পুরোন পিসির চমৎকার বিকল্প ব্যবহার

প্রতিদিনই নতুন নতুন সব গেজেট, নতুন নতুন সব টেকনোলজি আমাদের কাছে উন্মোচিত হচ্ছে। মাত্র ১ বছরের আগের কোনো ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইস যদি আপনি আজ ব্যবহার করেন তাহলে আপনার মনের অজান্তেই মনে হবে যে এর থেকে কোনো ভালো ডিভাইস বের হয়ে যায়নি তো! নতুন নতুন সব ইলেক্ট্রিক্যাল ডিভাইসের ভিড়ে আমাদের ব্যবহৃত পুরোন ডিভাইসগুলোর থেকে আমরা ধীরে ধীরে আমাদের আকর্ষণ হারিয়ে ফেলি এবং শেষ মেষ ডিভাইসটি যদি চালু থাকে তাহলে আমরা সেটাকে সেকেন্ড হ্যান্ড হিসেবে বিক্রি করে ফেলি কিংবা ডিভাইসটি যদি ডেড হয়ে থাকে তাহলে তো সেটা ফেলে দেওয়া ছাড়া আর কিছু করা যায় না। আজ কথা বলবো পুরাতন পিসি বা ল্যাপটপ এর বিকল্প কিছু ব্যবহার নিয়ে। বাসায় পুরোনো ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ পড়ে আছে? বেশ পুরোনো হওয়ায় লেটেস্ট উইন্ডোজ সেটায় চলে না? গুগল ক্রোম চালু করলেই পিসি হ্যাং হয়ে পড়ে? তাহলে দেখে নিন পুরোনো পিসি দিয়ে আপনি কি কি বিকল্প কাজগুলো করতে পারেন:

এক্সটারনাল হার্ডডিস্ক তৈরি

পুরাতন কম্পিউটার বা ল্যাপটপের হার্ডওয়্যার অংশকে আপনি খুলে নিয়ে আলাদা ভাবে ব্যবহার করতে পারেন। যেমন আপনার পুরাতন কম্পিউটারের সবকিছুই নষ্ট হয়ে গেছে কিন্তু হার্ডডিক্সটি এখনো কাজ করে ( পুরাতন হার্ডডিক্স সহজে নস্ট হয় না)। এই ওয়ার্কিং হার্ডডিক্সকে পুরাতন সিপিইউ বক্স থেকে খুলে নিয়ে এটাকে আলাদা ভাবে এক্সটারনাল হার্ডডিক্স হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন! তবে এর জন্য আপনাকে সঠিক ফরম্যাটের USB কানেক্টর ব্যবহার করতে হবে। সাধারণত ল্যাপটপের হার্ডডিক্সের জন্য 2.5inc IDE কিংবা SATA USB কানেক্টর এর দরকার হয় এবং নরমাল হাডডিক্সের জন্য সাধারণত 3.5inc IDE বা ‍SATA USB কানেক্টর এর দরকার পড়ে। এই কানেক্টরগুলো আপনি স্থানীয় কম্পিউটার হার্ডওয়্যার দোকানগুলোতে পেয়ে যাবেন।

টাকা কামান!

পুরাতন কম্পিউটার বা ল্যাপটপ “পুরানত” দেখেই আপনি যখন সেটাকে বিক্রি করতে যান তখন ভালো দাম পাবেন না। অথবা পিসি বা ল্যাপটপ নস্ট হয়ে গেলে সেটাকে ফেলে না দিয়ে প্রথমে চেক করুন কোন কোন পার্টসগুলো নস্ট হয়েছে। চেক করার পর যদি দেখেন যে কিছু কিছু পার্টস সচল রয়েছে (যেমন র‌্যাম, হার্ডডিক্স, ডিভিডি ড্রাইভ ইত্যাদি) তাহলে আপনি সেগুলোকে আলাদাভাবে খুলে নিয়ে নির্দিষ্ট কাস্টমারের কাছে বিক্রি করে দিতে পারেন। এভাবে পুরো নস্ট হয়ে যাওয়া ডেক্সটপ বা ল্যাপটপকে একেবারেই না ফেলে নিয়ে সেখান থেকে কিছুটা হলেও টাকা উদ্ধার করা যায়।

দানবীর হয়ে উঠুন!

বাসায় বেশ পুরোনো ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ পড়ে রয়েছে? বেশ পুরোনো হওয়ায় সেটা দিয়ে আপনার গেমিং, নেট ব্রাউজিং সহ অনান্য কাজ করা দূরহ হয়ে গেছে? নতুন পিসি কেনার পর পুরোনোটায় নজরও ফেলেন না? তাহলে হয়ে উঠুন দানবীর! জ্বি! পুরাতন পিসি বা ল্যাপটপটিকে কাউকে দান করে দিন। যারা ওয়ার্ড প্রসেসিং বা সাদামাতা কাজ করার জন্য পিসি ব্যবহার করেন তাদেরকে আপনি আপনার পুরোনো পিসি/ল্যাপটপকে দান করে দিতে পারেন। খোঁজ নিয়ে দেখুন আপনার আত্নীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের মধ্যে এমন কেউ রয়েছে কিনা।

লিনাক্স নিয়ে খেলতে পারেন!

আপনি যদি উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেমের ইউজার হন তাহলে আপনার পুরোনো পিসিতে লিনাক্স ওএস নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করতে পারেন। এতে কোনো সমস্যা হলে জাস্ট বুট সেক্টর ধরে পুরোনো পিসি রিসেট মেরে দিবেন! ব্যাস তাহলেই হলো! পুরোনো পিসিতে লিনাক্স ইন্সটল করে আপনি লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেমকে ট্রাই করে দেখতে পারেন। এভাবে পুরোনো পিসির সৎ ব্যবহার আপনি করে ফেলতে পারেন! (যদি আপনার কাছে সে পরিমাণ সময় থাকে আরকি!)

বি:দ্র: পুরোনো পিসিতেও কিন্তু লিনাক্স বেশ ভালোভাবেই পারফরমেন্স আপনাকে দিবে। কারণ লিনাক্স তুলনামূলক বেশ কম পাওয়ার ব্যবহার করে তাই পুরান কনফিগারেশনেও এটাকে আপনি স্বাচ্ছন্দ্যে ব্যবহার করতে পারবেন।

ফাইল / প্রিন্ট সার্ভার হিসেবে ব্যবহার

আপনি চাইলে সহজেই আপনার পুরোনো পিসিকে দরকারি সার্ভার পিসি হিসেবে রূপান্তর করে ফেলতে পারেন! পুরোনো পিসিকে শুধুমাত্র দরকারি সফটওয়্যার দিয়ে নিদির্ষ্ট কাজের জন্য একটি অফিসে বা ক্যাফেতে সেট করে রাখতে পারেন। যেমন পিসিতে শুধুমাত্র Windows File and Printer sharing সফটওয়্যারটি সেটআপ করে নিয়ে অফিসের সকল এক্সটাল ডিভাইসকে পুরোনো পিসির সাথে সংযোগ করে ফেলে একটি জোস ফাইল/প্রিন্ট সার্ভার বানিয়ে ফেলতে পারেন!

এক্সটারনাল ফায়ারওয়াল হিসেবে ব্যবহার

একটি অফিসে ধরুন মোট ৩০/৪০ টা কম্পিউটার রয়েছে। সেখানে ইন্টারনেট সুরক্ষা দেওয়ার জন্য প্রতিটি পিসিতে firewall চালু করা রয়েছে। এখন সে পিসিগুলো থেকে ফায়ারওয়াল সার্ভিসটি উঠিয়ে দিয়ে আপনি পুরোনো পিসিকে এক্সটারনাল ফায়ারওয়াল হিসেবে একটি ডেডিকেটেড সিস্টেম বানিয়ে ফেলতে পারেন। এই পুরোনো পিসি অফিসের সকল কম্পিউটারের জন্য একটি standalone এক্সটারনাল ফায়ারওয়াল হিসেবে কাজ করবে। এভাবে আলাদা ফায়ারওয়াল পিসিতে লিনাক্স অপারেটিং সিস্টেম বেশ কাজের হয়ে থাকে।

মিডিয়া স্টেশন বানিয়ে ফেলুন!

পুরোনো পিসিকে আপনি আপনার ব্যক্তিগত মিডিয়া স্টেশন হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। আপনার পছন্দের যত অডিও, ভিডিও ফাইল রয়েছে সেগুলো এই পিসিতে স্টোর করে রেখে একে জাস্ট মিডিয়া প্লেয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়াও পুরোনো পিসির মনিটরকে আলাদা টিভি কার্ডের সাহায্যে আপনি টিভি বানিয়ে ফেলতে পারেন! একটা টিভি কার্ডের দাম বেশি না; ২ হাজারের মধ্যেই একটি মোটামুটি মানের টিভি কার্ড পুরোনো পিসির মনিটরের সাথে কানেক্ট করে পিসিকে টেলিভিশন হিসেবে সেট করে ফেলতে পারেন!

কালেক্টরের কাছে বিক্রি করতে পারেন!

এবার একটু পাগলামির ধাঁচের কথা বলবো। আপনার পুরোনো পিসি যদি আসলেই “বেশ পুরোনো” এবং “rare” হয়ে থাকে; তাহলে সেটাকে আপনি সচরাচর মার্কেটে বিক্রি করতে গেলে ভালো দাম পাবেন না। তবে ইন্টারনেট বা যেকোনো মাধ্যমে যদি সঠিক কালেক্টরের সন্ধান খুঁজে বের করতে পারেন তাহলে সেটা থেকে কিন্তু বেশ ভালোই টাকা উঠে আসতে পারে। যেমন আপনার কাছে যদি MS DOS আমলের কোনো পিসি থাকে এবং সেটা রানিং (!) তাহলে যথাযথ লোকের কাছে এটা বেশ “অমুল্য” রতন হতে পারে!

সিসি ক্যামেরা স্টেশন!

অফিসে কিংবা ব্যবসায় ক্ষেত্রে নিরাপত্তার জন্য আমরা বর্তমানে সিসি ক্যামেরা ব্যবহার করি। সিসি ক্যামেরা পর্যবেক্ষণ করার জন্যেও কিন্তু একটি মনিটরের প্রয়োজন হয়। পুরোনো পিসিকে সিসি ক্যামেরা স্টেশন হিসেবে ডেডিকেট করে নিতে পারেন আপনি! ব্যাপারটা মন্দ হয় না!

ডেডিকেটেড ব্যাকআপ!

এটা শুধুমাত্র ল্যাপটপের ক্ষেত্রে বলা যায়। ধরুন আপনার কাছে বেশ পুরাতন একটি ল্যাপটপ রয়েছে। যেখানে ৮০ গিগাবাইটের হার্ডডিক্স ছাড়া বলার মতো তেমন কিছুই নেই। ইন্টেল এটম প্রসেসর আর ১ গিগাবাইট র‌্যামে উইন্ডোজ ৭ দিতেই আপনি সেখানে ভয় পান! এক্ষেত্রে একটি কাজ করতে পারেন। ল্যাপটপটিতে Windows XP দিয়ে রেখে বা যদি পারেন তাহলে লিনাক্স সেটআপ করে নিয়ে সেই ৮০ গিগাবাইটের হার্ডডিক্সকে সম্পূর্ণ রূপে আপনার ব্যক্তিগত গুরুত্বপূর্ণ ডাটার ব্যাকআপ হিসেবে ডেডিকেট করে দিতে পারেন! অফিসের সকল ডাটা, ব্যক্তিগত ডাটা, ছবি, অডিও, ভিডিও, ইবুক, গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত সফটওয়্যার ইত্যাদি সব কিছুই পুরোনো ল্যাপটপে ব্যাকআপ করে রাখতে পারেন। তারপর ল্যাপটপকে কোথাও ফেলে রাখলেন এবং কাজের সময় চট করে খুলে ব্যাকআপকে ব্যবহার করতে পারেন!

ভিডিও গেম সার্ভার

আপনি যদি অনলাইনে মাল্টিপ্লেয়ার ভিডিও গেম খেলে থাকেন তাহলে গেম সার্ভার টার্ম সম্পর্কে জেনে থাকবেন। একটি অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার ভিডিও গেমটি একটি সার্ভার পিসিতে ইন্টারনেট সংযোগের সাথে সবসময় কানেক্টেড থাকে। আপনি চাইলে আপনার পুরোনো পিসিকে অনলাইন ভিডিও গেম সার্ভার হিসেবে রূপান্তর করে ফেলতে পারেন এবং বন্ধুর গ্রুপ মিলে এটাকে উপভোগ করতে পারেন। সার্ভার পিসিতে ভিডিও গেমস চালানোর প্রয়োজন হয় না তাই গ্রাফিক্স কার্ড বা হাই ফাই র‌্যামের চিন্তা এখানে আপনাকে করতে হবে না। তবে এটা সব ধরণের অনলাইন মাল্টিপ্লেয়ার ভিডিও গেমের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়।

অপারেটিং সিস্টেম প্লেস্টেশন!

নতুন নতুন ভিন্ন ভিন্ন অপারেটিং সিস্টেম টেস্ট করতে আপনি ভালোবাসেন? তাহলে আপনার পুরোনো পিসিকে এই কাজে ডেডিকেটেড করে ফেলতে পারেন; আর নিজেই নিজস্ব অপারেটিং সিস্টেম প্লেস্টেশন বানিয়ে ফেলতে পারেন। বেশি কিছু না! জাস্ট ৪০ গিগাবাইট হার্ডডিক্স, ২ গিগাবাইট র‌্যাম এবং ডুয়াল কোর (২ বা ৩ প্রজন্মের হলেই হবে) প্রসেসর থাকলেই এ যাবৎকালের সকল অপারেটিং সিস্টেমকে আপনি পুরোনো পিসিতে ইন্সটল করে টেস্টিং করতে পারেন!

উইন্ডোজ এবং ম্যাক ছাড়াও বেশ অনেকগুলোই অপারেটিং সিস্টেম রয়েছে। এগুলো মধ্যে উল্লেখযোগ্য টাইটেল হচ্ছে Ubuntu, Mint, Elementary OS, PinguyOS বা গুগলের নিজস্ব Chromium OS ইত্যাদি। আবার অনলাইন গেম Steam সার্ভিস এর আলাদা নিজস্ব OS রয়েছে যার নাম SteamOS ! এগুলো সবই আপনি পুরোনো পিসিতে টেস্টিং করতে পারেন!

পরিশিষ্ট:

পুরোনো পিসি যদি রানিং থাকে তাহলে সেটা দিয়ে উপরের মতো আরো অনেক কাজ করা যায়। জাস্ট আপনাকে একটু বুদ্ধি নিয়ে ভাবতে হবে। পিসি রানিং নাও যদি থাকে তাহলে সিপিইউ বক্স খুলে রার্নিং পার্টসগুলোরও আলাদা ব্যবহার আপনি করতে পারবেন। আর একেবারে ব্যবহার অনুপোক্ত হলে সরাসরি ডাস্টবিনে ফেলে দেওয়ার আগে এলাকার ভাঙ্গারি দোকানে গিয়ে আপনি “কেজি দরে” পিসিকে বিক্রি করে দিতে পারেন! ব্যাপারটাও মন্দ নয়! লোল!

 

 

Share This Article

Search
kampungbet kampungbet kampungbet toto slot link gacor kampungbet kampungbet kampungbet toto slot kampungbet link slot kampungbet kampungbet kampungbet situs toto situs togel situs slot rtp slot situs judi bola situs slot gacor link slot resmi slot gacor hari ini
toto togel monperatoto situs toto toto togel slot resmi toto togel bandar togel togel online bandar togel slot 4d toto slot toto slot
monperatoto monperatoto monperatoto monperatoto