গত কয়েক বছর ধরে ফ্ল্যাগশিপ ফোন গুলোর স্পেক্সে স্টোরেজ ডিটেলস আমরা UFS X.x জাতীয় একট নিউ টার্ম দেখতে পাচ্ছি। UFS টার্মটির সাথে তখন আমরা অনেকেই নতুন ছিলাম। কিন্তু আদতে এটি একদম নতুন কিছু ছিল নাহ। UFS বা Universal Flash Storage নিয়ে বিস্তারিত বলার আগে অন্যকিছু বিষয়ে আগে আলোকপাত করা যাক।
কম্পিউটারের এসএসডির উদ্ভাবনের কথা যদি আমরা চিন্তা করি তাহলে দেখা যাবে, কম্পিউটারের সিপিউ, জিপিউ এর প্রসেসিং পাওয়ার এর সাথে স্পিনিং হার্ড ড্রাইভ গুলো পেরে উঠতে পারছিল নাহ। কারণ সাটা ৩ ইন্টারফেজ একটা লিমিট ছিল যার পরে এটিকে আর পুশ করা যাবে নাহ এটি মাথায় রেখেই নতুন কিছু উদ্ভাবনের প্রচেষ্টা শুরু হয় তারই ফসল হচ্ছে এসএসডি।
এইবার আমরা যদি ফোনগুলোর কথা চিন্তা করি তাহলেও কিন্তু একই জিনিস দেখতে পাওয়া যাবে। যেমনঃ চিপসেট গুলো দিন দিন পাওয়ারফুল হচ্ছে সাথে সাথে ক্যামেরা গুলো ৪কে ভিডিও রেকর্ড থেকে শুরু করে বিশাল বিশাল সাইজের গেইমও ফোনের জন্য বানানো শুরু হয়েছে।এইসব গুলো টাস্ক দ্রুত করার জন্য স্টোরেজের মেমোরি সেল গুলোর ভাল রিড/রাইট স্পিড, পাওয়ার অপ্টিমাইজেশন ও ওভারঅল সিকিউরিটি দরকার।
UFS এর আগে স্টোরেজ স্ট্যান্ডার্ড হিসেবে ফোন গুলোতে ব্যবহার হত eMMC aka embedded Multimedia Media Card. আসলে এটি এখনও বাতিল হয়ে যায়নি স্টিল এন্ট্রি-লেভেল এর সবগুলো ফোনে, বেশিরভাগ মিড-রেঞ্জের ফোনে এমনকি অনেক ফ্ল্যাগশিপ ফোনেও এর ব্যবহার করা হচ্ছে। কেন eMMC এর পরিবর্তে কে ব্যবহার করা হচ্ছে এটা বুঝার জন্য আপনাদেরকে আগে eMMC এর ওয়ার্কিং প্রিন্সিপাল খুব সংক্ষেপে বলা যাকঃ
eMMC কি?
একটা eMMC সিলিকন চিপে বেসিক্যালি দুইটা জিনিস থাকে একটা ফ্ল্যাশ মেমোরি আরকেটা ফ্ল্যাশ মেমোরি কন্ট্রোলার । এখন ফ্ল্যাশ মেমোরি কন্ট্রোলার আবার হাফ-ডুপ্লেক্স মুডে কাজ করতে পারে মানে হয় রিড না হয় রাইট করতে পারে। মানে একই সময়ে রিড/রাইট করতে পারে নাহ। eMMC এর লেটেস্ট ভার্সন eMMC 5.1 এ সর্বোচ্চ ২৫০ এমবিপিএস রিড,১২৫ এমবিপিএস রাইট, ১১০০০ (IOPS) র্যান্ডম রিড ও ১৩০০০(IOPS) র্যান্ডম রাইট সাপোর্ট করে। আমরা সচরাচর যে ফ্ল্যাশ কার্ড গুলো ফোন বা ক্যামেরাতে ব্যবহার করি থাকি তা মূলত eMMC স্ট্যান্ডার্ডেই তৈরি। eMMC যেহেতু ইন্টিগ্রেটেড চিপসেটে তৈরি তাই এটাতে পাওয়ার কঞ্জাম্পশন খুবই কম। ওভারঅল এটি লো-কস্ট মেমোরি সল্যুশন হওয়ায় সবখানে এর ব্যাপক ব্যবহার দেখতে পাওয়া যায়।
উপরের প্যারাটুকু মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, এতে কিছু দূর্বলতা রয়েছে যেমন রিট/রাইট এর জন্য সেপারেট লাইন না থাকা ও রিড/রাইট স্পিড কিছুটা কম। এ সমস্যাগুলোকে এড্রেস করার জন্য ২০১১ সালে JEDEC যারা Universal Flash Storage নামে নতুন একটা স্ট্যান্ডার্ড তৈরি করে।
UFS কি?
আবার একটু থিওরিটিক্যাল প্যাঁচাল চলবে, UFS এ LVDS (Low-Voltage Differential Signaling) সিরিয়াল ইন্টারফেস ইউস করা হয় যা কারণে রিড/রাইট প্যাথ গুলোকে সেপারেট করে দেওয়া যায়। ফলত eMMC তে যে বাঁধা ছিল হাফ-ডুপ্লেক্সের সেটি ওভার কাম করে ফুল-ডুপ্লেক্সে মোডে কাজ করবে। অর্থাৎ রিড/রাইট সিমুটিনিয়াসলি চলতে পারবে।
তাছাড়া SCSI ইন্টারফেসের সাথে eMMC এর ফ্ল্যাশ অপ্টিমাইজড লো পাওয়ার কঞ্জাম্পশন এর ফিচারগুলোকে একসাথে ইউস করা হয়। যার ফলে, একদিকে খুবই লো পাওয়ারে যেমন কাজ করতে পারে তেমনি SCSI Tagged Mutiple Command এর সাথে Command Queue মাধ্যমে একই সাথে অনেক গুলো রিড/রাইট রিকুয়েস্ট হ্যান্ডেল করতে পারে। যেখানে eMMC তে একটা শেষ না হলে অন্যটিতে জাম্প করা যেত নাহ। সোজা বাংলায় বলতে গেলে UFS হল SSD এর মিনিয়েচার ভার্সন মোবাইল ফোনের জন্য।
UFS এর ইভ্যুলেশন
UFS এর প্রথম স্ট্যান্ডার্ড জেনারেশন UFS 1.0 রিলিজ হয় ২০১১ সালে। এটার রিভাইসড জেনারেশন UFS 1.1 রিলিজ হয় ২০১২ সালে। পরবর্তী সালেই UFS 2.0 রিলিজ দেওয়া হয়। কিন্তু এরপর দীর্ঘ ৩ বছর বিরতির পর ২০১৬ 2.0 এনাউন্স করা হয়। মূলত 2.0 এন্ড 2.1 এই দুই জেনারেশন থেকে ২০১৫ সাল থেকে বিভিন্ন ফোনে ইমপ্লিমেন্টেশন শুরু হতে দেখা যায়। ২০২০ সালে এসেও বিভিন্ন বাজেট স্মার্টফোনে UFS 2.0 এর দেখা মিলছে। যেটা আসলেই eMMC দেওয়া থেকে বেটার।
UFS 2.0/2.1
যেহেতু মেইনস্ট্রিম ফোন গুলোতে জেনারেশন UFS 2.0 থেকে ব্যবহার শুরু হয়েছে তাই আগের দুইটা ভার্সন( 1.0/1,1) নিয়ে ডিটেলস আলোচনা করা হল নাহ। প্রিভিয়াস জেনেরাশন থেকে এটাতে বড় আপগ্রেড হচ্ছে ইনক্রিসড ব্যান্ডউইথ । যেখানে 1.0/1.1 জেনারেশন গুলোতে এ পার লেইনে সর্বোচ্চ ৩০০এম্বিপিস ব্যান্ডউইথ ছিল সেটা UFS 2.0’তে সেটা বাড়িয়ে করা হয়েছে ৬০০ এমবিপিএস। আরেকটা আপগ্রেড হচ্ছে রিড/রাইট লেইন UFS 1.0/1.1 তে ছিল একটা আর UFS 2.0/2.1 তে আরো একটা বাড়িয়ে মোট দুইটা করা হয়েছে। যার কারণে ৬০০*২ অর্থাৎ ১২০০ এমবিপিএস হচ্ছে UFS 2 এর টোটাল ব্যান্ডউইথ।
কিন্তু UFS 2.0 থেকে 2.1 এ আবার মোটামুটি ভালোই একটা আপগ্রেড আছে বলা যায়। আসলে UFS 2.0 ব্যান্ডউইথ এর খুবই কম পুশ করতে পারত কিন্তু 2.1 তে এসে মোটামুটি সেটা বাড়ানো হয়েছে এট লিস্ট রিড স্পিড ৩৫০ এমবিপিএস থেকে ৮৫০ এমবিপিএস এ উন্নিত করা হয়েছে অপরদিকে রাইট স্পিডে সিগনিফিকেন্ট ইম্প্রুভমেন্ট দেখা না গেলে রিড স্পিডে প্রায় ১২০ এমবিপিএস বৃদ্ধি করা হয়েছে । ম্যাসিভ চেইঞ্জ এনেছে র্যান্ডম রিড/রাইটে। রিডের ক্ষেত্রে প্রায় ২.৩ গুন রাইটের ক্ষেত্রে ২.৮ গুল IOPS বৃদ্ধি করা হয়েছে। ডিটেলসের জন্য নিচের চার্ট-
Category | Sequential Read (MB/s) | Sequential Write (MB/s) | Random Read (IOPS) | Random Write (IOPS) |
---|
UFS 2.1 | 850 | 260 | 45,000 | 40,000 |
UFS 2.0 | 350 | 150 | 19,000 | 14,000 |
এছাড়াও রিয়েল লাইফ পারফরমেন্স দেখার জন্য নিচে দেওয়া এর এন্ড্রোবেঞ্চের বেঞ্চমার্ক স্কোর দেখতে পারেন।
UFS 3.0
UFS 3.0 লঞ্চ করা হয় ২০১৮ সালে। পূর্ববর্তী জেনারেশন থেকে এখানে আনা হয়েছে মেজর কিছু চেঞ্জ।
আগের জেনারেশনের মত read-write চ্যানেল বা লাইন দুটি থাকলেও এখানে প্রতিটিতে প্রায় দ্বিগুণ পরিমাণ ব্যান্ডউইথ বাড়ানো হয়েছে। থিওরিটিক্যালি প্রতিটি লাইনে ১১.৬ জিবিপিএস করে মোট দুটি চ্যানেলে প্রায় ২৩.২জিবিপিএস স্পিডে ডাটা কি করা যাবে।
পাওয়ার কনজাম্পশন এর পরিমাণও কমানো হয়েছে আগে যেখানে ৩.৩ ভোল্ট লাগত সেখানে UFS 3.0’ তে কমিয়ে আনা হয়েছে ২.৫ ভোল্ট পয়েন্ট। টেম্পারেচার এর রেঞ্জ বাড়ানো হয়েছে।UFS 3.0 -40 ডিগ্রি থেকে 105 ডিগ্রি এ রেঞ্জ কাজ করতে পারবে।
এছাড়াও এর মেমোরি হবে 3D NAND Flash Memory। আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ ফিচার এতে দেওয়া হয়েছে তা হল multiple RPMBs (replay protected memory block) with multiple RPMB keys. RPMB তে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য সংরক্ষণ করা হয়ে থাকে। র্যান্ডম রিড/রাইট সহ চার্ট-
Category | Sequential Read (MB/s) | Sequential Write (MB/s) | Random Read (IOPS) | Random Write (IOPS) |
---|---|---|---|---|
UFS 3.0 | 2100 | 410 | 68,000 | 63,000 |
UFS 3.1
এই বছরের জানুয়ারি JEDEC Solid State Technology Association তাদের এনিভার্সারিতে লেটেস্ট জেনারেশন 3.1 এর স্ট্যান্ডার্ড এনাউন্স করে। ম্যাক্স ব্যান্ডউইথ, সিক্যুয়েনশাল ও র্যান্ডম রিড/রাইটের ক্ষেত্রে একচ্যুয়েলি কোনো চেঞ্জ আনা হয়নি। আসলে পূর্ববর্তী জেনেরাশনে থিওরিটিক্যালি স্পিড গুলো অনেক সময় রিয়েল-লাইফে ফুল ইউটিলাইজ করা যাইত নাহ। এছাড়া মোবাইল ফোনের জন্য ঐ স্পিড কিছুটা হলেও ফিউচার প্রুফ বলা যায়। তাই JEDEC এইবার মনোনিবেশ করে কিভাবে ফিচার ,সিক্যুরিটি ও ফাংশানালিটি বাড়ানো মাধ্যমে কিভাবে কম্পিউটারের এসএসডি গুলোতে বিদ্যমান স্টেবল স্পিড এইখানে এচিভ করা যায়।
UFS 3.1 এ মূলত নতুন তিনটি ফিচার –
Write Booster:
Deep Sleep:
Performance Throttling Notification:
যোগ করা হয়েছে । সাথে আরকেটি গুরুত্বপূর্ণ ফিচার হল USB Host Performance Booster। UFS 3.1 vs 3.0 এর মধ্য বেঞ্চ মার্কের স্কোর গুলোর মধ্যে লক্ষ্যে করলে দেখা যাবে 3.1 এ কিছু পার্ফমমেন্স গেইন হয়েছে।
এতগুলো নতুন ফিচার এড করার মাধ্যমে পাওয়ার ইফিশিয়েন্সি ও কনসিসটেন্ট পারফমমেন্স নিশ্চিত করা হয়েছে। এইগুলো প্রত্যেকটির ওয়ার্কিং প্রিন্সিপাল গুলো খুবই ইন্টারেস্টিং। এইগুলো প্রোপারলি এক্সপ্লেন করার জন্য স্ট্যান্ডলোন একটি আর্টিকেলের প্রয়োজন। সেটি নিয়ে অন্য আরেকদিন বিস্তারিত হবে। টিল দেন গুডবাই।
আপকামিং OnePlus Nord এর লিকড স্পেসিফিকেশন পড়তে পারেন এইখান থেকে
ইঙ্কজেট/লেজারজেট প্রিন্টারের মধ্যে তুলনামূলক কম্পারিজন পড়তে পারেন এইখান থেকে
সোর্সঃ Androidcentral, XDA etc.