স্যামসাং ডিভাইসে Snapdragon vs Exynos? কোনটা নেওয়া উচিত!

স্যামসাং স্মার্টফোন কেনার সময় যারা প্রসেসর বা SOC (System on a Chip) এর দিকে একটু খেয়াল করলেই দেখবেন যে সচারচর Snapdragon বা MediaTek এর প্রসেসর ছাড়াও Exynos প্রসেসর দেওয়া হয়ে থাকে। আর স্ন্যাপড্রাগন এবং মিডিয়াটেকের পারফরমেন্স কোনটা কেমন সেটা আপনাদের অনেকেরই জানা রয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি দেশে অফিসিয়াল ভাবে Samsung তাদের Galaxy S20 FE এডিশন লঞ্চ করেছে। আর সেখানে লক্ষ্য করলেই দেখবেন যে বিদেশের Galaxy S20 FE তে Snapdragon 865 প্রসেসর দেওয়া হয়েছে, কিন্তু আমাদের দেশে লঞ্চ হওয়া মডেলে দেখবেন যে Exynos 990 প্রসেসর দেওয়া ।

যদি আপনার কাছে এই বিষয়টি নতুন মনে হয় তাহলে আপনি ভুল! কারণ সেই Galaxy S2 থেকে স্যামসাং তাদের ফোনে দুটি করে আলাদা আলাদা প্রসেসর দিয়ে ফ্ল্যাগশীপ ভার্সন রিলিজ করা শুরু করে। একটি মার্কেটে তারা তাদের নিজস্ব Exynos প্রসেসর দেয় এবং আরেকটি মার্কেটে তারা Snapdragon চিপসেট দেয়, তাহলে এগুলো কি কারণে স্যামসাং করে থাকে?

প্রথম কথা হচ্ছে Exynos চিপসেট হচ্ছে স্যামসাংয়ের নিজস্ব উৎপাদিত চিপসেট। তারা বর্তমানে বাজেট রেঞ্জ থেকে শুরু করে মিডরেঞ্জ সহ একদম ফ্ল্যাগশীপ; সকল ধরণের স্মার্টফোনে বিভিন্ন ভার্সনের Exynos চিপসেট বসিয়ে থাকে। অন্যদিকে আপনারা সকলেই জানেন যে Snapdragon হচ্ছে Qualcomm এর ডিজাইনকৃত জনপ্রিয় SOC! বর্তমানে আমাদের বিশ্বের অধিকাংশ স্মার্টফোনেই Snapdragon চিপসেট দেওয়া থাকে। তবে Snapdragon আর Exynos এর পাশাপাশি আমরা Huawei এর Kirin CPU এবং মিডিয়াটেকের SOC ও দেখে থাকি।
সহজ ভাষায় বলতে গেলে মিডিয়াটেক প্রসেসরগুলো অনেক কমদামী হয়ে থাকে বিধায় বাজেট রেঞ্জে মিডিয়াটেক প্রসেসরওয়ালা ফোন বেশি পাওয়া যায়। একই সাথে Kirin প্রসেসরগুলোকে আপনি শুধুমাত্র Huawei স্মার্টফোনেই দেখতে পারবেন। তবে আজকে Kirin আর MediaTek নিয়ে কথা বলছি না, আজকের মূল বিষয় হচ্ছে কেন স্যামসাং ডিভাইসের একই মডেলে Exynos এবং Snapdragon দুটো আলাদা ভার্সন দেওয়া থাকে, আর আপনার কোন সংষ্করণটি নেওয়া উচিৎ ।

Exynos

স্যামসাংয়ের Exynos চিপসেটযুক্ত ডিভাইসগুলো মূলত এশিয়ান মার্কেটে বেশি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। তাদের মধ্যে আমাদের বাংলাদেশও পড়ে! তাই অফিসিয়াল ভাবে স্যামসাংয়ের ডিভাইসগুলোতে আপনি Exynos প্রসেসর বেশি দেখতে পাবেন। Snapdragon ভার্সনটি পেতে হলে আপনাকে আনঅফিসিয়াল ভাবে কিনতে হবে এবং এটি একটি আলাদা প্যাড়া!
এই এশিয়ান মার্কেটে স্যামসাংয়ের নিজস্ব Exynos ব্যবহার করার মূল কারণ হচ্ছে সাপ্লাই চেইন ম্যানেজমেন্ট! না আমি কোনো BBA এর সাবজেক্টের কথা বলছি না! স্যামসাং একটি বেশ বড় গ্লোবাল ব্র্যান্ড, সারা বিশ্বে তাদেরকে প্রচুর পরিমাণে স্মার্টফোন উৎপাদন করতে হয়। এখন অন্য কোম্পানির প্রসেসরের উপর নির্ভরশীলতা কমাতেই এশিয়ান মার্কেটে স্যামসাং তাদের নিজস্ব প্রসেসর ব্যবহার করে থাকে। মনে রাখবেন যে স্যামসাং একটি এশিয়ান ব্র্যান্ড, তাই এই অঞ্চলে নিজস্ব চিপসেট ব্যবহার করার মাধ্যমে অন্য কোম্পানির উপর নির্ভরশীলতা কমানো পাশাপাশি স্মার্টফোনের অভারঅল দাম কমানো যায়। নিজস্ব চিপসেট হওয়ায় বিভিন্ন ধরণের খরচ এখানে বাঁচিয়ে স্মার্টফোনটির দাম কমিয়ে আনা যায়। তাই দেখবেন যে লেটেস্ট Samsung Galaxy S20 FE ফোনটির Exynos ভার্সনের দাম Snapdragon ভার্সনের থেকে তুলনামূলক ভাবে কম হয়ে থাকে।

Snapdragon VS Exynos : প্রসেসর কোর

স্মার্টফোন কোম্পানিগুলো যখন তাদের প্রসেসরকে ডিজাইন করে তখন তারা এটাকে একদম শূন্য থেকে শুরু করে না। তারা সরাসরি ARM (Advanced RISC Machines) থেকে শুরু করে। যেটা RISC (Reduced Instruction Set Computer) ব্যবহার করে থাকে আর এই কারণেই আমরা বিশাল কম্পিউটার চিপসেটকে মোবাইল আকৃতিতে রূপান্তর করতে পেরেছি।

Reduced হবার কারণে মোবাইল SOC গুলো কম্পিউটার প্রসেসরের থেকে সাইজে ছোট এবং একই সাথে পারফরমেন্সেও পিছিয়ে থাকে। কারণ সাইজের ছোট করার জন্য প্রতি সেকেন্ডে এক মিলিয়নের মতো Instruction কে বাদ দিয়ে দেওয়া হয়। আর তাই অক্টাকোর মোবাইল প্রসেসরের থেকে একটি কোর আই ৭ পিসি প্রসেসরের পারফরমেন্স অনেক বেশি হয়ে থাকে।

ARM তাদের প্রসেসরগুলোকে “Cortex” বলে থাকে এবং স্টক প্রসেসরগুলোকে কোয়ালকম এব স্যামসাংকে সাপ্লাই করে থাকে। আর সেখান থেকে স্যামসাং এটাকে মডিফাই করে এবং Cortex এর নাম বদলিয়ে নিজস্বভাবে “Mongoose” বলে থাকে। অন্যদিকে কোয়ালকম এটাকে মডিফাইয়িং করে “Kryo Cores” বলে। আর বলা বাহুল্য যে , এই দুটি মডিফাইড কোরগুলো তাদের Stock Cortex কোরের থেকে অনেক দ্রুত গতির হয়।

ছবি: Mrwhosetheboss

Kryo চিপসেট ফ্যামিলির লেটেস্ট সদস্য হচ্ছে Kyro 680 core (যেটা Snapdragon 888 য়ে পাওয়া যাচ্ছে) এটা Cortex-X1 এর মডিফাইড কোয়ালকম ভার্সন। কোয়ালকমের ভাষ্য মতে এটা স্যামসাংয়ের M5 এবং স্টক Cortex-X1 এর থেকে ২৩% বেশি ফাস্ট! আর এখন পর্যন্ত স্যামসাং তাদের Exynos প্রসেসরের Raw Performance দিয়ে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগনকে হারাতে পারেনি। কিছুটা হলেও পারফরমেন্সে স্ন্যাপড্রাগনের থেকে Exynos পিছিয়ে থাকেই!

GPU

প্রসেসরেই পিছিয়ে আছে এমন নয়, বরং GPU বা গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিটের ক্ষেত্রেও কোয়ালকম SoC প্রতিবার Exynos প্রসেসরকে হারিয়ে আসছে। তাও আবার বেশ বড় ব্যবধানে!

এটার মূল কারণ হচ্ছে স্যামসাং সরাসরি ARM এর স্টক Mali জিপিইউ ব্যবহার করে থাকে, যেখানে কোয়ালকম এই স্টকের উপর নিজস্ব কাস্টম Adreno জিপিইউ মডিফাই করে ব্যবহার করে থাকে, তাই এই দুটি প্রসেসরের GPU পারফরমেন্স এর গ্যাপ বিশাল হয়ে থাকে।
অন্যদিকে কোয়ালকমে আলাদা ভাবে Hexagon DSP (একটি কাস্টম ইউনিট) ব্যবহার করে থাকে যার কারণে ইমেজ প্রসেসিংয়েও Exynos এর থেকে কোয়ালকম স্ন্যাপড্রাগন প্রসেসরগুলো এগিয়ে থাকে।

স্ট্যাবল পারফরমেন্স

সোর্স: gsmarena

Galaxy S21 Ultra ডিভাইসের স্ট্যাবল পারফরমেন্স টেস্ট রেজাল্ট (Antutu) উপরে দিয়ে দেওয়া হলো। আপনারা নিজেই দেখতে পাচ্ছেন মডেলরটির স্ন্যাপড্রাগন ভার্সনটি বেশ দীর্ঘসময় থেকে তার পিক পারফরমেন্সটি ধরে রাখতে পেরেছে, কিন্তু এক সময়ে কিছুটা ড্রপ করে। অন্যদিকে Exynos ভার্সনে দেখুন, শুরু থেকে খুবই দ্রুত পারফরমেন্স ড্রপ হতে থাকে, ড্রপ হতে হতে একদম কমে যায়। অর্থাৎ Exynos ডিভাইসে টানা হেভি কাজ করতে থাকলে পারফরমেন্স ড্রপ হবে।
এর মূল কারণ হচ্ছে ডিভাইসের হিট! Exynos ডিভাইস হেভি প্রেসারে Snapdragon এর থেকে অনেক বেশি হিট আপ হয়ে থাকে (সাধারণত)

আপনার কোনটা নেওয়া উচিত?

Exynos কে প্রতিটি ক্ষেত্রে Snapdragon প্রসেসর হারিয়েছে। Raw পারফরমেন্স থেকে শুরু করে ক্যামেরা ইমেজ ডেলিভারি, ব্যাটারি লাইফ, পিক পারফরমেন্স, ডিভাইস হিট সব ক্ষেত্রেই Snapdragon এগিয়ে রয়েছে।

মজার ব্যাপার কি জানেন? স্যামসাং তাদের নিজের দেশ সাউথ কোরিয়াতে কিন্তু Exynos ডিভাইস ব্যবহার করে না!

তাই কোনো স্যামসাং ডিভাইস কেনার সময় যদি দেখেন ওই মডেলের Exynos আর Snapdragon দুটি সংস্করণ রয়েছে তাহলে অবশ্যেই Snapdragon ভার্সনটি কিনবেন! কারণ বাজেট সেকশনে Exynos কিনলে পারফরমেন্স ড্রপ, ব্যাটারি হিট আপ, ক্যামেরা কোয়ালিটি সব খানেই ধরা খাবেন। আর ফ্ল্যাগশীপ লেভেলে পারফরমেন্সের দিকে তেমন পার্থক্য খুঁজে না পেলেও ১/২ বছর পর দেখবেন যে ডিভাইসটি প্রচুর Slow হয়ে যাবে। তাই কয়েক হাজার টাকা বাঁচানোর জন্য Exynos ডিভাইস না কিনে একটু বেশি খরচ করে Snapdragon ডিভাইস কিনুন।

বোনাস:

Samsung ডিভাইসে Exynos আর Snapdragon এর লেটেস্ট অবস্থা জানতে Mrwhosetheboss এর এই ভিডিওটি দেখতে পারেন:

ভিডিও দেখলেই বুঝতে পারবেন যে পারফরমেন্স, ব্যাটারি লাইফ, সেট হিট হওয়া, দীর্ঘক্ষণ যাবৎ একই পারফরমেন্স ডেলিভারির এবং ক্যামেরা কোয়ালিটি মানে সবকিছুতেই প্রসেসরের ভূমিকা থাকে। আর এখনো স্ন্যাপড্রাগনের থেকে কিছুটা পিছিয়ে রয়েছে স্যামসাংয়ের Exynos! তবে GPU সেকশনে AMD এর সাথে Samsung এর কাজ করার কথা শোনা যাচ্ছে, সেটা যদি হয় তাহলে AMD গ্রাফিক্সের সাথে Exynos চিপসেট বেশ আপগ্রেড হবে! কিন্তু আপাতত কোনো বাজেট সেকশনেই Exynos ডিভাইস কেনা থেকে বিরত থাকার পরামর্শ থাকলো! বাকিটা আপনার হাতে।

সোর্স লিংক সমূহ:  FossbytesgsmarenaLaterClips

Share This Article

Search