আপনার কি প্রতি বছর ল্যাপটপ আপগ্রেড করা উচিত?

ল্যাপটপ আপগ্রেড ? তাও প্রতিবছর? মনে রাখবেন এটা কিন্তু ডেক্সটপ নয়, যে প্রতিবছর আরো র‌্যাম এড করে কিংবা নতুন গ্রাফিক্স কার্ড যোগ করে পিসিকে বুস্ট করবেন, কারণ ল্যাপটপে আপনি আলাদা করে র‌্যাম, গ্রাফিক্স কার্ড কিংবা কোনো প্রকার বুষ্টিং করতে পারবেন না। শুধুমাত্র ভাগ্য ভালো থাকলে ব্যাটারি নস্ট হলে ওয়ারেন্টি থাকলে নতুন ব্যাটারি লাগাতে পারবেন। তার মানে হচ্ছে ল্যাপটপ আপগ্রেড বলতে একেবারেই নতুন ল্যাপটপ কিনতে হবে আপনাকে। আর বর্তমানে টেকনোলজি এতটাই দ্রুত পরিবর্তি হচ্ছে যে, দেখা যায় যে প্রতি মাসেই নতুন কোনো না কোনো কিছু বের হচ্ছে।
কিন্তু ল্যাপটপ এর বেলায় আমরা প্রতিনিয়তই একে পরিবর্তন করতে পারি না। অন্তত এক বছর ব্যবহার না করে ল্যাপটপ পাল্টানোটাও উচিত নয়। কিন্তু আপনাকে কি আসলেই প্রতি বছর ল্যাপটপ আপগ্রেড করা উচিত? আজ সেটা নিয়েই কথা বলবো। আশা করবো আপনার ল্যাপটপ চাহিদা সার্কেল আজকের পোষ্টটি থেকে ক্লিয়ার হয়ে যাবে।

বি:দ্র: আপনার ল্যাপটপ ২ কিংবা তার থেকে বেশি পুরোনো হয়ে থাকলে সেটাকে অবশ্যই (মানে অবশ্যই) পরিবর্তন করা উচিত, আর সেটা কেন তাও নিচের পয়েন্টগুলোর সাথে মিলিয়ে নেবেন।

Display!

আগে ল্যাপটপ কেনার আগে মানুষ ডিজাইনের উপর বেশি গুরুর্ত্ব দিতো। কিন্তু যুগ পাল্টে গিয়েছে। এখন ক্রেতারা নতুন ল্যাপটপ কেনার আগে সেটার ডিসপ্লে কতটা সুন্দর সেটার উপর বেশি নজর দিয়ে থাকেন। আর এটাই সঠিক। ডিসপ্লে হচ্ছে ল্যাপটপের একটি খুবই Crusial পার্ট। ডিসপ্লে যদি ভালো না হয়ে থাকে আপনার পুরো ল্যাপটপের মজাটাই নস্ট হয়ে যাবে। ভালো ডিসপ্লে যেমন আপনার চোখের কোনো ক্ষতি করে না, ঠিক তেমনি নতুন নতুন টেকনোলজির ডিসপ্লে গুলো কম বিদ্যুৎ খরচ করে, অর্থ্যাৎ Long Run এ গিয়ে এটা আপনার ব্যাটারি লাইফ বৃদ্ধিতে প্রচুর সহায়তা করে থাকে।
এদিকে সুন্দর ডিসপ্লের অন্যতম একটি অংশ হচ্ছে এর Bazel । আর বর্তমানে স্মার্টফোনের মতোই ল্যাপটপগুলোতেও Zero Bazel আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তাহলে বলতে গেলে বলা যায় যে এক বছরের মধ্যে ডিসপ্লে অংশে তেমন উল্লেখ্য পরিবর্তন না পেলে ওই Bazel ডির্পাটমেন্টে অবশ্যই আপগ্রেড দেখতে পাবেন। শুধুমাত্র কম বেজেল এর জন্য নতুন ল্যাপটপ কেনাটা আমি বোকামি বলে মনে করি।
কিন্তু আপনার কাজের জন্য যদি বর্তমানের ডিভাইসের থেকে ছোট বা বড় ডিসপ্লের ল্যাপটপের প্রয়োজন হয় তাহলে সেটা অন্য কথা।
অন্যদিকে আগে মনে করা হতো যে বড় ডিসপ্লেওয়ালা ল্যাপটপগুলো ওজনে বেশি ভারী হয়ে থাকে। কিন্তু বর্তমানের টেকনোলজির সুবাদে বড় ডিসপ্লেযুক্ত ডিভাইসগুলোও ধীরে ধীরে বেশ পাতলা হয়ে যাচ্ছে।

শুধুমাত্র গেমার না হলে আমার মনে হয় 4K বা ১৫ ইঞ্চির বড় ডিসপ্লেওয়ালা ল্যাপটপে না যাওয়াই বেটার। আর ল্যাপটপে গেমিংয়ের থেকে ডেক্সটপে গেমিং করাটা আমার নিজের পারসোনাল পছন্দের। ল্যাপটপ আবিস্কার করা হয়েছে যাতে পিসিকে পোর্টেবল করে সকল কাজ যাতে আরো সহজে করা যায়। এখন গেমিংকে আমি কাজ হিসেবে আখ্যায়িত করবো না, প্রোফেশনাল গেমিং সেটা আলাদা কথা। প্রোফেশনাল গেমিংয়ের সর্বোচ্চ সুবিধা পাবার জন্য আপনি দামি দামি OLED স্ক্রিণের ল্যাপটপের দিকে দেখতে পারে। আর মনে রাখবেন ডিসপ্লের রেজুলেশন যত উন্নত হবে, ব্যাটারি তত কম ব্যাকআপ দেবে। বর্তমানের কথা বিবেচনা করলে 1080P ডিসপ্লের ল্যাপটপই সবার জন্য উপযুক্ত বলে আমি মনে করি। আর ২ থেকে ৩ বা তার বেশি পুরোনো ল্যাপটপ ব্যবহার করলে আপনি অবশ্যই ডিসপ্লে সেকশনে বর্তমানের ল্যাপটপে বেশ উন্নতি দেখতে পাবেন।

Input

ইনপুট সেকশনে এক বছরের মধ্যে কোনো তুমুল পরিবর্তন দেখতে পাবেন না অবশ্য। তবে ২/৩ বছরের মধ্যে তো অবশ্যই দেখতে পাবেন। যেমন বর্তমানের ল্যাপটপগুলোতে ফিঙ্গারপ্রিন্ট স্ক্যানার রয়েছে, রয়েছে এক্সট্রা পোর্ট। নতুন নতুন মডেলে ল্যাপটপে প্রতিনিয়তই ল্যাপটপের কিবোর্ডকে আপগ্রেড করা হচ্ছে। যারা আমার মতো ল্যাপটপে সবসময় টাইপিং করে থাকেন তাদের জন্য ল্যাপটপের কিবোর্ড তো মাখন মনে হয়!
অন্যদিকে যারা মাউসের পরিবর্তনে ল্যাপটের ট্রাকপ্যাডে সবসময় কাজ করে থাকেন তাদের জন্যেও বছর ঘুরতেই নতুন নতুন ফিচার চলে আসবে।

CPU

বর্তমানের ল্যাপটপের সিপিইউ সেকশনে আগের মতো পারফরমেন্স গ্যাপ তেমন একটা নেই। গত বছরের প্রসেসরের থেকে বর্তমানের ল্যাপটপের প্রসেসরে পারফরমেন্সের তেমন আপগ্রেড পাবেন না। কিন্তু Performance এর থেকে Efficiency এর দিকে একটু আপগ্রেড পাবেন। যেমন উন্নত ক্লক স্পিড, পাওয়ার সেভিং মোড ইত্যাদি। যেমন গত বছর Intel i7 8750H কিনলে বর্তমানে আপনি এর আপগ্রেড হিসেবে Core i7-9750H কে পাবেন। তাই অষ্টম জেনারেশনের থেকে নবম জেনারেশনে পারফরমেন্সের তেমন হিউজ আপগ্রেড পাবেন না।
কিন্তু আপনি যদি পঞ্চম জেনারেশনের প্রসেসর ব্যবহার করে থাকেন তাহলে ৯ম জেনারেশনে এসে পারফরমেন্সে হিউজ বুস্ট পাবেন। তাই একমাত্র প্রফেশনাল গেমার, অডিও ভিডিও এডিটিং, গ্রাফিক্স ডিজাইন কিংবা প্রোগ্রামিং বা এনিমেশনের কাজ যদি আপনি করে থাকেন মানে সবসময়ই প্রযুক্তির সর্বোচ্চটা পেতে চাইলেই কেবল মাত্র প্রতিবছর CPU আপগ্রেডের জন্য নতুন ল্যাপটপ কিনতে পারেন। তবে আমি মনে করি যে উপরের কাজগুলো করার জন্য ল্যাপটপের থেকে আপনার ডেক্সটপ সব দিক থেকে অনেক সুবিধা দিতে পারবে।

Battery Life

একটি ল্যাপটপের সবথেকে Crusial অংশ হচ্ছে এর ব্যাটারি। কারণ ব্যাটারির জন্যই ডেক্সটপ থেকে ল্যাপটপকে আলাদা করা যায়। ব্যাটারি না থাকলে বা ব্যাটারির সুবিধা না থাকলে ডেক্সটপ আর ল্যাপটপের মধ্যে তেমন কোনো বড় পার্থক্য থাকবে না। আর ব্যাটারি লাইফের ক্ষেত্রেও নিত্যনতুন প্রযুক্তির উন্নতির ছোঁয়া লাগছে। এমনিতেই বছরখানেক ব্যবহারের পরে ব্যাটারি লাইফ সময়ের সাথে সাথে কিছুটা করে কমতে থাকে। যেমন প্রথম প্রথম আপনার ল্যাপটপ ৮/৯ ঘন্টা ব্যাকআপ দিতে পারলেও বছর দুয়েক পর হিসেব করে দেখবেন যে ৬/৭ ঘন্টা ব্যাকআপ দিচ্ছে। তবে মনে রাখবেন ব্যাটারির জন্য নতুন ল্যাপটপ না কিনে আপনার বর্তমান ব্যাটরিকে Replace করতে তুলনামূলকভাবে খুবই কম টাকা খরচ হবে।
নতুন ল্যাপটপে ব্যাটারির দিক থেকে কি সুবিধা পাবেন? নতুন নতুন ল্যাপটপে ব্যাটারির ক্ষেত্রেও প্রতিনয়তই এমন নতুত নতুন টেকনোলজি যুক্ত হচ্ছে যার কারণে এখন ব্যাটারিগুলো ফুল চার্জ হতেও আগের থেকে খুব কম সময় নিচ্ছে এবং একই সাথে আগের থেকেও বেশি ব্যাকআপ দিতে পারছে। এখন বাজেট ল্যাপটপগুলোতেই ব্যাটারির ভালো ব্যাকআপই দেখা যাচ্ছে।
বর্তমানে সাধারণ ল্যাপটপগুলোকে হেভি টাস্ক করার জন্য আপনি ৩ থেকে ৪ ঘন্টার ব্যাকআপ পাবেন, আর সাধারণ ব্যবহারে পাবেন ৮ ঘন্টারও বেশি ব্যাকআপ। অন্যদিকে ফ্ল্যাগশীপ এবং গেমিং ল্যাপটপগুলোকে পাবেন ১২ ঘন্টারও বেশি ব্যাকআপ!

Build Quality

প্রতি বছর ডিসপ্লে এবং এই বিল্ড কোয়ালিটি সেক্টরে আপনি নতুন নতুন চমক পাবেন। প্রতিনয়তই হালকা থেকে হালকাতর (lighter) ল্যাপটপ বের হচ্ছে, হালকা ল্যাপটপ কিন্তু সাইজের দিক থেকে কিন্তু এগুলো চিকন থেকে চিকনতর হচ্ছে। কিন্তু আমাদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা মনে করে বেশি হালকা এবং চিকন ল্যাপটপগুলোর বিল্ড কোয়ালিটি তেমন ভালো নয়! এটা এক ধরণের কুসংস্করকার। সেদিন আমার হাত থেকে MacBook Pro টা প্রায় ৩ ফুটের উপর (টেবিল থেকে) দিয়ে পড়ে যায়। এটার জন্য আমার ল্যাপটপের থেকে আমার হার্টে বেশি ব্যাথা পেয়েছে বলে আমার মনে হয়! (লোল) সাইডের দিক থেকে হালকা স্ক্র্যাচ ছাড়া তেমন কোনো কিছুই হয়নি। কিন্তু এই অ্যাপলের প্রডাক্টের স্থানে যদি কোনো চাইনিজ ব্রান্ডের ল্যাপটপ হতো তাহলে আজ ডিসপ্লে ফাটা থাকতো আমার।
আপনি চাইলেই এই অ্যাপলের Unibody Aluminum ডিজাইনের ল্যাপটপও কিনে নিতে পারেন কারণ এই ডিজাইন কিন্তু শুধুমাত্র অ্যাপল Exclusive নয়। এখন HP, Microsoft, Razer, Lenovo, Dell এই সকল বড় বড় ব্রান্ডগুলোও তাদের ল্যাপটপে কঠিন ডিউরাবিলিটির এ্যালুমিনিয়াম ব্যবহার করছে।
এছাড়াও বাজেট Ultrabook এবং মিড রেঞ্জের অনেক ল্যাপটপেও আপনি এই ফুল এ্যালুমিনিয়াম কিংবা Hybrid ডিজাইন দেখতে পাবেন।

Cool and Silent!

ল্যাপটপ আপগ্রেড করার সবথেকে শেষ কারণ হচ্ছে এই কুল এবং সাইলেন্স! বর্তমানের ল্যাপটপগুলো এক দিক থেকে যেমন পাওয়াফুল হচ্ছে ঠিক তেমনি ভাবে এই ল্যাপটপের কুলিং সিস্টেমেও এসেছে বেশ পরিবর্তন। এখন ফ্ল্যাগশীপ ল্যাপটপে হেভি ডিউটি টাস্ক করলেও তেমন গরম হয়ে উঠে না এবং ডেক্সটপের মতো বিমানের ইঞ্জিনের মতোও কোনো হেভি শব্দও করে না।
অন্যদিকে এখন সকল ল্যাপটপেই Bluetooth, WiFi এবং নোটবুক গুলোতেও 4G LTE সার্পোট ও আপনি পেয়ে যাবেন। আর USB – C তো থাকছেই। এই সকল আপগ্রেডের ভিড়ে HDMI , Ethernet পোর্ট ইত্যাদি পোর্টগুলো ধীরে ধীরে ল্যাপটপ জগত থেকে উঠে যেতে লেগেছে।

পরিশেষে এসে এটাই বলা যায়, আপনি যদি হেভি গেমার বা প্রোফেশনাল গেমার, ডিজাইনার, এনিমেশনের কাজ করেন কিংবা হেভি ডিউটি টাস্ক করেন যেখানে আপনার টেকনোলজির লেটেস্ট পাওয়ারটির দরকার হয় তাহলে আপনার প্রতি বছরই ল্যাপটপকে আপগ্রেড করতে হবে। আর তা নাহলে একটি ল্যাপটপ দিয়ে আপনি ৩ বছর পর্যন্ত ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু ৪ বছর কিংবা এর থেকে বেশি বয়সের ল্যাপটপ হলে আপনার উচিত এক্ষুনি এটাকে পাল্টিয়ে নেওয়া। কারণ এই ৪/৫ বছরে টেকনোলজি প্রতি সেক্টরেই কোথা থেকে কোথায় চলে গিয়েছে তা আপনি বুঝতেও পারবেন না! আর হ্যাঁ ল্যাপটপ আপগ্রেড করার আগে অবশ্যই আপনার থেকে অভিজ্ঞ কারো থেকে পরামর্শ নিয়ে নিতে পারেন, আর PCB সাইট ও আমাদের ইউটিউব চ্যানেল থেকে ল্যাপটপ বায়িং টিপসগুলোও স্বরণে রাখুন!

Share This Article

Search