগ্রেড ও ফিচার দিয়ে ঠাসা তাই Snapdragon 480 দিয়ে একদম এন্ট্রি লেভেল স্মার্টফোন আসার সম্ভবনা কমই মনে হচ্ছে আপত দৃষ্টিতে। কারণ ভাল সিপিউ/জিপিউ ক্যাপালিবিটি, FHD+ রেজ্যুলেশনে 120Hz রিফ্রেশ ফ্রেইট, fully 5G সাপোর্ট এর মত বিষয়গুলোকে হাই লাইট করে মিড-রেঞ্জার ফোন নিয়ে আসার সমূহ সম্ভবনা রয়েছে। ইতিমধ্যে oppo ও vivo Snapdragon 480 নিয়ে oppo A93 ও vivo Y31s চাইনার বাজারে নিয়ে এসেছে যাদের প্রাইস বাংলাদেশি টাকায় কনভার্ট করলে ২০ হাজার থেকে ২৫ হাজারে গিয়ে দাঁড়াচ্ছে। এছাড়া Qualcomm ভেন্ডরদের কাছে কেমন দামে এই চিপসেট সরবারহ করছে এটিও ভুমিকা রাখবে আদৌ আমরা Snapdragon 480 সমৃদ্ধ স্মার্টফোন পাচ্ছি কিনা তার উপর। ভেন্ডরদের মধ্য HMD Global, oppo ও vivo এর পাশাপাশি Oneplus কেও দেখা গিয়েছে তাই আশা করা যাচ্ছে OnePlus Nord লাইন আপে আরো ফোন আসতে যাচ্ছে।