ইতিমধ্যে আপনারা অনেকেই জেনে গেছেন যে, আবারও বড় ধরনের ডেটা লিক হয়েছে ফেইসবুক থেকে। এইবারের লিককে বেশ বড়সড় বলা হয়। প্রায় অর্ধ বিলিয়ন ইউজারের ডেটা এখন অনলাইনে উন্মক্ত হয়ে গিয়েছে। বিশাল এই লিকের মধ্যে রয়েছে ১০৬টি দেশের ৫৩৩ মিলিয়ন ইউজারের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। জনসংখ্যার বিবেচনায় যা চায়না ও ইন্ডিয়ার কম হলেও আমেরিকার চেয়ে বেশি। বর্তমানে ফেইসবুকের ২.৭ বিলিয়ন ইউজার আছে সেই হিসেবে আপনার একাউন্ট লিকড ডেটার মধ্যে থাকার সম্ভবনা প্রায় ২০%। ৫৩৩ মিলিয়ন ইউজারের মাধ্যমে বাংলাদেশের ইউজারের সংখ্যা একদম নেয়ায়েত কম নয়। ৩.৮ মিলিয়ন ইউজার রয়েছে বাংলাদেশের। যাদের ডেটা এই লিকের মধ্যে রয়েছে। স্বস্তির সংবাদ হচ্ছে লিক হওয়া ডেটার মধ্যে ব্যবহারকারীদের ফোন নাম্বার, আইডির নাম, বার্থডেইট, বায়ো, লোকেশন ক্ষেত্রবিশেষে ইত্যাদির মত গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকলেও মোস্ট ইম্পর্টেন্ট পিস ওফ ইনফোরমেশন অর্থাৎ ফেইসবুক পাসওয়ার্ড নেই।
এই ঘটনা নিয়ে শোরগোল শুরু হয়েছে এই মাসের শুরু দিকে যখন বিশ্বের বড় বড় সংবাদ মাধ্যমে গুলো এইঘটনাকে জোর দিয়ে প্রচার করা শুরু করেছে। কিন্তু ডেটা লিকটা একদম রিসেন্ট হয়েছে এমন না। ধারণা করা হচ্ছে এটি আরো আগেই হয়েছে খুব সম্ভবত ২০১৯ সালে। জানুয়ারি মাসে Motherboard এর একটি রিপোর্ট থেকে জানা যায় যে, টেলিগ্রাম বটের মাধ্যমে হ্যাকাররা স্বল্প চার্জের বিনিময়ে ফেইসবুক ইউজারদের ফোন নাম্বার বের করতে পারতেছে। কিন্তু Alon Gal নামক একজন সাইবার বিশেষজ্ঞ যখন টুইটারে এই নিয়ে আরো বিস্তারিত টুইট করে তখনই এটি সংবাদ মাধ্যমগুলোতে আসতে শুরু করে। এতদিন ধরে ডেটা গুলো দেখতে চার্জের প্রয়োজন হলেও বর্তমানে এতগুলো ডেটা সম্পূর্ণ ফ্রিতে উন্মক্ত হয়ে গিয়েছে বিভিন্ন সাইবার ক্রাইম রিলেটেড কমিউনিটিগুলোতে। এইরকম লার্জ স্কেলের ডেটা অন লাইনে সহজলভ্য হওয়া মোটেই সুখকর কিছু নয়। এই ডেটা গুলো অসাধু হ্যাকারা বিভিন্ন সাইবার ক্রাইমের কাজে সহজেই ব্যবহার করতে পারবে। এই ঘটনা নিয়ে বেশ কয়েকদিন হলেও ফেইসবুক এখনও অফিশিয়ালি মুখ খোলেনি। কিন্তু ফেইসবুকের কিছু স্পোকসপারসন হতে এটা জানা গিয়েছে, এই ডেটাগুলো ২০১৯ সালের এবং তখনই ফেইসবুক একটি বড় ধরনের ভালনারাবিলিটি ফিক্স করে। কিন্তু ফেইসবুক তখন ইউজারেরদের এটলিস্ট কম্প্রোমাইজ হয়ে যাওয়া একাউন্টগুলোতে হলেও কোনো ধরনের নটিফিকেশন পাঠায়নি। মজার ব্যাপার হচ্ছে ৫৩৩ মিলিয়ন ইউজারের ডেটার মধ্যে রয়েছে স্বয়ং ফেইসবুকের সিইও মার্ক জাকারবার্গের একাউন্ট। এর আগে ২০১৮ সালে ফেইসবুক ক্যামব্রিজ এনালিটিকা নামের একটি কেলেঙ্কারিতে পরে যেখানে ফেইসবুককে দায়ী করা হয় ২০১৬ সালের মার্কিন নির্বাচনে টার্গেটেড এডে তথ্য দেওয়ার জন্য। অবশ্য ফেইসবুক তখন ডাইরেক্টি ডেটা সেল না করলেও বেশ আইনি বাঁধার মুখে পরতে হয় ফলে তাঁরা জানায় ভবিষ্যতে তাঁরা ডেটা স্ক্র্যাপিং সংক্রান্ত ব্যাপারে আরো কঠোর হবে কিন্তু তাও আমাদের এই ঘটনা দেখতে হল।
যেভাবে জানবেন আপনার একাউন্ট আছে কিনাঃ-
এর মধ্যেই বিশ্ববিখ্যাত haveibeenpwned.com ওয়েবসাইটে ইতিমধ্যে লিক হওয়া সব ডেটা এড করা করা হয়েছে। ঐখানে গেলেই সহজেই জানা যাবে লিক হওয়ার একাউন্ট গুলোতে আপনার একাউন্ট আছে কিনা। ঐ ওয়েবসাইটে গিয়ে প্রথমে বাংলাদেশের কান্ট্রিকোড(+880) দিয়ে তারপর আপনার নাম্বার টাইপ করলেই নিমিষেই ফলাফল জানা যাবে।
যদি আপনার নাম্বার থাকে এই লিস্টে তাহলে বাড়তি সর্তকতার জন্য Two Factor Authentication চালু করে দিতে পারেন। এছাড়া সকলকে সব ওয়েবসাইটেই ভিন্ন ভিন্ন স্ট্রং পাসওয়ার্ড ব্যবহারের পরামর্শ থাকল।