ইউটিউবের নতুন নিয়ম
১৬ জানুয়ারি, ২০১৭ এক নতুন ঘোষণায় ইউটিউব তার পার্টনার প্রোগ্রাম এর পলিসি আপডেট করেছে। যার কোপটা আসলে পড়বে অনেক নতুন ইউটিউব চ্যনেলের উপর, যারা একে পার্ট্টাইম ইনকামের বা সহজে টু পাইস কামিয়ে নেওয়ার জায়গা ভেবেছিলেন। গত বছর এক আপডেটে ইউটিউব আইন করে দেয় মনেটাইজেশন এর জন্য আবেদন করতে চ্যানেলে ১০,০০০ ভিউ থাকতে হবে। বছর পার হতে না হতেই নিয়মটি আরো কড়াকড়ি করে ফেলল। এখন থেকে পার্টনার প্রোগ্রামে এপ্লাই করতে যে কোন চ্যানেলের সর্বশেষ বারো মাসে ৪,০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইম এবং ১,০০০ সাবস্ক্রাইবার থাকতে হবে। ঘোষণাটি দেখতে পারেন এই লিংকে। ঘোষণাটি কার্যকর করা হবে ফেব্রুয়ারির ২০ তারিখ থেকে সব পুরনো চ্যানেলের উপরে।
কেন এই নিয়ম
ইউটিউব আসলে এমন একটা প্লাটফর্ম যেখানে ক্রিয়েটররা তাদের ট্যালেন্ট শো করবে। আর পার্টনার প্রোগ্রামের মাধ্যমে ইউটিউব তাদেরকে কিছু উপার্জনের ব্যবস্থা করে দেবে যাতে তাদের খরচ টা উঠে আসে। কিন্তু গত কয়েক বছরে আমরা দেখতে পাচ্ছি, লাখ লাখ লোক শুধু মাত্র পয়সা উপার্জনের আশায় ইউটিউবে চলে আসে। ফলাফলে নিম্ন মানের চ্যানেল, আর ডেস্পারেট কন্টেন্ট এর ছড়াছড়ি। কিছু বড় বড় এডভারটাইজিং গ্রুপ ইউটিউব থেকে তাদের এড সরিয়ে নেয়। ইউটিউব তাদের ইকোসিস্টেম রক্ষায় এক রকম বাধ্য হয়েই সবাইকে মনেটাইজেশন এর সুযোগ দেয়া বন্ধ করে দেয়। নতুন নিয়ম গুলো আবেদন এর সংখ্যা অনেকাংশে কমিয়ে আনবে। ফলে ইউটিউব আরো ভালভাবে পর্যবেক্ষন করে মনেটাইজেশন এপ্রুভাল দিতে পারবে।
কারা এতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন
উল্লেখ্য যে খুবি নামকরা ইউটিউব সেলেব্রিটি লোগান পল কে পার্টনার প্রোগাম থেকে বাদ দিয়ে দেয় ইউটিউব গত সপ্তাহে। জাপানে ঘুরতে গিয়ে তার এক ভিডিওতে জনৈক আত্মহত্যাকারির দেহাবষেশ রেকর্ড করে পাবলিশ করে সে। কয়েক দিন পরে ভিডিওটা সরিয়ে নেওয়ার পরেও ইউটিউব ব্যপারটা বেশ সিরিয়াসলি নেয়। কারন গ্রাফিক এবং রগরগে ভিডিও ইউটিউবের পলিসির বাইরে। ঠিক এই ধরনের কিছু অভিযোগ থেকেই এডভারটাইজাররা ইউটিউব থেকে তাদের বিজ্ঞাপন সরিয়ে নেয়।
এই মাজেজা এই জন্য দেয়া যাতে সবাই বুঝতে পারেন, ইউটিউব তাদের ইকোসিস্টেম রক্ষা করতে কতটা সিরিয়াস। কেউ যদি ভেবে থাকেন যে ইউটিউবে পয়সা উড়ে, যা মন চায় তাই বা কারো টা কপি করে এনে আপলোড করলেই পয়সা, এরাই আসলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। শত শত লোকের শুধু মাত্র বাংলাদেশ থেকে পয়সার লোভে ইউটিউবে চলে আসাটাও এই নিয়ম তৈরির পিছনে কমবেশি ভুমিকা রেখেছে বলতে পারেন।
সিরিয়াস ক্রিয়েটরদের চিন্তার কিছু নেই
যারা ইউটিউব কে সিরিয়াসলি ক্যারিয়ার হিসেবে নিতে চান তাদের জন্য আসলে ভালই হল। ইউটিউবে টিকে থাকা আসলে খুব সহজ নয়। কিছু যোগ্যতা অর্জন করেই এখানে টিকে থাকতে হবে। এই নিয়মে সেই অভ্যাস এর কিছুটা আগে থেকে হয়ে যাওয়া এক রকম মন্দের ভাল। আর একবার দাড়িয়ে গেলে, মাঠ যত খালি থাকে গোল দিতে তত সুবিধাই হবার কথা।
- ৪,০০০ ঘণ্টা ওয়াচ টাইমঃ ওয়াচ টাইম দিয়ে ইউটিউব হিসাব করে কারো ভিডিও আসলে কতটা দেখার মত। ভিডিও যত্ন করে এবং সময় নিয়ে বানালে মানুষ বেশি সময় দেখবে। অথবা নিজের ভিডিওর প্যাটার্ন এবং একই বিষয়ে অন্যদের টা ভালভাবে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে কোন ভিডিওগুলো মানুষ বেশি সময় দেখে, কেন দেখে। এইগুলো খুব ভালভাবে ফলো করে নিজের ভিডিও ইম্প্রুভ করতে পারাটা ইউটিউবে টিকে থাকতে অত্যাবশক। আর ইউটিউবও এ থেকে হিসাব করে নেবে আপনার দৌড় কতদূর।
- ১,০০০ সবাস্ক্রাইবারঃ সাবস্ক্রাইবার ্বাড়াতে রেগুলার ভিডিও দেওয়ার কোন বিকল্প নাই। ফলো মানুষ তাকেই করে যার থেকে রেগুলার তার আগ্রহের বিষয়ে নতুন কিছু পাওয়া যায়। সুতরাং আপনার বিষয়ের এর উপরে রেগুলার ভিডিও দিতে থাকলে দেখবেন অল্প সময়ে ওই একই বিষয়ে আগ্রহী আপনার একটা ফলোয়ার গ্রুপ তৈরী হবে।
সোজা কথায় ইউটিউব চায়, ইউটিউবাররা তাদের নিয়ম গুলো মেনে চলুক। সেটা নিশ্চিত করতে ভুইফোড় হঠাত গজিয়ে ওঠাদের ঠেকাতে এত আয়োজন। এতে যারা দীর্ঘ সময় এর জন্য টিকে থাকতে চান বা কাজ করছেন তারা উপক্রিত হবেন।
আমার কথা
আমি বলব এতে যারা নতুন ইউটিউবে আসতে চাচ্ছেন তাদের ও উপকার হবে। বিশেষ করে গত কয়েক বছরে দেখতে পাচ্ছি ইউটিউবকে টাকার গাছ হিসেবে সবাই ব্রান্ডিং করছে। ফলাফল স্বরূপ যে ছেলেটি এখনো ডিম ভাজতে পারে না সে পড়া লেখা বাদ দিয়ে ইউটিউবার হতে চাচ্ছে। এত কম বয়সে এইসব সিদ্ধান্ত সাধারণত আত্মঘাতী হয়। ইউটিউব শুরু হয় মাত্র বছর দশেক আগে। আরো দশ বছর টিকবে কিনা সে নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। পনের বছর আগের মহা প্পুলার ইয়াহু কিংবা হাই ফাইভ কিন্তু এখনকার ছেলে মেয়েরা চেনে না। পড়াশোনা, চাকরি বা ব্যবসার মত প্রতিষ্ঠিত ক্যরিয়ার ছুড়ে ফেলে এই আপাত চকচকে পেশায় আসার আগে দশবার ভেবে দেখুন, টিকে থাকতে পারবেন তো? পরে কিন্তু ফিরে যাওয়ার আর জায়গা থাকবে না।