মাত্র কিছুদিন আগে (৯ অক্টোবর) গুগল তাদের তৃতীয় প্রজন্মের গুগল পিক্সেল ডিভাইস এনাউন্স করেছে। এগুলো হচ্ছে Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL । দুটিই ডিভাইসকে নিয়েই টেক বিশ্বে অনেক দিন ধরেই হাইপ চলছে এবং অবশেষে আমরা পেয়ে গেলাম এই ডিভাইস দুটি। তবে যারা যারা ইতিমধ্যেই গুগল পিক্সেল ২ বা ২ এক্সএল ডিভাইসটি ব্যবহার করছেন তাদের জন্য কি এখনই বর্তমান ফোনটি আপগ্রেড করে নতুন এই ডিভাইসে সুইচ করা উচিত? আজ আমি এই বিষয়টি নিয়েই আলোচনা করতে চলে এলাম।
Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL দুটি ডিভাইসই বেশ প্রিমিয়াম লুক এবং ডিজাইনে অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোন। কেন হবে না? এগুলো গুগলের পণ্য! অ্যান্ড্রয়েড অপারেটিং সিস্টেমটি গুগলের আর অ্যান্ড্রয়েড OS যুক্ত সেরা স্মার্টফোনটি আপনি স্বাভাবিক ভাবেই গুগল থেকেই পাবেন। অনেকটা অ্যাপলের মতো, iOS এর মজা যেমন শুধুমাত্র আইফোনগুলোতেই পাওয়া যায় ঠিক সে রকমই স্টক অ্যান্ড্রয়েডের আসল মজা আপনি পাবেন গুগলের পিক্সেল স্মার্টফোনগুলোতে। এবারের Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL ডিভাইসের ব্যাকপার্টটি গ্লাস দিয়ে ডিজাইন করা হয়েছে আর তাই একই সাথে গ্লাস ও অ্যালুমিনিয়ামের চমৎকার মিশ্রণ রয়েছে ডিভাইসটিতে। তবে আসল কথা হচ্ছে গুগল পিক্সেল ২ এক্সএল এর থেকে Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL ডিভাইসগুলো তেমন কোনো মেজর আপগ্রেড বহন করে না। আপনি যদি ইতিমধ্যেই পূর্বের জেনারেশনের পিক্সেল স্মার্টফোন ব্যবহার করে থাকেন তাহলে এখনি আপনার জন্য এই Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL ডিভাইসে আপগ্রেড করার প্রয়োজন পড়বে না। কারণ কি? দেখাচ্ছি আমি।
গুগল পিক্সেল ৩ তে নতুন কি কি রয়েছে?
Call Screen
গুগলের অন্যতম একটি চমৎকার ফিচার হচ্ছে এই কল স্ক্রিণ। যা প্রথম দিকে শুধুমাত্র আপনি গুগল পিক্সেল ৩ এবং ৩ এক্সএল ডিভাইসেই পাবেন। কিন্তু পরবর্তীতে সকল পিক্সেল ডিভাইসেও এই ফিচারটি গুগল আনবে বলেছে তাই এটি পিক্সেল ৩ এর কোনো এক্সক্লুসিভ ফিচার নয় (আপাতত)। যারা কল স্ক্রিণ সম্পর্কে জানেন না: Call Screen হচ্ছে একটি Google Assistant ফিচার। আপনি যদি এই ফিচারটি চালু করে রাখেন তাহলে কেউ আপনাকে কল করলে এই ফিচারটি ইনকামিং কলটি ধরবে এবং কলটি করার উদ্দেশ্য জানতে চাইবে, আর এই কনভারসেশনটিকে Google Assistant রিয়েল টাইমে আপনার জন্য টান্সক্রাইব করে ফেলবে। আর তারপরেই আপনি সিদ্ধান্ত নেবেন যে কলটি ধরবেন নাকি টেক্স রেসপন্ড দিয়ে দিবেন। যারা উচ্চ পদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন যাদের সবসময়ই ফোন কল ধরার সময় হয় না কিংবা তাদের কাছে প্রতিটি মিনিটের সময়ের দাম অনেক বেশি তাদের জন্য এই ফিচারটি বেশ উপযুক্ত হবে।
কিন্তু আমি আবারো বলছি যে, এই Call Screen ফিচারটি এখন শুধুমাত্র Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL ডিভাইসে থাকলেও পরবর্তীতে তা সকল পিক্সেল ডিভাইসেই চলে আসবে, যেটা Made By Pixel ইভেন্টে গুগল নিশ্চিত করেছে।
ক্যামেরা! (অধিকাংশই সফটওয়্যার আপগ্রেড!)
ক্যামেরা ক্ষেত্রে গুগলের পিক্সেল ডিভাইসগুলোকে আপনার বাহবা দিতেই হবে। কারণ ইতিমধ্যেই আগের জেনারেশনের পিক্সেল ডিভাইসগুলোর ক্যামেরাটি অনেক ক্ষেত্রেই আইফোন ১০ এবং কিছু কিছু ক্ষেত্রে আইফোন ১০এস এর ক্যামেরা থেকেও ভালো মানের ছবি তুলতে পারে এটা প্রমাণিত হয়েছে। আর তাই Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL ডিভাইসের মূল আকর্ষণ ছিলো এর ক্যামেরাটি। তবে ক্যামেরা সেক্টরে তেমন কোনো আপগ্রেড আনে নি গুগল। কোনো ডুয়াল লেন্স বাট ট্রিপল লেন্সের সেটআপ নেই Google Pixel 3 এবং Google Pixel 3 XL ডিভাইসে। সিঙ্গেল লেন্সের ব্যাক ক্যামেরা সেটআপই আপনি পাচ্ছেন। কিন্তু এবারের পিক্সেল ডিভাইসে সামনের আপনি পাবেন ডুয়েল লেন্সের সেলফি ক্যামেরা।
ক্যামেরা সেক্টরে গুগল পিক্সেল ৩ ডিভাইসের জন্য এক্সুসিভ ফিচারগুলো হচ্ছে:
- ১) Top Shot : কোনো ছবি তোলার আগে এবার আপনি ট্যাপ করার আগে এবং পরে Burst Exposure হবে। এর মাধ্যমে ছবি তোলার সময় বেস্ট শটটি আপনি পাবেন।
- ২) Super Res Zoom: এটি একটি AI ফিচার এবং ডিজিটাল জুমিংয়ের একটি অল্টারনেটিভ ফিচার। এখানে AI আপনার Burst Image গুলোকে মার্জিং করে Zoomed-In শট দেবার ফিচার আপনাকে দিবে।
- ৩) Google Lens Suggestion: পণ্যের ইনফরমেশনের ব্যাপারে গুগল লেন্স আপনাকে বাস্তবভিক্তিক তথ্য দিতে পারবে
- ৪) Motion Auto-focus : ক্যামেরায় কোনো সাবজেক্টের উপর ট্যাপ করার পরে আপনি নড়াচড়া করলেও উক্ত সাবজেক্টে ফোকাস ট্রাক করতে পারবে এই ফিচারটি।
- ৫) Wide Group Selfie: এটা পুরোপুরি একটি হার্ডওয়্যার আপগ্রেড। সামনে ক্যামেরায় অতিরিক্ত লেন্সটির কারণে আপনি এবার অতিরিক্ত ফ্রেম পাবেন, যার মাধ্যমে সামনে ক্যামেরায় Extra Wide-angle পাওয়া যাবে যার মাধ্যমে গ্রুপ সেলফি আপনি তুলতে পারবেন।
গুগল পিক্সেল ৩ ডিভাইসের এই সকল নতুন ক্যামেরা ফিচারগুলো এর নতুন Visual Core চিপসেটের কারণেই সম্ভব হয়েছে। আর এই হার্ডওয়্যার চিপটি আপনি আগের জেনারেশনের গুগল পিক্সেল স্মার্টফোনগুলোতে পাবেন না। আর উপরের ফিচারগুলো ছাড়াও আরো দুটি ফিচার আপনি গুগল পিক্সেল ৩তে পাবেন কিন্তু এগুলো পরবর্তীতে সফটওয়্যারের মাধ্যমে অনান্য পিক্সেল ফোনেও আসবে:
- ১) Night Sight : এই ফিচারটির মাধ্যমে আগের থেকেও আরো উন্নত মানের লো-লাইট ছবি তোলা যাবে।
- ২) Playground : নতুন এবং আপগ্রেডেড AR স্টিকার এবং AR ইমোজি থাকবে।
তারবিহীন চার্জিং!
অবশেষে গুগল তাদের পিক্সেল ডিভাইসের জন্য ওয়্যারলেস চার্জিং ফিচারটি আনলো। কারণ বর্তমানে প্রিমিয়াম স্মার্টফোন সেক্টরে ওয়্যারলেস চার্জিং ফিচারটি একটি অন্যতম দরকারি ফিচার হিসেবে হয়ে উঠেছে। আর তাই পিক্সেল ৩ স্মার্টফোনে ওয়্যারলেস চার্জিং থাকবে এটা অনেকেই অনুমান করেছিলেন। আর এখন ৭৯ মার্কিন ডলারের আলাদা গুগল ওয়্যারলেস চার্জি স্ট্যান্ড “Google Pixel Stand” পাওয়া যাবে এই ফিচারটি উপভোগ করার জন্য। পিক্সেল ৩ এবং পিক্সেল ৩ এক্সএল ডিভাইসটি এই স্ট্যান্ডের উপর রাখলেই ডিভাইসে চার্জিং এনিমেশন শুরু হবে এবং আপনার ডিভাইসটি চার্জ হতে থাকবে। আগের জেনারেশনের পিক্সেল স্মার্টফোনগুলোতে গ্ল্যাস ব্যাক নেই তাই দুঃখের বিষয় যে ওয়্যারলেস চার্জিং ফিচারটি আপনি শুধুমাত্র এই পিক্সেল ৩ এবং ৩ এক্স এল ডিভাইসেই পাবেন।
স্পেসিফিকেশন আপগ্রেড
স্পেসিফিকেশনের দিক থেকে পিক্সেল ২ ডিভাইসগুলোর থেকে তেমন বেশি আপগ্রেড আপনি পিক্সেল ৩ ডিভাইসগুলোতে পাবেন না। যেমন পিক্সেল ৩ ডিভাইসে আপনি পাচ্ছেন ৫.৫ ইঞ্চির OLED স্ক্রিণ যেটা পিক্সেল ২ এর থেকে ০.৫ ইঞ্চি বড় কিন্তু এখানে AMOLED স্থানে আপনি পাচ্ছেন OLED স্ক্রিণ। অন্যদিকে পিক্সেল ২ এক্সএল থেকে ০.৩ ইঞ্চির বড় স্ক্রিণ মানে ৬.৩ ইঞ্চির ডিসপ্লে পাচ্ছেন পিক্সেল ৩ এক্সএল ডিভাইসে।
আর শুধুমাত্র Snapdragon 845 SoC প্রসেসর ছাড়া অনান্য সকল হার্ডওয়্যারই প্রায়ই একই রয়েছে এই ডিভাইসগুলোতে। সেই ৪ গিগাবাইটের র্যামই আপনি পাবেন, আর পাবেন ১২৮ গিগাবাইট পর্যন্ত স্টোরেজের সুবিধা। মডেল ভেদে ব্যাটারি সাইজ কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আর বলা বাহুল্য যে, পিক্সেল ৩ এক্সএল ডিভাইসে আপনি পাচ্ছেন নচ! শুধু নচ নয়, বিশাল প্রমাণ সাইজের নচ!
পরিশিষ্ট
সত্যি কথা বলতে কি গুগল পিক্সেল ৩ ডিভাইসগুলো ডিজাইন এবং অনেকাংশে হার্ডওয়্যার স্পেসিফিকেশন আগের জেনারেশনের পিক্সেলের প্রায় সমানই। বিশেষ করে Pixel 3 ডিভাইসটির ডিজাইন একদম হুবহু Pixel 2 XL এর ডিজাইনের মতোই। তবে অন্যদিকে অ্যাপলও তাদের iPhone XS এর সাথেও ঠিক এরকমই কাজ করেছে। কিন্তু তারা আইফোন ১০এস বের করার বেশ আগে থেকেই তাদের আগের প্রজন্মের আইফোন ১০ এর উৎপাদন কমিয়ে দিয়েছে এবং শীঘ্রই Iphone X ডিভাইসকে তারা Discontinued করে দিবে। কিন্তু গুগল এটি করেনি।
তবে মূল কথা হচ্ছে পিক্সেল ৩ এবং ৩ এক্সএল বেশ প্রিমিয়াম কোয়ালিটির ফোন এটা কোনো সন্দেহ ছাড়াই বলা যায়। আপনি যদি আগে কোনো পিক্সেল স্মার্টফোন ব্যবহার না করে থাকেন এবং নতুন স্মার্টফোনে শিফট হতে চাচ্ছেন তাহলে চলে আসতে পারেন তৃতীয় প্রজন্মের পিক্সেল স্মার্টফোনগুলোতে। কিন্তু ইতিমধ্যেই যদি আপনি আগের জেনারেশনের পিক্সেল ফোন ব্যবহার করছেন তাহলে এখনি আপনার পিক্সেল ৩ ডিভাইসগুলোতে আপগ্রেড হবার তেমন কোনো প্রয়োজন নেই। পিক্সেল ৩ এক্সএল ডিভাইসটির বাংলাদেশে দাম হতে পারে ৯২ হাজার ৫০০ টাকা এবং পিক্সেল ৩ ডিভাইসটির দাম ৮২ হাজার ৯৯০ টাকা রাখা হবার চান্স রয়েছে। অন্যদিকে এখন আগের প্রজন্মের পিক্সেল স্মার্টফোনগুলোরও দাম কমেছে। এখন পিক্সেল ২ এক্সএল পাচ্ছেন ৮৬ হাজার ৫০০ টাকায়, পিক্সেল ২ পাচ্ছেন ৭৭ হাজার ৯৯০ টাকায় এবং অরিজিনাল পিক্সেল এক্সএল পাচ্ছেন ৭৫ হাজার ৯৯০ টাকায় ও পিক্সেল ডিভাইসটির দাম এখন রয়েছে ৬৬ হাজার ৫০০ টাকা।