ফোনে আসলে কত জিবি র‍্যাম লাগে?

স্মার্টফোন কিনতে গেলে আগে সবার প্রথমে আমরা জানতে চাইতাম ভাই ডিসপ্লে বড় তো? তারপর আসতো ভাই ব্যাটারি ভালো ব্যাকআপ দিবে তো? আর বর্তমানে চলছে ক্যামেরার আধিপত্য। মানে এখন স্মার্টফোন কিনতে গেলে প্রথমেই অনেকে প্রশ্ন করে ভাই ভালো ক্যামেরার স্মার্টফোন দিন। কিন্তু যারা এই সহজ সরল বিচার দিয়ে স্মার্টফোন কেনেন না (যেমন আমার মতো) তাদের জন্য স্মার্টফোন কেনাটা বেশ কনফিউজিং এবং কস্টসাধ্য ব্যাপার। যারা স্মার্টফোনে হেভি ইউজার এবং গেমার রয়েছেন তাদের জন্য সঠিক স্মার্টফোনটি কেনার আগে নুন্যতম এক সপ্তাহ ধরে বর্তমান বাজারে থাকা বাজেটের মধ্যে সকল স্মার্টফোনগুলো স্পেসিফিকেশন চেক, ইউটিউবে একই রেঞ্চের আলাদা আলাদা স্মার্টফোনের ভিডিও রিভিউগুলো দেখা, ওয়েবসাইটে স্মার্টফোনগুলোর স্পেসিফিকেশন নিয়ে তুলনা করা ইত্যাদি হরেক রকম প্রসেসের পরেই আমার মতো এডভান্সড ইউজারদের একটি স্মার্টফোন পছন্দ হয়। কিন্তু সমস্যাটা বাধে র‍্যাম সিলেক্টশন নিয়ে।

আজকাল একই স্মার্টফোনের র‌্যাম এবং রমের আলাদা মডেল বাজারে বের হচ্ছে। মানে ডিভাইসের সবকিছুই একই কিন্তু র‌্যাম ও রমে পার্থক্য। যেমন শাওমির একটি ফোন ৩/৩২ এবং ৪/৬৪ মডেলে পাওয়া যাচ্ছে। মানে একই ডিভাইস কিন্তু একটায় আপনি পাবেন ৩ গিগাবাইট র‌্যাম ও ৩২ গিগাবাইট রম বা স্টোরেজ, অপরটায় আপনি পাবেন ৪ গিগাবাইট র‌্যাম এবং ৬৪ গিগাবাইট স্টোরেজ। এখন আপনার সামনে প্রশ্ন রাখা হলো কোনটি আপানি কিনবেন? অনেকে বলে থাকেন যে বাজেটের জন্য আমরা অনেকসময় কম স্টোরেজ এবং র‌্যামের ফোন মডেলটি কিনে থাকি সেটাও কিন্তু সঠিক। তবে মাত্র ১৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা বেশি দিয়ে ৪ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইসটি কেনা আপনার জন্য উচিত হবে নাকি ৩ গিগাবাইট নিয়েই আপনার সকল কাজ হয়ে যাবে? এ সকল প্রশ্নের সহজ উত্তর দিতে আমি আজকের পোষ্টে চেষ্টা করবো। আবার একই সাথে মিডরেঞ্জ ডিভাইসগুলোতে আমরা ৪ গিগাবাইট এবং ৬ গিগাবাইট র‌্যামে মডেলগুলো দেখতে পাই, সেখানে বলা চলে যে ৪ গিগাবাইটের থেকে ৬ গিগাবাইট অবশ্যই ভালো কারণ এখানে ২ গিগাবাইটের গ্যাপ রয়েছে যা বিশাল। আবার এদের মধ্যে প্রাইস রেঞ্চের “গ্যাপ” রয়েছে বিশাল সেটাও আপনার মাথায় রাখতে হবে। অন্যদিকে হাই এন্ড প্রিমিয়াম কোয়ালিটির স্মার্টফোনগুলোতে আপনি ৬ এবং ৮ গিগাবাইট র‌্যাম পাবেন! কোনটি আপনার জন্য যথেষ্ট? সেটা নির্ভর করে আপনারই উপর!

স্মার্টফোনে র‌্যামের ভূমিকা

আপনি আপনার স্মার্টফোনে যতগুলো অ্যাপস এবং গেমস ইন্সটল করেন সেগুলো স্টোর করা থাকে আপনার ইন্টারনাল স্টোরেজে বা মেমোরি কার্ডে। তারপর আপনি যখন অ্যাপটি বা গেমটি চালু করবেন তখন সেটা স্টোরেজ থেকে র‌্যামে চলে আসবে এবং প্রসেসর ও জিপিইউয়ের সাহায্যে আপনি সেটাকে রান করতে পারবেন। পাবজি মোবাইল গেমটি যখন চালানো হয় তখন সেটা মোবাইলের ৭০০ মেগাবাইটের মতো র‌্যাম দখল করে রাখে। তো আপনার মোবাইলটিতে যদি ৩ গিগাবাইট র‌্যাম থাকে তাহলে সিস্টেমের প্রসেস বাদে আপনার ব্যবহার করার জন্য র‌্যাম থাকবে ১.৯ থেকে ১.৮ গিগাবাইট। আর পাবজি মোবাইল চালানোর পর এর থেকে ১.৮ গিগাবাইট – ৭০০ মেগাবাইট = ১.১ গিগাবাইট বা ক্ষেত্র বিশেষে ১ গিগাবাইট ফ্রি র‌্যাম স্পেস আপনার ডিভাইসে থাকবে। কিন্তু আপনার যদি ২ গিগাবাইটের র‌্যাম থাকে আর আপনি যদি সেটায় পাবজি চালাতে চান তাহলে ফ্রি র‌্যাম স্পেস খুবই কম থাকবে (ধরুন ২০০ থেকে ৩০০ মেগাবাইট) এবং সাধারণত ২ গিগাবাইট র‌্যামের সেটে ভালো প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ড থাকে না বিধায় গেমটি প্রচুর ল্যাগ দিতে আর খেলা যাবে না।

oneplus 5

আপনার স্মার্টফোনে যত বেশি র‌্যাম থাকবে আপনি তত বেশি অ্যাপ এবং গেমস একই সাথে চালাতে পারবেন। ৩ গিগাবাইট র‌্যামের সেটে আপনি পাবজি খেলছেন, ব্যাকগ্রাউন্ডে মিউজিক শুনছেন এবং ওদিকে ফেসবুক ও ওয়াটস অ্যাপের নোটিফিকেশনও পাবেন কোনো সমস্যা ছাড়াই। কিন্তু এর থেকে বেশি অ্যাপস আপনি ব্যাকগ্রাউন্ডে চালাতে পারবেন না। কিন্তু ৪ গিগাবাইট র‌্যামের সেটে ৩ গিগাবাইটের থেকে গড়ে গিয়ে ৫/৬ টি বেশি প্রমাণ সাইজের অ্যাপস আপনি ব্যাকগ্রাউন্ডে চালাতে পারবেন।

মূলকথা হচ্ছে র‌্যাম আপনার ডিভাইসের মাল্টিটাস্কিংয়ে সাহায্য করে থাকে। বেশি র‌্যাম থাকলে বেশি মাল্টিটাস্কিং করতে পারবেন তবে ৩ গিগাবাইট এবং ৪ গিগবাইট একই মডেলের ডিভাইসে পারফরমেন্সের পার্থক্য আপনি তেমন একটা পাবেন না।

বেশি র‌্যামে ঝুঁকি?

বর্তমানে প্রতিটি স্মার্টফোন ইউজাররা প্রতিদিন গড়ে ৯টি করে অ্যাপস চালিয়ে থাকেন তাদের স্মার্টফোনে। আর প্রতি মাসে গড়ে ৩০টি ভিন্ন অ্যাপস তাদের স্মার্টফোনে চালিয়ে থাকেন। সে হিসেবে ২.৩ গিগাবাইট র‌্যাম হচ্ছে বিশ্বের বর্তমান সময়ে গড় র‌্যাম ইউসেজ। সে হিসেবে ৩ গিগাবাইট র‌্যাম হলেই একজন এভারেজ ইউজারের জন্য সেটা যথেষ্ট। ৪ গিগাবাইট র‌্যামে নিলে ক্ষতি নেই কোনো, যদি আপনার বাজেটে থাকে তাহলে অবশ্যই ৩ গিগাবাইটের ভার্সন থেকে ৪ গিগাবাইটের ভার্সনের ডিভাইসটি নিয়ে নিন।

OnePlus 6

কিন্তু বেশি র‌্যামে ঝুঁকি থাকে। কারণ আপনার ডিভাইসে যত বেশি র‍্যাম থাকবে, ডিভাইসে ততবেশি মাল্টিটাস্কিং করা যাবে, অন্যকথায় ডিভাইসে ততটুকু বেশি পাওয়ার থাকবে। আর সেটা আপনার ব্যাটারি লাইফের উপর প্রভাব ফেলবে। মানে একই মডেলের ৩ গিগাবাইট র‌্যামের ভার্সনে আপনি ৪ গিগাবাইটে র‌্যামের ভার্সনের থেকে একটু বেশি ব্যাটারি ব্যাকআপ পাবেন। বিশেষ করে আপনার ডিভাইসটিতে যদি ৩০০০ বা এর নিচের mAh ক্ষমতা ব্যাটারি থাকে তাহলে ৩/৪/৬ গিগাবাইট র‌্যামের ভার্সনের মধ্যে উল্লেখ যোগ্য ব্যাটারি লাইফের পার্থক্য আপনি খুঁজে পাবেন। তাই আমাদের উচিত বেশি র‌্যামের সেট কেনার সময় সেটার ব্যাটারি ক্ষমতার উপর লক্ষ্য রাখা।

কতটুকু র‍্যাম আপনার জন্য যথেষ্ট?

সেটা আপনার স্মার্টফোন ব্যবহারের উপর নির্ভর করে। আজ থেকে ২ বছর আগে ২ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইসকে প্রিমিয়াম ধরা হতো। কারণ তখন অ্যান্ড্রয়েড এবং আইওএস অপারেটিং সিস্টেমগুলোকে ২ গিগাবাইট র‌্যামের জন্য কাস্টমাইজ করে তৈরি করা হয়েছিলো। কিন্তু বর্তমানে চলা অ্যান্ড্রয়েড ৮ ভার্সনটি ৩ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইসের জন্য উদ্দেশ্য করে তৈরি করা হয়েছে। তারমানে এই নয় যে অ্যান্ড্রয়েড ৮ আপনি ২ গিগাবাইট র‌্যামের স্মার্টফোনে চালাতে পারবেন না! চালাতে অবশ্যই পারবেন কিন্তু চালানোর সময় মাঝে মাঝে আপনার খোট বা ল্যাগের দেখা মিলবে। অপারেটিং সিস্টেমের কাজগুলো চালাতেই (মেন্যুতে যাওয়া, অ্যাপ লঞ্চ করা, ফোনবুকে যাওয়া ইত্যাদি কাজগুলো) যদি আপনার ২ গিগাবাইট ফোনে ল্যাগের দেখা মেলে তাহলে যখন আপনি হালকা মাল্টিটাস্কিং করবেন বা কোনো গেমে প্রবেশ করবেন তখন কি পরিমাণ ল্যাগ বা খোঁট দিবে সেটা চিন্তা করুন! কিন্তু ২ বছর আগে যারা ভবিষ্যৎতের কথা চিন্তা করে ৩ গিগাবাইট র‌্যামে ডিভাইস কিনেছিলেন তারা এখনো তাদের ডিভাইসটি বেশ স্বাচ্ছন্দ্যেই উপভোগ করতে পারছেন।

তাহলে মূল কথা কি? মূল কথা হচ্ছে বর্তমান যুগে এভারেজ ইউসেজের জন্য ৩ গিগাবাইট একদমই পারফেক্ট, ভূলেও ২ গিগাবাইটের কথা ভাববেন না। তবে যারা গেমিং এবং হেভি মাল্টিটাস্কিং করেন তাদের জন্য ৪ গিগাবাইট র‍্যাম হচ্ছে এভারেজ একটি মান। গেমিং এবং হেভি মাল্টিটাস্কিং করার জন্য সরাসরি ৬ গিগাবাইটের র‌্যামের ডিভাইসে জাম্প করতে পারেন কারণ সামনে অ্যান্ড্রয়েড ৯ এর আপগ্রেড আসছে আর তখন সিস্টেম র‌্যামের ইউসেজ আরো বেড়ে যেতে পারে।

সহজ ভাষায়, আপনি যদি কোনো ডিভাইসকে দেড়/দুই/আড়াই বছর ধরে ব্যবহার করতে চান তাহলে যতটা পারেন বেশি সাইজের র‍্যাম ব্যবহার করার চেষ্টা করবেন আপনার বাজেটের মধ্যে। তবে যারা প্রতি বছর স্মার্টফোন পরিবর্তন করেন তাদের জন্য ৩ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইসই যথেষ্ট। এ বছর ৩ গিগাবাইট র‌্যামের একটি ডিভাইস কিনলেন, আগামী বছরে ৪ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইসের দাম অনেকটা কমে যাবে তখন ৪ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইস কিনলেন! তো ৩ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইসের চেয়ে একই পারফরমেন্সে শুধু বেশি বেশি অ্যাপস চালানো সুবিধা পাবেন আপনি ৪ গিগাবাইট র‌্যামের ডিভাইসে। আপনার ডিভাইসের পারফরমেন্স নির্ভর করে স্মার্টফোনের প্রসেসর এবং গ্রাফিক্স কার্ডের উপর, আর মাল্টিটাস্কিং বা একই সাথে কতগুলো অ্যাপস আপনি চালাতে পারবেন সেটা নির্ভর করে আপনার ডিভাইসের র‌্যামের উপর। আশা করবো ব্যাপারটি বোঝাতে পেরেছি।

সময় পেলে পড়ে আসতে পারেন নতুন স্ন্যাপড্রাগন 8150 প্রসেসর সম্পর্কে।

Share This Article

Search