টম্ব রেইডার রিবুট গেমস সিরিজের ৩য় এন্ট্রি Shadow of The Tomb Raider কিছুদিন আগে মুক্তি পেয়েছে। গেমটি টম্ব রেইডার লাভারদের জন্য বেশ আকর্ষণীয় লাগলেও সাধারণ গেমারদের মন জয় করতে পারবে কিনা সেটা সময়ই বলে দিবে। তবে গেমটি আপনি এখনই কিনে খেলবেন নাকি সামনের দিনগুলোতে কোনো ছাড় পেলে তারপরেই কিনবেন এ ব্যাপারে সাহায্য করতে আমি চলে এলাম Shadow of The Tomb Raider গেমটির ব্যাপারে কিছু কথা বলতে। Shadow of The Tomb Raider গেমটির ভালো এবং মন্দ দিকগুলো নিয়ে আমার আজকের এই পোষ্ট। টম্ব রেইডার রিবুট সিরিজের ৩য় গেম এবং ওভারঅল টম রেইডার সিরিজের ২০তম গেম হচ্ছে Shadow of The Tomb Raider । ২০১৫ সালে Rise of the Tomb Raider এর নির্মাণ কাজ শেষ হবার পরেই Shadow of The Tomb Raider গেমটির নির্মাণ কাজ শুরু হয় যা পরবর্তীতে ২০১৮ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত চলে। গেমটি Rise of the Tomb Raider এর ডাইরেক্ট সিকুয়্যাল। তবে আগের দুটি রিবুট গেমসগুলো Crystal Dynamics বানালেও এই Shadow of The Tomb Raider গেমটি নির্মাণ করেছে সিরিজের নতুন গেম নির্মাতা কোম্পানি Eidos Montreal । গ্রাফিক্স, গেম-প্লে এবং স্টোরিলাইন – বর্তমান যুগে ভিডিও গেমের সাফল্যের মূল মন্ত্র হলো এগুলো। আর গ্রাফিক্সের দিক থেকে গেমটি কেমন সেটা আর নতুন করে বলার দরকার নেই। তবে অনান্য বিষয়গুলো কি গেমটি আমাদের উপহার দিতে পারবে? আসুন দেখে নেই Shadow of The Tomb Raider গেমটির ভালো এবং মন্দ দিকগুলো। শুরু করছি মন্দ দিকগুলো দিয়ে:
মন্দদিক (৩): একই ধাঁচের গেমপ্লে
বর্তমানে Shadow of The Tomb Raider এর সবথেকে বেশি সমালোচনা হচ্ছে এর গেমপ্লে কে নিয়ে। নতুন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আগের প্রতিষ্ঠানের চাইতে তেমন নতুন কোনো গেমপ্লে Shadow of The Tomb Raider গেমে যোগ করতে পারেনি। আপনি যদি সিরিজের আগের দুটি গেম (বিশেষ করে Rise) খেলে থাকেন তাহলে গেমপ্লের দিক থেকে বলা যায় যে Shadow of The Tomb Raider গেমটি আপনি ইতিমধ্যেই ৮০% ভাগ খেলেই ফেলেছেন। কারণ সিরিজের আগের দুটি গেমের মতোই Shadow of The Tomb Raider গেমটির গেমপ্লে প্রায় একই ধাঁচের একশন এডভেঞ্চার দিয়ে বানানো হয়েছে। অনেকেই চেয়েছিলো যে সিরিজের এই গেমটিতে আগের গেমসগুলোর থেকে কিছুটা নতুন ধাঁচের গেমপ্লে থাকুক। গেমটির Puzzles, Combat, Stealth, Exploration ইত্যাদি বিষয়গুলো সিরিজের আগের গেমসগুলোর প্রায় সমানই। স্কোয়ার ইনিক্স যদি ভবিষ্যৎতে সিরিজের আরো গেমস নির্মাণের কথা ভেবে থাকে তাহলে তাদের অবশ্যই উচিত গেমপ্লেতে নতুন কিছু আনা।
মন্দদিক (২) : স্টোরিলাইন এবং ক্যারেক্টার তেমন আকষর্ণীয় নয়
পুরো টম্ব রেইডার সিরিজের গেমসগুলোই প্রায় একই রকম, এটা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে ২০১৩ সালের Tomb Raider গেমটি নিয়ে সিরিজটি নতুন করে আলোচনায় চলে আসে। কিন্তু Rise গেমটিতে নির্মাতারা সেটা ধরে রাখতে পারলেও Shadow গেমটিতে স্টোরিলাইন এবং গেমের ক্যারেক্টারগুলো তেমন আকষর্ণীয় হতে পারে নি। পুরো গেমটিই একটি হলিউড এডভেঞ্চার সিনেমার মতোই লাগবে, যেটি সিরিজের আগের ২টি গেমেও লেগেছিলো। তবে আপনারা খেয়াল করলে দেখতে পারবেন যে Shadow of the Tomb Raider গেমটির মার্কেটিংয়ের সময় গেমটির ভিলেন Doctor Dominguez ক্যারেক্টারটিকে বেশ ঘটা করেই ফিচারিং করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে গেমটি খেলার সময় খেলবেন যে মাত্র ২/৩ বারের বেশি তাকে আপনি গেমে কোনো কিছু করতে দেখবেন না। অন্যদিকে গেমটির পটভূমি Lost city of Paititi এর সিটিজেনদেরকেও আপনি গেমে বেশিভাগ সময় উপস্থিত পাবেন না, পুরো গেমটির অধিকাংশ সময়ই আপনাকে লারা ক্রোফটকে নিয়েই ব্যাস্ত থাকতে হবে। গেমটির স্টোরিলাইট ইন্টারেটিং নয় কারণ আপনি গেমটি খেলতে বসলে সহজেই অনুমান করতে পারবেন যে গেমটির কাহিনী কোন দিকে যাচ্ছে, সামনে কে মারা যাবে এবং পরবর্তীতে কাহিনীচক্রে কি ঘটবে তা সহজেই ধারণা করা যায়। তবে গেমটির স্টোরিলাইনে পুরো Tomb Raider সিরিজের প্রথম দিকের গেমসগুলোর কিছু কিছু জিনিস থাকলেও বেসিক্যালি Shadow গেমটির স্টোরিলাইন পুরোপুরিই স্টক বললে ভূল বলা হয় না।
মন্দদিক (১): যথেষ্ট পরিমাণের ডার্ক বিষয় নেই
গেমটির মার্কেটিং ক্যাম্পেইনগুলোতে গেমটিকে টম্ব রেইডার সিরিজের সবথেকে Dark গেম হবে বলে প্রচারণা চালানো হয়েছিলো। কিন্তু বাস্তবে দেখা গেল যে গেমটিতে তেমন যথেষ্ট পরিমাণের Dark উপাদান নেই। কারণ গেমটির কাহিনী বা স্টোরিলাইনের জন্য লারা ক্রফটকে গেমটিতে বেশ ডার্ক মুডেই খেলতে হবে। তবে হতাশার বিষয় হচ্ছে গেমটিতে যথেষ্ট পরিমাণের ডার্ক গেমপ্লে নেই। মার্কেটিংয়ের সময় অনেকেই ভেবেছিলেন গেমটিতে আমরা লারা ক্রফট চরিত্রটিকে বেশ রাফ এন্ড টাফ হিসেবে দেখতে পারো কিন্তু বাস্তবে তা পুরোপুরি ভাবে হয় নি।
ভালোদিক (৫): বিনোদনমূলক সিনেমা স্টাইলের ক্যাম্পেইন
আপনি হার্ডকোর গেমিং টাইপের না হলে গেমটির ক্যাম্পেইন কে বেশ মজার সাথেই উপভোগ করবেন। বিশেষ করে আপনি যদি হলিউড একশন এডভেঞ্চার মুভি পছন্দ করেন তাহলে তো কথাই নেই। গেমটি ভালো গ্রাফিক্স সেটিংস দিয়ে খেলতে পারলে হলিউডের একশন এডভেঞ্চার মুভির থেকে কম “বিনোদন” পাবেন না আপনি। বিশেষ করে আপনি কাছে যদি Nvidia এর 2000 সিরিজের গ্রাফিক্স কার্ড থাকে তাহলে রেয় ট্রেসিং ফিচারটি দিয়ে গেমটি আপনি উপভোগ করতে পারবেন এবং রেয় ট্রেসিং ফিচারটি গেমটির গ্রাফিক্স সেটিংসে এনে দিবে নতুন মাত্রা। তবে অতি সহজ টাইপের ক্যাম্পেইন মিশন অনেকেরই পছন্দ নাও হতে পারে। গেমটিতে ১০ ঘন্টার মতো ক্যাম্পেইন স্টোরিলাইন দেওয়া রয়েছে।
ভালোদিক (৪): অরিজিনাল Tomb Raiding রয়েছে
রিবুট সিরিজের আগের দুটি গেমে অনেকেই অভিযোগ করেছেন যে গেম দুটিতে যথেষ্ট পরিমাণের “Tomb Raiding” ছিলো না। কারণ গেমটির টাইটেলেই বলা রয়েছে Raiding এর কথা। তবে এই গেমটি কিন্তু একটু ব্যতিক্রম। শ্যাডো গেমটিতে সিরিজে অরিজিনাল স্বাদের টম্ব রেইডিং ফিচারগুলো যেমন ল্যারার টম্বগুলোকে এক্সপ্লোর করা, বিভিন্ন পাজলের ধাঁধা এবং গোপন শত্রুর মোকাবেলা ইত্যাদি ক্লাসিক সব ফিচার এই গেমটিতে একটু বেশি পাবেন আপনারা।
ভালোদিক (৩): কমবাট এবং এক্সপ্লোরেশনের সঠিক ভারসাম্য
সিরিজের আগের গেম Rise of the Tomb Raider গেমটি একটু বেশিই “একশন-প্যাক” ধাঁচের গেম হয়ে গিয়েছিলো। মানে সেখানে মারামারির অপশনটি বেশি রাখা হয়েছিলো। যা সিরিজের গেমসগুলোর থেকে একটু আলাদা, এবং এটা নিয়েও অনেক গেমারদের অভিযোগ ছিলো। কিন্তু Shadow of Tomb Raider গেমটিতে এক্সপ্লোরেশন কে সঠিকভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। যেমন একটি মিশনের একটি পয়েন্টে আপনি দুটি পথে যেতে পারবেন, প্রথমটি হচ্ছে ৪/৫ জনের সাথে লড়াই করে এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে ৪/৫ জনের পথকে ঘুরে নিয়ে তাদেরকে বাইপাস করে যেতে পারবেন।
কিন্তু আরেকটি কথা বলতেই হয় যে সিরিজে আপনি Shadow গেমটিতে সবথেকে বেশি কমবাট এর অপশন পাবেন। তবে এটা সম্পূর্ণ আপনার ইচ্ছের উপর নির্ভর করে। গেমটির স্টোরিলাইন স্টেলথ ভাবে খেলবেন নাকি কমবাট মোডে খেলবেন তা আপনিই নির্ধারণ করবেন। এমনটি গেম খেলার মাঝ পথেও Stealth এবং Direct Aciton এর মাঝেও আপনি সুইচিং করতে পারবেন।
ভালোদিক (২): চমৎকার সাউন্ড সিস্টেম এবং ভয়েস এক্টিং
গেমটির একটি মূল “ভালো দিক” হলো গেমটিতে চমৎকার গ্রাফিক্সের পাশাপাশি গেমের মিউজিক এবং ক্যারেক্টারগুলোর ভয়েস এক্টিং বেশ ভালো এবং চমৎকারভাবেই সাজানো হয়েছে। আপনার কাছে যদি ভালো মানের হেডফোন থাকে তাহলে গেমটি হেডফোনে খেলে বেশ মজা পাবেন। বিশেষ করে লারা চরিত্রে Camilla Luddington এর ভয়েস, মিশন এবং মিশনের বাইরে সঠিক সময়ে সঠিক মিউজিক ও পরিবেশের সাউন্ড ইফেক্ট গেমটিতে খুবই চমৎকার ভাবে সাজানো হয়েছে। যেমন একটি উঁচু স্থানে আপনি ক্লাইম্ব করছেন, তখন উঠার সময় পাথরের ছোট টুকরো নিচে পড়ে গেলে এবং এই গড়িয়ে গড়িয়ে পড়ে যাবার শব্দকেও বেশ বাস্তবিক ভাবে গেমে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে যা আসলেই প্রশংসার যোগ্য।
ভালোদিক (১): সাইড মিশনগুলো বেশ মজার
বর্তমান যুগের অনেক AAA (ট্রিপল এ) রেটের ভিডিও গেমেও কিন্তু সাইড মিশনগুলো অধিকাংশ সবই বোরিং হয়ে থাকে। কিন্তু Shadow গেমটিতে তা হচ্ছে না। Shadow of The Tomb Raider গেমটির সাইড মিশনগুলোও স্টোরি মিশনের থেকে কম মজার নয়। গেমটির অধিকাংশ সাইড মিশনগুলো আপনি খেলে মজা পাবেন। গেমটির অধিকাংশ সাইড মিশনগুলো Hub Cities কে ঘিরে বানানো হয়েছে, যেখানে আপনি বা লারাকে সেখানকার মানুষের সাথে মিশে গিয়ে তাদের দেওয়া বিভিন্ন কোয়েস্ট কমপ্লিট করতে পারবেন, তাদের কালচার শিখতে পারবেন ইত্যাদি মজার সব সাইড মিশন গেমটিতে রয়েছে।