৩টি ফোন নিয়ে অফিশিয়াল হল OnePlus 9 Series

বছরে যে কয়েকটি ফ্ল্যাগশিপ সিরিজের জন্য টেক এন্থুজিয়াস্ট থেকে শুরু করে সাধারণ ক্রেতারা পর্যন্ত অপেক্ষা করে তার মধ্যে নিসন্দেহে OnePlus এর Series কে স্থান দেওয়া যায়। OnePlus সাধারণত বছরের এইসময়ে তাঁদের সিরিজ এনাউন্স করে থাকে সেই রীতি অনুসারে পূর্বনির্ধারিত তারিখ অনুযায়ী ২৩ মার্চ গ্লোবালি বরাবরের মতই ২টি ফোন এনাউন্স করে। কিন্তু শুধুমাত্র ইন্ডিয়ার জন্য আরো একটি বাড়তি ফোন এনাউন্স করে। এই তিনটি ফোনের স্পেসিফিকেশন ও গ্লোবাল প্রাইসিং নিয়েই আজকের কভার আর্টিকেল-

প্রতিবারের মত এইবারও স্ট্যান্টার্ড OnePlus 9 ও অন্যদিকে আরেকটি প্রো ভ্যারিয়েন্ট OnePlus 9 Pro এনাউন্স করে। মেইন কিছু স্পেকস ছাড়াও এদের মধ্যে বেশ পার্থক্য রয়েছে। তাই প্রথমে OnePlus 9 কে নিয়ে আলোচনা শেষে সেসব স্পেকস Pro ভ্যারিয়েন্টে বাড়তি কি দেওয়া হয়েছে তা তুলে ধরা হবে।

OnePlus 9

প্রথমে আসা যাক ডিজাইনে, নতুন কিছু কালারে(Winter Mist, Arctic Sky, Astral Black) ও রিফ্রেশড ক্যামেরা মডিউলে এনাউন্স হয়েছে সিরিজটি। OnePlus 8 সিরিজে আমরা মিডলে দেখেছিলাম ক্যামেরা মডিউল কিন্তু এই সিরিজে তা লেফট টপ কর্ণারে নিয়ে আসা হয়েছে অন্যদের মতই। এই ডিজাইন OnePlus 8T এর সাথে সিমিলারিটি থাকলেও পার্থক্য হচ্ছে এইবারের মডিউলের কালার কালোর পরিবর্তে ফোনের বডির কালার দিয়ে রিপ্লেস করে দেওয়া হয়েছে। সামনে আগের মতই পাঞ্চহোল সেলফি শুটার রয়েছে একদম উপরে বামে। বিল্ডের দিকে থাকালে দেখা যাচ্ছে সাইড ফ্রেম প্লাস্টিকের ও সামনে পিছনে Corning Gorilla Glass 5 দেওয়া হয়েছে যা OnePlus 8 সিরিজেও ছিল লেটেস্ট টেক থাকা স্বর্তেও তা এই সিরিজে ব্যবহার করেনি।

6.55-inch ডিসপ্লেটি বরাবরের মতই এমোলেড কিন্তু এইবার 90Hz এর পরিবর্তে 120Hz দেওয়া হয়েছে যা আগে শুধু প্রো মডেলে পাওয়া যেত। এছাড়া FHD+ রেজ্যুলেশন।, 1100nits হায়েস্ট ব্রাইটনেস, HDR10+ কালার সাপোর্টেড। মোস্ট ইম্প্যর্টেন্টলি ডিসপ্লটি হচ্ছে ফ্ল্যাট। এই ডিসপ্লেতেই আছে ইন ডিসপ্লে ফিঙ্গার প্রিন্ট সেন্সর।

যেহেতু এই সিরিজে বরবারই ফ্ল্যাগশিপ লেভেলের ফোন এনাউন্স করা হয় তাই এটা সহজেই অনুমেয় যে এই সিরিজের ফোনে অবশ্যই Qualcomm এর লেটেস্ট সিলিকন চিপসেট অর্থাৎ Snadragon 888 ব্যবহার করা হবে। যাতে ইনবিল্ট গ্রাফিক্যাল প্রসেসর Adreno 660 রয়েছে। এছাড়া 8/12GB LPDDR5 র‍্যাম ও 128/256GB UFS 3.1 স্টোরেজ রয়েছে। এক্সপেন্ডবল স্টোরেজ সাপোর্ট ও হেডফোন জ্যাক তো অনেক আগেই থেকেই নাই যা এইবাবের জন্যও সত্য। যেহেতু এটি একটি 5G চিপসেট তাই ফুল 5G সাপোর্ট(mmWave + sub 6Ghz) পাওয়া যাবে।

ভ্যানিলা OnePlus 9 এ রয়েছে ট্রিপল ক্যামেরা সেটাপ যেখানে প্রাইমারি ক্যামেরা সেন্সর হচ্ছে 48MP Sony IMX689, আল্ট্রা ওয়াইড লেন্স হচ্ছে 50MP Sony IMX766 এবং 2MP এর মনোক্রোম সেন্সর। মেইন ক্যামেরাতে ইলেক্ট্রনিক ইমেজ স্ট্যাভিলাইজার আছে। 8K@30fps ও 4K@30/60fps এ ভিডিও রেকর্ড করা যাবে। স্লোমোশন জন্য আছে 1080p@240fps। এছাড়া একগাদা ক্যামেরা অ্যাপে একগাদা ফিচার তো রয়েছেই। সামনে আছে 16MP Sony IMX471 সেন্সর যাতেও EIS রয়েছে। এই সিরিজে নতুনত্ব হচ্ছে hasselblad এর সাথে পার্টনারশিপ। যা বড় করে ক্যামেরা মডিউলেই লিখা আছে।

ব্যাটারি সেকশানে খুব বেশি ইম্প্রুভমেন্ট নেই অর্থাৎ ক্যাপাসিটি 4500mAh ই রাখা হয়েছে। কিন্তু চার্জিং স্পিড বাড়ানো হয়েছে। এতে আছে 65W এর ওয়্যারড ফাস্ট চার্জিং ও 15W এর ওয়্যারলেস চার্জিং এর সুবিধা। বক্সে শুধু 65W ওয়্যারড ফাস্ট চার্জার থাকবে। কিন্তু ইন্ডিয়াল ভ্যারিয়েন্টে ওয়্যারলেস চার্জিং এর সুবিধা থাকবে না। বক্সের দেওয়া চার্জার দিয়ে ১-১০০% হতে সময় লাগবে মাত্র ২৯ মিনিট। আরেকটি বিষয় বলা উচিত সেটি হচ্ছে এই চার্জারটি পাওয়ার ডেলিভারি প্রটোকল সাপোর্টেড 45W পর্যন্ত তাই চাইলে এই চার্জার দিয়েই ল্যাপটপ বা অন্যকিছু চার্জ দেওয়া যাবে USB-C ক্যাবেল ব্যবহার করে। ভ্যানিলা ভ্যারিয়েন্টে কোনো ধরনের IP রেটিং নাই। এবং ডুয়েল স্টোরিও স্পিকারটি  ডলবাই এটমস সার্টিফাইড। হ্যাপটিক ফিডব্যাকের জন্য মোটরটি আপগ্রেড করা হয়েছে।

OnePlus 9 Pro

ডিজাইনে একদম ভ্যানিলা ভ্যারিয়েন্টের মতই কিন্তু বিল্ড কোয়ালিটিতে সামান্য পার্থক্য রয়েছে যেহেতু এইখানে সাইডে ফ্রেম এল্যুমিনিয়াম ব্যবহার করা হয়েছে কিন্তু গ্লাস সান্ডউইচ ডিজাইনের জন্য OnePlus 9 এর মতই Gorilla Glass 5 ব্যবহার করা হয়েছে। Morning Mist, Forest Green ও Stellar Black এই কালার গুলোতে পাওয়া যাবে।

ডিসপ্লে সেকশানে প্রো ভ্যারিয়েন্টে অনেক পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত এর সাইজ হচ্ছে 6.7-inch যেটি একটি QHD+ রেজ্যুলশনের LTPO AMOELD কার্ভ ডিসপ্লে। রিফ্রেশ রেইট সর্বোচ্চ 120Hz যা আবার এডাপটিভ। LTPO টেকনোলজি ব্যবহারের কারণে রিফ্রেশ রেইট একদম 1hz এ পর্যন্ত নেমে যেতে সক্ষম যখন ডিসপ্লতে স্ট্যাটিক কন্টেন্ট শো করা হবে। এটিই সর্বনিন্ম কেননা S21 Ultra তে সর্বনিন্ম 11Hz পর্যন্ত নামতে পারে। এইকারণে ব্যাটারি কঞ্জামপশন আগের চেয়ে সিগনিফিক্যান্টলি কম হবে। 1300nits হায়েস্ট ব্রাইটনেস, 360Hz টাপ স্যামপ্লিং রেইট, HDR10+ ও 10bit কালার সাপোর্টেড।

চিপসেট ও র‍্যাম/রম সেকশানে OnePlus 9 এর সাথে OnePlus 9 Pro এর কোনো পার্থক্য নেই।

ক্যামেরা ডিপার্টমেন্টে প্রো ভ্যারিয়েন্টে কিছু পার্থক্য রয়েছে যেহেতু এতে কোয়াড ক্যামেরা সেটাপ। তার মধ্যে একটি হচ্ছে প্রাইমারি ক্যামেরা সেন্সর যাথে 48MP Sony IMX 789 দেওয়া হয়েছে। এটি OIS, EIS দুইটিই সাপোর্টেড। আল্ট্রাওয়াইড ও মনোক্রোম লেন্স একই কিন্ত এতে 8MP এর একটি 3.3X টেলিফটো লেন্স আছে যাতেও আবার OIS সাপোর্টেড। এছাড়া আরো দুইটি এলইডি ফ্ল্যাশ আছে। ভিডিও রেকর্ড সেকশানে OnePlus 9 Pro দিয়ে 4K তে 120fps’এ ভিডিও শুট করা যাবে। hasselblad এর সাথে পার্টনারশিপের কারণে ছবিতে বা ভিডিও তেমন ইম্প্রভমেন্ট না আসতে কারণ কালার কেলিভ্রেশন ছাড়া সম্পূর্ণ ইমেজ প্রসেসিং এর কাজ OnePlus কে করতে হবে এটলিস্ট এই সিরিজের জন্য হলেও।

 

OnePlus 9 Pro এ ব্যাটারি ক্যাপাসিটি একই থাকলেও ভ্যারিয়েন্টেই 65W এর ওয়্যারড ফাস্ট চার্জিং এর পাশাপাশি 50W এর ওয়্যারলেস চার্জিং সুবিধা দেওয়া হয়েছে যার মাধ্যমে ০-১০০% চার্জ হতে সময় লাগবে ৪৩ মিনিট। IP68 রেটিং রয়েছে ওয়াটার ও ডাস্ট রেজিস্ট্যান্সের জন্য।

OnePlus 9R 

শুধুমাত্র ইন্ডিয়ার জন্য এটি এই লাইনআপের সবচেয়ে বাজেট স্মার্টফোন যদিও প্রাইসিং দেখলে আপনাদের কাছে ফ্ল্যাগশিপ কিলার জাতীয় কিছু মনে হবে না। এটি গত বছরের OnePlus 8T এর মতই মনে হবে সব কিছু ডিজাইন বাদে। অর্থাৎ 9 সিরিজের ডিজাইনে এসেছে এটি। পিছনের বডি পলি কার্বনেটের তৈরি এবং সামনে Gorilla Glass 5। চিপসেটে  হিসবে আছে Snadragon 870 যা Snadragon 865+ এর টুইইকড ভার্সন। ডিসপ্লে ও ক্যামেরা স্পেসিফিকেশন একদম হবহু 8T এর মতই। অর্থাৎ 6.55-inch এর 120Hz FHD+ রেজ্যুলশনের এমোলেড প্যানেল এবং 48MP(Sony IMX586)+16MP(Sony IMX481)+5MP+2MP। এটিও 65W ফাস্ট চার্জ সাপোর্টেড বক্সের চার্জার দিয়েই কিন্তু ঐ চার্জারে USB-PD প্রটোকল সাপোর্টেড না।

Price

একদিনের ব্যবধানে গ্লোবালি লঞ্চের পর আজকে OnePlus এর হোম গ্রাউন্ড চায়নাতেও এই সিরিজ এনাউন্স হয়ে গেল। আমরা খুব বেশি আপগ্রেড দেখতে না পেলেও গতবারের চেয়ে এইবার আরো বাড়ানো হয়েছে সব ভ্যারিয়েন্টের দাম। কিন্তু চাইনিজ OnePlus 9 সিরিজ প্রাইসিং এ গ্লোবাল থেকে ভাল হলেও সফটওয়্যারে OxygenOs এর বদলে দেওয়া হলে oppo এর ColorOS। জানিয়ে রাখা ভাল কয়েকমাস আগের OnePlus এর R&D oppo এর সাথে মার্জ করে ফেলে।

গ্লোবাল,ইন্ডিয়ান ও চাইনিজ প্রাইসিং এর জন্য লক্ষ্য করতে xda থেকে নেওয়া ইমেজ চার্টটি-

cover image credit- Mrwhosetheboss

Share This Article

Search