Snapdragon 845 vs A12 Bionic
গত বছরের ডিসেম্বর মাসে (২০১৭) যখন Qualcomm Snapdragon 845 প্রসেসরটি বাজারে প্রথমবারের মতো আসে তখন চারিদিকে বেশ হৈচৈ পড়ে যায়। মাত্র 10nm প্রসেসের তৈরি এই চিপসেটটি দিয়ে স্মার্টফোনের পারফরমেন্স বৃদ্ধি সহ ব্যাটারী লাইফ ইমপ্রুভমেন্ট করা সম্ভব। আর তখন থেকেই অ্যান্ড্রয়েড সেক্টরে ফ্ল্যাগশীপ প্রসেসর চিপসেট হচ্ছে এই স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫। তবে সেটা এক বছর আগের হিসাব। বর্তমানে আমরা স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ প্রসেসরের কয়েকটি প্রতিদ্বন্ধি প্রসেসর চিপসেট ইতিমধ্যেই বাজারে দেখতে পাচ্ছি, এদের মধ্যে রয়েছে অ্যাপলের A12 Bionic এবং হুয়াওয়ের Kirin 980 চিপসেট। উল্লেখ্য যে A12 Bionic এবং Kirin 980 দুটো চিপসেটই 7nm process ব্যবহার করেছে যা বিশ্বের স্মার্টফোনের চিপসেটে এই প্রথম। তবে আজ Kirin 980 নিয়ে কথা বলবো না, আজ কথা বলবো স্মার্টফোন সেক্টরের দুই মূল প্রতিযোগী অ্যান্ড্রয়েড এবং অ্যাপলের আইফোনের লেটেস্ট ফ্ল্যাগশীপ প্রসেসর স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ এবং A12 Bionic চিপসেটকে নিয়ে। তো প্রথমেই এই দুটি চিপসেটের স্পেসিফিকেশনগুলো এক নজরে দেখে নেই:
বিষয় | অ্যাপল A12 Bionic | Snapdragon 845 |
ডিজাইন প্রসেস | 7nm | 10nm |
আর্কিটেকচার | ৬৪ বিট | ৬৪ বিট |
সিপিইউ | ৬ কোরের প্রসেসর (2x Performance Cores + 4x Efficiency Cores) | ৮ কোরের Kryo 385 সিপিইউ যেটা ২.৮ গিগাহার্জ পর্যন্ত স্পিড দিতে পারবে |
জিপিইউ | অ্যাপলের ডিজাইনকৃত ৪ কোরের জিপিইউ | Qualcomm Adreno 630 |
ক্যামেরা | অ্যাপলের ISP | Qualcomm Spectra 280 ISP |
চার্জিং | ওয়্যারল্যাস চার্জিং
USB দিয়ে নরমাল চার্জিং |
Qualcomm Quick Charge 4+ |
সিকুরিটি | ফেইস আইডির জন্য Neural Engine | ফেস লক, ফিঙ্গারপ্রিন্ট লক, Iris, ভয়েস লক |
পারফরমেন্স
কোয়ালকমের ২০১৮ সালের ফ্ল্যাগশীপ চিপসেট স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ এর মূল দুটি কী ফিচার হচ্ছে স্পিড এবং পাওয়ার। স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটটি হচ্ছে একটি ৬৪ বিটের অক্টা কোর চিপ যেটা স্যামসংয়ের 10nm ডিজাইন প্রসেসের মাধ্যমে নির্মিত হয়েছে। স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটে সিপিইউ হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Kryo 385 কে, এটায় রয়েছে 4টি Performance কোর এবং 4টি Efficiency কোর। পারফরমেন্স কোরগুলো Cortex-A75 লেবেলে ২.৮ গিগাহার্জ ক্লক স্পিডে থাকবে এবং Efficiency কোরগুলো Cortex-A55 লেবেলে ১.৭ গিগাহার্জ ক্লখ স্পিডে থাকবে। এই দুটি কোর সেক্টরগুলোকে সঠিক ভাবে সমন্বিত করে স্মার্টফোনের মাল্টিটাস্কিংকে আরো দ্রুত গতি দেওয়া হয়েছে এবং লেটেন্সি রেটকে আরো নিম্ন করা হয়েছে। এছাড়াও স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটে রয়েছে L2 Cache এবং আরো রয়েছে Shared 2MB L3 Cache যেগুলো আপনার স্মার্টফোনের সঠিক কাজের জন্য সঠিক পারফরমেন্স দিতে পারবে। অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন সিরিজের আগের মডেলগুলোর থেকে ৮৪৫ চিপসেটটি তুলনামূলকভাবে কম বিদ্যুৎ খাবে। মানে ৮৪৫ চিপসেটযুক্ত স্মার্টফোনগুলোতে তুলনামুলক বেশিক্ষণ চার্জ থাকবে। আর Qualcomm Quick Charge 4+ এর মাধ্যমে এই স্মার্টফোনগুলোকে দ্রুত চার্জও করা যাবে।
এদিকে A12 Bionic চিপসেটে রয়েছে ৬টি কোর, যাদের মধ্যে ২টি হচ্ছে Performance কোর এবং ৪টি হচ্ছে Efficiency কোর। A11 থেকে A12 তে তেমন উল্লেখযোগ্য পারফরমেন্সের বৃদ্ধি ঘটেনি তবে A12 চিপসেটটি আগের মডেলের থেকে কম বিদ্যুৎ ব্যবহার করবে এবং এটি 7nm প্রসেসর। আর A12 Bionic প্রসেসরের আরেকটি চমৎকার ফিচার হচ্ছে হেভি ইউজের সময় অনান্য স্মার্টফোনের থেকে এই চিপসেটের আইফোনগুলো কম হিট হবে বা গরম কম হবে।
বেঞ্চমার্কের কথা যদি বলি তাহলে অ্যাপল তাদের প্রসেসরের বেঞ্চমার্ক স্কোর খুবই কম ইন্টারনেটে প্রকাশ করে থাকে। তবে একটি ফ্রেঞ্চ ওয়েবসাইট (iGeneration) থেকে A12 Bionic এর বেঞ্চমার্ক জানা গিয়েছে, আর তা হলো সিংঙ্গেল কোরে ৪৬৭৩ পয়েন্টস এবং মাল্টিকোরে ১০৯১২ পয়েন্টস। অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটের ৮ গিগাবাইট র্যামের OnePlus 6 ডিভাইসের বেঞ্চমার্ক স্কোর হচ্ছে সিঙ্গেল কোরে ২৪১১ পয়েন্টস এবং মাল্টিকোরে ৮২০৪ পয়েন্টস। তবে এই স্কোরটি ডিভাইস ভেদে হালকা কমবেশি হতে পারে। তো পারফরমেন্সে দেখা গেল যে ৮ কোরের স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ এর থেকে ৬ কোরের A12 Bionic চিপসেটটি আপনাকে বেশি পারফরমেন্স দিতে পারবে।
আর্টিফিসিয়াল ইন্টেলিজেন্স
AI এর ক্ষেত্রে অ্যাপলের A12 Bionic চিপসেটটি বাজিমাত করেছে। কারণ এতে দুটি কোরের Neural Engine এর পরিবর্তে আটটি কোরের Neural Engine ব্যবহার করা হয়েছে যেটি প্রতি সেকেন্ডে ৫ ট্রিলিয়ন AI টাস্ক সম্পাদন করতে পারবে। চিপসেটে AI ফিচারটি কেন দরকার হয়? উন্নত ফেস ডিটেক্টশন, Portrait ক্যামেরা মোডে উন্নত edge ডিটেক্টশন এবং আপনার ভবিষ্যৎ টাস্কগুলোর অনুমান ইত্যাদি কাজের ক্ষেত্রে স্মার্টফোনে AI এর প্রয়োজন হয়ে থাকে। এছাড়াও সঠিক টাস্কে সঠিক পাওয়ার প্রসেসর স্মার্টফোনকে দিচ্ছে কিনা এ ব্যাপারটিও AI পর্যবেক্ষণ করে থাকে।
অন্যদিকে Snapdragon 845 চিপসেটে রয়েছে তৃতীয় প্রজন্মের মোবাইল AI প্রযুক্তি সেটার মূল ফোকস পয়েন্ট হচ্ছে কোর অপটিমাইজেশন। এখানে AI চিপসেটকে কোন টাস্কে কতটুকু পরিমাণের পারফরমেন্স লাগবে সেটা পর্যবেক্ষণ করে থাকে। আর আইফোনের মতোই অ্যান্ড্রয়েডেও ফেইস আনলক এবং Bokeh এর মতো ক্যামেরা ইফেক্ট পাবার জন্য AI কে ব্যবহার করা হয়ে থাকে। অ্যাপলের AI থেকে স্ন্যাপড্রাগনের AI এর অন্যতম পার্থক্য হচ্ছে স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ এর AI টি বিভিন্ন AI Frameworks যেমন Google TensorFlow, Facbook Caffe 2, Open Neural Network Exchange (ONNX) ইত্যাদিকে সার্পোট করে। এর মাধ্যমে অ্যাপ নির্মাতারা এই AI ফিচারকে তাদের অ্যাপে যোগ করে নিতে পারবেন যা অ্যাপলে অনেকাংশেই করা যায় না।
ক্যামেরা ফিল্ডে উন্নতি
বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোর ক্যামেরাতে কিন্তু এখন চিপসেটের ভূমিকা থাকে। বিশেষ করে DSLR এর মতো বিভিন্ন ইফেক্ট এখন স্মার্টফোনেই আপনারা পাচ্ছেন, আর এর সবই সম্ভব হচ্ছে উন্নত চিপসেটের টেকনোলজির কারণে। A12 Bionic প্রসেসরে আপনি পাবেন Neural ইঞ্জিনের সার্পোট, যেটির মাধ্যমে ক্যামেরার শটগুলোকে AI রিয়েল-টাইমে পর্যবেক্ষণ করে এবং কোনো Enhancements এর প্রয়োজন পড়লে সেটা চোখের পলকেই সাথে সাথে করে নিতে পারে। আর তাই A12 Bionic চিপসেটযুক্ত আইফোনগুলো অনান্য স্মার্টফোনের থেকে তুলনামূলকভাবে উন্নত মানের ছবি তুলতে সক্ষম হয়।
অন্যদিকে Snapdragon 845 চিপসেটে ক্যামেরা ফিল্ডে নতুন ফিচার হিসেবে পাবেন Qualcomm Spectra 280 ISP যেটার মাধ্যমে আপনি সিরিজের আগের চিপসেটের থেকে উন্নত কালার রিপ্রোডাক্টশন, উন্নত পিক্সেল কোয়ালিটি, উন্নত noise reduction, উন্নত Electronic Image Stabilizaiton সহ বিভিন্ন ফিচার পাবেন। এছাড়াও এই চিপসেটটি বিশ্বের সর্বপ্রথম চিপসেট যেটি 4K HDR ভিডিওগুলো সার্পোট করতো। তবে বর্তমানে নতুন আইফোন XS, XR এবং XS Max গুলোও 4K HDR ভিডিও ফরম্যাটটি সার্পোট করছে।
তবে দিনের শেষে একটা কথা বলা যায়, তা হলো ক্যামেরা ফিল্ডে Snapdragon 845 চিপসেটকে র্স্মাটফোন কোম্পানিগুলোর ইউটিলাইজেশনের উপরেই এর ফিচারগুলো আপনি উপভোগ করতে পারবেন। উদাহরণ স্বরূপ শাওমির Poco F1, স্যামসংয়ের Galaxy Note 9 এবং OnePlus 6 ডিভাইসগুলোকেই দেখুন। এই সকল অ্যান্ড্রয়েড ডিভাইসেই স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটটি রয়েছে কিন্তু আপনি গ্যালাক্সি নোট ৯ বা ওয়ানপ্লাস ৬ ডিভাইসের ক্যামেরা কোয়ালিটি কখনোই Poco F1 ডিভাইসে পাবেন না। তবে অন্যদিকে অ্যাপলে কিন্তু এই ভেদাভেদটি নেই।
তো পরিশেষে আপনারাই বুঝতে পারছেন যে, স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটকে প্রায় প্রতিটি ক্ষেত্রেই A12 Bionic চিপসেটটি হারিয়ে দিয়েছে। তারা দামেরও একটা প্রশ্ন থাকে এখানে। কারণ একটি স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ চিপসেটযুক্ত স্মার্টফোন আপনি ৩০ হাজার টাকায় পেয়ে যাবেন (poco f1) কিন্তু আপনি A12 Bionic চিপসেটের আইফোন কিনতে গেল ৮০ হাজার টাকার বেশি আপনাকে খরচ করতে হবে। তবে এখানে আপনারা বলতে পারেন যে 10nm এবং 7nm প্রসেস হওয়ায় এই দুটি চিপসেটের মধ্যে পার্থক্য বেশি। তাহলে আগামী বছর 7nm প্রসেসের স্ন্যাপড্রাগন ৮১৫০ টি লঞ্চ হওয়ার আগ পর্যন্ত আর বেশি কিছু বলতে পারছি না। উল্লেখ্য যে আপকামিং স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ প্রসেসরটির নাম পরিবর্তন করে Snapdragon 8150 রাখা হয়েছে।