কেন দরকার পার্টিশন ম্যানেজার?
পিসির হার্ডডিক্সগুলোকে পার্টিশন বা বিভিন্ন ভাগে বিভক্ত করার জন্য আমাদের পার্টিশন ম্যানেজার টুলের প্রয়োজন হয়ে থাকে। উল্লেখ্য যে উইন্ডোজের নিজস্ব “Disk Management” অপশনটি দিয়েও কিন্তু আমরা এই কাজটি করে নিতে পারি। কিন্তু উইন্ডোজের এই অপশনটি দিয়ে সবসময় সবার চাহিদা পূরণ করা যায় না। আর সেজন্যই থার্ড পার্টি টুলসগুলো আমাদের ব্যবহার করতে হয়। আজ এরকমই সেরা ১০টি পার্টিশন ম্যানেজার নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা হবে। এ সকল ম্যানেজার ব্যবহার করে আপনি আপনার পিসির হার্ডডিক্সের পার্টিশনগুলোকে ক্রিয়েট, ডিলেট, রিসাইজ, মুভ, চেক এবং কপি করতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও ডিক্স ইউজেস চেকিং, ডাটা কপি, ডিক্স ইমেজিং, ব্যাকআপস নেওয়া এবং ব্যাকআপ থেকে রিস্টোর ইত্যাদি কাজগুলোও এই সকল সফটওয়্যার দিয়ে করা যাবে।
AOMEI Partition Assistant
আমাদের লিস্টের প্রথম স্থানে রয়েছে AOMEI Partition Assistant । বেসিক পার্টিশন টুলস ফিচারগুলোর সবই আপনি এতে পেয়ে যাবেন। আর যারা এই পার্টিশনিং কাজে নতুন এনেছেন তাদের জন্য এই সফটওয়্যারটি বেশ কাজে দেবে, কারণ এই টুলটি ব্যবহার করা বেশ সহজ। কম্পিউটার অপারেটিং সম্পর্কে বেসিক ধারণা সমৃদ্ধ যেকেউই এই টুলটি ব্যবহার করে তাদের পিসিতে প্রয়োজন মতো পার্টিশনিং করে নিতে পারবেন। এছাড়াও টুলটি কিভাবে ব্যবহার করতে হয় সে সম্পর্কে টুলটিতেই আপনি একটি আলাদা ডেডিকেটেড টিউটোরিয়াল পেয়ে যাবেন। পার্টিশন ম্যানেজার ছাড়াও বিভিন্ন এক্সট্রা টুলসও রয়েছে এতে। আর সবথেকে বড় কথা হচ্ছে এটি একটি ফ্রি সফটওয়্যার।
IM-Magic Partition Resizer
আমাদের আজকের লিস্টের ২য় স্থানে রয়েছে IM-Magic Partition Resizer। এটি দিয়ে আপনি পার্টিশনকে মুভ করতে পারবেন, রিসাইজ করতে পারবেন, কপি করতে পারবেন এবং পার্টিশনের লেবেল এবং লেটারকে পরিবর্তন করতে পারবেন। এগুলোর সবই মাত্র ৩টি ক্লিকের মাধ্যমে আপনি সম্পন্ন করে ফেলতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও টুলটি দিয়ে আপনি পার্টিশনগুলোর Error চেকিং, পার্টিশন ডিলেট এবং পার্টিশনকে ফরম্যাট করতে পারবেন। আর পুরো পার্টিশন থেকে Data Wipe এর ফিচার তো থাকছেই!
Paragon Partition Manager
সহজে ব্যবহার যোগ্য আরেকটি স্ট্যান্ড এলোন ম্যানেজার হচ্ছে Paragon Partition Manager। এটির ব্যবহারের মাধ্যমে আপনি পার্টিশন ক্রিয়েট, রিসাইজ, ফরম্যাট এবং কপি করতে পারবেন। আর সাথে পার্টিশন ডিলেটও করে নিতে পারবেন। প্রতিটি পার্টিশনের ডিটেইলড ভিউ আপনি এই টুলটিতে দেখতে পাবেন। আর সেটা পছন্দ না হলে আপনি টুলটি লেআউটকে নিজের মতো করে কাস্টমাইজ করে নিতে পারবেন। তবে দুঃখের বিষয় হচ্ছে টুলটি এডভান্স ফিচারগুলো ফ্রি সংস্করণে দেওয়া নেই।
Macrorit Partition Expert
সহজেই ব্যবহার করা যায় এবং সুন্দর ইউজার ইন্টারফেসযুক্ত আরেকটি ম্যানেজার হচ্ছে Macrorit Partition Expert । এই পার্টিশন ম্যানেজারে আপনি বেসিক ফিচারগুলো যেমন পার্টিশন মুভিং, রিসাইজিং, কপিং, ডিলেটিং, হাইডিং, আনহাইডিং, এক্সপ্লোরিং, কনভার্টিং এবং ফরম্যাটিং টাস্কগুলো করে ফেলতে পারবেন।
Gparted
লিস্টের আরেকটি স্ট্যান্ড এলোন ম্যানেজার হচ্ছে Gparted । এটি ext2, ext3 এবং ext4 ফাইল সিস্টেম সার্পোট করে। উইন্ডোজের থেকে লিনাক্সে এই টুলটি বেশি কার্যকর বলে আমার মনে হয়েছে। তবে টুলটির একটি ড্রব্যাক হচ্ছে যখন আপনি একে অফলাইন হিসেবে কাজ করবেন তখন পার্টিশনগুলোকে unmount করে তারপরেই এডিটিং করতে পারবেন।
Cute Partition Manager
নামে কিউট থাকলেও এই ম্যানেজারটি কিন্তু দেখতে মোটেও কিউট নয়। এটি একটি এডভান্স পার্টিশন ম্যানেজার অর্থ্যাৎ এই টুলটি দিয়ে আপনি এডভান্স কাজ করতে পারবেন এবং এটি চালাতে হলেও এডভান্স লেভেলের ধারণা থাকা প্রয়োজন। শুধুমাত্র রিসাইজ এবং মার্জিং করা ছাড়া টুলটি দিয়ে আপনি সকল প্রকার কাজ যেমন এড করা, ডিলেট করা, এডিট করা এবং ম্যানেজ করা সবই করতে পারবেন।
Partition Logic
আমাদের আজকের লিস্টের সপ্তম স্থানে রয়েছে Partition Logic । এটি একটি ডাটা ম্যানেজমেন্ট এবং হার্ডডিক্স পার্টিশন সফটওয়্যার। এটি দিয়ে আপনি পিসির পার্টিশনকে ইরেজিং, ফরম্যাটিং, ক্রিয়েটিং, ডিফ্রাগমেন্টিং, কপিং, রিসাইজিং এবং মুভিং করতে পারবেন। এগুলো ছাড়াও Partition Logic দিয়ে আপনি পুরো হার্ডডিক্সের attributes গুলোকেও মডিফাই করতে পারবেন। তবে টুলটির একটি ড্রব্যাক হচ্ছে পুরোনো মডেলের পিসিকে মানে পুরোনো মডেলের বায়োসে এটি কাজ করবে না।
Ranish Partition Manager
এই টুলটির বয়স বেশ পুরোনো। তবে পুরোনো হলেও এখনো এটা বেশ কাজের। এটিকে মূলত একটি সিস্টেম একাধিক অপারেটিং সিস্টেম চালানো কাজে সাহায্য করার উদ্দেশ্যে বানানো হয়েছে। তবে এই টুলটি দিয়ে আপনি পিসির পার্টিশনকে কপি, নতুন পার্টিশন ক্রিয়েট এবং প্রাইমারি এবং আলাদা পার্টিশনগুলোকে রিসাইজ করতে পারবেন। তবে এই টুলটি এডভান্স ইউজারদের জন্য।
Active@ Partition Manager
যারা ব্যক্তিগত কাজে বা ব্যবসায়িক বা অফিসের কাজ ছাড়া পারসোনাল ভাবে কম্পিউটার ব্যবহার করে থাকেন বা যারা যারা হোম ইউজার রয়েছেন আর যারা বেসিক পার্টিশন কাজের জন্য বেসিক পার্টিশন ম্যানেজার খুঁজছেন তাদের জন্য Active@ Partition Manager টুলটি সেরা হবে। এই টুলটি দিয়ে আপনি সহজেই সকল বেসিক কাজ সহ বিভিন্ন এডভান্স টাস্ক যেমন নতুন ডিক্স সেটআপ করা, পার্টিশনের attributes কে পরিবর্তন করা, মার্ক করা ইত্যাদিও করতে পারবেন। তবে সফটওয়্যারটি ড্রব্যাক হচ্ছে লকড পার্টিশন (যেমন C ড্রাইভ) গুলোকে আপনি এই টুলটির মাধ্যমে এডিট করতে পারবেন না।
KDE Partition Manager
আমাদের আজকের লিস্টের একেবারেই শেষ স্থানে রয়েছে KDE Partition Manager। এটি একটি ওপেন সোর্স সফটওয়্যার। এই টুলটি দিয়ে আপনি পিসির পার্টিশনগুলোকে ম্যানেজ করতে পারবেন, এগুলো ছাড়াও ফাইল সিস্টেম এবং ডিক্স ডিভাইসগুলোকেও এই টুলটির মাধ্যমে ম্যানেজ করা যাবে। মুভিং, ডিলেটিং, রিসাইজিং, কপিং, নতুন পার্টিশন ক্রিয়েট ইত্যাদি সবকিছুই করতে পারবেন। আর টুলটির ইউজার ইন্টারফেসও বেশ সহজেই ব্যবহার করা যায় তাই নতুনদের ক্ষেত্রেও টুলটি ব্যবহার করা বেশ সহজ হবে।
এই ছিলো সেরা ১০টি ফ্রি পার্টিশনের ম্যানেজার যেগুলো ব্যবহার করে আপনি পিসির পার্টিশনগুলোকে ম্যানেজ করতে পারবেন। তবে বলা বাহুল্য যে হার্ডডিক্স পার্টিশন করা কিন্তু কোনো বেসিক কাজ নয়। আপনি পিসি সম্পর্কে সঠিক ধারণা না রাখলে এই পার্টিশনগুলোকে নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি না করাই উত্তম। তাহলে দেখা যাবে যে ভূলবশত আপনার ৫০০ গিগাবাইট হার্ডডিক্সের ৪০০ গিগাবাইটকেই আপনি C ড্রাইভে বরাদ্দ দিয়ে ফেলেছেন!