আমরা যখন কোন ইলেক্ট্রনিক্স প্রডাক্ট কিনি, যখন দেখি লেখা ১, ৩ বা ৫ বছর ওয়ারেন্টি আমরা ধরেই নেই যে মিনিমাম এই কয়টা দিন কোন সমস্যা হলেও এর সমাধান পাব। সাধারন হিসাবে এরকমই হবার কথা। আমিও জানতাম হয়, এবার বাস্তবে একটা জিনিসে সমস্যা হবার পড়ে দেখলাম আসলে এটা আসলে কোন ছেলের হাতের মোয়া না, যে গেলাম আর দিয়ে দেবে। আফটার সেলস সার্ভিস দিতে বাংলাদেশি কোম্পানি থেকে শুরু করে বিদেশি ব্র্যান্ড গুলো প্রত্যেকেরই কিছু মাত্রায় জ্বলুনি হয় সেটা অনুভব করেছি। এরকম তিনটা ঘটনা বলছি, বাংলাদেশে প্রভাবশালী, পৃথিবীর শীর্ষ কয়েকটা কোম্পানির একটা, কোরিয়ান টেক জায়ান্ট স্যামসাং এর কথা। প্রথমে ভেবেছিলাম যে সুশীলতা বজায় রেখে নাম প্রকাশ ছাড়াই বলে ফেলব। কিন্ত পরে ভেবে দেখলাম এভাবে নামগুলো চেপে গেলে আসলে কোম্পানিরা বাস্তবতা থেকে দূরেই থেকে যায়। আমি নিজে স্যামস্যাং এর ইউজার, খুজলে হয়ত টপ কন্সিউমারদের মধ্যেই পড়ে যাব তাই পার্সোনাল কোন সমস্যা আমার রয়েছে স্যামসাং ব্রান্ডের সাথে অনেকে এমন ভেবে বসতে পারেন। তবে নিজের দায়বোধ থেকে মনে করছি, এধরনের ভোগান্তি নিয়ে কথা না বলাটা অন্যায়ের পর্যায়েই পড়ে। স্যামসাং বাংলাদেশ এর ওয়ারেন্টি পলিসির লিঙ্ক টা নিচে দেয়া আছে, সময় করে একটু পড়ে নেবেন।
Samsung Warranty Policy: https://www.samsung.com/bd/support/warranty/
ঘটনা একঃ
পিসি বিল্ডার বাংলাদেশের ফাউন্ডার এডমিন জাহিদ হক ভাই স্যামসাং খুলনা ব্রাঞ্চ থেকে একটা ফ্রিজ কেনেন, বাসায় আনার পর প্রথম স্টার্টেই দেখা গেল ফ্রিজ ঠান্ডা হচ্ছে না একদম। একটা নতুন ফ্রিজ যদি ঠান্ডা না হয় তাহলে ফ্রিজের দরকার টা কি। সেলার কে জানালে তারা বলল স্যামসাং সব ওয়ারেন্টি তাদের নিজেরাই সার্ভিস সেন্টার থেকে প্রভাইড করে। এটা একদিক থেকে ভালো যেহেতু স্যামসাং এর বেশ কিছু ইম্পোর্টার কোম্পানি রয়েছে, যেমন ফেয়ার ড্রিস্ট্রিবিউশন, ট্রান্সকম, ইলেক্ট্রা, এক্সেল টেকনোলজিস। কমপ্লেন জানানোর পড়ে সার্ভিস সেন্টার দুই তিন দিন খালি ফোনে, কিন্তু ফোনে স্লুশন না দিয়ে খালি এই ইনফর্মেশন ওই ইনফর্মেনশন হাবিজাবি। এদিকে বাসায় ফ্রিজ নস্ট কি একটা অবস্থা।
তৃতীয় দিন খুলনা সার্ভিস হেড কল দিলেন, দিয়ে উনি নিজেও আরেকদফা গল্প শুনলেন। সপ্তাহ খানেক বাদে টেকনেশিয়ান মহাশয় এলেন, এসে বললেন স্যার ইলেক্ট্রনিক্স জিনিস, সমস্যা হতেই পারে। আমরা দেখছি কোথায় সমস্যা তারপর রিপেয়ার করে দিচ্ছি। কি আশ্চর্য একটা ব্যাপার প্রায় লাখ টাকা দামের একটা ফ্রিজ ইন্ট্যাক্ট আনার পরে সেটা রিপেয়ার করে ইউজ করতে হবে?
আচ্ছা মেনে নিলাম দুই একটা ঘটনা হতেই পারে, ব্যাডলাক। জাহিদ ভাই রিপ্লেস ছাড়া নেবেন না জানালে তারা দিন দশেকের জন্য নিখোজ হয়ে যায়। কোন আপডেট নাই কিছু নাই, অবস্থাটা এমন যে টাকা দিয়ে জিনিস কিনে পাপ করে ফেলছেন। আমার বড় ভাইটি বুদ্ধিমান মানুষ, নতুন জিনিস সারিয়ে ব্যবহার না করে নিনজা টেকনিক এপ্লাই করলেন, বললেন তাকে আরো ৪০ হাজার টাকা বেশি দামের একটা ফ্রিজ দিতে পালটে। এ দফায় স্যামসাং সুরুসুর করে নতুন ফ্রিজ দিয়ে দেয়। বড়ভাই এফোর্ড করতে পেরেছিলেন তাই সে যাত্রায় তার সমস্যা এভাবে সমাধান করলেন। কিন্তু সবার পক্ষে কি এরকম সম্ভব?
বাংলাদেশে ৭০ পার্সেন্ট ফ্রিজ মানুষ কেনে ইদ বা কোরবানিতে বোনাসের টাকা পেয়ে, ঐ এক ফ্রিজ দিয়ে জীবন পার করে দেয় অধিকাংশই। এরকম কারো ক্ষেত্রে যদি এই ঘটনা ঘটে তাহলে তার কি অবস্থা? একবার ভেবে দেখবেন।
ঘটনা দুই:
এবারের ঘটনার শিকার আমি নিজে। ঘটনাটা অনেকেই জানেন, তারপরও ছোট করে বলে ফেলি, কোরবানির ইদে বাড়িতে যাবার আগে আম্মার জন্য একটা ট্যাবলেট কিনি, স্যামসাং এ৭ গ্যাজেট এন্ড গিয়ার থেকে। একই দিনে ফ্লাইট থাকায় খুটিনাটি চেক করে আনা হয়নি, ইন্ট্যাক্ট জিনিস আবার গিফট তাই কোন রকম সেলসের একজনের মাধ্যমে আনবক্স করে পাওয়ার অন করে আবার প্যাক করে চলে আসি গ্রামে। রিটায়ারমেন্টের পর আম্মা প্রতিলিপিতে লেখালেখি করেন, মোবাইল স্ক্রিন ছোট স্ক্রিনের একপাশ থেকে ব্যাকলাইট ডিম হয়ে আছে। লাকিলি দোকানে আনবক্সিং টা আমার উনি ভিডিও করে রেখেছিলেন, সেটা ভালো করে চেক দেখলাম যা সেখানেও সমস্যা বিদ্যমান। এরপরে সার্ভিস সেন্টারে জমা দিলাম, ওনারা বেশ কিছুদিন সময় নিয়ে আমাকে জানালেন সমস্যা সমাধান হয়েছে, যাওয়ার পড়ে ওনারা নষ্ট ট্যাবলেট টাই সিল করে ফেরত দিলেন একটা সার্টিফিকেট সহ। এই পর্যায়ে একটু আকাশ থেকে পরলাম, কারন আমি শুনেছিলাম যে ৭ দিনের মধ্যে সমস্যা হলে রিপ্লেস দেয়া হয়, রিপেয়ার না।
ওনারা জানালেন রিপ্লেসই দেয়া হবে, তবে যেখান থেকে কিনেছি সেখানে এই সিল করা সার্টিফিকেট সহ জমা দিতে হবে। এরপরে আব্বা বেশ অসুস্থ হয়ে যান, তাকে নিয়ে হাসপাতালে থাকতে হয় বেশ কিছু দিন, এই কারনে স্টুডিও বন্ধ, সব কাজ কর্ম বন্ধ।
ট্যাবলেট নিয়ে চিন্তা করার সময় কোথায়। মা বাবা কি জিনিস যার নেই সেই বোঝে, সপ্তাহখানেক হাস্পাতালের বারান্দায় হেটে হেটে কিছুটা হলেও অনুভব করেছি। এই পর্যায়ে একটা পরামর্শ দিয়ে রাখি, যাদের বাবা মা বয়স্ক, যদি পারেন তাদের কিছুটা সময় তারা বেচে থাকতেই দিন, তাদের খুশি আনন্দে অংশ নিন, পরে আফসোস করে বা কান্না করে লাভ হবে না, তখন দোয়া ছাড়া কিছুই করতে পারবেন না। যাই হোক ঘটনায় ফেরত আসি, গ্যাজেট এন্ড গিয়ারের ম্যানেজার সাহেব কে কল দিয়ে জানাই যে আমার আসতে দেরি হবে, কেন সেটাও জানাই। উনি ভাল মানুষ বললেন ঠিক আছে আসুন আমরা চেঞ্জ করে দেব যেহেতু এটা এপ্রুভ হয়েই গেসে। স্যামসাং সার্ভিস সেন্টার ড্যামেজ কনফার্ম করে কিছু দিন সময় নিয়ে রিপ্লেস এর সার্টিফিকেট দিল ব্যাপারটা বুঝলাম, কিন্ত যেহেতু সার্ভিসে জমা দেয়ায় হয়েছে তাই সেখানে থেকে রিপ্লেস না দিয়ে আবার রিটেইল এ কেন পাঠালো তার যুক্তি টা বুঝলাম না। ক্ষুদ্র মস্তিষ্কে যা বুঝি এতে হয়ত তাদের ট্র্যাক রাখতে সুবিধা হয়, তবে আফটার সেলস সার্ভিসে শুধু নিজেদের সুবিধার কথা বিবেচনায় রাখলে হবে?
যিনি একটা নতুন জিনিস কিনে ব্যবহার করতে পারলেন না একদমই, তাকে একবার জমা, আরেকবার ফেরত তারপর সেটা নিয়ে আবার রিটেইল শপে এই যে তিনবার ঘুরালেন এই অনুভুতিটা কি একজন কঞ্জিউমার খুব সহজে ভুলে যাবে বলে মনে করেন ?
ভোগান্তির শেষ নেইঃ
গ্যাজেট এন্ড গিয়ার আর স্যামসাং ট্যাবলেট নিয়ে ভোগান্তি আমার এখানেই শেষ হয়নি, বরং জল ঘোলা হবার শুরু এরপরে , গ্যাজেট এন্ড গিয়ারে যাওয়ার পড়ে তারা রিপ্লেস দিতে অস্বীকার করে, বলে আমি অনেক দেরি করেছি এটা সেটা। ট্যাব রেখে যান, পরে আপনাকে জানাব। চরম হতাশা আর বিরক্তি নিয়ে বাসায় ফিরে একটা বিস্তারিত পোস্ট লিখলাম, পরের দিন কাক ডাকা ভোরে ম্যানেজার সাহেব কল দিয়ে ঢেকে নিলেন ওনার ব্রাঞ্চে চতুর্থ বারের মত। দুঃখ প্রকাশ করলেন, আমি স্যামসাংকে বিদায় বলে কিছু টাকা এড করে অন্য একটা প্রডাক্ট নিয়ে বাসায় ফিরলাম, যাওয়ার সময় ম্যানেজার সাহেব খুব অনুরোধ করলেন যেন একটা পজিটিভ রিভিউ দেই। কিছুটা বুঝতে পারি যে উনি চাকুরিজিবি, উপর মহলের নির্দেশ ছাড়া উনার হাত পা বাধা।
এইসব দোড়াদৌড়ির মাঝে অনুভব করলাম যে কখনো কখনো টাকা দিয়ে জিনিস কিনে মনে হয় যে পাপ করে ফেলেছি, কানে ধরেছি আর কিনব না। আমার ফেসবুক পোস্টে অনেকের কমেন্ট দেখলাম একই ধরনের ভোগান্তিতে পরেছেন।
এমনকি আমাদের ফেসবুক গ্রুপ গুলোতে পিসির বিভিন্ন প্রডাক্ট নিয়ে প্রায় প্রতিদিন পোস্ট হচ্ছে যে দোকানে নিয়ে গেলে বলছে দেরি হবে, স্টক নাই, চেক করতে হবে, আবার অনেককেই ড্যামেজ এর দোহাই দিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিচ্ছে ওয়ারেন্টি হবে না বলে।
একটা কমেন্ট একটু অন্য রকম লাগে, একজন বলেন যে ভাই আপনারা ইনফ্লুয়েন্সার তাই আপনার টা পেয়েছেন, আমরা হলে পেতাম না। মনে হল, ওনার কথাটা আসলেই ঠিক, কোন কোন হাইকোর্ট এরা ঠিকই মানুষকে দেখিয়ে দেয়। এখানে বলে রাখা ভালো, জাহিদ ভাই কিংবা আমি, আমরা কখনোই কোথাও আমাদের পরিচয় দিয়ে কিছু কিনি না।
আমাদের ভুমিকা কিঃ
আমরা যারা কন্টেন্ট ক্রিয়েটর, আমরা আসলে কি করি? রিভিউ ভিডিও বানাি? যারা নীতি বোধ একটু প্রখর তারা হয়ত, রিভিউতে নেগেটিভ ইস্যু গুলাও বলেন, হয়ত একটু সুগার কোট করেই, ফালতু না বলে, অতটা ভালো না বলেন। কিন্তু আমাদের ভূমিকা কি শুধু এটুকুই? যেরকম ভিডিওই বানাই না কেন, তাতো একধরনের প্রডাক্ট প্রমোশনই তাই না? ভিভোবুক রিভিউ এর পড়ে তারা কয়েক কন্টেইনার বিক্রি করে ফেললেন, তাদের এমপ্লয়িরা মিম বানিয়ে ফেললেন যে পিসি বিল্ডার ডুবে গেছে।
আসুস বাংলাদেশ কে ল্যাপটপ যে রিভিউ করা যায়, নিজেরা কিনে কিনে ল্যাপটপ রিভিউ করা শেখানো আমাদের ওনারা রিভিউ ইউনিট দেন না আজ প্রায় দের বছর। এতে কি আমাদের ল্যাপটপ রিভিউ বন্ধ হয়ে গেছে? স্যামসাং অনেক বড় ব্র্যান্ড, এতবড় কোম্পানি পড়ে দেখা যাবে আমরা এদেরো ব্ল্যাকলিস্টে পড়ে গেছি। অনেক টেকনলজি বেজড কন্টেন্ট ক্রিয়েটর যারা এর উপরই নির্ভরশীল তাদেরও হয়ত হাত পা বাধা। তবে দুঃখিত ডিয়ার ব্রান্ডস পিসিবি বিডির এইসব সমস্যা নাই।
পিসি বিল্ডার বাংলাদেশ এর অর্ধেক কন্টেন্ট নিজেদের কিনে, নিজেদের পয়সায় করা। ভুল থাকলে শুধরে দেয়ার চেষ্টা করব। ফিড ব্যাক নিতে পারলে নেন, না পারলে নাই। কাস্টমারকে হাইকোর্ট দেখাবেন না, আমাদেরকেও কোর্ট দেখায়ে লাভ নাই।
নেগেটিভ পিআর কি জিনিস আপনারাও জানেন, আমরাও জানি। টাকা দিয়ে মানুষ আপনাদের সিম্প্যাথি কেনে না।
ঘটনা ৩ঃ
বেশ শকিং। ব্যাপারটা নিয়ে বিভিন্ন ফেসবুক গ্রুপে টুকটাক আলোচনা হয়েছে, কিন্তু ব্যাপারটা বাইরের দেশে হলে যতটুকু মিডিয়া ফোকাস পেত বাংলাদেশে এমন কিছু ঘটে নাই। আমাদের বিজ্ঞ সংবাদগ্রাহকরা নতুন প্রডাক্ট লঞ্চ এর নিউজ প্রকাশ করলেও এগুলা করেন না। হয়ত এর জন্য কোন উপহার আসে না এই কারনে বা অন্য কিছু। তাদের দোষ দিয়ে লাভ কি, আমি নিজেও হয়ত স্যামসাং সার্ভিস সেন্টারে না গেলে এই ঘটনা চোখেই পড়ত না। আমার ট্যাবলেট টা নিয়ে যখন বরিশালের স্যামসাং সার্ভিস সেন্টারে লাইনে অপেক্ষা করছি জমা দেয়ার জন্য, খেয়াল করলাম বেশ কয়েকজন ইউজার ডিসপ্লে সমস্যার কারনে এসেছেন। কাউন্টারে জমা দেয়ার পর একজনকে বলা হল ভাই আপনার ডিসপ্লেতো চাপ দিসেন তাই ড্যামেজ হয়ে গেসে, ওয়ারেন্টি হবে না। চাইলে ডিসপ্লে কিনে নিতে পারেন ৬হাজার টাকা দিয়ে। যেহেতু টুকটাক অভিজ্ঞতা আছে তাই বললাম, ভাই ড্যামেজড জিনিস ওয়ারেন্টি হয় না, উনি একটু খেপে গেলেন, বললেন ড্যামেজটা করলাম কিভাবে?
খেয়াল করলাম, আসলেই ডিস্প্লের উপরে তেমন এক্সটার্নাল প্রেশারের ইন্ডিকেশন নাই। তবে তারপরও মাঝে মাঝে উপরে দাগ ছাড়াও চাপ পড়ে ডিসপ্লে নস্ট হতে পারে। ওণার চোখে হতাশা, বেশ কয়েক মাস টাকা জমিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে শখ করে মোবাইল্টা কিনেছেন, মাসখানেকের মাথায় ডিসপ্লে শেষ। বুঝলাম ৬ হাজার টাকা এখন বাড়তি খরচ করা ওনার জন্য কঠিন। একটু খারাপ লাগল, তাই এড়িয়ে গেলাম। কিছুক্ষন পর আরেকজন এলেন, একই সমস্যা, এবার উনি ড্যামেজ করেছেন কাউন্টার থেকে বলায় উনিও ক্ষেপে গেলেন, বললেন কোথায় ড্যামেজ দাগ দেখান। কাস্টমার ম্যানেজারের বক্তব্য, হয়ত আপনার পকেটে চাপ লেগেছে, বা বালিশের নিচে চাপ লেগেছে।
কি আশ্চর্য উনি বললেন, ফোন যদি পকেটে না নিতে পারি, বালিশের নিচে রেখে ঘুমাতে না পারি, তাইলে মোবাইল টানার জন্য কি আলাদা একজন বডিগার্ড রাখতে হবে? কথায় যুক্তি আছে। সেই একই দিনে আমি ঘন্টা খানেকের মধ্যে ৭/৮ জন সেম ফোন ইউজার কে দেখলাম যাদের সবার ডিসপ্লে ড্যামেজড। এরপরে ফেসবুক গ্রুপ গুলোতে এসে দেখলাম এই সমস্যা সারা বাংলাদেশে, অনেক মানুষের। একটা পার্টিকুলার মডেলের হ্যান্ড সেটে, এক্সটার্নাল কোন আঘাত ছাড়াই ডিসপ্লে ড্যমেজ হয়ে যাচ্ছে মানে এই মডেলের সব ফোন গুলোতেই কোথাও প্রেশার পয়েন্টে গোলমাল আছে। তাই দৈনন্দিন ব্যবহারে ও এই জায়গা গুলতে বাড়তি চাপ পড়ছে এবং ড্যামেজ হচ্ছে যেটা হবার কথা না।
ছোট একটা ঘটনা মনে করিয়ে দেই, অগাস্ট ১৯, ২০১৬ তে স্যামসাং গ্যালাক্সি নোট ৭ রিলিজ করে, অল্প কয়েকদিনেই প্রি অর্ডার এর সব রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলে ডিভাইসটা। সেপেম্বর ২ তে স্যামসাং নোট ৭ সেল বন্ধ করে ফেলে, এবং ফল্টি ইউনিট গুলো রিপ্লেস্মেন্ট এর জন্য রিকল করে। রিপ্লেসড ইউনিট গুলতেও ওই একই ব্যাটা্রী সমস্যা থাকার কারনে লঞ্চের মাত্র ২ মাসের মধ্যে অক্টবর ১১, ২০১৬ তে নোট ৭ প্রজেক্ট পুরাপুরি শাটডাউন করে ফেলে। টোটাল লস ৬ বিলিয়ন ডলার মাত্র। নোট ৭ এ আগুন ধরে যাচ্ছে একের পর এক নিউজে আসতে থাকে, বিভিন্ন এয়ারলাইন কোম্পানি নোট ৭ নিয়ে তাদের এয়ারক্রাফটে বোর্ডিং নিষিদ্ধ করে দেয়। স্যামসাং মিডিয়া গুলোকে নানাভাবে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে, রিপ্লেস করে দেবে, এটা সেটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত বিধিবাম কোন ভাবেই নোট ৭ টেকানো যায়নি।
এই ঘটনা কেন বললাম, প্রথমবার স্যামসাং যখন ফোন গুলো রিকল করে, রিপোর্টেড কেস ছিল কয়টা জানেন? মাত্র ৩৫ জন কাস্টমার রিপোর্ট করেছিল। আমার কথা না, স্ট্যানফোর্ড ইউনিভার্সিটির একটা কেস স্টাডিতে উল্লেখ করা আছে।
Case Study Link: http://large.stanford.edu/courses/2017/ph240/bai2/
আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে স্যামসাং M21 এর ঠিক কয়টা মডেলে এই ধরনের ডিসপ্লে সমস্যা হয়েছে। ঠিক কতজন রিপোর্ট করেছেন। সেদিন সার্ভিস সেন্টারে আমার বন্ধ রিফাত, একজন আইনজীবি এবং ফোন এন্থুসিয়াস্ট বেশ কয়েকটা ফোনের ছবি তুলেছিল, ধন্যবাদ তাকে। এরপরে ফেসবুকে এটিসি গ্রুপ এবং আরো কয়েকটি ফো্ন কমিউনিটিতে একই বিষয় নিয়ে বেশ কিছু পোস্টে দেখেছি।
স্যামসাং এর একজন উচ্চ পর্যায়ের কর্মকর্তার সাথে কথা হয়েছিল এই ব্যাপারে, উনি বলেছেন আমাকে যে m21 এর একটা লটে ডিসপ্লে ইস্যুয় ছিল। কোন লটে সেটা অবশ্য উনি বলেননি। ঠিক কতগুলো ইউনিট এ সমস্যা হয়েছে সে তথ্য স্যামসাং এর কাছে নিশ্চই আছে, যদিও তারা সেটা কোথাও ডিসক্লোজ করেনি, করবেও না। তাকে জিজ্ঞেস করলাম ভাই, ফল্টি ডিভাইস গুলো কি রিকল করা যেত না? কারন ২০ হাজার টাকার ফোন যারা কেনে তাদের অনেকেই কষ্ট করেই কেনে।
উনি শিকার করলেন অনেকের জমানো টাকার ফোন, এও বললেন ফ্যাক্টরি তে ফল্ট থাকলে ফেরত নেয়। এসব পলিসি নাকি কান্ট্রি, রেজিওন ওয়াইজ সেট করা থাকে। সম্ভবত বাংলাদেশ খুবই গরীব কান্ট্রি, তাই স্যামসাং মানুষ্কে বিনামূল্যে ফোন বিলাচ্ছে এমনিতেই মাগনা ফোন দিতেসে, ফেরত নেবার কথা আসে কি করে !!
যতদূর জেনেছি, এই M31 গুলো বাংলাদেশের প্লান্টে এসেম্বল করা, আমাদের দেশে স্যামসাং এর ফ্যাক্টরি খুব নতুন নয়। কিছুদিন আগে শাওমিও ফ্যাক্টরি দিয়েছে, কেঁউ আবার ভাববেন না যে শাওমি আমাদের দিয়ে এই ভিডিও করাচ্ছে, কারন ওদের ফ্যাক্টরী ভিজিটেও আমরা দাওয়াত পাইনি 😛 বাংলাদেশে ফ্যাক্টরি হচ্ছে ভালো কথা। কিন্ত কোয়ালিটি কন্ট্রোল তো ঠিকঠাক করতে হবে নাকি ? কোন মডেলে যদি সমস্য থেকে থাকে তাহলে সেটা রিকল করলেই ব্রান্ডের প্রতি ট্রাস্ট বাড়ে । কঞ্জিউমারকে যদুমধু শাম ভাবলে তো সমস্যা। যে কোন কিছু গছিয়ে দিলাম, কাজ শেষ। ওয়ারেন্টি দেয়া একটা ব্রান্ডের তাদের প্রডাক্টের প্রতি কমিট্মেন্ট ইন্ডিকেট করে। ধানাই পানাই করে বিক্রি বাড়ানোর ট্যাকটিকস এটা না।
শেয়ার করুন আপনার কেসটিওঃ
আমরা একটা ফর্ম তৈরি করেছি, আপনারা যারা m21 কিনেছেন এবং ডিসপ্লে সমস্যা হয়েছে, দয়া করে আপনাদের পারচেজ রিসিপ্ট আর ড্যামেজড ডিস্প্লের একটা করে ছবি দেবেন, দেখা যাক কয়টা রিপোর্ট করলে ওনারা অফিসিয়ালি প্রবলেম টা রিকগনাইজ করে।
pcbuilderbd.com/display এ গেলে একটা ফর্ম পাবেন, এখানে আপনার নাম, ফোনের মডেল, পারচেজ রিসিপ্ট এর ছবি আর ড্যামেজড ডিস্প্লের ছবি এড করে সাবমিট করে দিন। আপনার নিজের একই সমস্যা না থাকলে আপনার পরিচিত কারো একই সমস্যা থাকলে সেটাও সাবমিট করতে পারবেন। দেখা যাক, নোট ৭ এ ৩৫টা কেস রিপোর্টেড হয়েছিল, বাংলাদেশে কয়টা হয়। এর রেজাল্ট আমরা স্যামসাং গ্লোবাল এবং স্যামসাং বাংলাদেশে উভয়কে উপহার দিতে চাই।
আমাদের পিসি বিল্ডার বাংলাদেশ মিডিয়া গ্রুপের অধীনে রয়েছে দুটি সুবিশাল গ্রুপ যেখানে আপনারা টেক ও পিসি সম্পর্কিত বিষয় নিয়ে বিভিন্ন আলোচনা,সমালোচনা,সাহায্য নেওয়া, পরামর্শ নেওয়া, মিমস শেয়ার করা সহ বিভিন্ন কিছু করে থাকেন। আমাদের গ্রুপে আপনারা যেকোনো শপ সম্পর্কে সার্ভিস, সেলস বা আফটার সেলস সার্ভিস বা ওয়ারেন্টি সংক্রান্ত সমস্যা তুলে ধরতে পারেন তথ্য ও প্রমাণ সহ। সামান্য দুই তিনটি গাইডলাইন রয়েছে এ সংক্রান্ত পোস্টের জন্য,যেমন রিয়েল আইডি থেকে পোস্ট করতে হবে, পোস্টে অবশ্যই কেনার সময় শপ প্রদত্ত ইনভয়েস এর ছবি থাকতে হবে, ওয়ারেন্টি বা সার্ভিসিং এর ক্ষেত্রে অবশ্যই শপ প্রদত্ত ওয়ারেন্টি স্লিপের কপির ছবি যোগ করে দিতে হবে ,শপের সাথে কথোপকথন এর স্ক্রিনশট/অডিও রেকর্ড থাকলে যোগ করতে পারেন সেগুলো ও।
এক্সটেন্সিভ রিসার্চ আর ওয়েব স্ক্রেপিং করে দেখা গেল, সমস্যা শুধু m21 এ না, m31 এমনকি আমাদের ফেসবুক গ্রুপের মডারেটর আকিবের আব্বার A30 তেও একই রকম ডিসপ্লে সমস্যা হয়েছে, আবার শুধু বাংলাদেশেই সমস্যা হচ্ছে এমনও না, বাইরের দেশেও অনেকের একই ধরণের সমস্যা হচ্ছে।
pcbuilderbd.com/display আপনার ব্রাউজারে সরাসরি টাইপ করতে পারেন অথবা ভিডিও ডেসক্রিপশনে দেয়া ফর্ম লিঙ্কে ক্লিক করেও এই পেজে যেতে পারবেন। ফর্মে শুরুতে আপনার নাম লিখবেন, এরপর ফোনের মডেল সিলেক্ট করবেন, এরপরে আপনার কন্ট্যাক্ট নাম্বার তারপর পারচেজ রিসিপ্টের একটা ছবি আর ড্যামেজড ডিস্প্লের আরেকটা ছবি আপলোড করে সাবমিট করে দেবেন।