লাখ টাকার আইফোন হয়তো রেগুলার ব্যাবহারের জন্য বেশ কন্সিস্টেন্ট, কিন্তু আমাদের মত যারা ফোনের উপর টর্চার করতে পছন্দ করি তারা এর মধ্যে নানা ধরনের ঝামেলা করার জায়গা খুজে পাই। তেমনি আইফোন এক্সের বেশ কিছু ফিচার এবং এপস নিয়ে ঝামেলা করার ফলাফল সম্পর্কে আজকের এই আর্টিকেল।
ফেস আইডি (FACE ID)
আইফোন এক্সের সবচেয়ে বেশি এডভারটাইজড ফিচার হচ্ছে ফেইস আইডি। অ্যাপল বলছে তাদের ফেস আইডি আনবিটেবল, কোন প্রকার রংঢং করে একে বোকা বানানো যাবে না। এর ভুল করার সম্ভাবনা প্রতি মিলিয়নে মাত্র একবার।
প্রথমেই আমরা আমদের মডেলের মুখ মণ্ডল প্রদর্শন পুর্বক ফেস আইডি ফিচারটি একটিভ করিয়ে নেই। ফেস আইডিটি একটিভ করতে মাথা বিভিন্ন দিকে ঘুরিয়ে পুরো মুখ স্ক্যান করে নিতে হবে, যাদের মাথা স্বাভাবিক এর তুলনায় বড় তাদের হয়ত একটু বাড়তি সময় লাগবে। ফেস আইডিটি একটিভ হওয়া মাত্র আমরা আইফোন দশকে বিভিন্ন পরিক্ষায় ফেলে দেখলাম এটা ঠিকাঠাক কাজ করছে কিনা।
ফেস আইডি ব্যাবহার করে বেশ কিছু ভিন্ন ভিন্ন সেন্সর, এর মধ্যে ডট প্রজেক্টর পুরো মুখের ম্যাপ তৈরি করে, এছাড়াও রয়েছে ইনফ্রারেড ক্যামেরা, প্রক্সিমিটি সেন্সর এবং ফ্লাড ইলুমিনেটর। ফেস আইডি ডিটেক্ট করতে সক্ষম যে আপনি তাকিয়ে আছেন কিনা, কোন কিছু পড়া বা দেখার সময় ফেস আইডির কারনে স্ক্রিন বন্ধ হবে না, এমনকি কেউ কল করার সময় আপনি ফোনের স্ক্রিনে তাকালে রিং টোন এর ভ্লিউম কমে যাবে।
মজার ব্যাপার হচ্ছে ফেস আইডি মেশিন লার্নিং ব্যাবহার করে আপনার চেহারার বেশ কিছু পরিবর্তন ও শনাক্ত করতে পারে। আপনি দাড়ি বা মোচ রাখেন, চুল কাটেন বা শেভ করেন ফেস আইডি আপনাকে চিনতে পারবে।নিউমার্কেটের দোতলার চশমা বা একটিভ থ্রিডি গ্লাস, কোন ভাবেই আইফোন দশের ফেস আইডিকে ধোকা দেওয়া যায়নি। তবে চুল থাকা মানুষ ন্যাড়া হলে কি হবে সেটা পরিক্ষা করা হয়নি। আমরা তীব্র আটা ময়দা ব্যাবহার করেও দেখে নিলাম আমাদের মডেল শোচনীয় ভাবে ব্যার্থ।
তবে অ্যাপল একটা জিনিস নিশিচত করেছে আপনার ঘুমের মধ্যে, অসতর্ক বা চোখ বন্ধ অবস্থায় ফেস আইডি কাজ করবে না, যা সন্দেহকারি বউ মানে স্পাইদের জন্য দুঃসংবাদ।
এনিমোজি (ANIMOJI)
আইফোন দশে দেয়া হয়েছে এনিমেটেড ইমোজি ফিচার। এই ইমোজিগুলো আপনার ফেসিয়াল এক্সপ্রেশন এবং মুভমেন্ট অনুকরণ করতে পারবে কিছুটা টকিং টম এর মতো। বেশ কিছু ক্যারেক্টার এতে এড করা হয়েছে যার মধ্যে শেয়াল, ইউনিকর্ন, ভালুক, রোবট এবং মনুষ্য বর্জ্য অন্যতম।
তবে আফসোসের বিষয় এই এনিমেটেড ইমোজি দিয়ে রেকর্ড করা মেসেজ কেবল আইফোন এক্স টু এক্সেই শেয়ার বা সেন্ড করা যাবে। এন্ড্রয়েড তো দুরের কথা অন্য মডেলের আইফোনেও তা শেয়ার করার কোন সিস্টেম নেই। তবে হ্যাকাররা কি করে এটা নিয়ে তার দিকে আমরা তাকিয়ে আছি।
এ আর (AUGMENTED REALITY)
আইফোন দশের অপারেটিং সিস্টেম আই ও এস ১১ ভার্চুয়াল রিয়ালিটির সৎভাই অগমেন্টেড রিয়েলিটিকে নিয়ে এসেছে আরো নাগালের মধ্যে। ইতিমধ্যে অ্যাপল আপ স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে বেশ কিছু মজার এ আর ভিত্তিক এপ এবং গেম। যার অনেকগুলো খুবি মজার এবং রিয়েল লাইফে ভীষণ উপকারি।
IKEA PLACE
প্রথমেই ফিচার করব আইকিয়া প্লেস এপটিকে। এটি প্রথমে আপনার পুরো রুম স্ক্যান করে নেবে, এরপর আপনি এপের মেনুতে দেয়া যে কোন ফার্নিচারের থ্রিডি মডেলটি রুমের যে কোন যায়গায় বসিয়ে দেখে নিতে পারবেন আপনার রুমের সাথে মানায় কিনা। পছন্দ হলে আইকিয়া স্টোর থেকে সাথে সাথে অর্ডারও করে নিতে পারবেন।
AR DRAGON
এরপরে আমাদের কাছে আসে মজার একটি এপ, নাম এ আর ড্রাগন। এই এপে আপনি একটি ড্রাগন পাবেন যেটিকে পালতে পারবেন, খাওয়াতে পারবেন। ড্রাগন টি বেশ মজার আমরা একে একটি জেনুইন বিড়ালের পাশে রেখে ছিলাম।
পেট প্যারেন্ট দের জন্য চিন্তার কোন কারণ নেই , ভার্চুয়াল এই ড্রাগনটি মজার বটে তবে এটি কখনোই আপনার পোষা প্রাণিটির জায়গা নিতে পারবে না।
WORLD BRUSH
যারা আর্টিস্ট হতে চান তাদের জন্য ওয়ার্ল্ড ব্রাশ নামের এই এপটি বেশ দারুণ। এর ব্রাশ দিয়ে থ্রিডি লেখা বা পেইন্টিং করতে পারবেন আপনার ঘরের মধ্যে। বাচ্চাদের দের জন্য এপটি হতে পারে বেশ ক্রিয়েটিভ এবং সুস্থ বিনোদনের ক্ষেত্র।
KINGS OF POOL
এবার আসা যাক এ আর পুল খেলায়। কিংস অফ পুল গেমে আপনি পুরো পুল টেবিলটি আপনার ঘরের মাঝখানে বসিয়ে নিতে পারবেন। টেবিলটি অত্যন্ত রিয়েলিস্টিক, স্মার্টফোনে অনেকেই পুল খেলেছেন, তবে এটা পুরোপুরি ডিফ্রেন্ট এক্সপেরিয়েন্স। এতে আপনি প্রায় রিয়ালিস্টিক পুল খেলার অভিজ্ঞতা পাবেন।
THE MACHINES
আইফোন দশ এর লঞ্চ প্রোগ্রামে এ আর গেম দা মেশিন্স দেখার পর থেকেই সেটা বাস্তবে কেমন দেখায় তা নিয়ে পরীক্ষা করতে চাচ্ছিলাম আমরা। তাই সাতটি ডলার পানিতে ফেলে তারপরই গেমটি টেস্ট করার সুযোগ পাওয়া গেল। গেমটি খেলতে আপনার দরকার হবে একটি বড়সড় টেবিল, আমরা ব্যাবহার করেছি একটি ডাইনিং টেবিল। গেমের ম্যাপ পুরো টেবিল দখল করে ফেলে।
অত্যন্ত ডিটেইল্ড এই গেমটি খুবি রিয়েলিসটিক মনে হয়। দ্যা মেশিন্স নামের এই গেমটি অত্যন্ত এডিক্টিং। তবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে খেলতে হয় দেখে বেশ পরিশ্রম সাপেক্ষ। একটি কথা মানতেই হবে যে এই গেমটি খেলাই একটা এক্সপেরিয়েন্স, দারুন একটা জিবন্ত হাই টেক ফিল পাওয়া যাবে এর প্রতিটি লেভেলে।
HOLO
সব শেষে দেখে নেব ‘হলো’ নামের এপটি, অত্যন্ত ফানি এই এপটি নিয়ে আমরা অনেকক্ষন মজা করেছি। এতে বিভিন্ন ক্যারেক্টারের ডাউনলোডেবল থ্রিডি মডেল দেয়া আছে, যেগুলোকে আপনি আপনার পছন্দ মত জায়গায় বসিয়ে নিতে পারবেন। আমরা দেখা করেছি স্পাইডার ম্যান এবং ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে আর চুল্কে দিয়েছি বাঘের পিঠ। চলুন দেখে নিই হলো তে আপনি কি কি করতে পারবেন তার কিছু ডেমো।
সবশেষে বলা যায় আইফোন এক্স ফোনের মধ্যে বেশ কিছু ত্রুটি থাকলেও এর ফিচার এবং এপসগুলো এক কথায় অসাধারণ। এপর্যন্ত আমরা একটি এপ ব্যাবহার করেও হতাশ হইনি। তবে আইটিইউন্সে আপনারা বেশিরভাগ সময় পেইড এপস আর গেমসই বেশি পাবেন। কিন্তু এসবের গুণগত মান আপনারা আশা করি কোন কম পাবেন না। সবাই ভাল থাকুন, সুস্থ থাকুন আর সঙ্গে থাকুন পিসিবি বিডির সাথেই।