আপনার VPN আপনার IP Address লিক করছে না তো?

যারা নিয়মিত পাবলিক WiFi ব্যবহার করেন কিংবা নিজের ইন্টারনেট ব্রাউজিং নিয়ে বেশি সচেতনা মেনে চলেন তাদের জন্য VPN হচ্ছে একটি বহুল ব্যবহৃত সার্ভিস। VPN হচ্ছে একটি সফটওয়্যার যেটা আপনার ইনকামিং ও আউটগোয়িং ইন্টারনেট ট্রাফিককে Encrypt করে ফেলে, যার ফলে অনলাইনে আপনার আইপি এড্রেস গোপন মানে আপনি anonymous থাকবেন। ভিপিএনকে মূলত ISP এর লগিং, হ্যাকারদের এবং থার্ড পার্টি দের হাত থেকে আপনাকে “প্রাথমিক” সুরক্ষা দিয়ে থাকে। তবে বাংলাদেশে VPN কে মূলত “ব্লক”কৃত ওয়েবসাইট ভিজিটেই বেশি ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
তবে যে হারে বাংলাদেশে ওয়েবসাইট ব্লক করা হচ্ছে তাই এখানেও এখন ভিপিএন ব্যবহার করা একটি সাধারণ বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মাঝে মাঝে সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন পপুলার ভিডিও গেমসের সার্ভারকেও ব্লক করে দেওয়া হয়; তখনও সেখানে একসেস পাবার জন্য ইউজাররা VPN সার্ভিসকে ব্যবহার করে থাকে। ভিপিএন এর কাজ হচ্ছে আমাদের আসল IP এড্রেসকে লুকিয়ে রেখে VPN এর নিজস্ব আইপি এড্রেস দিয়ে দেওয়া; যেটাকে IP masking বলা হয়। এই আইপি মাস্কিং এর ফলেই ভিপিএন কানেক্ট করলে দেখা যায় যে আপনার উত্তরার বাসাকে নেটে সিঙ্গাপুর দেখাবে!

তবে এটা মনে রাখতে হবে যে, ভিপিএন এর সার্ভিসগুলো অধিকাংশই প্রিমিয়াম হয়ে থাকে। বিশেষ করে যারা এডভান্স প্রটেক্টশন বা এডভান্স ইউজার হয়ে থাকেন তাদের জন্য প্রিমিয়াম VPN এর কোনো বিকল্প নেই। তবে আমাদের মতো সাধারণ ইউজারা ৯৯% ক্ষেত্রেই ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার করে থাকি। আর ফ্রি ভিপিএনগুলোর আলাদা কয়েকটি সমস্যা রয়েছে, তাদের মধ্যে কিছু লিমিটেশন দেওয়া থাকে। যেমন কয়টি ডিভাইস, কয়টি কানেক্টশন, কয়টি সার্ভার, ডেইলি ইউসেজ লিমিট ইত্যাদির উপর ফ্রি ভিপিএনগুলোর লিমিটেশন দেওয়া থাকে। এছাড়াও ফ্রি ভিপিএন এর স্ট্রাকচারগুলো প্রিমিয়ামের মতো অতো শক্তিশালি হয়ে থাকে না বিধায় এখানে IP লিকস হবার সম্ভাবনা থাকে। এখন আপনারা বলবেন যে IP Leak আবার কি?

IP Leak তখনই হয় যখন একজন ইউজার ভিপিএন এর Anonymous সার্ভারের বদলে পিসির ডিফল্ট সার্ভারে একসেস করে ফেলে। আইপি লিকসগুলো সাধারণত ব্রাউজারের, প্লাগইনস বা এক্সটেনশনের লুপহোলের জন্য ঘটে থাকে। আইপি লিক ভিপিএন কানেক্ট থাকার যেকোনো সময়ই হতে পারে; তবে এটা ৯০% ফ্রি ভিপিএন এর ক্ষেত্রে ঘটে থাকে। কারণ প্রিমিয়াম ভিপিএনগুলোর আলাদা নিজস্ব টিম থাকে যারা তাদের ভিপিএন সার্ভার এবং ক্লায়েন্ট সফটওয়্যারগুলোকে নিয়মিত আপগ্রেড এবং বাগ ফিক্স করে থাকে যার কারণে প্রিমিয়াম ভিপিএনগুলোকে খুবই কম আইপি লিকস হয়ে থাকে।

আইপি এড্রেস লিকের কারণ

আইপি এড্রেস লিক হয় ব্রাউজারের জন্য। কারণ বর্তমানের মর্ডান ব্রাউজারগুলো (ক্রোম, ফায়ারফক্স, অপেরা ইত্যাদি) একটি বিশেষ বিল্ট-ইন ফিচার WebRTC ব্যবহার করে থাকে। WebRTC বা Web Real-Time Communicaiton ফিচারটি সাইট এডমিনদের বিভিন্ন কমিউনিকেশন সার্ভিস যেমন ফাইল শেয়ারিং, ভিডিও / ভয়েস কল, চ্যাট ইত্যাদি প্রক্রিয়াকে বাস্তবায়নে সাহায্য করে থাকে। আর এই WebRTC কে ব্যবহার করেই ভিপিএন সার্ভিসকে বাইপাস করা যায়; মানে WebRTC ফিচারকে ব্যবহার করে সাইট এডমিনরা যেকোনো ইউজারের ভিপিএনকে বাইপাস করে তার অরিজিনাল আইপি এড্রেসকে দেখতে পারবে।

এছাড়াও ব্রাউজারের প্লাগইনস, স্মার্টফোন অপারেটিং সিস্টেম এর বিভিন্ন “vulnerabilities” এর কারণেও আইপি লিক হয়ে থাকে। আবার অন্যদিকে, DNS Leak এর কারণেও অরিজিনাল আইপি এড্রেস লিক হয়ে যায়। DNS Leak এর ফলে আপনার কানেক্টশনের DNS রিকোয়েস্ট গুলো ভাচুর্য়াল সার্ভারে (VPN) না গিয়ে অরিজিনাল গন্তব্যে পৌছেঁ যায়, যার ফলে আপনার অরিজিনাল আইপি এড্রেসও Expose হয়ে পড়ে।

উদাহরণসরূপ ধরুন আপনি Reddit সাইটটি ব্রাউজ করবেন, কিন্তু বাংলাদেশে সাইটটি সরকার কৃর্তক ব্লক করে রাখা হয়েছে। আপনি সাধারণ ভাবে Reddit অ্যাপ লঞ্চ করলে সেখানে আপনাকে কানেক্টশন এরর দেখাবে। এবার Reddit ব্রাউজ করার জন্য আপনি VPN চালু করলেন এবং লগইন করে ভিপিএন কানেক্ট করলেন। ভিপিএন এর সার্ভার ধরুণ যুক্তরাজ্যে দেওয়া, মানে আপনি ভার্চুয়াল ভাবে এখন যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। কিন্তু ভিপিএন দিয়ে কানেক্ট করার পরেও যখন আপনি Reddit ব্রাউজ করলেন বা Reddit অ্যাপ চালু করলেন তখনও আপনাকে কানেক্টশন এরর দেখালো। মানে ভিপিএন ব্যবহার করার পরেও সাইটটির ব্লক খুলে নি, কারণ যে ব্লক সাইটে আপনি একসেস করতে চাচ্ছেন সেটা আপনার ভিপিএন সার্ভারের IP এর বদলে আপনার অরিজিনাল আইপিকে track করছে। এর মানে হলে ভিপিএন থেকে আপনার IP লিক হচ্ছে।

যেভাবে আইপি এড্রেস লিক হচ্ছে কিনা চেক করবেন

আপনার ISP আপনাকে একটি “real” আইপি এড্রেস দিয়ে থাকে যেটার মাধ্যমে আপনার Unique Internet Subscription কে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়। আপনার এই কানেক্টশনের সকল ডিভাইসগুলো (WIFI সহ) এই একই আইপি এড্রেস লাইন ব্যবহার করবে।
আপনার প্রতিবার ফ্রি ভিপিএন ব্যবহার শুরু করার আগে IP এড্রেস লিক হচ্ছে কিনা এটা চেক করে নেওয়া উচিত। এর জন্য মাত্র ২টি সাইট বুকমার্ক করে রাখুন, এবং প্রতিবার ভিপিএন কানেক্ট করার পূর্বে এবং কানেক্ট করার পর সাইটগুলো ব্রাউজ করে নিশ্চিন্ত হয়ে নিন ।

১) প্রথমে VPN কানেক্ট করার আগে, আপনার রিয়েল আইপি এড্রেস জেনে নিন। এর জন্য VPN কানেক্ট ব্যাতিত এই লিংকে ক্লিক করুন।

এখানে Your IP ঘরে আপনার রিয়েল আইপি এড্রেসকে দেখতে পাবেন, সেটা একটু নোট করে রাখুন। উল্লেখ্য যে, ভিপিএন কানেক্ট করার পর আপনার আইপি এড্রেস এবং আপনার ISP এর নাম দুটোই বদলে যাবে।

২) এবার আপনার VPN কানেক্ট করুন। তারপর ওয়েবসাইটটি রিফ্রেশ করুন F5 চেপে কিংবা ব্রাউজার রিস্টার্ট দিয়ে আবারো ওই লিংকে চলে যান।

এবার এখানে দেখুন, ভিপিএন কানেক্ট করার পর আমার অরিজিনাল আইপি এড্রেসটি পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছে। একই সাথে আমার লোকেশন ঢাকা থেকে আমেরিকায় চলে গেল আর আমার ISP এর নামও পাল্টে গেল! আপনার ক্ষেত্রে এমনটা না হলে বুঝবেন যে আপনার ভিপিএন থেকে আইপি লিক হচ্ছে।

৩) ভিপিএন কানেক্ট করার পর শেষ মেষ ২য় সাইটে চলে যান এখানে ক্লিক করে।

এই সাইটের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একবার চেক করে নিন। যদি দেখেন যে আপনার রিয়েল আইপি বা আপনার রিয়েল লোকেশন সাইটের কোথাও লেখা রয়েছে তাহলে বুঝে নিবেন যে আপনার ভিপিএন থেকে আইপি লিক বা DNS লিক হচ্ছে।

এখানে পাবলিক আইপিতে আপনার VPN প্রদত্ত আইপিকে দেখতে পারবেন। আর ISP এর স্থানে একটা ফেইক বা ভাচুর্য়াল ISP এর নাম দেখতে পারবেন। আর Local IP বা আপনার রিয়েল আইপি এর ঘরে একটি এনক্রিপ্ট করা এড্রেস দেওয়া থাকবে।

এবার স্ক্রল করে একটু নিচের দিকে আসুন। DNS Test রেজাল্ট দেখতে পাবেন। এখানে শুধু একটি জিনিস খেয়াল করবেন সেটা হলো প্রতিটি বক্সের Location এ আপনার অরিজিনাল লোকেশন রয়েছে কিনা, চিত্রে দেখতে পাচ্ছেন যে কোনো ঘরেই বাংলাদেশ দেওয়া নেই। তার মানে এই VPN থেকে DNS লিকও হচ্ছে না।

পরিশিষ্ট

এভাবেই যদি আপনার মনে কোনো সন্দেহ থাকে যে আপনার VPN থেকে আইপি এড্রেস বা ডিএনএস লিক হচ্ছে তাহলে প্রতিবার VPN কানেক্ট করে এই দুটি সাইটে একটু ঢুঁ মেরে আসবেন। এছাড়াও আরেকটি লিক ইদানিং কমন হয়ে গিয়েছে সেটা হলো Dropped Connection । মানে ভিপিএন কানেক্ট থাকা অবস্থায় হঠাৎ করে VPN DC খেয়ে যায় আর এর ফলে সে মুহূর্ত্বেই আপনার সকল Web Traffic গুলো আপনার রেগুলার ইন্টারনেট কানেক্টশনে চলে যায়। এটাও এক ধরণের আইপি লিক। এটা কিন্তু সম্পূর্ণই VPN এর উপর নির্ভর করে থাকে, তাই Kill-switch ফিচারযুক্ত ভিপিএন ব্যবহার করুন যেগুলোয় কানেক্টশন ড্রপ হলেই পুরো নেট সংযোগ বন্ধ করে দেয় এবং অটোমেটিক্যালি আবারো VPN সার্ভিসে রিকানেক্ট করে দেয়। ফ্রি ভিপিএনগুলোতে এই ফিচারটি থাকেই না, তাই প্রিমিয়াম ভিপিএন কেনার আগে kill-switch ফিচারটি রয়েছে কিনা সেটা একটু যাচাই করে নেবেন।

Share This Article

Search