NEIR ডেটাবেইজ চালু হল, ফোন নিবন্ধিত কিনা জানবেন যেভাবে

অবশেষে চালু হলে অফিশিয়াল ফোনের ডাটাবেইজ। যদিও এটি আরো আগে থেকেই চালু হলেও কিন্তু আজকে অফিশিয়ালি চালুর মাধ্যমে বাংলাদেশে অবাদে আনঅফিশিয়াল ফোনের ব্যবহারের পথ বন্ধ হয়ে গেল। অনেক আগে থেকে উদ্বেগ নিলেও নানা জটিলতায় বারবার পিছিয়ে যায় NEIR(National Equipment Identity Register) চালুর কাজ। গতবছরই আজকে অর্থাৎ ১ জুলাই NEIR এর অফিশিয়াল ডাটাবেইজ চালুর জন্য দিনক্ষণ নির্ধারন করার কথা জানায় বিটিআরসি অনেক আগে। আজ ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের মাননীয় মন্ত্রী জনাব মোঃ মোস্তাফা জব্বার ভার্চুয়াল অনুষ্ঠান উদ্ধোধন করার মাধ্যমে NEIR এর পরীক্ষামূলক কার্যক্রম শুরু করে ৩ মাসের জন্য। কেন NEIR কার্যক্রম হাতে নিয়ে নিয়েছে বিটিআরসি, কিভাবে এটি কাজ করবে এবং আপনার ফোনের নিবন্ধন স্ট্যাটাস কিভাবে যাচাই করবেন তার বিস্তারিত নিয়েই আজকের আর্টিকেল-

আনঅফিশিয়াল ফোন বন্ধ করার কারণ-

আনঅফিশিয়াল ফোন বন্ধ করতে চাওয়ার পিছনে অনেকগুলো কারণ রয়েছে। প্রথমত বলা যায়, আনঅফিশিয়াল ফোনের কারণে বিশাল অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হতে হচ্ছে সরকারকে। জানিয়ে রাখা ভাল যে, আমদানি করা স্মার্টফোনের ক্ষেত্রে ৫৭% ট্যাক্স ও দেশে উঠপাদিত ফোনের ক্ষেত্রে ১৭% ট্যাক্স দিতে হয়। এই বিশাল ট্যাক্স ব্যবধানের অন্যতম কারণ হচ্ছে দেশের শিল্পায়নের সুযোগকে যাতে বিদেশি বিনিয়োগকারিদের মাধ্যমে কাজে লাগানো যায়। ফলে আমাদের দেশের অনেক কর্মসংস্থানের সৃস্টি হওয়ার সুযোগ রয়েছে। ইতিমধ্যে স্যামসাং,নোকিয়া ও ওয়ালটনসহ অনেক নির্মাতারা দেশেই ফোন তৈরি করছে। কিন্তু বিভিন্ন উপায়ে প্রচুর আনঅফিশিয়াল ফোন দেশের মার্কেটে প্রবেশ করতে থাকে যার কোনো রাজস্ব সরকার পায় না। অন্যদিকে সেন্ট্রাল IMEI ডেটাবেইজ না থাকার ফলে অসাধু চক্র IMEI নকল করে নকল ফোন বাজারে নিয়ে আসে এবং নানান ধরনের অপরাধ করে থাকে যা বন্ধ করতে চায় সরকার। NEIR এর কার্যক্রম পুরোদমে চালু হয়ে গেলে এইসব সমস্যার অনেক সমস্যাই সমাধান হয়ে যাবে বলে মনে করছে বিটিআরসি।

নিবন্ধন সংক্রান্ত যাবতীয় তথ্য-

১ অগাস্ট ২০১৯ সালে চালু হয় অফিশিয়াল ফোন নিবন্ধন করার ডেটাবেইজের কার্যক্রম। তারপর থেকেই বাংলাদেশ সরকারকে দেওয়া ভ্যাট/ট্যাক্স দেওয়া সকল ফোন বিক্রির জন্য মার্কেটে আসার আগেই বিটিআরসি ডেটাবেইজে এন্ট্রি হয়ে যেত। তারপরই পুরোনো আনঅফিশিয়াল ফোনগুলোর হবে তা নিয়ে ধোঁয়াশা ছিল কিছুদিন আগ পর্যন্তও। কারণ একবার খবর আসতে থাকে ১ অগাস্ট ২০১৯ সালের পরের আনঅফিশিয়াল ফোনগুলো আলাদা ভাবে নিবন্ধন করতে হবে। এরপর বলা হয় প্রথমে একটি সিম পরবর্তীতে আরেকটি সিম নেটওয়ার্ক থেকে বিচ্ছিন্ন করা হবে।

কিন্তু এই মাসের শেষের দিকে সব আনঅফিশিয়াল ফোন ব্যবহারকারীদের জন্য সুখবর নিয়ে আসে বিটিআরসি। সেটি হচ্ছে ৩০ জুনের এর মধ্যে ব্যবহৃত সকল আনঅফিশিয়াল ফোন অটোমেটিক্যালি NEIR ডেটাবেইজে নিবন্ধিত হয়ে যাবে ১ জুলাই। সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে আজকে থেকে কোনো আনঅফিশিয়াল ফোন নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হলে তা NEIR ডেটাবেইজে যুক্ত হবে না ফলে সেটি অবৈধ ফোন বলে গন্য হবে। যেহেতু বর্তমানে NEIR এর কার্যক্রম পরীক্ষামূলক ভাবে শুরু করেছে তাই নতুন করে যুক্ত আনঅফিশিয়াল ফোন সাথে সাথে নেটওয়ার্ক থেকে বিছিন্ন করা হবে না। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে ব্যবহারকারীদের জানিয়ে দেওয়া হবে যে, তাঁরা অনিবন্ধিত ফোন ব্যবহার করেছে এবং পরবর্তী করণীয় ম্যাসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দেওয়া হবে। অন্যদিকে বিদেশ হতে শুল্কমুক্তভাবে দুইটি ফোন এবং শুল্ক দিয়ে আরো ৬টি ফোন দেশে আনা যাবে। বিদেশ হতে আনা ফোণের ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট সময়ের(১০ দিন) মধ্যে বিটিআরসি বর্ণিত উপায়ে নিবন্ধন করে নিতে হবে। এছাড়া এ সংক্রান্ত অনেকগুলো প্রশ্নের উত্তর বিটিআরসির ফেইসবুক পেইজে দেওয়া হয়েছে।

যেভাবে ফোন নিবন্ধিত কিনা জানবেন 

৩০ই জুনের আগের ব্যবহৃত ফোন হলে যেহেতু স্বয়ংক্রীয়ভাবে নিবন্ধিত হয়ে যাবে তাই আলাদা জানার যদিও দরকার নেই। এছাড়া আপনার ফোন যদি অবৈধ কোনো কারনে হয়েই থাকে তাহলে বিটিআরসি তা ফোনে মেসেজের মাধ্যমে জানিয়ে দিবে। তবু যদি নিশ্চিত হওয়ার জন্য জানতে চান তাহলে আপনার জন্য কয়েকটি উপায় রয়েছে। তাছাড়া বিটিআরসি নির্দেশনা হচ্ছে ১ জুলাই থেকে নতুন ফোন কিনার সময় NEIR এর ডেটাবেইজে যাচাই করেই যেন সবাই অফিশিয়াল ফোন কিনে।

1. প্রথম উপায় অনেকের কাছে জানা থাকতে পারে যেহেতু এটি অনেক আগে থেকেই বিটিআরসি চালু করেছে। সেটি হচ্ছে,

  •  মোবাইল ফোনের মেসেজ অপশনে গিয়ে KYD<space>১৫ ডিজিটের IMEI নাম্বরটি লিখতে হবে। উদাহরণঃ               KYD 123456789012345।
  •  তারপর  ১৬০০২ নাম্বরে  পাঠাতে হবে ।
  • ফিরতি মেসেজ এর মাধ্যমে মোবাইলের বৈধতা সম্পর্কে জানানো হবে।

2. দ্বিতীয় উপায় হচ্ছে USSD ডায়ালের মাধ্যমে-

  •  মোবাইল হ্যান্ডসেট হতে *১৬১৬১# নম্বরে ডায়াল করতে হবে।
  • Status Check অপশন সিলেক্ট করার জন্য 1 লিখে নেক্সট দিতে হবে।
  •  অটোমেটিক বক্স আসলে হ্যান্ডসেট এর ১৫ ডিজিটের IMEI নম্বরটি সঠিকভাবে লিখতে হবে।
  • হ্যাঁ/না অপশন সম্বলিত একটি অটোমেটিক বক্স আসলে হ্যাঁ সিলেক্ট করার জন্য 1 লিখে নেক্সট দিতে হবে
  • ফিরতি মেসেজে ব্যবহৃত মোবাইল ফোনের হালনাগাদ অবস্থা জানানো হবে।

বলে রাখা ভাল উভয় ক্ষেত্রেই, আপনার অপারেটর আপনার কাছে কোনো রকম চার্জ করবে না।

3.তৃতীয় এবং সর্বশেষ উপায় হচ্ছে http://neir.btrc.gov.bd/auth/login এ একটি ইউজার একাউন্ট খোলার মাধ্যমে

উপরের দেওয়া ওয়েব সাইটে গিয়ে ফোন নাম্বার(টেলিটক নাম্বার বাদে), নাম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে সহজেই একটি একাউন্ট খোলা যাবে। তারপর আপনি আপনার ফোনে বর্তমান অবস্থা এবং বিদেশ হতে উপহার হিসেবে কোনো ফোন পেলে তা রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন। এক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট এর ছবি/স্ক্যান কপি (যেমনঃ পাসপোর্টের ভিসা/ইমিগ্রেশন তথ্যাদি, ক্রয় রশিদ ইত্যাদি) আপলোড করে অপেক্ষা করতে হবে। যদি বৈধ হয়ে থাকে তাহলে তা স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়ে যাবে।

বর্তমানে বিটিআরসির ডাটাবেজ এ সকল মোবাইল অপারেটর থেকে প্রাপ্ত আইএমইআই নম্বর এর মাইগ্রেশন কার্যক্রম চলমান রয়েছে বিধায়, আগামী ১৫ জুলাই ২০২১ এর পর হ্যান্ডসেট যাচাই করার জন্য অনুরোধ করেছে বিটিআরসি।

আরেকটি বিষয় লক্ষ্যনীয় হচ্ছে, আপনার ফোন নিবন্ধিত হবে আপনার সিমের বিপরীতে। তাই পরীক্ষামূলক ৩ মাস অতিবাহিত হওয়ার পর আপনার ফোন যদি বিক্রি করতে হয় তাহলে NEIR ওয়েবসাইট হতে প্রথমে ডি-রেজিস্ট্রেশন করতে হবে। তবে কিভাবে কি করতে হবে এখনো জানায় নি বিটিআরসি। আশা করা যাচ্ছে ৩ মাস পর এ ব্যাপারে নির্দেশনা আসবে।

Share This Article

Search