কম্পিউটারের একটি সেন্সিটিভ সফটওয়্যার অংশ হচ্ছে বায়োস। আমরা যারা পিসি সম্পর্কে টুকিটাকি ধারণা রাখি তারা ভূলেও কখনো এই বয়োসে প্রবেশ করে ঘাঁটাঘাটি করি না। কারণ বায়োসে না বুঝে উল্টাপাল্টা কোনো সেটিংস দিয়ে রাখলে পিসি এবং অপারেটিং সিস্টেম স্মুথভাবে রানিং করতে পারে না এবং বিভিন্ন সমস্যার মুখে আমরা পড়তে পারি। তাই পিসি সম্পর্কে এডভান্স লেভেলের জ্ঞান থাকলেই আপনি বায়োস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারেন।
কম্পিউটার বায়োস সেক্টর সম্পর্কে বেসিক জ্ঞান থাকলেই আপনি জেনে থাকবেন যে বায়োসেও পাসওর্য়াড দেওয়া যায়। বায়োসে পাসওর্য়াড কেন দেবেন? ধরুণ আপনার পিসি বাসার প্রায় সব ফ্যামেলি মেম্বারই ইউজ করে। আর বায়োস সম্পর্কে ভালো জ্ঞান আপনি রাখেন। বায়োসে প্রবেশ করা কোনো আহামরি ব্যাপার না। আর তাই ফ্যামেলির অন্যরা যাতে বায়োসে ঢুকে উল্টাপাল্টা সেটিংস করে না ফেলে তাই বায়োসে আপনি পাসওর্য়াড দিয়ে রাখলেন। কিন্তু এই পাসওর্য়াড যদি আপনি ভূলে যান তখন কি করবেন? এই বায়োসের পাসওর্য়াড ভূলে গেলে কিন্তু আপনাকে বেশ প্যাড়ার মধ্যে পড়তে হবে! যেমন নতুন করে পিসিতে অপারেটিং সিস্টেম ইন্সটল করতে গেলে বুটেবল ডিভিডি বা ইউএসবি ড্রাইভ ব্যবহারের সময় বায়োসে ঢুকে বুট অর্ডার পরিবর্তন করতে হবে। এছাড়াও AHCI Mode / Legacy Mode ইত্যাদি পরিবর্তন করতে গেলেও আপনাকে বায়োসে ঢুকতে হবে। কিন্তু বায়োসের পাসওর্য়াড ভুলে গেলে আপনি বায়োসে ঢুকতেই পারবেন না! আর আজ আমি আপনাদেরকে দেখাবো কিভাবে এই বায়োসের পাসওর্য়াড মুছে দিবেন বা রিসেট করবেন। আজকের পোষ্টটি শুধুমাত্র পিসি সম্পর্কে এডভান্স জ্ঞান আছে এমন ভিউয়ারদের জন্যই প্রযোজ্য।
সহজ পদ্ধতি:
বায়োসের পাসওর্য়াড রিসেট বা মুছে ফেলার সবথেকে সহজ উপায় হচ্ছে পিসির সকল ইলেক্ট্রিক ক্যাবল খুলে ফেলে মাদারবোর্ডের বায়োসের ব্যাটারি খুলে ১০/১৫ মিনিট রেখে দিতে হবে! বাহ! বায়োসের পাসওর্য়াড রিসেট করা এত্ত সোজা???
জ্বী! কম্পিউটারকে বিদ্যুৎ সরবরাহ থেকে একদম ডিসকানেক্ট করে নিন। তারপর সিপিইউ বক্স খুলুন। মাদারবোর্ড অংশে ঘড়ির ব্যাটারির মতো CMOS ব্যাটারি পাবেন; সেটাকে খুলে নিয়ে ১০ মিনিটের মতো রেখে দিন। তারপর ব্যাটারিকে যথাস্থানে সেট করে দিলেই বায়োস রিসেট হয়ে যাবে। আর এরই সাথে পাসওর্য়াডটিও মুছে যাবে।
আরেকটি সহজ পদ্ধতি হচ্ছে মাদারবোর্ডে CMOS জাম্পারকে ক্লিয়ার করে। এই দুটি পদ্ধতি ওইসকল পিসিকে কাজ করবে যেখানে বায়োসের বা CMOS এর সেটিংসগুলো ওই ব্য্যাটারির সাথে সংযুক্ত থাকে। ডেক্সটপ কম্পিউটারে এটা করা সহজ, কিন্তু ল্যাপটপের ক্ষেত্রে এই বায়োস রিসেট করতে হলে আপনাকে কম্পিউটার সার্ভিস সেন্টারে নিয়ে যেতে হবে।
আর ব্যাটারি খুলে নিলে বা জাম্পার পরিস্কার করার পরেও যদি পাসওর্য়াড না মুছে যায় কিংবা আপনার মাদারবোর্ডে যদি বায়োসের সেটিংস ব্যাটারিতে দেওয়া না থাকে তাহলে আপনি নিচের পদ্ধতিগুলো ট্রাই করতে পারেন:
যদি উইন্ডোজে বুট করতে পারেন:
উইন্ডোজে যদি বুট করতে পারেন তাহলে একটি সফটওয়্যার দিয়ে আপনি বায়োসের পাসওর্য়াড মুছে দিতে পারেন। ইন্টারনেটে সার্চ দিলে বায়োস পাসওর্য়াড রিসেটেড জন্য শতাধিক টুলস পাবেন, তবে সেগুলোর সবগুলোই যে কাজের হবে বা সেগুলো ব্যবহার করা নিরাপদ কিনা সেটা আগে যাচাই করে নেবেন। আজকের পোষ্টে আমি CMOS De-Animator সফটওয়্যারটি ব্যবহার করবো, কারণ এটি বেশ নিরাপদ এবং একটি “up to date” টুল।
প্রথমে নিচের লিংক থেকে CMOS De-Animator সফটওয়্যারটি ডাউনলোড করে নিন:
https://drive.google.com/file/d/12I_D02o0F-btKqqJfwjBLwQCrdXG0oRk/view?usp=sharing
এখন জাস্ট আপনাকে টুলটির উপর রাইট বাটন ক্লিক করে “Run as administrator” হিসেবে চালু করতে হবে। তারপর মাঝের Proceed! বাটনে ক্লিক করতে হবে। তাহলে পিসি রির্স্টাট নেবে এবং বুট মেন্যুতে দেখবেন CMOS checksum error আসছে। এবার আপনি কোনো প্রকার পাসওর্য়াড ছাড়াই BIOS সেটিংসে প্রবেশ করতে পারবেন।
যদি উইন্ডোজে বুট করতে না পারেন:
এই পদ্ধতিটি ল্যাপটপের জন্য প্রযোজ্য। কারণ একটি ল্যাপটপকে আমরা সাধারণ মানুষ সহজেই স্ক্রু-ড্রাইভার দিয়ে খুলতে পারবো না এবং ল্যাপটপের মাদারবোর্ডের স্ট্রাকচার ডেক্সটপের থেকে আলাদা তাই খুলতে পারলেও বায়োস ব্যাটারি খুঁজতে খুঁজতে আপনি কনফিউজ হয়ে যেতে পারেন। এছাড়াও অধিকাংশ ল্যাপটপে এক্সট্রা সিকুরিটি ফিচার হিসেবে বায়োসের পাসওর্য়াডগুলো আলাদা EEPROM চিপসেটে সংরক্ষিত থাকে; তাই বায়োস বা CMOS ব্যাটারি খুলে নিলেও বায়োস রিসেট হবে না। তবে বেশ পুরোনো মডেলের ল্যাপটপে আবার এই এক্সট্রা ফিচারটি দেওয়া নেই।
যাই হোক, ল্যাপটপে যখন বায়োসে ঢুকতে যাবেন তখন বায়োসের পাসওর্য়াড চাইবে। কয়েকবার ভুল পাসওর্য়াড দিলে ল্যাপটপে “System Disabled”, “Password Check Failed”, “System Halted” এই জাতীয় একটি মেসেজ আসবে। লক্ষ্য করলে দেখবেন মেসেজের সাথে একটি নাম্বারও থাকবে। মেসেজের দেখানো নাম্বারটি নোট করে নিন। আবারো ল্যাপটপটি বন্ধ করুন এবং চালু করুন। বায়োসে যান; ভুল পাসওর্য়াড দিন। যদি দেখেন আগের মতো মেসেজের সাথে দেওয়া নাম্বারটি আগের মেসেজের সাথে মিল রয়েছে তাহলে এই নাম্বারটি ব্যবহার করে আপনি ল্যাপটপের BIOS Backdoor Password জেনারেট করতে পারবেন এবং ল্যাপটপের বায়োস সেটিংসে ফিরে যেতে পারেন।
চলে যান “BIOS Master Password” ওয়েবসাইটে। এখানে গিয়ে Enter your code বক্সে বায়োস সেটিংস থেকে পাওয়া নাম্বারটি লিখুন এবং Get password বাটনে ক্লিক করুন। https://bios-pw.org/
আপনার দেওয়া নাম্বারের ভিক্তিতে বিভিন্ন ল্যাপটপের মডেলের মাস্টার পাসওর্য়াডের রেজাল্ট আপনি পেয়ে যাবেন। লিস্টে যদি আপনার ল্যাপটপের মডেলটি থাকে তাহলে তো কথাই নেই! আর যদি না থাকে তাহলে লিস্টে দেখানো সবগুলো মাস্টার পাসওয়ার্ড একে একে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
২য় পদ্ধতি:
যদি উপরের ওয়েবসাইটের মাস্টার পাসওর্য়াডগুলো কাজ না করে তাহলে আপনি “Dgobert’s Blog” সাইটে ভিজিট করতে পারেন। সাইটে গিয়ে আপনার ল্যাপটপের ব্রান্ড অনুযায়ী আলাদা মাস্টার পাসওর্য়াড টুল ডাউনলোড করে নিতে পারেন। টুল ডাউনলোড করার পর অন্য কম্পিউটারে বা ল্যাপটপে টুলটি চালু করুন।
Please enter the hash ঘরে বায়োস থেকে প্রাপ্ত নাম্বারটি লিখে এন্টার দিন। নিচের লাইনে আপনি মাস্টার পাসওর্য়াড পেয়ে যাবেন। এবার মাস্টার পাসওর্য়াডটি দিয়ে ল্যাপটপের বায়োস আনলক করার চেষ্টা করুন।
ডিক্স বা ইউএসবি থেকে যদি বুট করতে পারেন:
ধরুন আপনার উইন্ডোজে সমস্যা দেখা দিলো; উইন্ডোজ বুট হচ্ছে না। অন্যদিকে বায়োসে পাসওর্য়াড থাকার কারণে আপনি বায়োসে গিয়ে বুট অর্ডার চেঞ্জ করতে পারছেন না। কিন্তু ভাগ্যবশত আপনার বুট অর্ডারের প্রথমেই সিডি ড্রাইভ বা ইউএসবি অপশনটি সিলেক্ট করা রয়েছে। মানে “ভাগ্যবশত” ভাবে আপনি বায়োসে না ডুকেই পিসিতে নতুন করে উইন্ডোজ দিতে পারবেন। কিন্তু অনেকসময় প্রথম অর্ডারে হার্ডডিক্স দেওয়া থাকে এবং ২য় অর্ডারে ডিক্স বা ইউএসবি দেওয়া থাকে। এক্ষেত্রে আপনাকে জাস্ট পিসি থেকে হার্ডডিক্স প্লাগটি খুলে নিয়ে তারপর বুট করতে হবে। এই সিচুয়েশনে আপনি ফ্রেশ উইন্ডোজ দিতে পারবেন।
উপরে দেখানো কোনো পদ্ধতিতেই যদি আপনি আপনার ডেক্সটপ বা ল্যাপটপের বায়োসের পাসওর্য়াড রিসেট না করতে পারেন তাহলে এটা হচ্ছে আপনার শেষ ভরসা। এই পদ্ধতিতে বায়োসের পাসওর্য়াড রিসেট আপনি না করতে পারেন তাহলে পিসিকে নিয়ে কম্পিউটার সার্ভিস সেন্টারে যেতেই হবে! যাই হোক, বুট সেক্টর থেকে আমরা যেমন উইন্ডোজ সেটআপ দেই; ঠিক তেমনি নিচের সফটওয়্যারগুলোকে আমরা বুট সেক্টরে রান করে পিসির বায়োসের পাসওর্য়াড রিসেট করতে পারবো। এখানে আপনাকে জাস্ট সফটওয়্যারটির ISO ফাইলকে একটি ইউএসবি ড্রাইভে বুটেবল করে ফ্ল্যাশ করতে হবে কিংবা একটি খালি ডিক্সে বুটেবল বার্ন করতে হবে। সফটওয়্যারগুলো হচ্ছে:
PC CMOS Cleaner
প্রথম সফটওয়্যারটি হচ্ছে PC CMOS Cleaner । এই সফটওয়্যারটি Award, American Megatrends (AMI), Compaq, Phoenix, Samsung, IBM, Compaq, DTK, Thinkpad, Sony, Toshiba ইত্যাদি মেশিন ব্রান্ডের বায়োস সার্পোট করে। সফটওয়্যারটি দিয়ে আপনি বায়োসের ইউজার কিংবা সুপারভাইজর পাসওর্য়াডকে রিকোভার করতে পারবেন, রিমুভ করতে পারবেন, ডিকোড করতে পারবেন এবং একটিভ পাসওর্য়াডকে দেখতেও পারবেন। সফটওয়্যারটির ISO ফাইল ডাউনলোড করে নিন এখানে ক্লিক করে।
!Bios
“!Bios” বা ibios টুলটি মূলত বায়োসের পাসওর্য়াডের উপর “ব্রুট ফোর্স” এট্যাকের জন্য বানানো হয়েছে। হ্যাকিং নিয়ে টুকিটাকি জ্ঞান থাকলে আপনি নিশ্চয় জানবেন যে Brute Force জিনিসটি কি! বায়োসের পাসওর্য়াড রিসেট করা ছাড়াও টুলটি দিয়ে আপনি সম্পূর্ণ বায়োসকে ব্যাকআপ করে রাখতে পারবেন এবং রিস্টোরও করতে পারবেন। অন্যদিকে এই টুলে Blaster নামের আলাদা একটি অপশন রয়েছে যেটার মাধ্যমে বায়োসের নির্দিষ্ট কিছু অংশকে black করার ফিচার আপনি পাবেন। এই ব্লাস্টার অপশনটি বেশ শক্তিশালি এবং একই সাথে বেশ ভয়ংকর কারণ এই পদ্ধতি আপনার বায়োসকে করাপ্ট করে ফেলতে পারে। এই টুলটি বেশ আগের তাই নতুন নতুন মডেলের বায়োসে এটা কাজ নাও করতে পারে তবে ট্রাই করে দেখতে কোনো সমস্যা নেই।
টুলটি ডাউনলোড করে নিন এখানে ক্লিক করে।
ম্যানুয়াল কমান্ডের মাধ্যমে:
উপরের সফটওয়ারগুলোর মাধ্যমে যদি বায়োস রিসেট না করতে পারেন তাহলে FreeDOS প্রোগ্রামটিতে পিসিকে বুট করে নিয়ে debug.exe এর মাধ্যমে নিজেই দুটি কমান্ড লাইন লিখে CMOS Chechsum এরর কে আনতে পারেন। (মানে বায়োস রিসেট করতে পারেন)
এর জন্য আপনার চাই একটি পেনড্রাইভ, FreeDOS প্রোগ্রাম এবং debug.exe ফাইলটি।
প্রথমে FreeDOS কে ডাউনলোড করুন। তারপর এটাকে পেনড্রাইভে বুটেবল আকারে ফ্লাশ করুন। ফ্লাশ করার পর debug.exe কে ডাউনলোড করে আপনার পেনড্রাইভের রুট ডিরেক্টরিতে রাখুন।
এবার পিসিকে পেনড্রাইভে বুট করুন আর নিচের কমান্ডটি লিখে এন্টার দিন:
debug
o 70 2E
o 71 FF
quit
এরপর পিসি রিস্টার্ট দিন। বায়োস রিসেট হয়ে যাবে।
পরিশিষ্ট:
একটি কম্পিউটার সার্ভিস সেন্টারে যদি আপনি পিসিকে বায়োস সম্পর্কিত কোনো সমস্যার জন্য সার্ভিসিং করাতে নিয়ে যান তাহলে আজকের পোষ্টে দেখানো বিষয়গুলোই তারা আপনার পিসিতে ট্রাই করবে। তবে আগেও বলেছি এবং পোষ্টের শেষেও বলছি; বায়োস হচ্ছে একটি পিসির খুবই সেন্সিটিভ পার্ট, তাই এডভান্স ধারণা না থাকলে পোষ্টের দেখানো নিয়মগুলো নিজের পিসিতে ট্রাই না করার জন্য আমি রিকোয়েস্ট করবো। এবং এটাও বলে নিচ্ছি পোষ্টে দেখানো নিয়মগুলো আপনি আপনার নিজ দায়িত্বে ট্রাই করবেন; ট্রাই করে কোনো সমস্যা বা ক্ষতির সম্মুখিন হলে আমি এবং PCB সেটার জন্য দায়ী থাকবে না।