Bitwarden: ফ্রিতেই যে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের রয়েছে অনেক ফিচার

গতমাসে LastPass এনাউন্স করে তাঁরা ফ্রি ইউজারদের জন্য সুযোগসুবিধাদি কমিয়ে দিতে যাচ্ছে। তারমধ্যে একটি হচ্ছে যেকোনো একটি ডিভাইস টাইপে সীমাবদ্ধ হয়ে যাবে ফ্রি একাউন্ট। এরপরই সবদিকে থেকে শুরু হয়ে LastPass এর বেস্ট অল্টরনেটিভ কোনটি? আমাদের অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে বর্তমানে যে কয়েকটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ফ্রি প্ল্যান অফার করছে তাঁদের মধ্যে অনেককিছু অফার করছে Bitwarden। এমনকি LastPassকে নিয়ে করা নিউজে আমাদেরকে অনেকে জানিয়েছেন তাঁরা ইতিমধ্যে Bitwarden এ শিফট হয়ে গিয়েছেন এবং অনেকে অনেক আগে থেকেই এই পাসওয়ার্ড ম্যানাজারে আছেন। তো, সবকিছু মিলে আমরা ভাবলাম এই পাসওয়ার্ড ম্যানাজারের একটি ওভারভিউ নিয়ে আসা যাক।

ফ্রি VS প্রিমিয়াম প্ল্যানের মধ্যে পার্থক্য কি?

Bitwarden এর ওয়েবসাইটে একটি ইন্টারেস্টিং কথা রয়েছে সেটি হচ্ছে “তাঁরা বিশ্বাস করে প্রত্যেকের সিকিউরিটি টুলসে এক্সেস থাকা প্রয়োজন এবং Bitwarden এর কোর ফিচারগুলো ১০০% ফ্রি”। এই কথার সত্যতা মিলে তাঁদের প্লাইসিং প্ল্যানে সেখানে দেখা যাচ্ছে বছরে ১০ ডলারের মত এক্সট্রা পে করতে হবে প্রিমিয়াম প্ল্যানের জন্য বিনিময়ে আপনি পাবেন 2 Factor Authentications এ বাড়তি দুইটি টুলস ব্যবহারের সুযোগ, ভল্ট হেলথ রিপোর্ট, প্রাইরোটি কাস্টোমার সাপোর্ট ও ১ জিবি ভোল্ট সাইজসহ আরো কয়েকটি যা আপনি ফ্রি প্ল্যানে পাবেন না।

Bitwarden ওপেন সোর্স হওয়াতে সুবিধা-

যে কোনো কিছু ওপেন সোর্স হলে দিনশেষে আমাদের মানে আমজনতার জন্যই বেশি লাভ। কিন্তু সিকিউরিটি রিলেটেড কোনো কিছু ওপেন সোর্স হলে এটি মানুষকে আরো বেশি আকৃষ্ট করে। Bitwarden ওপেন সোর্স হওয়াতে সবচেয়ে বড় সুবিধা হচ্ছে ট্রান্সপারেন্সি। অর্থাৎ Bitwarden কোনো শ্যাডি কাজ করছে না সেটি এক প্রকার নিশ্চিত থাকা যায় কারণ যে কেউ চাইলে এর সোর্স কোড পরীক্ষা করে দেখতে পারবে। অন্যদিকে বিভিন্ন আপডেটের ফলে দেখা যায় অনেকসময় সিকিউরিটি হোল তৈরি হয়ে যায় যা সহজেই বের হয়ে যাবে এবং দ্রুত ফিক্স করে যাবে। এছাড়া তাঁদের কমিনিউটি সাপোর্ট তো র‍য়েছেই যেকোনো কিছুর জন্য।

যেসব প্ল্যাটফর্মে ব্যবহার করা যাবে Bitwarden-

একটি পাসওয়ার্ড ম্যানেজারকে অনেক ভার্সেটাইল হতে হয় ক্রস প্ল্যাটফর্ম সাপোর্টের দিকে থেকে। সেইদিকে থেকে Bitwarden প্রায় কমপ্লিট বলা যায়। কারণ Bitwarden এর রয়েছে ডেস্কটপ, ম্যাক ও লিনাক্স অ্যাপ্ললিকেশন, মোবাইল প্ল্যাটফর্মে আইওএস ও এন্ড্রয়েড উভয়ের জন্য রয়েছে অ্যাপ, জনপ্রিয় সব ব্রাউজারের জন্য এক্সটেনশন ও মোট ইম্প্যার্টেন্টলি ওয়েব ইন্টারফেসও রয়েছে।

Bitwarden কতটুকু সেইফ?

যেকোনো পাসওয়ার্ড ম্যানেজার জন্য এই প্রশ্নটি প্রযোজ্য। কারণ মানুষ তাঁদের মোস্ট প্রেশাস রিসোর্স এইখানে স্টোর করে রাখবে। এখনকার পাসওয়ার্ড ম্যানেজারগুলো শুধু পাসওয়ার্ড ছাড়াও আরো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য যেমন ব্যাংক ডিটেইলস, এড্রেস, নোটস, ডকুমেন্ট ইত্যাদি রাখা যায়। যদি কোনো কারণে পাসওয়ার্ড ম্যানেজারই কম্প্রোমাইজ হয়ে যায় তাহলে তো সব প্রচেষ্টাই বৃথা। অন্যান্য অনেক পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের মত Bitwarden এও Zero Knowledge Based Architecture ব্যবহার করা হয়। এটি দ্বারা মূলত যা বুঝায় সেটি হচ্ছে আপনার master password দিয়েই শুধুমাত্র আপনিই আপনার ভল্টে  এক্সেস করতে পারবেন। কারণ আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড অন্য কোথাও সংরক্ষণ করা করে Bitwarden। যার ফলে কোনো কারণে যদি আপনি আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড হারিয়ে ফেলে তাহলে কিন্তু রিকোভার বা রিসেট করা যাবে না। সেই ক্ষেত্রে নতুন একাউন্ট খোলা ছাড়া অন্য কোনো রাস্তা থাকবে না।

 

এছাড়া 2 Factor Authentication তো রয়েছেই। অর্থাৎ কোনো কারণে যদি আপনার দিক দিকে আপনার মাস্টার পাসওয়ার্ড কেউ জেনে ফেলে তাহলেও কিন্তু কেউ মেইন ভল্টে প্রবেশ করতে পারবে না। এইখানে আপনারা 2FA এর জন্য বেশ কয়েকটি অপশান পাবেন ফ্রি একাউন্টের জন্যসহ যেগুলো হলঃ

১। Authy or Google Authenticator এর অথেনটিকেটর অ্যাপ ব্যবহার করা যাবে।
২। ইমেইলে ওয়ান টাইম এক্সেস কোড পাওয়া যাবে।
৩। বায়োমেট্রিক সিকিউরিটি যেমনঃ ফিংগারপ্রিন্ট, ফেইস স্ক্যান ইত্যাদিও ব্যবহার করা যাবে।
৪। প্রিমিয়াম ইউজাররা Duo ও YubiKey এর মত ইউসবি টুলস ব্যবহারের সুবিধা পাবে।

এইবার Bitwarden এর এনক্রিপশন কিভাবে কাজ করে তা ব্যাপারে একটু ধারনা দেওয়া যাক। প্রথমত লগিন করার সময় ইমেইল এবং মাস্টার পাসওয়ার্ড দিয়ে আপনার লোকাল মেশিনে একবার এনক্রিপশন হয়ে একটি হ্যাশ নাম্বার জেনারেট হবে। তারপর ঐ হ্যাশ যখন Bitwarden এর এর সার্ভার সার্ভার রিসিভ করবে তখন তাঁরা আবার পুনরায় হ্যাশিং করা তারপর তাঁরা সার্ভারে স্টোর করা হয়। এই হ্যাশ ফাংশান গুলো হছে one way ডিজাইন করা অর্থাৎ রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিং করে অরিজিনাল মাস্টার পাসওয়ার্ড বের করার কোনো সুযোগ নাই। AES-256 মিলিটারি স্ট্যান্ডার্ড ব্যবহার কার হয় ভল্টের ডাটা গুলোকে এনক্রিপশন করার জন্য। এনক্রিপশন স্ট্যান্ডার্ড  ব্যবহার করেই আমেরিকারসহ সারা বিশ্বে বিভিন্ন সরকার ও এজেন্সিগুলো তাঁদের টপ সিক্রেট ডাটা এনক্রিট করে থাকে। আবার PBKDF2 SHA-256 ব্যবহার করা হয় মাস্টার পাসওয়ার্ড থেকে “এনক্রিপশন কি” বের করার জন্য। তাছাড়া Bitwarden প্লেইন টেক্সট ডাটা তাঁদের সার্ভার হোক বা আপনার ডিভাইস হোক কোথাও সেভ করা রাখে না। তাই কোনো কারণে যদি Bitwarden এর সার্ভার হ্যাক হয়ে যায় তাহলেও হ্যাকারদের কাছে ঐ ডাটা কোনো কাজে দিবে না যেহেতু ডাটাগুলো হেভিলি হ্যাশড(ক্রিপ্টোগ্রাফিক্যালি)।

তাও যদি আপনার তাঁদের সার্ভারের উপর ভরসা রাখতে ইচ্ছা না হয় সেইক্ষেত্রে আপনি নিজের মত করে সার্ভার বানিয়ে Bitwarden এর সাথে ব্যবহার করে পারবেন।

Top Features-

পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের কয়েকটি ফিচার না থাকলেই তাই Bitwarden এর টপ কয়েকটি ফিচার সংক্ষেপে আলোচনা করা হল।

Sync All Devices- 

আগেই আমরা Bitwarden এর বিশাল ক্রস প্ল্যাটফর্মের সুবিধা রয়েছে তা আলোচনা করেছি। এই সুবিধা ব্যবহার করে আপনার বিভিন্ন ধরনের যতগুলো ডিভাইস আসে সবগুলোতে পাসওয়ার্ড সিংকিং করে ফেলতে পারবেন। এই সুবিধাটিই LastPass সীমাবদ্ধ করে দিয়েছে। তাই যাদের অনেকবেশি ভিভাইস ইউস করতে হয় তাঁদের জন্য Bitwarden ভাল একটি অপশান হতে পারে কেননা এইখানে ডিভাইসে কোনো লিমিটেশন নাই। তাছাড়া অন্য জায়গায় থেকে ইম্পোর্টও করা যাবে Bitwarden এ।

Auto-fill logins-

এটি একটি অন্যতম গুরুতপূর্ণ ফিচার যার কারণে অনেকে পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে থাকে কেননা ভিন্ন ভিন্ন ইউনিক ও স্টং পাসওয়ার্ড একদিকে মনে রাখা যেমন কস্ট তেমনি টাইপ করা সময়সাধ্য। Bitwarden ব্যবহারকারীরা  Autofill login সুবিধা ব্যবহার করে এই ঝামেলা এড়াতে পারবে।

Secure Password Generator-

যাদের স্ট্রং ইউনিক পাসওয়ার্ড প্রোভাইড করতে সমস্যা হয় তাঁরা সহজেই পাসওয়ার্ড জেনেরটর ব্যবহার করে বিভিন্ন কম্বিনেশনের পাসওয়ার্ড বানাতে পারবেন।

pcmag

Password Capture- 

এটি নিয়ে আসলে বলার কিছু নাই তাও এটি যেহেতু একটি কোর ফিচার তাই বলতে হচ্ছে। আমরা যখন একাউন্ট খুলি বার লগিন করি তখন অন্যান্য ম্যানেজারের মত Bitwarden ও পাসওয়ার্ড ক্যাপচার করে তা সেভ করা রাখতে পারবে।

Password Organization-

বিভিন্ন ক্যাটগরিতে পাসওয়ার্ড সেভ করা যাবে যদিও তা ম্যানুয়েলি করতে হবে।

এছাড়া পাসওয়ার্ড শেয়ারিং, ফাইল শেয়ারিংসহ আরো বেশকিছু ফিচার রয়েছে। এই ছিল মোটামুটি ওভারভিউ। যেহেতু এটি রিভিউ না তাই এটির ইউজার ইন্টারফেস কেমন ফ্রেন্ডলি, অন্যান্য পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাথে পার্থক্য কোথায় রয়েছে ও এখনও কি কি ফিচার ওরা দিতে পারেনি ইত্যাদি বিষয়গুলো আনা হয়নি। যদি আপনাদের রিভিউয়ের প্রয়োজন হয় তাহলে আমাদের কমেন্ট করে জানান আমরা রেসপন্সের উপর ভিত্তি করে ভবিষ্যতে রিভিও করার চেষ্টা করব।

Share This Article

Search