বর্তমান যুগের স্মার্টফোনগুলোর অন্যতম বড় এক সমস্যা হচ্ছে ব্যাটারি লাইফ! আগেরকার যুগের মোবাইলগুলো একবার চার্জ দিলে ৩/৪ দিন মিনিমাম চলে যেতো। কিন্তু বর্তমানের ফ্ল্যাগশীপ ডিভাইসগুলোতেও টানা ২ দিন ফুল চার্জে নেওয়া প্রায় যায় না। বিশেষ করে সেকল স্মার্টফোনের ব্যাটারি 4000 mAh এর নিচে সেগুলোর তো একদিন পার করাও মুশকিল! এজন্যই এখনো অনেকেই তাদের সাথে স্মার্টফোনের পাশাপাশি একটি ফিচার ফোনও রেখে দেন এবং অনেকেই সাথে পাওয়ার ব্যাংকও বহন করে থাকেন। একটি স্মার্টফোনের ফিচারগুলো যত বেশি এবং যতক্ষণ ধরে আপনি ব্যবহার করবেন আপনার ডিভাইসের ব্যাটারিও তত দ্রুতই শেষ হতে থাকবে। আর এ কারণেই একই স্মার্টফোন আপনি ফুল চার্জে ৭/৮ ঘন্টা চালাতে পারেন এবং একই স্মার্ট ফোন আপনার বাবা / মা চালালে ২/৩ দিন চলে যায়। আজকের পোষ্টে আমি স্মার্টফোনের ব্যাটারি লাইফ ক্ষয় হবার প্রধান কারণগুলোকে আপনাদের সামনে তুলে ধরবো যাতে এই কারণগুলোকে পরিহার করে নিয়ে আপনারা স্মার্টফোনের ব্যাটারি লাইফ দীর্ঘদিন ধরে রাখতে পারেন। আর উল্লেখ্য যে বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোর অধিকাংশই ব্যাটারি খোলার সিস্টেম নেই। তাই ব্যাটারি নস্ট হয়ে বা সমস্যা দেখা দিলে আগেরকার দিনের পর ৩০০/৪০০ টাকা দিয়ে বাজার থেকে নতুন ব্যাটারি কিনে এনে আপনি লাগাতে পারবেন না। তো চলুন ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে দেখে নেই স্মার্টফোনের ব্যাটারি লাইফ দ্রুত ক্ষয় হবার প্রধান কারণগুলোকে:
চার্জিং পোর্ট ময়লা হয়ে গেলে!
আপনারা হয়তো বলবেন চার্জিং পোর্টের সাথে ব্যাটারি লাইফের কি সম্পর্ক! কিন্তু Wireless চার্জিং ফিচার ছাড়া ফোনগুলোকে চার্জ দেওয়া হয় সেগুলোর চার্জিং পোর্ট দিয়েই! আর আমাদের অনেকেই শখের স্মার্টফোনটিকে নিয়মিত পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখলেও এর চার্জিং পোর্ট পরিস্কার করতে ভূলে যাই। বাইরের ধুলাবালি, পকেটের থাকাকালিন বিভিন্ন ক্ষুদ্র জার্ম এবং অনান্য ময়লা সময়ের সাথে সাথে চার্জিং পোর্টে জমা হতে থাকে। আর চার্জিং পোর্টে প্রমাণ পরিমাণের ময়লা জমে গেলে দেখবেন যে আপনার স্মার্টফোনটি আর আগের মতো দ্রুত বা স্বাভাবিক স্পিডে চার্জ হচ্ছে না। কারণ ময়লার কারণে সঠিক ভলটেজটি স্মার্টফোনে প্রবেশ করতে পারছে না। আর সঠিক ভলটেজে স্মার্টফোন চার্জ না দিলে সেটা ব্যাটারি লাইফে খারাপ প্রভাব ফেলে। তাই তো বলা হয় যে স্মার্টফোনের সাথে থাকা এডাপ্টার দিয়ে সবসময় চার্জ দিতে। আমাদের উচিত নিয়মিত চার্জিং র্পোটটি পরিস্কার করা, আর এরজন্য আপনি কটন বার কিংবা টুথপিক ব্যবহার করতে পারেন।
উজ্জল ওয়ালপেপারের জন্য!
উজ্জল বা Bright ওয়ালপেপার ব্যবহার করলে দেখবেন যে ডিভাইসের চার্জ একটু বেশি যাবে! আবার কালো রংয়ের ওয়ালপেপাল ব্যবহার করলে দেখবেন যে ডিভাইসটি তুলনামূলকভাবে বেশিক্ষণ ব্যাটারি ব্যাকআপ দিতে পারবেন। এটা একটি প্রমাণিত ফ্যাক্ট! আর এ কারণেই গুগল তাদের অ্যান্ড্রয়েড সংষ্করণে ডার্ক মোড (dark mode) নামের নতুন ফিচার আনতে যাচ্ছে যেটার মাধ্যমে পুরো অপারেটিং সিস্টেমে কালো রংয়ের থিম ব্যবহার করা হবে। বিশেষ করে OLED ডিসপ্লেযুক্ত স্মার্টফোনগুলোকে এই ডার্ক মোড ব্যবহার করলে উল্লেখ্যযোগ্য পরিমাণের পার্থক্য আপনি বুঝতে পারবেন। আবার Live Wallpaper কিংবা এনিমেশন ওয়ালপেপার ব্যবহার করলেও সেটা বেশ ব্যাটারি খেয়ে থাকে।
বেশিক্ষণ ফোন হাতে ধরে রাখলে!
ওয়েল! এই কারণটি তখনই ঘটে যখন পরিবশ বেশ গরম থাকে। গরম আবহাওয়ার কারণে আপনার হাত থেকে হিটগুলো স্মার্টফোনে চলে যায় আর এ কারণে স্মার্টফোনটি গরম হতে থাকে আর একই সাথে বেশি দ্রুত ব্যাটারি কমতে থাকে। তাই লক্ষ্য করলে দেখবেন যে তুলনামূলক শীত বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় স্মার্টফোনের ব্যাটারি বেশি লাস্টিং করে থাকে। তাই গরমকালে বাইরে চলাফেরা করার সময় প্রয়োজন ছাড়া স্মার্টফোন হাতে মধ্যে না রাখাই ভালো, বিশেষ করে সরাসরি সূর্যের তাপ থেকে স্মার্টফোনকে সুরক্ষিত রাখতে চেষ্টা করা উচিত। এ জন্য স্মার্টফোন পকেটে রাখতে পারেন এবং Bluetooth হেডফোন ব্যবহার করতে পারেন ইনকামিং কলগুলো ধরার জন্য।
প্রোগ্রামগুলো সম্পূর্ণরূপে বন্ধ না করলে
অফিসের লাঞ্চ টাইমে স্মার্টফোনে ফেসবুক, ওয়াটাসএপ, ইন্সাগ্রাম চেক করলেন এবং সাথে কিছুক্ষণ গেমসও খেললেন। আর তারপরেই ফোনটি রেখে রেগুলার কাজ করতে বসে পড়লেন। এই অ্যাপসগুলো আপনার স্মার্টফোনের র্যামে রয়ে যাবে এবং এরজন্যও আপনার ডিভাইসের ব্যাটারি দ্রুত শেষ হতে থাকবে। আর এ জন্য ব্যবহার শেষে প্রোগ্রামগুলোকে সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করে ফেলা উচিত। আর অদরকারী অ্যাপসগুলোকে ব্যাকগ্রাউন্ডে রানিং হওয়া থেকেও বন্ধ করে রাখা দরকার। তাহলে দেখবেন যে আগের থেকে তুলনামূলকভাবে বেশিক্ষণ ব্যাটারি আপনাকে ব্যাকআপ দিতে পারছে।
অতিরিক্ত নোটিফিকেশন আসলে!
স্মার্টফোনের নোটিফিকেশন সিস্টেমটি বেশ কাজের এবং গুরুত্বপূর্ণও বটে! আগে নতুন কোনো ইমেইল আসলো কিনা সেটা চেক করার জন্য আমাদেরকে দিনে বেশ কয়েকবার ইনবক্স চেক করতে হতো। কিন্তু এই নোটিফিকেশনের জন্য এখন আমদের email ঠিকানায় কোনো ইমেইল আসলে সেটা sms এর মতো আমাদের স্মার্টফোনে নোটিফিকেশন চলে আসে। কিন্তু অতিরিক্ত নোটিফিকেশন আসতে থাকলে সেটা আপনার ব্যাটারিকে আরো বেশি খেতে থাকবে আর দ্রুত গতিতে ব্যাটারি শেষ হতে থাকবে। আবার কিছুকিছু নোটিফিকেশ আমাদের স্মার্টফোনের স্ক্রিণকে On করে ফেলে আর প্রতিটি নোটিফিকেশন আসলে সাউন্ডও হয়, আর Vibration ও হয়ে থাকে! আর এগুলোও কিন্তু আপনার ব্যাটারিকে ব্যবহার করে থাকে। তাই একবার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাপসগুলো ছাড়া বাকি অ্যাপসগুলোর নোটিফিকেশনকে অফ করে দিয়ে একদিন স্মার্টফোনটি চালিয়ে দেখুন, তাহলেই পার্থক্যটা আপনি হাতে কলমে বুঝতে পারবেন।
সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস দিয়ে রাখলে!
এই কারণটি অনেকেই জানেন! যত বেশি ব্রাইটনেস দিয়ে রাখবেন আপনার ডিভাইসটি থেকে তত দ্রুতই ব্যাটারি শেষ হতে থাকবে। ৮০% ব্রাইটনেস দিয়ে আপনি যেমন টানা ৭ ঘন্টা গেমস খেলতে পারবেন ঠিক তেমনিভাবে ৪০% ব্রাইটনেস দিয়ে আপনি দেখা গেল একই ডিভাইসে ১০ ঘন্টার উপরে টানা গেমস খেলতে পারবেন। আমাদের মধ্যে অনেকেই সবসময়ই দেখা যায় যে প্রয়োজনের বেশি ব্রাইননেস দিয়ে রাখেন। বেশি ব্রাইটনেস যেমন আমাদের চোখের জন্য ক্ষতিকর (বিশেষ করে রাতের বেলায়) ঠিক তেমনি এটা দ্রুত গতিতে ব্যাটারি শেষ করে ফেলে। তাই indor পরিবেশে ৩০-৪০% ব্রাইটনেস এবং বাইরের পরিবেশে ৮০-৯০% ব্রাইটনেস ব্যবহার করা উচিত। মানে ডিভাইসের সর্বোচ্চ ব্রাইটনেস না ব্যবহার করাই শ্রেয়।
সর্বোচ্চ ভলিউম ব্যবহার করলে!
ব্রাইটনেসের সাথে বেশি মাত্রার ভলিউম ব্যবহার করলেও সেটা দ্রুত ব্যাটরি ক্ষয় করে থাকে। তাই ব্যাটারি থেকে বেস্ট ব্যাকআপ পাবার জন্য সঠিক সময়ে সঠিক ভলিউম প্রোফাইল ব্যবহার করা উচিত। যেমন বাসায় থাকলে ফোনে ৩০% ভলিউম দিয়ে রাখলে আবার বাইরে গেলে ৮০/৯০% ভলিউম দিয়ে রাখলেন। কিন্তু আরেকটি কথা হলে ভাইব্রেশন! ভাইব্রেশন আমাদের স্মার্টফোনের ব্যাটারি বেশ ক্ষয় করলেও এই ফিচারটি বেশ কাজের তাই একে অফ করার সাজেস্ট আমি দিবো না।
প্রচুর ভয়েস কনট্রোল ব্যবহার করলে!
এই ফিচারটি মূলত ফ্ল্যাগশীপ বা উচ্চমানের স্মার্টফোনগুলোতে পাওয়া যায়। যেখানে স্মার্টফোনকে টাচ না করেই আপনি আপনার ভয়েসের মাধ্যমে কমান্ড দিতে পারবেন। কিন্তু এই ভয়েস কনট্রোল ফিচারটি স্মার্টফোনের অনান্য ফিচারের মতোই ব্যাটারিকে ব্যবহার করে থাকে আর বেশি বেশি ভয়েস কনট্রোল ব্যবহার করলেও সেটার জন্য আপনি স্মার্টফোন থেকে দ্রুত ব্যাটালি লাইফ হারাতে থাকবেন। বিশেষ করে আইফোনের Siri ফিচারটি যারা নিয়মিত এবং প্রচুর ব্যবহার করে থাকেন তাদের এই সমস্যাটি বেশি হয়ে থাকে।
Auto-Rotate অপশনটি সবসময় ব্যবহার করলে!
দীর্ঘ সময়ের জন্য ইউটিউব কিংবা মুভি দেখার জন্য Auto Rotate ফিচারটি চালু করে রাখলে সেটা আমদের বেশ কাজে দিবে। কিন্তু আপনি জানেন কি এই অটো রোটেট ফিচারটি সবসময় চালু করে রাখলে সেটা ব্যাটারিকে দ্রুত শেষ করে ফেলে? এই অটো রোটেট ফিচারটি আমাদের স্মার্টফোনের Accelerometer সেন্সরটির উপর ভিক্তি করে কাজ করে। আর দরকার শেষে এই ফিচারটি বন্ধ না করলে এই সেন্সরটি সবসময় একটিভ থাকে আর ব্যাটারি খেতে থাকে। তাই মোবাইল ডাটা, ওয়াইফাইয়ের মতোই প্রয়োজন না পড়লে কিংবা প্রয়োজন শেষ হয়ে গেলে Auto-Rotate অপশনটি আমাদের বন্ধ করে রাখা উচিত।
ফুল চার্জ দিলে!!!
আজকের পোষ্টটি শেষ করছি একটি অদ্ভুত কারণ দিয়ে! স্মার্টফোনের ব্যাটারী পারফরমেন্স ধীরে ধীরে কমে যাবে যদি আপনি সবসময় ফোনটিকে ফুল চার্জ দিয়ে রাখেন তাহলে। মানে প্রতিবার চার্জ দেবার সময় ১০০% করে রাখলে সেটা ব্যাটারির জন্য ভালোর থেকে খারাপ হয়ে থাকে বেশি। কারণ বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোতে Lithium-ion ব্যাটারি ব্যবহার করা হয়ে থাকে আর এই ব্যাটারিগুলোর ভালো পারফরমেন্সের জন্য ১০০% চার্জ করার প্রয়োজন হয় না। তাই ব্যাটারি চার্জ দেওয়ার সময় ৯৫% দিয়ে চার্জার খুলে ফেলুন তাহলে দেখবেন দীর্ঘদিন আপনার ব্যাটারি সুস্থ থাকবে। আর অন্যদিকে চার্জে লাগিয়ে ফোনে কথা বলা, ইন্টারনেট ব্রাউজিং, ভিডিও দেখা, গান শোনা এবং ভিডিও গেমস খেলা থেকে বিরত থাকুন আর সম্ভব হলে ফোন বন্ধ করে চার্জ দিন।