Walton AVIAN WS গেমিং পিসি: কেনা উচিত?

পিসি মার্কেটে দুঃসময় চলছে অনেকদিন ধরেই। GPU সহ বেশ কিছু কম্পোনেন্ট এর দাম অস্বাভাবিক বেশি থাকার কারণে বেশিরভাগ মানুষই পিসি বিল্ড করতে পারছেন না।স্টক এর লিমিটেশন ও রয়েছে অনেক কম্পোনেন্টেরই।। এই মুহুর্তে ওয়াল্টন লঞ্চ করেছে তাদের প্রি বিল্ট মিড বাজেট পিসি Avian WS।৬৭ হাজারের এই পিসিতে GTX 1650 থাকায় মানুষের আগ্রহের কেন্দ্রে এখন এই পিসিটি। আজকে আমরা এই পিসিটির সম্পর্কে খুঁটিনাটি জানবো ও আপনাদের জানানোর চেষ্টা করবো এটি কতটুকু ভালো, কতটুকু ভ্যালু ফর মানি ও নেওয়া উচিত হবে কি না।

দামঃ 

প্রথমেই দাম নিয়ে কথা বলে নেওয়া যাক তাহলে পরবর্তী আলোচনা গুলো বুঝতে সুবিধা হবে ও কম্পোনেন্ট সিলেকশন জাজ করতেও সুবিধা হবে। এই পিসিটির রেগুলার প্রাইস ৬৭৭৫০ টাকা কিন্ত Walton Eplaza তে ৬২ হাজারে সেল হচ্ছিল। ওয়াল্টনের তথ্য অনুসারে PCB এর রেফারেন্স দিলেও ৬২ হাজারেই কিনতে পারা যাবে এটি।

Specification of Walton Avian WS

আমরা প্রথম স্পেসিফিকেশনের দিকে নজর দিব ও দেখবো যে দাম অনুসারে পিসিটি কতটুকু ভালো, আরো আলোচনা করবো একটি কাস্টম বিল্ড হলে কি কি জিনিস এখানে পরিবর্তন করা উচিত ছিল বা পরিবর্তন করা যেত, আর বর্তমান বাজারে এই দামে কি পিসি বিল্ড করা সম্ভব সেটিও দেখবো।

প্রসেসরঃRyzen 5 3600

প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে AMD এর গত এক দশকের মধ্যে অন্যতম সফল রিলিজ  Ryzen 5 3600। একটি ৬০-৭০ হাজার রেঞ্জের কাস্টম বিল্ডে Ryzen 5 3600 খুবই সুন্দর,কমন ও justified একটি চয়েস অনেক দিন ধরেই। সুতরাং বলা যেতে পারে যে এই সেকশনে কোনো আপত্তি করার সুযোগ নেই। বর্তমানে Ryzen 5 3600 এর দাম 16500 টাকা (কিছুটা কমবেশি হতে পারে)।  GPU, অন্যন্য কম্পোনেন্ট কি নেওয়া হচ্ছে এবং বিল্ডের উদ্দেশ্যের উপর ভিত্তি করে এই রেঞ্জে i5 10400f/10400/Ryzen 3 3300x/Ryzen 5 3500x ইত্যাদি প্রসেসর গুলোও চয়েসে থাকে কনজিউমারদের। সুতরাং এই সেকশনে Thumbs Up to Walton।

Motherboard: Gigabyte B450M S2H V2

মাদারবোর্ড হিসেবে ওয়াল্টন আমাদের দিচ্ছে Gigabyte এর B450M S2H V2। এটি একটি Micro ATX Form Factor এর বোর্ড। র‍্যাম স্লট রয়েছে দুটি, পর্যাপ্ত SATA3 স্লট সহ ডিসপ্লে আউটপুট, রেগুলার I/O পোর্ট সবই রয়েছে। এই বোর্ডের VRM খুব সলিড না হলেও কাজ চলে যাওয়ার মত।

তবে যেকোনো কাস্টম বিল্ডের ক্ষেত্রেই এই বাজেটরেঞ্জে (টোটাল বাজেট) অন্যন্য অপশনই বেছে নেওয়া যেত।৯০% ইউজারই আরো কিছুটা টাকা বাড়িয়ে অন্যন্য যেসব অপশন রয়েছে যেমন গিগাবাইট এরই B450M DS3H (যেটির র‍্যাম স্লট রয়েছে ৪টা), বা Asrock B450M HDV,MSI B450M PRO-VDH MAX  অথবা বাজেট বেশি থাকলে আরেকটু বাড়িয়ে Mortar Max/Tuf Gaming/Steel Legend এইসব বোর্ডই বেছে নিবেন। হয়তো এই বিল্ডেও Mortar Max/Steel Legend দেওয়া সম্ভব না হলেও অন্তত DS3H/ Asrock HDV, MSI PRO-VDH  দিতে পারতো ওয়াল্টন।

গ্রাফিক্স কার্ডঃGigabyte GTX 1650 4GB GDDR6:

গ্রাফিক্স কার্ড হচ্ছে সেই কম্পোনেন্ট এই পিসির, যা এই মুহুর্তে, এই ঘোর বিপদের সময় এই পিসিটিকে অনন্য করে তুলেছে।। বাজারে যেকোনো কার্ডেরই রয়েছে একদিকে যেমন সংকট, তেমনি পাওয়া গেলেও দাম ২,৩/৪ গুণ বেশি। যা ৯৯% কাস্টোমারের জন্যই অসম্ভব ও এজন্যই পিসি বিল্ড/আপগ্রেড থেমে রয়েছে অগনিত মানুষের।

ওয়াল্টনের ব্যবহার করা GTX 1650 4GB (DDDR6 Edition) কার্ডটির সাধারণ সময়ে দাম ১৪-১৬ হাজার টাকা। কিন্ত বর্তমানে একটি GTX 1650 বিক্রি হচ্ছে ৪০-৪৫/৩৫ হাজার টাকার মধ্যে(কখনো কখনো আরো বেশি)। অর্থাৎ বর্তমান বাজারের হিসেবে আপনি এই পিসিতে পেয়ে যাচ্ছেন একটি ৪০/৩৫ হাজার টাকার সমমুল্যের গ্রাফিক্স কার্ড।

দামের কারণেই ৬০-৭০ হাজারে GTX 1650/1650 Super দিয়ে পিসি বিল্ড এক প্রকার অসম্ভব বর্তমানে। সেজন্যই এই কার্ডটির কারণেই এই পিসিটি হয়ে গিয়েছে Unbeatable একটি পিসি।

স্টোরেজঃ 1TB Seagate HDD with 256 GB Walton Antique M.2 SSD

স্টোরেজ সেকশনে Primary Storage device হিসেবে ওয়াল্টন ব্যবহার করেছে তাদের নিজেদের Antique M.2 SSD টি। সাথে Seagate BarraCuda 1TB 7200RPM হার্ড ডিস্ক ড্রাইভ থাকছে সেকেন্ডারি স্টোরেজ হিসেবে। ডাটা ড্রাইভ বা Hard disk টি নিয়ে কমপ্লেন এর জায়গা একেবারেই নেই, স্টোরেজ সবসময় ইউজার প্রিফারেন্স এর উপর ভিত্তি করে ভিন্ন ভিন্ন হয় কিন্ত 1tb হার্ডড্রাইভ খুবই সাধারণ একটি সিলেকশন এই বাজেটে বা আরো উপরের বাজেটে ও সেখানে Seagate এর এই ড্রাইভটি ক্রেতাদের প্রথম পছন্দ হিসেবে বাজারে রয়েছে অনেকদিন ধরেই।

যদিও প্রাইমারী এসএসডি অনেকেই NVMe নিতেন কাস্টম বিল্ডে, Corsair/Transcend/Team সহ অন্যন্য জনপ্রিয় ব্রান্ডের NVMe SSD গুলো  বা ওয়াল্টনের NVMe গুলো ৪০০০-৫০০০ এর মধ্যেই পাওয়া যায় বাজারে। অনেকে যদিও M.2 ই নেন, ৩২০০টাকা দাম হিসেবে সম্পুর্ণ জাস্টিফায়েড ও Value for Money ওয়াল্টনের এই M.2 SSD টি।

Ram: Walton 8GB 3200 Mhz (No Heatsink)

এই পিসিতে র‍্যাম রয়েছে ওয়াল্টনের 3200 Mhz 8GB এর একটি কিট। নেই কোনো হিটসিংক। যেহেতু ওয়াল্টন নিজেরাই র‍্যাম সেল করে বাজারে, সুতরাং তাদের প্রি বিল্ট পিসিতে এই সিলেকশন খুবই স্বাভাবিক, M.2 SSD এর মতই। তবে ওয়াল্টন Heatsink সহ কোনো মডেল দিতে পারতো।

যেকোনো কাস্টম বিল্ডেই এই বাজেটে ইউজাররা এই র‍্যাম না নিয়ে অন্য কিছু যেমন G-Skill Ripjaws ,Corsair Vengeance বা PNY/Patriot এর RGB নিতেন ও দুটি কিট নিতেন। অর্থাৎ ৯০% ইউজারেরই এই বাজেটে এখনকার বিল্ডে চয়েস ১৬ জিবি র‍্যাম।

তবে এখানে কথা রয়েছে,স্বাভাবিক অবস্থায় 3200MHz র‍্যাম এর দাম 3300-3400 থেকে শুরু হয় ও ভালো ব্রান্ডের জনপ্রিয় মডেলগুলো (both RGB/Non RGB) 3500-3800/4000 এর মধ্যেই পাওয়া যায়।অর্থাৎ ফুল বিল্ডে ৭০০০টাকা (বা ১০০/২০০ বেশি) দিয়ে ১৬ জিবি ৩২০০মেগাহার্জ র‍্যাম পাওয়া যায়।  কিন্ত গত এক মাস যাবত র‍্যামের বাজারে আগুন লেগেছে , এখন ২৪০০/২৬৬৬ মেগাহার্জ এর র‍্যামগুলোই ৪০০০-৪৫০০ এ চলে গেছে দাম। ৩২০০ মেগাহার্জ এর প্রায় সবগুলো মডেলেরই দাম এখন ৫০০০-৬০০০ রেঞ্জে। অর্থাৎ ১৫০০-২৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে র‍্যাম এর দাম।। এমতাবস্থায় বলা যেতে পারে যে ওয়াল্টনের এই র‍্যামটি ভ্যালু ফর মানি প্রোভাইড করছে। অন্তত বাজারে এখন ১৬ জিবি দূরে থাক , ৮ জিবি র‍্যাম নেওয়ার জন্যও অতিরিক্ত ১৫০০-২০০০/২৫০০ টাকা খরচ করতে হবে আপনাকে। 3200Mhz দূরে থাক, ২৪০০ বাসের র‍্যাম ও নেওয়া লাগবে ৪০০০-৪৫০০ দিয়ে।

Power Supply: Walton ARC 720W 80+ Bronze PSU

Walton AVIAN WS এ পাওয়ার সাপ্লাই হিসেবে থাকছে Walton এরই ARC 720W 80+ Bronze PSU। সাধারণত ৭৫০০টাকার আশেপাশে দাম শুরু হয় এই রেঞ্জের PSU গুলো। ওয়াল্টন চাইলেই এখানে একটি 600/650/550 ওয়াটের একটি PSU ব্যবহার করতে পারতো। এতে আরো যৌক্তিক হতো সিলেকশনটি ও বাজেট ও ১৫০০-২০০০/২৫০০ টাকা পর্যন্ত কমে আসতো।

তবে এই বিল্ডের জন্য কেওই ৭২০/৭৫০ ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাই নেন না,নেওয়ার দরকার ও হয় না। সাধারণত ৫৫০ ওয়াটের 80+ Bronze রেটেড যে অপশন গুলো রয়েছে যেমন Corsair CV,Cooler Master MWE বা Antec এগুলোই চয়েস থাকে ক্রেতাদের (4000-5000 এর মধ্যে)। কেও কেও একটু বাড়িয়ে সর্বোচ্চ ৬০০/৬৫০ (৫০০০-৬০০০ টাকা) ওয়াটের পাওয়ার সাপ্লাই নেন।

Case: Walton

কেসিং যেটি রয়েছে সেটি মোটামুটি একটি এভারেজ লেভেলের ৩০০০-৩৫০০ টাকা রেঞ্জের কেস। ওয়াল্টনের নিজস্ব কেস। সামনে বিল্ট ইন দুইটি ফ্যান পেছনে একটি ফ্যান দেওয়া। কাস্টম বিল্ডে কেও কেও ৪৫০০-৫০০০ রেঞ্জের কেস নিতেন একটু বাজেট বাড়িয়ে অথবা ৩০০০-৪০০০ রেঞ্জের অন্য কেস নিতেন এটি না নিয়ে।। তবে যেহেতু এটি ওয়াল্টনের প্রি বিল্ট পিসি, তাই র‍্যাম ও এসএসডির মত তাদের এই সিলেকশন ও সম্পুর্ণ যৌক্তিক।

যদিও এই কেসটির সাইড প্যানেল খুলে বেশ কিছু বিস্ময়কর ব্যাপার স্যাপার লক্ষ করা গিয়েছে।প্রথমত পেছনের একটি ও সামনের দুটি, মোট ৩টি ফ্যানই exhaust হিসেবে লাগানো ছিল যা সচরাচর হয় না। সাধারণত সামনে ২টি ফ্যান in হিসেবে লাগানো থাকে। এটি কি জেনে শুনে করা হয়েছে নাকি ভুল বশত,সব ইউনিটেই করা হয়েছে নাকি এই ইউনিটে তা নিয়ে নিশ্চিত বলা যাচ্ছে না।

আবার দুটি LED ফ্যান গুলোর মধ্যে একটি পেছনে একটি সামনে লাগানো ছিল যেটাও আরেকটি অদ্ভুত ব্যাপার কেননা দেখে মনে হতে পারে সামনের দুটি LED এর একটি নষ্ট। সাধারণত দুটিই সামনে লাগানো থাকে।কেবল ম্যানেজমেন্ট ভালো ছিল মোটামুটি।

প্রি বিল্ট হলেও থাকছে কাস্টোমাইজেশন এর সুযোগঃ 

সাধারণত প্রি বিল্ট পিসিগুলোতে কেসিং খোলার বা স্টিকার খোলার কারণেই কারণেই ওয়ারেন্টি ভয়েড হয়ে যায় বলে এটি পরিষ্কার করা বা খুলে অন্যন্য যেকোনো কম্পোনেন্ট এর রক্ষণাবেক্ষণ বা কোনো কম্পোনেন্ট চেঞ্জ করা এক প্রকার অসম্ভবই হয়ে দাঁড়ায়। কিন্ত ওয়াল্টন বেশ কিছু কনজিউমার এর অভিযোগ/অনুরোধ আমলে নিয়ে  নিশ্চিত করেছে যে তাদের এই পিসিটির কেসিং বা সাইড প্যানেল খুলে ওপেন করলেও ওয়ারেন্টি ভয়েড হবে না। যার জন্য সাধুবাদ জানাতেই হয়।

৬২/৬৭ হাজারে নরমাল টাইমে কি বিল্ড হতো বা এখন কি বিল্ড সম্ভবঃ 

৬২/৬৭ হাজারে নরমাল টাইমে Ryzen 5 3600/Core i5 10400f/10400 এর সাথে একটি 8/9 হাজারের মাদারবোর্ড, Corsair CV/Cooler Master MWE, 16GB 3200 Mhz Ram,3000-3500 টাকার একটি কেসিং, 250 GB SSD+1TB HDD এর সাথে GTX 1650 Super(17/18k), এই কম্পোনেন্টগুলো বা সিমিলার কম্পোনেন্ট নেওয়া সম্ভব সহজেই।

তবে বর্তমানে প্রসেসর,মাদারবোর্ড,স্টোরেজ,পাওয়ার সাপ্লাই ও কেসিং এর দাম স্বাভাবিক হলেও এখনকার সময়ে এই বাজেটে ১৬ জিবি র‍্যামের সাথে GTX 1650 Super তো দূরে থাক, একটি 1050 Ti পেয়ার করাও অসম্ভব। সেক্ষেত্রে খরচ অনেক বেশি বেড়ে যাবে। 1050ti এর ক্ষেত্রে প্রায় ৭৫হাজার বা একটু বেশি, 1650/1650 Super এর ক্ষেত্রে ৯০ হাজারের কাছাকাছি চলে যাবে টোটাল খরচ।

সুতরাং পরিস্থিতি বিবেচনায় সবথেকে ভালো একটি ডিল এখন এইটাই।

পারফর্মেন্সঃ 

পারফর্মেন্স কেমন পাওয়া যাবে? Ryzen 5 3600 এর পাওয়ার সম্পর্কে আইডিয়া সবারই কম বেশি আছে, এডিটিং/কন্টেন্ট ক্রিয়েশন/প্রোগ্রামিং বা মাল্টিটাস্কিং এর কাজের জন্য বাজেটে অন্যতম সেরা চয়েস এই প্রসেসরটি। সাথে GTX 1650 যেরকম লেভেলের কার্ড এই বিল্ডেও সেরকম পারফর্মেন্স ই পাওয়া যাবে। মোটকথা কাস্টম বিল্ডের মতই পারফর্মেন্স পাওয়া যাবে এই পিসিটি থেকে।

Final Verdict: 

মাদারবোর্ড আরেকটু বেটার কিছু দেওয়া যেত সাথে PSU 550 ওয়াটের ইউনিট দিলেই যথেষ্ট ছিল সাথে কোনো হিটসিংক ওয়ালা র‍্যাম লাগানো যেত, এই ৩টি বিষয় ছাড়া এই বিল্ডের বড় কোনো খুত বা আপত্তির জায়গা একেবারেই নেই,করার সুযোগ ও নেই।

বরং ৬২/৬৭ হাজার বাজেটে ডিসেন্ট সব প্রোডাক্টের সাথে GTX 1650 GDDR6 অফার করার কারণে Walton AVIAN WS বাজারের সেরা পিসি।

 

Share This Article

Search