যে কোন কম্পিউটারের অত্যাবশ্যকীয় ৫ টি কম্পোনেন্ট এর একটি হচ্ছে স্টোরেজ। স্টোরেজ ছাড়া আপনি কম্পিউটার চালাতেই পারবেন না। গেম, মুভিস, গান, নাটক, সফটওয়্যার, ব্রাউজার সব কিছুর ডাটাই সেভ থাকে স্টোরেজের মাঝে। কিন্তু কম্পিউটার কেনার সময় বাজেট ক্রেতাদের মনে কোন সন্দেহ না থাকলেও মিড লেভেল ও প্রিমিয়াম ক্রেতাদের মনে কিছুটা সন্দেহ থেকে যায় যে কোনটা কিনলে সবচেয়ে ভাল হবে হার্ডডিস্ক (HDD) নাকি এস এস ডি (SSD)? সাটা, পিসি আই নাকি এম ডট ২? আজ আমরা কোন নির্দিষ্ট ব্র্যান্ড সম্পর্কে আলোচনা না করে বরং একেবারে সমগ্র সাধারণ হার্ডওয়্যার হিসেবেই আলোচনা করব।
বিঃদ্রঃ এটি কোন বায়িং গাইড নয়, বরং এটি শুধু মাত্র একটি তুলনামূলক আর্টিকেল।
হার্ডডিস্ক (HDD):
হার্ডডিস্ক বা হার্ডড্রাইভ (HDD – Hard Disk Drive) হচ্ছে সবচেয়ে বহুল ব্যাবহার করা স্টোরেজ ডিভাইস। এটি কেবল সাটা ক্যাবল দিয়ে মাদারবোর্ডের কানেক্ট করা যায়। প্রায় সকল হার্ডডিস্ক প্রায় ৩ ইঞ্চি লম্বা ও ১ ইঞ্চি চওড়া হয়ে থাকে।
হার্ডডিস্ক (HDD) আপনারা এখন দুধরণের পাবেন একটি হচ্ছে নরমাল স্পীড হার্ডডিস্ক ও অপরটি হাইব্রিড ড্রাইভ।
নরমাল হার্ডডিস্কঃ
সুবিধাঃ
১. দাম অন্যান্য টাইপের স্টোরেজ ডিভাইস থেকে তুলনামূলকভাবে কম
২. কম দামে অধিক মেমোরি পাওয়া যায়। বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে প্রতি জিবি মেমোরির দাম প্রায় ২ টাকা ৮০ পয়সা মাত্র।(৩ টেরাবাইট হার্ডডিস্ক কেনার ক্ষেত্রে)
৩. অধিক স্টোরেজ কম্প্যাটিবিলিটি। ল্যাপটপের ক্ষেত্রে ৫০০ জিবি থেকে ২ টেরাবাইট পর্যন্ত ও ডেস্কটপের ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত একেবারে ১০ টেরাবাইট পর্যন্ত কম্প্যাটিবল!
অসুবিধাঃ
১. এস এস ডি থেকে বেশি পাওয়ার টানে
২. উইন্ডোজ বুট টাইম বেশি হয়। প্রসেসর ও রেমের উপর ভিত্তি করে এই সময় ১ থেকে দেড় মিনিটের কাছেও যেতে পারে।
৩. এস এস ডি এর তুলনায় সাইজে বড় হওয়ায় কেসিঙ্গে জায়গা বেশি খায়।
৪. অধিক পাওয়ার ড্র এর কারণে টেম্পারেচার বেশি হয়।
৫. লাইফস্পেন এস এস ডি এর তুলনায় কিছুটা কম।
৬. রিডিং, রাইটিং ও ফাইল ওপেনিং স্পীড তুলনামূলক ভাবে কম।
৭. চুম্বকের সাহায্যে হার্ডডিস্ক এর স্টোরেজ মুছে ফেলা যায়।
৮. বেশি লোডে এক ধরণের বিরক্তিকর স্ক্রেচিঙ্গের আওয়াজ আসে
হাইব্রিড ড্রাইভ (SSHD):
সাটা হার্ডডিস্কের দুনিয়ায় এখন একটি নতুন সংযোজন হচ্ছে হাইব্রিড ড্রাইভ (SSHD – Solid State Hard Drive)। সাটা হার্ডডিস্ক হলেও মেনুফ্রেকচারেরা চেস্টা করেছেন এতে এস এস ডির মতই সকল ফিচার দিতে। হাইব্রিড ড্রাইভে ডিস্কের পাশাপাশি ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপও থাকে। হাইব্রিডটি আপনার সবচেয়ে বেশি ব্যাবহার করা ফাইল সেই ফ্ল্যাশ চিপের মধ্যে সেভ করে রাখে যাতে সেই সকল ফাইল খুব সহজেই তাড়াতাড়ি ওপেন হয়। এই প্রযুক্তি মোডিফাই করেই মূলত ইন্টেলের অপ্টেন মেমোরি তৈরি করা হয়েছে।
সুবিধাঃ
১. এর রিডিং, রাইটিং ও ফাইল ওপেনিং স্পীড প্রায় একটি এস এস ডি এর কাছাকাছি।
২. স্টোরেজ মেমোরির দাম সাধারণ হার্ডডিস্ক থেকে বেশি হলেও দাম অনুযায়ী এস এস ডি থেকে অনেক কম আছে। প্রতি জিবি মেমোরির দাম প্রায় ৪ টাকা ৯০ পয়সা পরে (২ টেরাবাইট এর ক্ষেত্রে)
৩. স্টোরেজ কম্প্যাটিবিলিটি সাধারণ হার্ডডিস্কের মতই।
অসুবিধাঃ
১. সাইজ, পাওয়ার ড্র ও তাপমাত্রা নরমাল হার্ডড্রাইভের মতই
২. লাইফস্পেন হার্ডডিস্ক থেকে বেশি হলেও এস এস ডি থেকে তুলনামূলকভাবে কম।
৩. এছাড়াও চুম্বক দিয়ে ডাটা মুছে ফেলার অসুবিধেটাতো আছেই।
এসএসডি (SSD):
সলিড স্টেট ড্রাইভ বা এস এস ডি (SSD – Solid State Drive) হচ্ছে হার্ডড্রাইভের দ্রুততর বিকল্প। এস এস ডি ৩ টি ফর্ম ফ্যাক্টরে পাওয়া যায়। সাটা এস এস ডি, পিসিআই ই স্লট ও এম ডট ২ এসএসডি(যার একটি সাটা ও অপরটি হাইস্পিড এন ভি এম ই)। এদের মধ্যে কোন এস এস ডি কি ধরণের সুবিধা ও অসুবিধা দেয় তা আমরা পরবর্তী কোন এক আর্টিকেলে আলোচনা করব।
সুবিধাঃ
১. সাধারণ হার্ডড্রাইভের তুলনায় এস এস ডির রিডিং, রাইটিং, ফাইল অপেনিং ও এপ্লিকেশন লোডিং স্পীড অনেকাংশে বেশি।
২. উইন্ডোজ বুট টাইম তুলনামূলক ভাবে কম। এস এস ডি টাইপ, প্রসেসর ও রেমের উপর ভিত্তি করে তা মাত্র ৭ সেকেন্ড থেকে ২৫ সেকেন্ডের মধ্যে থাকে।
৩. সম্পূর্ণ ফ্ল্যাশ মেমোরি চিপ ব্যাবহার করে বলে পাওয়ার ড্র ও তাপমাত্রা হার্ডড্রাইভ থেকে কম থাকে
৪. একটি এস এস ডির লাইফস্পেন প্রায় ২ লাখ ঘন্টা যেখানে সাধারণ হার্ডড্রাইভের ১ লাখ ৩০ হাজার থেকে দেড় লাখ ঘণ্টা পর্যন্ত।
৫. এস এস ডির সাইজ হার্ডড্রাইভ থেকে ছোট
৬. চুম্বকের সাহায্যে ভেতরের ডাটা মুছে ফেলা যায় না।
৭. বেশি লোডে কোন স্ক্রেচিঙ্গের আওয়াজ আসে না।
অসুবিধাঃ
১. এস এস ডির পার জিবি মেমোরির দাম সাধারণ হার্ডড্রাইভের তুলনায় বেশি। প্রতি জিবি মেমোরি ৩৪ টাকা ৫০ পয়সা করে পরে (এটি একটি ২৫৬ জিবি সাটা এস এস ডি কেনার পর হিসেব করা হয়েছে)।
২. স্টোরেজ কম্প্যাটিবিলিটি হার্ডড্রাইভ থেকে অনেক কম। এখন পর্যন্ত ল্যাপটপে ৬৪ জিবি থেকে ৫১২ জিবি ও ডেস্কটপে ২ টেরাবাইট পর্যন্ত।
৩. এম ডট ২ এস এস ডির ক্ষেত্রে সকল মাদারবোর্ড কম্প্যাটিবল থাকে না। যে কারণে এম ডট ২ এস এস ডির জন্য হাই বাজেট প্রিমিয়াম মাদারবোর্ড কিনতে হয় যাতে এই স্লটটি থাকে।
আশা করি আপনারা এই আর্টিকেলের মাধ্যমে হার্ডড্রাইভ (HDD) ও এস এস ডির (SSD) প্রায় সকল সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। আর্টিকেলে ভুল তথ্য বা অন্য কিছু মিস থাকতে পারে। যদি খুজে পান অবশ্যই ধরিয়ে দেবেন। এস এস ডি ওয়ার ও স্টোরেজ বায়িং গাইড নিয়ে আমরা জলদি আসছি। আপনারা সবাই ভাল থাকুন আর সঙ্গে থাকুন পিসিবি বিডির।