আপনি লটারি জিতে গেছেন, পাসওয়ার্ড দরকার
আপনার একাউন্টে ভুল করে টাকা চলে গেছে, টাকা ফেরত পাঠিয়ে দিন
আমি জীনের বাদশা, আমার বিকাশ একাউন্টে ৫০ হাজার পাঠিয়ে দে
উপরের হেডিংটি কিছুটা কমেডি টাইপ হলেও এরকম অনেক অপরাধ চক্রের মানুষ বিভিন্ন ধরণের কার্যকলাপের জন্য মোটা অংকের টাকা দাবি করে। আর তারা বলে এই এমাউন্টের টাকা কোন একটি র্যান্ডম বিকাশ একাউন্টে পাঠিয়ে দিতে। এমনটি হলে বেশি ভয় পাবেন না। বিকাশের নতুন নিয়ম অনুযায়ী কোন পার্সোনাল একাউন্টে ২৫ হাজার টাকার বেশি ঢুকানো যাবে না। যদি উল্লেখিত এমাউন্ট ২৫ হাজার টাকার উপরে হয় তাহলে আপনাকে দেয়া সেই একাউন্ট অবশ্যই কোন বিকাশ এজেন্টের একাউন্ট হবে।
যাই হোক, এমনটি হলে আপনার প্রথম কাজ হবে গোপনে পুলিশের সাহায্য নিয়ে বিকাশ সেন্টার থেকে সেই একাউন্টটি ট্রেস করা। বিকাশ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিটি একাউন্টের মালিকের নাম, ন্যাশনাল আইডি নাম্বার ঠিকানা থাকে। আর এজেন্ট একাউন্ট হলে তার দোকান বা প্রতিষ্ঠানের নামও তাদের কাছে পাওয়া যাবে। সুতরাং, এমনটি হলে আইনী পদক্ষেপ নিয়ে বিকাশ নাম্বারের মালিককে ট্রেস খুব সহজেই করা যাবে। এটি এমন কমপ্লিকেটেড কোন বিষয় নয় যা মানুষ মনে করে থাকে।
এজেন্টকে কখনো আপনার একাউন্টের পাসওয়ার্ড দেবেন না
এই ভুলটি সাধারণত আমাদের প্রবীণ মানুষেরা বেশি করে থাকেন, বিশেষ করে ক্যাশ আউট করার সময়। আমরা যারা এন্ড্রয়েড বা আইফোন ব্যবহার করে থাকি তারা বেশিরভাগই বিকাশ এপ দিয়ে সকল প্রকার লেনদেন করে অভ্যস্ত। কিন্তু আমাদের মুরুব্বী মানুষেরা এখনো বাটন ফোন ব্যবহার করে থাকেন যাতে কোন প্রকারের এপ্লিকেশন ইন্সটলই করা যায় না।
এর ফলে তাদেরকে সব সময় *247# অপশনটি ব্যবহার করেই ক্যাশ আউট করতে হয়। কিন্তু সেটি ব্যবহার করা তাদের কাছে কিছুটা কমপ্লিকেটেড বলে এজেন্টের কাছেই তারা ফোনটি দিয়ে দেন। সব কিছু ঠিক করার পর তারা ব্যাক্তির কাছে পাসওয়ার্ড চায় এবং অনেকেই তা বলে দেন। এমনটি হলে সেই এজেন্ট তার নাম্বার এবং পাসওয়ার্ড দুটোই তার কাছে রেখে দিতে পারে এবং ভবিষ্যতে সিম ক্লোন করে তা থেকে টাকা চুরি করে নিয়ে যেতে পারে।
এর জন্য মূল করণীয় হচ্ছে দুটি। এক নাম্বার হচ্ছে *247# এর যথাযথ ব্যবহার শেখান এবং দ্বিতীয়টি হচ্ছে যদি নাইবা পারে, যখন এজেন্ট ক্যাশ আউট বা ক্যাশ ইনের সময় পাসওয়ার্ড জানতে চাবে তখন নিজের হাতে নিয়ে পাসওয়ার্ড বসানো।
আপনার কাছে একটি সিরিয়াল নাম্বার এসেছে, সেটি দিন
এই প্রতারক চক্রের কাছে অলরেডি আপনার একাউন্ট নাম্বার ও পাসওয়ার্ড আছে যা তারা উপরে উল্লেখিত উপায়ে কোন এজেন্টের কাছ থেকে সংগ্রহ করে নিয়েছে। এরপর তার বিকাশ একাউন্টের এক্সেস পাওয়ার জন্য এপ থেকে লগিন করার চেস্টা করে। কিন্তু নতুন কোন ডিভাইস থেকে লগিন করলে ‘bKash’ থেকে একটি সিরিয়াল নাম্বার আসে যেটি ৩০ সেকেন্ডের মধ্যে ইনপুট করতে হয়।
যদি আপনার ফোনের মধ্যেই সিম থাকে তাহলে সেই কোড অটোম্যাটিক এপ্লাই হয়ে যায়। কিন্তু প্রতারক চক্রের হাতে আপনার সিম না থাকার কারণে আপনাকে ফোন করতে বাধ্য হয়। ফোন করার পর তারা অনেকভাবেই বলবে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার সেই নাম্বারটি তাদেরকে দেয়ার জন্য। আপনি অবশ্যই তাদের কথা অবহেলা করে যাবেন এবং বিকাশ হেল্পলাইনে ফোন করে অভিযোগ জানাবেন আপনার একাউন্ট হ্যাক করার চেস্টা করা হয়েছে এবং যে নাম্বার থেকে ফোন এসেছে সেই নাম্বারটি তাদেরন কাছে দিয়ে দেবেন।
পরিশেষে
এমন ডিজিটাল প্রতারণা শুধু বিকাশেই নয় রকেট, নগদ সহ সকল প্রকার ডিজিটাল ট্রাঞ্জেকশন মিডিয়ামের ক্ষেত্রেই ঘটছে। শুধুমাত্র বিকাশের উদাহরণ দেয়ার কারণ হচ্ছে কারণ এসকল ধরণের প্রতারণা ও জালিয়াতি বেশির ভাগ বিকাশের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে। কারণ, বাংলাদেশে অন্যান্য সার্ভিসের চেয়ে বিকাশ ইউজারের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। তবে, অন্যান্য সার্ভিসের ক্ষেত্রেও একই উপায়ে প্রতারণা ঠেকানো যাবে, কিন্তু দিন শেষে আমাদের নিজেদেরই সতর্কতা বাড়াতে হবে।