ডেস্কটপ কম্পিউটার পরিস্কার করার সিস্টেম

আপনি দিনে একবার কিংবা একাধিক বার গোসল করেন কেন? নিজেকে পরিস্কার রাখার জন্য। একই ভাবে নিজের বাড়িঘর, গাড়ী এবং আপনার পোষা বিড়ালটাকেও নিয়মিত ক্লিন করে থাকেন আপনি। কিন্তু বাসার ডেস্কটপ কম্পিউটার ক্লিনিং করার বিষয়টি কারোই মাথায় থাকে না! নিয়মিত ব্যবহার করলে ল্যাপটপ পরিস্কার থাকলেও ডেক্সটপ পিসিকে মাসে একবার করে পরিস্কার করা উচিত। কারণ কম্পিউটার নস্ট হবার অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে ধুলাবালি। আর বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ধুলাবালি একটি বেশ কমন ব্যাপার! আপনি জানেন কি এসি রুম ছাড়া পিসি ব্যবহার করা উচিত নয়? বরং আমরা উল্টো আরো কম্পিউটার রুমে বসে ধূমপান সহ সকল প্রকার খাওয়াদাওয়াও করে থাকি!কিন্তু আমরা নিজেরাই চাইলে সহজেই ডেক্সটপ পিসিকে মাসে একবার করে পরিস্কার করতে পারি, আর কিভাবে ডেক্সটপ পিসি পরিস্কার করবেন সেটা নিয়েই আমার আজকের এই পোস্ট। একটি ডেক্সটপ পিসি পরিস্কার বলতে মূলত CPU Box এর ভেতরকার অংশের পরিস্কারকে বোঝানো হয়ে থাকে। আর এই বিষয়টি অনেকেই কঠিন ভেবে থাকেন! তবে আপনার যদি পিসি হার্ডওয়্যার সম্পর্কে নুন্যতম ধারণা থেকে থাকে এবং স্ক্রু-ড্রাইভার যদি ব্যবহার করতে পারেন তাহলে আপনি নিজে নিজেই আপনার ডেক্সটপ পিসিকে বাসায় বসেই ক্লিন করে নিতে পারবেন। আর না পারলে তো কম্পিউটার সার্ভিস সেন্টার তো রয়েছেই! মাসে একবার করে পিসির CPU box কে সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গিয়ে পরিস্কার করিয়ে নিয়ে আনবেন তাহলে আপনার পিসির হার্ডওয়্যারগুলো অনেকদিন ধরে অক্ষত এবং কার্যকর থাকবে।

বাসায় বসে নিজে নিজেই পিসি পরিস্কার করতে ৩০ মিনিটের বেশি সময় লাগবে না। আর যদি মনে করেন যে RAM খুলে নিয়ে পরিস্কার করে পরে সেটাকে সঠিকভাবে স্লটে লাগাতে পারবেন না তাহলে আজকের পোষ্টটিকে স্কিপ করে যান! তবে মনে রাখবেন কম্পিউটারের একটি হার্ডওয়্যার কখনোই অন্য হার্ডওয়্যার স্লটে ফিট হবে না। যেমন আপনি RAM কে কখনোই গ্রাফিক্স কার্ডের স্লটে বসাতে পারবেন না! তো চলুন ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে মূল পোষ্টে চলে যাই।

কতদিন অন্তর অন্তর পিসি পরিস্কার করা উচিত?

এই প্রশ্নের উত্তর নির্ভর করে পিসিকে আপনি কোন পরিবেশে রেখেছেন। যেমন এসি রুমযুক্ত অফিসে পিসিগুলো অপেক্ষাকৃত কম ময়লা হয়ে থাকে। তাই অফিসের এই জাতীয় পিসিগুলোকে ২ মাসে একবার করে পরিস্কার করা উত্তম। আবার অনেক অফিস রয়েছে যেগুলোকে এসি নেই এবং অফিসগুলো একদম রাস্তার পাশে অবস্থিত; মানে রাস্তার ধুলোবালি সহজেই ওই অফিস রুমে প্রবেশ করে থাকার কারণে প্রতিদিনই কম্পিউটার কেইসের উপর বেশ ভালো পরিমানে ধুলোবালি জমে থাকে। এই জাতীয় পরিবেশের কম্পিউটারগুলোকে প্রতি মাসে ২বার করে পরিস্কার করা উচিত। অন্যদিকে আপনার বাসার কম্পিউটারগুলোকেও অন্তত ৩ মাস অন্তর একবার করে পরিস্কার রাখলে ভালো হয়। তবে আপনার বাসার পিসির সামনে বসে যদি আপনি ধুমপান করে থাকেন (যা করা কখনোই উচিত নয়) তাহলে মাসে একবার করে পিসি পরিস্কার করতে হবে।

পিসি ক্লিন করার পূবপ্রস্তুতি

CPU Box টাচ করার আগে সর্বপ্রথম যেটা করবেন সেটা হলো পিসিকে বন্ধ করে নিবেন এবং কারেন্ট সোর্স অবশ্যই বন্ধ করে নিবেন। পিসি চালু এবং সিপিইউকে কারেন্ট লাইন লাগনো অবস্থায় কখনোই CPU বক্স (কেইস) খুলতে যাবেন না! পিসি বন্ধ করে নিয়ে প্রথমেই পাওয়ার সাপ্লাই ক্যাবলটি খুলে নিবেন। তারপর একে একে USB Cables, Audio Cables, Video Cables, Mouse / Keyboard ক্যাবলস সহ সকল ক্যাবেলগুলোকে সঠিক ভাবে খুলে নিন। ক্যাবলগুলো খুলে ফেলার পর CPU Box টিকে নিয়ে একটি আলাদা রুমে চলে আসুন যেখানে ময়লা পড়লেও সমস্যা হবে না। আর আপনি নিজে মুখে একটি মাস্ক পড়ে নিন, কারণ পিসির ময়লাগুলো আপনার নিজের জন্যেও ভালো নয়।

তারপর ক্লিনআপ করার টুলসগুলো নিয়ে নিন। আপনার কেইসটিকে খোলার জন্য যদি স্ক্রু-ড্রাইভার প্রয়োজন হয় তাহলে এটাকে সংগ্রহ করে নিন। আর পরিস্কার করার জন্য একদমই হালকা এবং পাতলা ব্রাশও জোগাড় করুন, অথবা সফট কোনো কাপড়ও নিতে পারেন তবে কখনোই সূতি কাপড় নিবেন না। তবে পাতলা ব্রাশ হলে ভালো হয়। আর থার্মাল পেস্ট এবং লিকুইড ক্লিনার পরিহার করুন যদি এগুলোর সঠিক ব্যবহার আপনার জানা না থাকলে।

বি:দ্র: নিজে কখনোই ভ্যাকুইম ক্লিনার দিয়ে পিসি পরিস্কার করবেন না, এতে পরিস্কার করতে সহজ হলেও সেটা পিসির হার্ডওয়্যারের জন্য ক্ষতিকর হয়ে থাকে। তাই পিসি সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে গেলেও তাদেরকে বলবেন যাতে পরিস্কার করার সময় কোনো প্রকার ভ্যাকুইম ক্লিনার না ব্যবহার করে।

কেইস খুলুন

কেইস কিভাবে খুলবেন সেটা নির্ভর করে কেইসের ডিজাইনের উপর। কিছু কিছু কেইসে হাতে ঘুরিয়ে খোলার মতো স্ক্রু-পিন ব্যবহার করা হয়ে থাকে আবার অনেক কেইস খোলার জন্য স্ক্রু-ড্রাইভারের প্রয়োজন হয়। কেইস খুলার জন্য কেইসের চার কোণা থেকে স্ক্রু-পিনগুলো সঠিক ভাবে খুলুন। উল্লেখ্য যে একটি কেইসের দুটি সাইড থাকে, সেখান থেকে সঠিক সাইডের পিনগুলো খুলুন। সঠিক সাইড বলতে মাদারবোর্ড এর উল্টো সাইডকে বোঝানো হচ্ছে।

পিসি ক্লিনআপ করার জন্য ভেতরকার সকল তারঁতুরকে খোলার প্রয়োজন নেই, যেমন উপরের ক্যাবলটি খোলার দরকার হয় না তাই একে খুলবেন না। এই ক্যাবলটি বেশ শক্তভাবে লাগানো থাকে তাই একে খোলা এবং লাগানোর সময় এর ভেতরকার পিনগুলো ভেঙ্গে যেতে পারে।

এবার হার্ডডিক্স, র‌্যাম এবং গ্রাফিক্স কার্ডকে খুলে নিন। তবে যদি পরে লাগানোর সময় কনফিউশনে থাকেন যে আসল সাইড কোনটি তাহলে এগুলো খোলার সময় ছবি তুলে রাখতে পারেন, তাহলে লাগানো সময় সহজ হবে। তবে নিজে নিজে কখনোই CPU ফ্যান এবং খোদ CPU কে খুলবেন না। কারণ সেটা বেশ জটিল প্রসেস এবং হার্ডওয়্যার এক্সপার্ট না হলে সিপিইউকে না ধরাই শ্রেয়। তবে আপনি এক্সপার্ট হলে সিপিইউ কে খুলে নিয়ে সেটা ব্রাশ বা ডাস্ট রিমুভার লিকুইড দিয়ে পরিস্কার করার পর লাগানোর আগে নতুন করে থার্মাল পেস্টও লাগিয়ে নিবেন।

গ্রাফিক্স কার্ড এবং র‌্যাম পরিস্কার করা শুরু করুন। গ্রাফিক্স কার্ডের ক্ষেত্রে গ্রাফিক্স কার্ডের ফ্যানের আনাচে কানাচে পরিস্কার করার জন্য ব্রাশ না ব্যবহার করে ear cotton ব্যবহার করতে পারেন। অথবা সরাসরি compressed air bottle ব্যবহার করতে পারেন। আর র‌্যামকে পরিস্কার করতে সফট কাপড় ব্যবহার করুন। তবে মনে রাখবে গ্রাফিক্স কার্ড এবং র‌্যামের নিচের অংশটুকু যেখানে সোনালি রংয়ের থার্মালগুলো রয়েছে সেগুলোকে কখনোই শক্ত জিনিস এবং সূতি কাপড় দিয়ে ঘষা দিবেন না, এই অংশটুকু বেশ সেন্সিটিভ এবং একটু উল্টোপাল্টো হলে পুরো গ্রাফিক্স কার্ড / র‌্যামটাই নস্ট হয়ে পড়বে।

এবার কেইসের আনাচে কানাচের অংশগুলো কমপ্রেস এয়ার দিয়ে ক্লিন করে নিন। অনেকেই এই কাজে নিজের মুখের ফুঁ দিয়ে থাকেন তবে এটা আপনার নিজের জন্য এবং কম্পিউটারের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। কারণ ফুঁ মারলে উল্টে ধুলোবালিগুলো আপনার দিকেই চলে যায় এবং অনেক সময় ফুঁয়ের সাথে নিজের মুখের লালাগুলোও অসাবধানতা বশত বেরিয়ে যায় যা পিসির এই অংশগুলোর জন্য ক্ষতিকর।

এবার সিপিইউ ফ্যান এবং PSU ফ্যানকে পরিস্কার করে ফেলুন। এক্ষেত্রে আপনার কাছে কমপ্রেস এয়ার না থাকলে কটন বার ব্যবহার করতে পারেন। কটন বার দিয়ে ফ্যান পরিস্কার করতে সময় বেশি লাগলেও পরিস্কার করা যায় সমস্যা নয়। তবে আমি দেখেছি যে এই ফ্যানগুলোর স্পিড ধরে রাখতে অনেকেই ফ্যানের মেইন অংশে নারিকেল বা কেরোসিন তৈল দিয়ে থাকেন যা দেওয়া কখনোই উচিত নয়। কারণ ফ্যানটি ঘুর্ণায়মান থাকা অবস্থান তেলের অংশটি সিপিইউ এর ভেতরের অংশে চলে যেতে পারে যার জন্য আপনার CPU ম্যালফাংশন হতে পারে।

কেইসের নিচের সাইডে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে এখানে সবথেকে বেশি ময়লা জমে রয়েছে। তাই এখানে কমপ্রেস এয়ার বা কটনবার বা ব্রাশ ব্যবহার না করে পাতলা কাপড় দিয়ে ঘষে ঘষে পরিস্কার করা উত্তম। তবে খেয়াল রাখবে কাপড়ের ঘষা যাতে কোনো হার্ডওয়্যারে টাচ না খায়। আর আরেকটি কথা হচ্ছে ভেজা এবং সূতি কাপড় সবসময় পরিহার করবেন।

পরিস্কার করা হয়ে গেলে সঠিক ভাবে হার্ডওয়্যারগুলোকে নিজেদের স্থানে বসিয়ে দিন এবং স্ক্রু-দিয়ে সিপিইউ বক্সটিকে লাগিয়ে ফেলুন । এবার সিপিইউ কেইসের পেছনের অংশে মনোযোগ দিন। পেছনের অংশের দেখবেন যে PSU ফ্যান এবং বিভিন্ন ফাঁকা ছিন্দ্রগুলোকে ময়লায় জমে রয়েছে (usb port, audio port etc) । এই অংশগুলোতে কটনবার ব্যবহার করে এবং ভেতরের অংশে কমপ্রেস এয়ার ব্যবহার করে পরিস্কার করে নিতে পারেন।

পরিস্কার করা হয়ে গেলে এবং সবকিছু ঠিকঠাক ভাবে লাগানো হয়ে গেলে পিসি চালু করুন। তারপর লক্ষ্য করলে দেখবেন যে যদি আগে সিপিইউ এর ভেতর থেকে ফ্যানগুলোর শব্দ যদি বেশি আসতো তাহলে এখন শব্দ অনেকটা এবং অনেক সময় একেবারেই ফ্যানের শব্দ কমে গিয়েছে। কারণ কুলিং ফ্যানে ময়লা জমতে জমতে শব্দ বেশি হতে থাকে। এভাবেই অবস্থান বুঝে নিয়মিত পিসি পরিস্কার রাখা উচিত। আশা করবো আজকের পোষ্টটি আপনাদের কিছুটা হলেও কাজে আসবে। আর পোষ্টটি শেষ করার আগে আবারো বলছি, কম্পিউটারের সামনে বিশেষ করে ল্যাপটপ এবং সিপিইউ কেইসের আশেপাশে কখনোই ধুমপান করবেন না, কারণ সিগারেটের ধোঁয়ার ময়লাটি কম্পিউটারের পার্টসের জন্য বিশেষ ভাবে ক্ষতিকরণ, আর আপনার স্বাস্থ্যের জন্য জন্য তো ক্ষতিকারক বটেই!

Share This Article

Search