কম্পিউটার ব্যবহার করেন কিন্তু মাইক্রোসফট ওর্য়াড কে চিনেন না এমন লোক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না। মাইক্রোসফট অফিস প্যাকেজের সবথেকে বহুল ব্যবহৃত এবং আমাদের দেশে সব থেকে জনপ্রিয় মাইক্রোসফট প্রোগ্রাম হচ্ছে MS Word । বিশ্বে একে ওয়ার্ড প্রসেসিং এর স্ট্যান্ডার্ড ধরা হয়। অফিস আদালত, স্কুল কলেজের অধিকাংশ কাজ করা হয় এই মাইক্রোসফট ওর্য়াড অ্যাপটি দিয়ে। ব্যক্তিগত ভাবে আমরা সিভি বানাতে, কলেজের অ্যাসাইনমেন্ট তৈরি করতে, গবেষণার ড্রাফট লিখতে, ব্যবসায়িক বিভিন্ন রির্পোট ইত্যাদি হাজারো আমারা প্রতিদিনই ওর্য়াড অ্যাপটি ব্যবহার করি। এছাড়াও বেসিক গ্রাফিক্স কাজেও ওয়ার্ড ব্যবহার করা যায় যেমন কভার পেজ বানানো, বিজনেস কার্ড বানানো, ইবুক বানানো , বিজনেস কার্ড ইত্যাদিও ওর্য়াডের সাহায্যে on-the-go হিসেবে দ্রুত বানানো যায়।
কম্পিউটার সম্পর্কে কোনো কোর্স করতে গেলে প্রথমেই মাইক্রোসফট অফিসের কথা শুনবেন। আজ আমি মাইক্রোসফট ওর্য়াডের কিছু টিপস নিয়ে এসেছি। আমি উইন্ডোজ ১০য়ে অফিস ২০১৬ ভার্সনটি চালাচ্ছি। টিপসগুলো ব্যবহার করতে হলে আপনার অবশ্যই Office 2013 বা এর পরের ভার্সনগুলোর প্রয়োজন হবে। বর্তমানে অফিসের ২০০৭ , ২০১০ এই ভার্সনগুলো বেশ আউটডেটেড হয়ে গিয়েছে।
টিপস ১: বিল্ট ইন Clipboard History Tool
ডকুমেন্টে কাজ করার সময় আমাদেরকে হরহামেশা অনেক কপি পেস্ট এর কাজ করতে হয়। ওর্য়াডে ড্রাগ এন্ড ড্রপ অপশন রয়েছে, কিবোর্ডের Ctrl + X, Ctrl+C, Ctrl+V শর্টকাট রয়েছে। এছাড়াও অফিসে রয়েছে বিল্ট ইন ক্লিপবোর্ড টুল। এর মাধ্যমে আপনি সর্বোচ্চ ২৪টি টেক্স বা ইমেজ আইটেম কপিতে ধরে রাখতে পারবেন।
ধরেন কিছুক্ষণ আগে একটি লেখা বা ইমেজ কপি করেছেন সেটা এখন পেস্ট করতে হবে সেটা আপনি এই ক্লিপবোর্ড থেকে ক্লিকের মাধ্যমে নিয়ে আসতে পারবেন। না হলে আবারো সেই লেখার সোর্সে যেতে হবে।
শুধুমাত্র এমএস ওয়ার্ড নয় বরং আপনি অনান্য অফিস অ্যাপ যেমন এক্সেল, পাওয়ারপয়েন্টেও আপনি এই ক্লিপিং টুলটি পাবেন। প্রতিবার কোনো কিছু কপি করলে এই টুলে সেই কপিকৃত লেখা বা ইমেজটি সেভ থাকবে।
টিপস ২: PDF নিয়ে চর্চা
আপনি জানেন কি আপনি ওর্য়াডেই বেসিক PDF এডিটিং করতে পারবেন? পিডিএফ বর্তমান কর্পোরেট জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ফাইল ফরম্যাট। অফিস ২০১৩ থেকে MS Word এ আপনি পিডিএফ এক্সপোর্ট এবং পিডিএফ থেকে ওর্য়াডে কনভার্ট করতে পারবেন।
ওর্য়াড ফাইলকে PDF এ সেভ করতে চাইলে ফাইলটি সেভ করার সময় Save as Type এর ঘরে PDF ফরম্যাটটি সিলেক্ট করে দিন।
আপনি চাইলে সেভ করার সময় Options বাটনে ক্লিক করে পিডিএফ এর এডভান্স কিছু অপশন টুইক করে নিতে পারবেন। এক্সেলে এভাবে PDF করার সময় অবশ্যই অপশন থেকে Whole Worksheet অপশনটি সিলেক্ট করে নিবেন।
টিপস ৩: ফাইল রিকোভারি
ছোটবেলায় ওর্য়াডে কাজ করার সময় ওস্তাদ সবসময় বলতেন যে দুই তিন লাইন কাজ করার পর সবসময় সেভ বাটনে ক্লিক করবা কিংবা Ctrt+S চাপবা। বর্তমানে আইপিএস / ইউপিএস বা ল্যাপটপে কাজ করার সময় আনসেভ ডকুমেন্টের সুরক্ষা নিয়ে আমরা তেমন চিন্তা করি না। তবে ওর্য়াডে কোনো কারণে আনসেভ ডকুমেন্ট থেকে যদি আপনি বেরিয়ে আসেন তাহলে ফাইল রিকোভারির অপশন রাখা হয়েছে Just Incase….
উল্লেখ্য যে এই ভাবে রিকোভার করা ডকুমেন্টটি আপনার পছন্দ নাও হতে পারে, ডকুমেন্টটিতে এডিটিংয়ের প্রয়োজন হতে পারে কারণ সঠিক সময়ে ডকুমেন্টটি রিকোভারিতে নাও যেতে পারে। তবে নাই মামার থেকে কানা মামা ভালো 😉 ।
কতক্ষণ পর পর এভাবে ওর্য়াড আপনার ডকুমেন্টকে রিকোভারিতে নেবে সেটা আপনি Options>Save থেকে সেট করে নিতে পারবেন।
টিপস ৪: Behind Text ইমেজিং
ওর্য়াডে ইমেজ নিয়ে কাজ করার এটি একটি দুদার্ন্ত টিপস। ওয়ার্ডে কোনো ডুকমেন্টে ইমেজ আনার পর সেটাতে ছোটবড় করা কিংবা লেখার মাঝখানে বসাতে গিয়ে আমরা অনেকেই হিমসীম খাই। আবার অনেক সময় ইমেজ নিয়ে ডকুমেন্টে কাজ করার সময় আমরা বিরক্ত হয়ে যাই।
এই বিরক্তিকর ঝামেলা এড়াতে চাইলে আপনি যখন ছবি নিয়ে কাজ করবেন তখন ছবিকে Behind Text হিসেবে দিয়ে রাখবেন। তাহলে দেখবেন যে ইমেজটি নিয়ে বেশ আরামে কাজ করতে পারবেন।
এজন্যে ছবিকে ওর্য়াডে আনার পর ছবির উপর রাইট বাটন ক্লিক করুন, তারপর Wrap Text>Behind Text এই অপশনটি সিলেক্ট করুন।
টিপস ৫: কাস্টমাইজড রিবন ও Quick Access Toolbar
ওর্য়াডে যারা ঘন ঘন কাজ করেন কিংবা অফিস আদালতে প্রতিদিনই ওর্য়াডে বিভিন্ন ডকুমেন্ট এডিট করেন তাদের জন্য রিবন কাস্টমাইজ করে নেওয়াটা বেশ জরুরী। রিবন বলতে ওর্য়াডের উপরের দিকের টুলের নিচের অংশকে বুঝায়। যেখানে অনেক অপশন সামনে এনে রাখা থাকে।
File থেকে Options এ চলে যান। নিচের দিকে কাস্টমাইজ রিবন ও কুইক একসেস টুলবার নামের দুটি ট্যাব পাবেন। এখানে আপনি ওর্য়াডে যে যে কমান্ড বা কাজ প্রতিনিয়ত ঘন ঘন করে থাকেন সেই কমান্ডগুলোকে সামনে নিয়ে রাখতে পারেন। যাতে কাজ করার সময় দ্রুত সেই কমান্ডগুলোতে আপনি একসেস করতে পারেন। এভাবে আপনার বেশ কিছু সময় সাশ্রয় হবে।
টিপস ৬: Word Theme
ওর্য়াডে সাধারণত আমরা সবসময় সাদা রংয়ের থিম দেওয়া থাকতে দেখি। আবার ২০০৭ , ২০১০ থেকে নীল রংয়ের থিম দেওয়া থাকে। আপনি চাইলেই সাদা, নীল ও কালো রং সিলেক্ট করে দিতে পারেন। আমি ব্যক্তিগত ভাবে কালো রং পছন্দ করি এতে ডকুমেন্ট নিয়ে কাজ করার সময় চোখের ডিস্টার্ব কম হয়।
ওর্য়াডের থিম পরিবর্তন করতে হলে File > Options > Color এই পাথে চলে যান।
ওর্য়াডের নতুন ভার্সনে File > Account থেকেও অফিসের ব্যাকগ্রাউন্ড রং পরিবর্তন করতে পারবেন।
অফিস ২০১৩ বা পরবর্তী ভার্সনের লেজিট কপি থাকলে আপনি ব্যাকগ্রাউন্ড স্টাইলও পরিবর্তন করতে পারবেন।
টিপস ৭: দ্রুত Bangla, English অক্ষর পরিবর্তন
যারা অফিসে কাজ করেন তাদের জন্য এই টিপসটি বেশ কাজের। আমরা ডকুমেন্টে কাজ করার সময় বাংলা এবং ইংরেজি দুটি ভাষাতেই আমরা কাজ করে থাকি। কিন্তু ওর্য়াডে বাংলা এবং ইংরেজিতে ফন্ট পরিবর্তন করতে করতেই আমাদের বেশ খানিকটা সময় নস্ট হয়ে যায়। এই সমস্যার একটি ইজি সমাধান হচ্ছে কিবোর্ড শর্টকাট!
প্রথমে ফাইল থেকে অপশনস এ ক্লিক করুন। তারপর কাস্টমাইজ রিবন ট্যাব থেকে কিবোর্ড শর্টকাটস অপশনে ক্লিক করুন।
তারপর ডান দিনের ক্যাটাগরি উইন্ডোর একদম শেষে দেখবেন Fonts অপশন রয়েছে সেটায় ক্লিক করুন। তারপর ডান দিনের Fonts ঘর থেকে প্রথমে SutonnyMJ সিলেক্ট করুন।
এবার নিচের Press new shortcut key এর ফাঁকা ঘরে মাউস ক্লিক করুন এবং কিবোর্ড থেকে যেকোনো ২/৩ টি Key একসাথে চাপুন। আমি এখানে কনট্রোল আর W কী চাপলাম। এবার Assign বাটনে ক্লিক করুন। তারপর আবারো একই প্রক্রিয়ায় Times New Roman ফ্রন্ট্রের একটি শর্টকাট কী সেট করুন।
এরপর থেকে প্রতিবার বাংলায় লেখার জন্য কিবোর্ডের Ctrl+W চাপলে ফ্রন্ট সুতুনি এমজে হয়ে যাবে আর Ctrl+T চাপলে ফ্রন্ট টাইমস নিউ রোমান হয়ে যাবে।