আপনি যদি এখনো Core i সিরিজে আসতে না পারেন তাহলে আমি বলবো যে, বর্তমান যুগের স্মার্টফোনগুলো কিন্তু আপনার পিসির থেকে সব দিক থেকে ফাস্ট রয়েছে! আপনার পিসি যদি কোয়াড কোরের হয়ে থাকে তাহলে বলবো যে বর্তমান যুগের ১২ হাজার টাকার মোবাইলও আপনার পিসির থেকে প্রসেসর এর দিক থেকে ৮টি কোর রয়েছে, স্মার্টফোনের র্যামের পরিমাণও আপনার পিসির থেকে বেশি এমনকি আপনার পিসির মনিটরের রেজুলেশন থেকে বর্তমানের স্মার্টফোনগুলোর রেজুলেশন বেশি হয়ে থাকে।
স্মার্টফোনগুলোর সব সেক্টরের পাশাপাশি একটি বিষয় সব থেকে গুরুত্বপূণ ভূমিকায় রাখে সেটা হলো CPU বা প্রসেসর। আর স্মার্টফোন জগতের পারফরমেন্সের নতুন রাজা স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ আর একই সাথে সেটারও আপগ্রেডেড সংস্করণ স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ প্লাস চলে এসেছে! আর আজকের পোষ্টটি আমি এই কয়েকটি চিপসেট নিয়ে কথা বলবো আর আসলেই আপনাকে এই চিপসেটের ডিভাইসে আপগ্রেড করা উচিত কিনা সেটাও পোষ্টের পরিশিষ্টে বলার চেষ্টা করবো।
গত বছরের ফ্ল্যাগশীপ চিপসেট Snapdragon 845 এর সবথেকে সস্তা ফোনটি ছিলো শাওমির পকোফোন F1 যেটা মাকের্টে ৩০ হাজার টাকার বাজেটে লঞ্চ হয়েছিলো। আর এটা এখন বর্তমানে ২৫ থেকে ২৭ হাজার টাকার মধ্যেই পেয়ে যাবেন আর সেকেন্ড হ্যান্ড এর দিকে গেলে এই ডিভাইসটি ২০ হাজারের নিচে সহজেই পেয়ে যাবেন।
অন্যদিকে Snapdragon 855 এর সবথেকে সস্তা ফোনটি হচ্ছে শাওমির Redmi K20 Pro যেটা আনঅফিয়াল ভাবে ৩৪ হাজার টাকা থেকে শুরু হচ্ছে, আর Snapdragon 855+ এর শুধুমাত্র একটিই ডিভাইস এখন পর্যন্ত রিলিজ পেয়েছে আর সেটার দাম কমপক্ষে ৬০ হাজার টাকার উপরে হবে। তো চলুন দেখে নেই এই তিনটি চিপসেটের মধ্যে পার্থক্যগুলো আর বুঝে নেই আসলেই কি ১০ হাজার টাকা বেশি খরচ করে 845 না নিয়ে ৮৫৫ কিংবা ৩০ হাজার টাকা বেশি খরচ করে ৮৫৫+ নেওয়া কি ঠিক হবে কিনা:
আজকের এই পোষ্টটিকে দুটি ভাগে ভাগ করেছি, যাতে আপনাকের বুঝতে সুবিধা হয়।
Snapdragon 845 vs 855
স্পেসিফিকেশন:
প্রথমেই কাগজ কলমের স্পেসিফিকেশনে চলে আসি। স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ আর ৮৪৫ এর স্পেসিফিকেশনের অন্যতম প্রধান পার্থক্য হচ্ছে এর Manufacturing Process। স্ন্যাপড্রাগন ৮৫৫ হচ্ছে কোয়ালকমের প্রথম 7nm FinFET চিপ, আর অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন ৮৪৫ ছিলো 10nm FinFET চিপ, মানে ৮৪৫ এর থেকে ৮৫৫ চিপসেটের ডিভাইসে আরো বেশি পাওয়ার এবং একই সাথে কম ব্যাটারি পাওয়ার ব্যবহার করবে।
অন্যদিকে স্ন্যাপড্রাগন 855 হচ্ছে কোয়ালকমের প্রথম “tri-cluster” যুক্ত সিপিইউ ডিজাইন। আর অন্যদিকে জিপিইউ সেক্টরের কিছুটা আপগ্রেড পাবেন Andreno 640 এর বেলায়। যেখানে ৮৪৫তে পাবেন Andreno 630। বলা হচ্ছে ৬৩০ থেকে ২০% বেশি পারফরমেন্স এতে পাবেন কিন্তু বাস্তবে হেভি ডিউটি কাজ ও হেভি ডিমান্ডিং গেমস না খেলা পর্যন্ত ডেইলি ইউসেজে আপনি কোনো পার্থক্য পাবেন না।
Snapdragon 855 | Snapdragon 845 | Snapdragon 835 | |
---|---|---|---|
CPU Core | Semi-custom ARM Cortex – Kryo 485 | Semi-custom ARM Cortex – Kryo 385 | Semi-custom ARM Cortex – Kryo 280 |
CPU Config | 1x 2.84GHz (Cortex A76) 3x 2.42GHz (Cortex A76) 4x 1.8GHz (Cortex-A55) |
4x 2.8GHz (Cortex-A75) 4x 1.7GHz (Cortex-A55) |
4x 2.45GHz (Cortex-A73) 4x 1.9GHz (Cortex-A53) |
GPU | Adreno 640 | Adreno 630 | Adreno 540 |
DSP | Hexagon 690 | Hexagon 685 with HVX | Hexagon 682 with HVX |
Process | 7nm FinFET | 10nm LPP FinFET | 10nm LPE FinFET |
Camera support | 48MP single / 24MP dual Hybrid AF, HDR video. multi-frame noise reduction |
32MP single / 16MP dual Hybrid AF, HDR video. multi-frame noise reduction |
32MP single / 16MP dual Hybrid AF, HDR video |
Video capture | 4K UHD, HDR @ 60fps | 4K UHD @ 60fps | 4K UHD @ 30fps |
Video playback | 8K, 360 degree, 4K up to 120fps, 10-bit, H.265 and VP9 video decoder | 4K UHD @ 60fps, 10-bit H.264 (AVC) and H.265 (HEVC) | 4K UHD @ 60fps, 10-bit H.264 (AVC) and H.265 (HEVC) |
Charging | Quick Charge 4+ | Quick Charge 4+ | Quick Charge 4.0 |
Modem | X24 LTE 2000 Mbps down 316 Mbps up |
x20 LTE 1200 Mbps down 150 Mbps up |
X16 LTE 1000 Mbps down 150 Mbps up |
৮৫৫ এর অন্যতম আরেকটি আপগ্রেড হচ্ছে 8K এবং 360-Degree ভিডিও রেকর্ডিং ফিচার যা আগের চিপসেটে সম্ভব ছিলো না। আর এটার সাথে হার্ডওয়্যার H.265 এবং VP9 ভিডিও ডেকোডারও ৮৫৫ য়ে রয়েছে। এর মানে হচ্ছে হাই রেজুলেশনের ভিডিও চালানোর সময় এখন যথাসম্ভব কম ব্যাটারির পাওয়ার খাবে আপনার ডিভাইস।
অন্যদিকে AI performance য়েও আপনি বেশ বুস্ট পাবেন। কারণ ৮৪৫ য়ে ছিলো Hexagon 684 DSP আর এবার ৮৫৫ য়ে পাচ্ছেন Hexagon 690 DSP। কাগজে বেশি না হলেও এর ইন্টারনাল দিক দিয়ে ৮৫৫ তে অনেক বেশি AI ফিচার উপভোগ করতে পারবেন। মডেমের দিক থেকেও ৮৫৫ তে হালকা আপগ্রেড পাবেন, X24 LTE মোডেমে পাবেন 2Gbps down স্পিড এবং 316Mbps up স্পিড থাকছে এতে। যেটা ৮৪৫ এর X23 LTE মোডের 1.2Gbps এ রথেকে অবশ্যই বেশি। কিন্তু ৫জি ব্যাপারটা 855 তে বেশ কমপ্লেক্স একটি ব্যাপার।
বেঞ্চমার্ক
বেঞ্চমার্ক স্কোরে যদি লক্ষ্য করে তাহলে এখানে একটু খাপলা আছে। ৮৪৫ এর মতোই ৮৫৫ ও আপনি বেশ কয়েকটি ডিভাইসে বেশ কয়েক দামে পাবেন। আর কম দামি ৮৫৫ এর থেকে বেশি দামি ৮৫৫ তে আপনি একটু বেশি স্কোর পাবেন।
(ফুল বেঞ্চমার্ক দেখতে এখানে ক্লিক করুন)
বেঞ্চমার্কে লক্ষ্য করলে দেখা যাবে যে Single-Core CPU সেকশনে সবথেকে বড় পারফরমেন্স গ্যাপ রয়েছে। ৮৪৫ এর সিঙ্গেল কোর পারফরমেন্সের থেকে ৮৫৫ এর সিঙ্গেল কোর পারফরমেন্স প্রায় ৪৬% বেশি, এর কারণ হচ্ছে নতুন Cortex-A76 ভিক্তিক Kryo 485 সিপিইউ ডিজাইনের জন্য। আর AnTuTu এর হিসেবে ৮৫৫ চিপসেটেড ডিভাইসগুলো গড়ে ২৯% বেশি ফাস্ট ৮৪৫ এর ডিভাইসগুলোর থেকে।
Snapdragon 855 vs 855+
টেকনোলজি দুনিয়ার খবরাখবর যদি আপনি নিয়মিত রেখে থাকেন তাহলে জানবেন যে সবাইকে চমকে দিয়ে বছরের মাঝামাঝিতে কোয়ালকম তাদের পরবর্তী ফ্ল্যাগশীপ চিপসেট লঞ্চ করে দিয়েছে, হ্যাঁ আমি কথা বলছি 855+ এর ব্যাপারে! আর ইতিমধ্যেই এই চিপসেটের একটি ডিভাইসগুলো গ্লোবাল ভাবে লঞ্চ হয়ে গিয়েছে, ASUS ROG Phone 2 ! আর আগেরটার মতোই এই সেকশনও শুরু করছি স্পেসিফিকেশন দিয়ে।
Snapdragon 855 | Snapdragon 855 Plus | |
---|---|---|
CPU Cores | octa-core Qualcomm Kryo 485 | octa-core Qualcomm Kryo 485 |
CPU Architecture | 64-bit, 7nm | 64-bit, 7nm |
CPU Clock Speed | up to 2,84GHz | up tp 2.96GHz |
GPU | Adreno 640, clocked at 585MHz | Adreno 640, clocked at 672MHz |
ISP | Spectra 380 | Spectra 380 |
Modem | Snapdragon X24 LTE | Snapdragon X24 LTE |
Charging | Quick Charge 4+ | Quick Charge 4+ |
উপরের স্পেসিফিকেশন দেখলে আপনি সহজেই বুঝতে পারবেন যে এই দুটি চিপসেটের মধ্যে মূল পার্থক্য হচ্ছে এদের CPU এবং GPU ক্লক স্পিডে। মানে কম্পিউটারের মতোই এখানে ওভারক্লক করা হয়েছে। অর্থ্যাৎ বলা যায় যে 855+ চিপসেট হচ্ছে ৮৫৫ এর ওভারক্লক ভার্সন।
৮৫৫+ চিপসেটে একই ধাঁচের tri-cluster ডিজাইন রয়েছে। আর মূল পার্থক্য হচ্ছে ৮৫৫ এর 2.84GHz ক্লক স্পিড আর ৮৫৫+ এর 2.96GHz ক্লক স্পিড। অনেকেই বলবেন এইটুকু ক্লক স্পিড দিয়ে আর কি হবে! তাদেরকে বলছি হালকা বেশি ক্লক স্পিডই কিন্তু পরবর্তীতে বাস্তব জীবনের পারফরমেন্সে বেশ পরিবর্তন আনবে। যদিও এটা এখন বুঝা যাবে না।
বেশি স্পিড মানে এই চিপসেট ওয়ালা ডিভাইসে ৮৫৫ এর থেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যে গেমস এবং মাল্টিটাস্কিং করতে পারবেন।
অন্যদিকে GPU সেকশনে আগের Adreno 640 থাকলেও এখানেও আপনি বেশি ক্লক স্পিড দেখতে পাবেন। ৮৫৫ এ ছিলো 585MHz ক্লক স্পিড আর ৮৫৫+ এ পাচ্ছেন 672MHz ক্লক স্পিড। আর সব মিলিয়ে কোয়ালকমের অফিসিয়াল ভাষ্যমতে ৮৫৫ চিপসেট যুক্ত ডিভাইসের থেকে ৮৫৫+ চিপসেটের ডিভাইসে আপনি ১৫% বেশি গেমিং পারফরমেন্স পাবেন। তাহলে বুঝতেই পারছেন ৮৫৫+ চিপসেটটি গেমিং কেন্দ্রিক ডিভাইসেই বেশি ব্যবহৃত হবে।
পরিশিষ্ট:
এবার আসি মূল কথায়। আসলে একটি স্মার্টফোন কেনা বা আপগ্রেড করার ক্ষেত্রে মূল বিষয়টি হলো আপনার চাহিদার ক্ষেত্র এবং আপনার বাজেট। বাজেট এবং চাহিদার মিল থাকলে আপনি যেকোনো স্মার্টফোনই নিতে পারেন। যারা এখনো ৮৩৫ বা এর নিচের চিপসেট ব্যবহার করেন তারা চোখ বন্ধ করে ৮৫৫ য়ে আপগ্রেড হতে পারেন। এবং আমি তাদেরকে বলবো আপনারাই আপগ্রেডের জন্য সবথেকে বেশি উপযুক্ত। যেমন ওয়ানপ্লাস ৫টি থেকে আপনি সরাসরি ওয়ানপ্লাস ৭ প্রোতে আপগ্রেড হতে পারেন। বা শাওমি মি মিক্স ৩ থেকে আপনি সরাসরি K20 Pro তে আপগ্রেড হতে পারেন।
যারা গতবছরের ৮৪৫ কিনেছেন বা মাসেক কয়েক আগে কিনেছেন তাদেরকে আমি বলবো শুধুমাত্র পারফরমেন্সের জন্য ৮৫৫ বা ৮৫৫+য়ে আপগ্রেড না হওয়াটাই বেটার, কারণ আপনি ৮৪৫ থেকে বাস্তবিক ইউজেসে তেমন Huge পার্থক্য দেখতে পাবেন না। তাই এখনই আপগ্রেড না করে এ বছরটা ৮৪৫ ডিভাইস থেকে ব্যবহার করতে পারেন, পরবর্তীতে পরের স্ন্যাপড্রাগন ভার্সন এলে সেটায় আপগ্রেড করাটাই বেটার হবে।
আর অন্যদিকে যারা ইতিমধ্যেই ৮৫৫ ব্যবহার করেছেন তাদের জন্য ৮৫৫+য়ে আপগ্রেড হওয়া শুধুমাত্র বোকামিই বলা চলে।
আর বাকি যারা রয়েছে ৮০০ সিরিজের কোনো চিপসেটের ডিভাইস এখনো ব্যবহার করেননি তাদেরকে আমি বলবো ৮৪৫ এর ডিভাইস নিলেও আপনি আগামী ১.৫/২ বছর কোনো ঝামেলা ছাড়াই ডিভাইসগুলো ব্যবহার করতে পারবেন, তবে ৩/৪ বছর ধরে ব্যবহার করার ইচ্ছে থাকলে বাজেট বাড়িয়ে ৮৫৫ বা ৮৫৫+ ডিভাইস নিয়ে নেওয়া বেটার বলে আমি মনে করি। তাই মূল কথা হচ্ছে নতুন ডিভাইস কিনলে কমপক্ষে ৮৪৫ বা বাজেট কম থাকলে ৭৩০ বা ৭১০ চিপসেটের ডিভাইস কিনুন।