“এক দেশ এক রেট” নিয়ে যত কনফিউশন ও উত্তর

গত ৬ই জুন বাংলাদেশ টেলিকমিনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন “এক দেশ এক রেট” নামে ব্রডব্যান্ড ইন্টারেটের জন্য নতুন ট্যারিফ ঘোষনা করে। এর মাধ্যমে সরকার মূলত গ্রাহক পর্যায়ে ইন্টারনেটের দামকে আরো হাতের নাগালে ও শৃঙ্খলার মধ্য নিয়ে আসার জন্য একধাপ এগিয়ে গিয়েছে। “এক দেশ এক রেট” ট্যারিফের পরিকল্পনা শুধু করে ২০১৮ সাল থেকে যা কিনা ডিজিটা বাংলাদেশে বিনির্মানের পূর্বশর্ত। সংশ্লিষ্ট সকলের সাথে দীর্ঘ আলোচনার পর এই ট্যারিফ ঘোষনা করেছে। কিন্তু এই ট্যারিফ ঘোষনার পর গ্রাহক সাধারনের মনে বেশ কিছু প্রশ্নের উদয় হয়েছে। আমরা আজকের আর্টিকেলে চেষ্টা করব সেইসব প্রশ্নগুলো খোলাখুলিভাবে আলোচনা করতে।

“এক দেশ এক রেট” ট্যারিফ কি?

এই ট্যারিফের আন্ডারে মূলত তিনটি ব্যাসিক প্যাকেজের কথা বলেছে বিটিআরসি। যেখানে 5Mbps, 10Mbps, 20Mbps স্পিডের কথা বলা হয়েছে। নির্ধারিত মূল্য অনুযায়ী সারাদেশের যেকোনো প্রান্তে যেকোনো আইএসপি (ISP = Internet Service Provider) 5Mbps এর জন্য 500 টাকা, 10Mbps এর জন্য 800 টাকা এবং সবশেষে 20Mbps এর জন্য 1200 টাকা চার্জ করতে পারবে।

কেন এই ট্যারিফ ঘোষণা করল বিটিআরসি?

এক কথা উত্তর হচ্ছে, শহর ও গ্রামের ইন্টারেন্টের দামের মধ্যে ভারসাম্য নিয়ে আসা। মেট্রোপলিটন এরিয়াতে গ্রাহকরা দাম ও অন্যান্য সুবিধাসহ যেভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট উপভোগ করতে পারে গ্রাম বা মফস্বল শহরের গ্রাহকের সবদিক দিয়েই বঞ্চিত থাকে। হোক সেটা এক্সট্রা ফ্যাসিলিটি কিংবা ইন্টারনেটের দাম দিয়ে। এই ট্যারিফের ফলে আশা করা যাচ্ছে শহর ও গ্রামের ইন্টারনেটের দামের মধ্যে বৈষম্য কমে আসবে। তাছাড়া করোনো মহামারীতে সারাদেশে সমান ভাবে ইন্টারনেটে কানেকটিভিটির প্রয়োজন আগের তুলনায় বহুগুন বেড়ে গিয়েছে। সব দিক থেকে বিবেচনা করলে এই ট্যারিফ ঘোষনা যৌক্তিক বটে।

এতে কি ইন্টারনেটের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে না কমেছে?

এই ট্যারিফ ঘোষনার কারণে ইন্টারনেটের মূল্য বৃদ্ধি পায়নি। এইখানে যে বিষয়টা লক্ষ্য করা উচিত সেটা হচ্ছে সর্বোচ্চ মূল্য। অর্থাৎ আপনার আইএসপি চাইলে এর চেয়ে অনেক কম দামেও আপনার কাছে ইন্টারেন্ট/ব্যান্ডউইথ সেল করতে পারবে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী এর বেশি চার্জ করতে পারবে না। ঢাকা কিংবা চট্টগ্রামসহ অনেক শহরেই ইতিমধ্যে এর চেয়ে কম দামে আরো বেশি স্পিডের প্যাকেজ পাওয়া যায়। যারা বিটিআরসি প্যাকেজ ঘোষনা করার আগেই কমদামে ইন্টারনেট দিয়ে আসছে তাঁরা খুব সম্ভবত তাঁদের প্যাকেজগুলো দাম বাড়াবে না। কিন্তু সব আইএসপি হয়ত একদম লোয়েস্ট প্যাকেজ যা কিনা 5Mbps/500 টাকা এর আশপাশে প্যাকেজ এভাইলেবল নাও করতে পারে।

প্যাকেজগুলো কি শেয়ার্ড?

অবশ্যই শেয়ার্ড কানেকশন। প্রকৃতপক্ষে আমাদের বাসা বাড়িতে যে দামে ইন্টারনেট সার্ভিস দেওয়া হয় তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে শেয়ার্ড কানেকশন। তেমনি এইবার ঘোষিত ট্যারিফেও বিটিআরসি শেয়ার্ড কানেকশনের কথা বলেছে। এই ক্ষেত্রে তাঁরা শেয়ার্ড কানেকশনের একটি রেশিও নির্ধারণ করে দিয়েছে। সেটি হচ্ছে ১ঃ৮। অর্থাৎ একটি লাইন থেকে সর্বোচ্চ ৮ জনকে কানেকশন দেওয়া যাবে। খবর নিয়ে দেখা গেছে, কিছু কিছু আইএসপি ১ঃ৬ আবার কিছু কিছু আইএসপি ১ঃ৮ এর বেশি রেশিও ফলো করত। এখন হয়ত সরকারী বাধ্যবাধকতার কারণে সবাই একই রেশিও ফলো করতে পারে।

এক্সট্রা স্পিডের কি পাওয়া যাবে না?

আমাদের দেশে মূল ব্যান্ডউইথের সাথে ম্যাক্সিমাম আইএসপি কিছু এক্সট্রা ব্যান্ডউইথ দিয়ে থাকে। যেমনঃ ফেইসবুক ক্যাশ, গুগল ক্যাশ ও বিডিআইএক্স ক্যাশ ইত্যাদি। মূল ব্যান্ডউইথের পাশাপাশি এই এক্সট্রা স্পিড আমাদের ইন্টারনেট সার্ফিংকে স্মুথ রাখে। কিন্তু বিটিআরসির ঘোষিত ট্যারিফের কোনো প্যাকেজেই এক্সট্রা স্পিডের কথা বলা হয়নি। না বলা হলেও এটা নিশ্চিত করা বলা যায় যে, ম্যাক্সিমাম আইএসপি অবশ্যই এক্সট্রা স্পিড দিবে। অনেকে বড়জোর মূল্য এডজাস্ট করতে গিয়ে স্পিড কমাতে পারে। বস্তুত এক্সট্রা স্পিডের কারনে মূল ব্যান্ডউইথের উপর চাপ কম পরে। নাইতো দেখা যাবে শেয়ার্ড কানেকশনে সবাই পুরো ব্যান্ডউইথ ডিমান্ড করবে। ফলে স্পিড প্রচুর উঠানামা করবে। এইজন্যই মূলত ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার’রা নিজস্ব মুভি সার্ভার থেকে শুধু করে আইপি টিভি এবং এক্সট্রা ক্যাশ স্পিড দিয়ে থাকে যাতে করে পিক আওয়ারে ব্যান্ডউইথ ডিমান্ড টোটাল ব্যান্ডউইথ থেকে বেশি হয়ে না যায়।

এই ট্যারিফে কি সার্ভিস চার্জের কথা বলা হয়েছে?

আমরা জানি নতুন সংযোগ নিতে চাইলে আইএসপিকে অবশ্যই একটি ওয়ান টাইম ইনস্টলেশন চার্জ দিতে হয়। কেননা একটি কানেকশন দিতে আইএসপি কয়েকটি ইকুয়েপমেন্ট ব্যবহার করতে হয়। এটি আইএসপি ভেদে ভিন্ন হয় থাকে। অনেক আইএসপিকে দেখা যায় ৫০০ টাকায় আবার অনেক আইএসপিকে দেখা যায় ২০০০ টাকাও নিচ্ছে। কিন্তু বিটিআরসি তাঁদের “এক দেশ এক রেট” ট্যারিফে সার্ভিস চার্জ নির্ধারণ করে দেয়নি। ফলে আগেরম তই সার্ভিস প্রোভাইডার’রা ইচ্ছামত গ্রাহককে চার্জ করতে পারবে।

আইএসপি না মানলে কি করতে পারি?

এইক্ষেত্রে আপনি অভিযোগ করতে পারেন। সরাসরি “১০০” এই নাম্বারে কথা বলে অথবা http://btrc.isslcrm.com/ComplainManagement এই লিঙ্কে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। এছাড়া ISPAB কে জানালেও তারাও সমাধান করে দিবে বলে জানিয়েছে। তবে একটা বিষয় খেয়াল রাখবেন সেটি হচ্ছে আপনার আইএসপি অবশ্যই বিটিআরসি নিবন্ধিত হতে হবে। লোকার রিসেলার হলে অভিযোগ করতে পারবেন না।

ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের স্ট্যাবিলিটি অনেক গুরুপত্বপূর্ণ একটি ইস্যু। হাই লেটেন্সি, অনেক বেশি প্যাকেট লস, স্পিড উঠানামা ইত্যাদি ইস্যু ব্রডব্যান্ড এক্সপিয়েন্সকে দুর্বিষহ করে তোলে। এইসব ইস্যুতে বিটিআরসি কঠোর মনিটরিং দরকার আছে। তাহলে “এক দেশ এক রেট” সফলভাবে বাস্তবায়িত হতে পারবে।  

বিঃদ্রঃ এইখানে কিছু স্পেকিউলেশন করা হয়েছে সামগ্রিকভাবে। আমাদের স্পেকিউলেশন হয়ত এককভাবে আপনার আইঅএসপির নেওয়া ডিসিশনের সাথে নাও মিলতে পারে।

Share This Article

Search