প্রায় ৭০ পারসেন্ট মার্কেট শেয়ার নিয়ে গুগল ক্রোম এখনও ওয়েব ব্রাউজারের রাজা । কিন্তু মাইক্রোসফট এর নতুন এজ ব্রাউজার যা ক্রোমিয়াম ওপেন সোর্স ইঞ্জিন ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এটি ৪ পারসেন্ট মার্কেট শেয়ার নিয়ে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে। দ্বিতীয় অবস্থান মজিলা ফায়ার ফক্সের, মার্কেট শেয়ার ৮.৫ পারসেন্ট। ৬ মাসেই ৪ পারসেন্ট মার্কেট দখল করা চিত্তাকর্ষকই বলা যায়। বর্তমানে মাইক্রোসফট তাদের এই নতুন এজ সকল উইন্ডোজ ১০ ডেস্কটপে আপডেটের মাধ্যমে প্রেরণ করা শুরু করেছে। যার কারণে অনেকেই এটি ব্যবহার করা শুরু করেছে। নতুন ফিচার, আগের চেয়ে অত্যাধিক ফাস্ট, র্যাম ইউজেজ অপ্টিমাইজড, সব মিলিয়ে অনেকেরই ভালো লেগেছে এই নতুন এজ। প্রযুক্তিবিদরা মনে করছেন এবার ক্রোমকে টেক্কা দিতে পারে এজ। আসলে কি তাই? চলুন দেখে আসি।
ডিজাইন
অত্যাবশ্যকীয় বিষয়গুলো নিয়ে শুরু করা যাক। সাধারন ব্রাউজিং এর জন্য ব্রাউজার দুটি কেমন? ডিজাইনের ক্ষেত্রে তারা দেখতে প্রায় একই রকম। পুরনো এজের অনেক ডিজাইনের ক্ষেত্র এখানে নেই বললেই চলে। কর্নারগুলো গোলাকার তৈরি করা হয়েছে এবং সর্বোপরি ইন্টারফেস আগের তুলনায় অনেক স্বাচ্ছন্দ্যকর।
এরো বাটন গুলো ক্রোমের থেকে ভিন্ন হলেও সার্চ বার একই, এক্সটেনশনের আইকন গুলোও একই অবস্থানে রয়েছে। কোন ট্যাবে রাইট ক্লিক করলে সেম মেনু গুলোই পাওয়া যাবে। এক কথায়, আপনি যদি ক্রোম থেকে এজ-এ সুইচ করেন তাহলে খুব কমই পার্থক্য দেখতে পারবেন। অর্থাৎ আপনার মানিয়ে নিতে খুব একটা ঝামেলা পোহাতে হবে না। একটি উল্লেখ করার মতো পার্থক্য হচ্ছে এজের হোমপেজ এবং সার্চ ইঞ্জিন। ডিফল্ট হিসেবে এতে বিং সার্চ ইঞ্জিন দেয়া রয়েছে। তবে এটি পরিবর্তন করা যাবে।এজ এবং ক্রোম দুটোই ক্রোমিয়াম ওপেন সোর্স ইঞ্জিন ব্যবহার করে তৈরি করা, তাই ডিজাইনে পার্থক্যের চাইতে মিলই বেশি।
পারফরম্যান্স
পারফরম্যান্সে দুজনার খুব একটা ডিফারেন্স নেই। দুটোই যথেষ্ট ফাস্ট। ডে-টু-ডে ইউজে খুব একটা ডিফারেন্স পাবেন না। তবে একটি জায়গায় এজ অনেকখানি এগিয়ে, সেটি হলো র্যাম ম্যানেজমেন্ট। ক্রোমের চেয়ে এজ অনেক কম রিসোর্স ব্যবহার করে। ৬ টা পেজ লোড করতে যেখানে এজের লেগেছে ৬৭০ মেগাবাইট সেখানে ক্রোমের লেগেছে প্রায় ১.৪ জিবি। অর্থাৎ যদি আপনার র্যাম সীমিত হয়ে থাকে তাহলে এজ আপনার জন্য পারফেক্ট চয়েস হবে।
ফিচার
ক্রোম থেকে এজে সুইচ করা খুবই সহজ। শুধু ইন্সটল করে সবকিছু Sync করে নিলেই হয়ে গেলো ব্যাস। এটিও একটা ভালো ফিচার যদিও আজকাল সব ব্রাউজারেই এটি করা যায়। তবে এজের কিছু ফিচার রয়েছে যা ক্রমের নেই।
EDGE Collections-এখানে আপনি একই প্রকারের পেজ গুলো একটি গ্রুপ হিসেবে রেখে দিতে পারবেন এবং নামও দিতে পারবেন। Collections এ ক্লিক করে সহজেই এসব গ্রুপ এক্সেস করা যাবে যা কাজের গতি বাড়ায় এবং সময় বাচায়। এরপর রয়েছে EDITOR, যা অনেকটা Grammarly-এর মতো কাজ করে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা দিয়ে এটি আপনার লেখার দক্ষতাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে।
এজের আরেকটি শক্তি হলো Extensions. Windows Store কিংবা Chrome Web Store থেকে আপনি আপনার পছন্দের এক্সটেনশন ব্যবহার করতে পারবেন। ক্রোমিয়াম বেজড হওয়ায় ক্রোমের যেকোনো এক্সটেনশন ঝামেলা বিহীন ভাবেই চলবে এতে। ক্রোমের আগে এখানে একক আধিপত্য ছিলো যা এজ দখলে নিয়ে নিয়েছে।
ব্যাক্তিগত ভাবে আমার একটি পছন্দের ফিচার হচ্ছে Read Aloud. ওয়েবসাইটের যাবতীয় কিছু সুন্দর কণ্ঠস্বরে পড়িয়ে শোনানো হবে আপনাকে। একদম ন্যাচারাল ভয়েস পাবেন এতে। আর রয়েছে নানা একসেন্ট পছন্দ করার সুযোগ। যদি আপনার চোখের সমস্যা থেকে থাকে কিংবা দিন শেষে ক্লান্ত চোখে শুধু ওয়েবসাইটে চোখ বুলানো আপনার স্বভাব হয়ে থাকে তাহলে এই ফিচার দিয়ে সহজেই শুনে নিতে পারেন সব শ্রুতিমধুর কোন নারীর গলায়।
উভয় ব্রাউজারই কোন ওয়েবপেজকে অ্যাপে রুপান্তরিত করতে পারে যা খুব ভালোভাবেই চালানো যায়।
সবশেষে যেটি আসে সেটি হলো ক্যাস্টিং(Casting). ক্রোম এক্ষেত্রে Chromecast ব্যবহার করলেও এজ Miracast ও DNLA Protocol ব্যবহার করে। এখানে ক্রোমই এখন পর্যন্ত জনপ্রিয়।
শুধু একটি কারণে আমি নিজে সহ অনেকেই ক্রোম ব্যবহার করে সেটি হলো গুগলের ইকোসিস্টেম। ক্রোম গুগলের প্রতিটি অংশ যেমন জিমেইল, ক্যালেন্ডার, ডক্স, ম্যাপসকে এমনভাবে একত্র করেছে যা ব্রাউজিং এক্সপেরিয়েন্সকে খুবই স্বাচ্ছন্দ্যকর করে তোলে।
Syncing
ব্রাউজারের প্রতিটি ক্ষেত্রই ক্রোম সিঙ্ক করতে পারে। পাসওয়ার্ড থেকে শুরু করে প্রায় সবকিছুই। নিচের ছবিতে দেখে নিন।
ক্রোম নিখুতভাবে ফোন, ল্যাপটপ, আইপ্যাড সবকিছুতে সিঙ্ক কার্যক্রম বজায় রাখে। Send To Devices ফিচারটি প্রায়শই কাজে লাগে আমার। অন্যদিকে এজ এই পর্যায়ে নতুন যার ফলে এটি পারফেক্ট নয়। হিস্টোরি এবং ট্যাব সিঙ্ক এখনও ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে রয়েছে। এসব দিক দিয়ে বিবেচনায় এজ সময়ের সাথে পারফেক্ট হবে বলা যায়। তবে এখন উপযুক্ত নয়।
সিকিউরিটি ও প্রাইভেসি
ক্রোমের চেয়ে এজের প্রাইভেসি সেটিংস অনেক বেশি এবং সহজেই একসেস করা যায়। আপনার ব্যাক্তিগত তথ্য নিয়ন্ত্রনে এজ ভালো কাজে দিবে। এছাড়া Balanced,Basic, Strict এই তিনটি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহন করে আপনি আপনার প্রাইভেসির মাত্রা কতোটা হবে তা পছন্দ করে দিতে পারেন। ক্রোমে এই ব্যবস্থা নেই। এছাড়া এজ মাইক্রোসফটের Windows Defender Smart Screen ব্যবহার করে যা ভাইরাস এবং ম্যালওয়ার থেকে আপনাকে সুরক্ষিত রাখবে।
অপরপক্ষে ক্রোমে থার্ড পার্টি কুকি ব্লক করার ক্ষমতা সীমিত। তবে এক্সটেনশনের ব্যবহারে আপনি এড এবং পারমিশন নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন।
ক্রোমের আরেকটি সুবিধা হলো এর ক্রস ডিভাইস একসেস। প্রায় সব প্লাটফর্মেই ক্রোম চালানো যায়। এর মাঝে রয়েছে ক্রোমবুক, আন্ড্রয়েড, লিনাক্স, ম্যাক আইপ্যাড ও আইওএস। এজও কয়েকপ্রকারের ডিভাইসে চালানো যায়। লিনাক্স সাপোর্ট শুধু নেই, তবে তা শীঘ্রই আসছে বলে জানিয়েছে মাইক্রোসফট। ক্রোমবুকের জন্য কোন ইন্সটলার না থাকলেও আন্ড্রয়েড ভার্সন দিয়ে সহজেই কাজ চালানো যায়।
শেষ কথা
ক্রোম সবজায়গায় থাকলেও মাইক্রোসফট এজ অনেক সুন্দরভাবে তৈরি করা। এটি ক্রোমের চেয়ে তুলনামূলক অনেক কম রিসোর্স ব্যবহার করে একই মানের পারফরমান্স দেয়। এছাড়া রয়েছে অনেক ভালো প্রাইভেসি কন্ট্রোল, রয়েছে কিছু কাজের এবং দরকারি ফিচার। শুধু সিঙ্কিং-এর বিষয়টি উন্নত করতে পারলেই এজের ক্রোমকে নয়, ক্রোমের এজকে তাড়া করতে হবে।
‘ক্রোমই সেরা’- কথাটি তার অর্থ হয়তো হারিয়ে ফেলবে শীঘ্রই। কারণ মাঠে নতুন খেলোয়াড় নেমেছে, অনেক শক্তপোক্তভাবেই।