চায়না ব্যান করলো cryptocurrency: স্বাভাবিক হবে GPU এর দাম?

সম্প্রতি cryptocurrency এর লেনদেন নিষিদ্ধ করেছে চীন। এই ঘোষণার সাথে সাথেই cryptocurrency মার্কেটে নেমেছে বিশাল ধ্বস। স্বাভাবিকভাবেই কাল থেকে প্রশ্ন করছেন গেমাররা যে এর ফলে কি অবশেষে GPU মার্কেট GPU স্টক সমস্যার সমাধান হবে কি না ও দাম আগের মত স্বাভাবিক হবে কি না। আজকের আলোচনা এসব নিয়েই।

চীনের ঘোষণার বৃত্তান্তঃ 

প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক যে চায়না কি ব্যবস্থা নিয়েছে এবং কি কি নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। অনেকেই হয়তো জানেন যে ২০১৭ সালেও বেশ কিছু সেবা ও ব্যবস্থাপনায় ক্রিপ্টোকারেন্সির লেনদেনের উপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল চীন। এবার বলা যায়  সেই নিষেধাজ্ঞার ক্ষেত্রকেই বরং আরো অনেকটা extend/expand করলো তারা।

পুর্বের ব্যানের তুলনায় এবারের নিয়মকানুনে নিষিদ্ধ ক্ষেত্র/সেবা/প্রতিষ্ঠানের তালিকা অনেক বড় করেছে কতৃপক্ষ। ৩টি financial industry associations তাদের সদস্যদের উপরে নিয়ম জারি করে যে ব্যাংক ও অনলাইন পেমেন্ট ফার্ম সহ অন্যন্য অনেকগুলো সেবা/প্রতিষ্ঠানে ক্রিপটোকারেন্সির লেনদেন /ক্রিপ্টোকারেন্সির সাথে সম্পর্কিত যেকোনো সেবা যেমন একাউন্ট খোলা ,রেজিস্ট্রেশন, ক্লিয়ারিং,ট্রেডিং,সেটেলমেন্ট ও ইনস্যুরেন্স ইত্যাদি প্রদান করা/অফার করা থেকে বিরত থাকতে হবে।

People’s Bank of China ও তাদের আদেশে পরিষ্কার করে দিয়েছে যে প্রতিষ্ঠানসমুহ “ভার্চুয়াল কারেন্সি” গ্রহন ও ব্যবহার করতে পারবে না এমনকি এক্সচেঞ্জ ও করতে পারবে না। নিষেধাজ্ঞা আরোপ হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি সেভিং/ট্রাস্ট সার্ভিসেও।

ব্যাংক ও পেমেন্ট কোম্পানিগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ক্রিপ্টোকারেন্সি সংক্রান্ত মানি ট্রেডিং এর উপর নজরদারি বাড়ানোর জন্য ও গভীরভাবে পর্যবেক্ষণের জন্য।

নির্দেশনাসমুহ যৌথভাবে এসেছে National Internet Finance Association China, the China Banking Association এবং the Payment and Clearing Association of China এর পক্ষ থেকে।

ফলাফলঃ 

চীনের বিভিন্ন সংস্থা ও ব্যাংকিং এসোসিয়েশনের এমন সিদ্ধান্তের তাৎক্ষনিক কিছু প্রভাব আমরা দেখতে পেয়েছি ক্রিপ্টো মার্কেটে ও এর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ও দেখতে পাওয়া যাবে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে।

বিটকয়েনের বর্তমান মুল্য

টেসলা ও বিটকয়েন এর transaction বন্ধ করে দিয়েছিল, সাথে চীন এর এমন সিদ্ধান্তের ফলে গতকাল গত কয়েক মাসের মধ্যে সবথেকে বড় ধ্বস নামে বিটকয়েনের প্রাইসে। অন্যন্য যে সমস্ত ক্রিপ্টোকারেন্সি রয়েছে কমবেশি সেগুলোতেও এই প্রভাব পড়বে ও পড়েছে তা বলা বাহুল্য। বিটকয়েনের প্রাইস ৩৫০০০ ডলারে নেমে আসে সর্বনিম্ন। এ লেখা লেখার সময় তা ৪০০০০ এর আশেপাশে দেখা গিয়েছে।

গত ২৪ ঘন্টায় বিটকয়েনের দামে ধ্বস নামার চিত্র

পরবর্তীতে কি হবে, এবং এর প্রভাব GPU মার্কেটে কতটুকু পড়বে, কবে নাগাদ বাজারে ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যাবে মুলত এই প্রশ্নগুলোই আমাদের পাঠকবৃন্দের মনে বেশি আসছে। চলুন আলোচনা করা যাক।

প্রথমত,

চীনের এই নতুন বিধিনিষেধ কতটুকু বাস্তবে কার্যকরী হয় তার উপর প্রধানত নির্ভর করবে সম্পুর্ণ ব্যবস্থাটি। আস্তে আস্তে যদি কড়া নজরদারির মধ্যে বেশিরভাগ ব্রান্ড/ব্যাংক/ইনসুরেন্স/পেমেন্ট ফার্ম ও সার্ভিস প্রোভাইডার গুলো যদি নিয়ম মেনে ক্রিপ্টোকারেন্সির ব্যবহার,গ্রহণ/আদান-প্রদান সম্পুর্ণ রুপে বর্জন করে সেক্ষেত্রে শুধুই বিটকয়েন নয় বরং সব ধরণের ক্রিপ্টোকারেন্সির দামেই ধ্বস নামবে বড় রকমের। প্রাইস ড্রপ রাতারাতি হবে কি না সেটিও নির্ভর করবে যে মাঠ পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানগুলো কত দ্রুত নতুন নিষেধাজ্ঞা অনুসারে কার্যক্রম পরিচালনা শুরু করে,কড়াকড়ি আরোপ করে।

দ্বিতীয়ত, 

চীন সরকার বা সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো কতটুকু সোচ্চার থাকে, মনিটরিং টিমগুলো কতটুকু সতর্কতা অবলম্বন করে ও সমগ্র চীন জুড়ে তারা কতটা শক্ত অবস্থান নেয়,অভিযান চালায় বা ব্যবস্থা নেয় তার উপরেও নির্ভর করবে ব্রান্ড/কোম্পানি/ব্যাংক/ইনসুরেন্স প্রতিষ্ঠানগুলোর সরে আসার বিষয়টি।

উপর্যুক্ত ঘটনাগুলো যত দ্রুত ঘটবে তত দ্রুত ক্রিপ্টোকারেন্সির দামের উপরে প্রভাব পড়বে।

GPU মার্কেটের উপরে প্রভাবঃ 

যখন মাইনিং ফার্ম বা ব্যক্তিগত ভাবে যারা মাইন করে এই সমস্ত ব্যক্তি দেখবে যে ক্রিপ্টোকারেন্সির দাম অত্যন্ত কম ও তা ক্রমাগত নিচের দিকেই যাচ্ছে বা বাড়ছে না, এরকম অবস্থা বেশিদিন চলতে থাকলে একটা পর্যায়ে মাইনিং একেবারেই লাভজনক থাকবে না ও একটা সময়ে খরচ ও লাভের অনুপাত ঋণাত্মক দিকে ধাবিত হবে।

ফলে মাইনিং সেক্টরে GPU এর চাহিদা যেমন কমবে, দিনে দিনে মাইনিং এর জন্য GPU কেনার ঘটনা ও কমে আসবে, উপরন্ত অনেক মাইনার এবং মাইনিং ফার্ম তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিবে, অনলাইনে ব্যবহ্বত কার্ডগুলো ও On-sale এ যেতে পারে।

ক্রিপ্টো প্রাইস এর ধ্বস-এনভিডিয়ার LHR রিলিজঃ ফলাফল কি হতে পারে???? 

এদিকে এনভিডিয়া ইতিমধ্যেই লঞ্চ করে ফেলেছে তাদের RTX 30 এর রিফ্রেশ সিরিজ বা LHR সিরিজ। অর্থাৎ এই GPU গুলোতে মাইনিং পারফর্মেন্স ভালো পাওয়া যাবে না বিশেষ লিমিটারের কারণে। এর ফলে আশা করা যাচ্ছে এই কার্ডগুলো স্বাভাবিক দামে পাওয়া যাবে, স্টক ও থাকবে পর্যাপ্ত, পুর্বের মত মাইনারদের হাতে সব চলে যাবে না।

তবে এনভিডিয়ার এই LHR কার্ডগুলোর সবই হাই এন্ড কার্ড (RTX 3080,3070,3060TI,3060),ফলে মিড বাজেট ও লো বাজেটের অবস্থা আগামী কয়েক মাসে কি হবে তা নিয়ে সন্দেহ থেকেই যাচ্ছে। হয়তো পরিস্থিতি অনুকুলে থাকলে হাই বা হায়ার মিড বাজেটের কনজিউমাররা মোটামুটি MSRP বা MSRP এর কাছাকাছি দামে GPU পেলেও লো,লো মিড বাজেটের বাজারের অবস্থা কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবে তা বলা যাচ্ছে না, আদৌ LHR এর প্রভাব ও সাফল্য কতটুকু হবে তাও আপাতঃদৃষ্টিতে নির্ভর করছে মাইনিং মার্কেট এর উপরেই।

তবে মাইনার দের দৌড়াত্ম কমে গেলে পরবর্তীতে স্টকে আসা GPU গুলোর দাম কম হবে স্টক ও থাকবে ভালো এই আশা করা যেতে পারে, তাছাড়া এখন GPU স্টক করে রেখে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করা স্ক্যালপাররাও তখন আস্তে আস্তে GPU এর দাম কমিয়ে GPU সেল করা শুরু করতে পারে এই সম্ভাবনা ও রয়েছে।

আরো একটি কথা না বললেই নয়, আগত দিনগুলোতে মার্কেটের অবস্থা কেমন হবে তা মাইনিং মার্কেটের পাশাপাশি নির্ভর করবে AMD ও Nvidia এর উপরেও যে তারা কি পরিমাণ কার্ড সাপ্লাই দিতে পারে। বহিবিশ্বে দাম কমার পর আমাদের দেশে তা কবে কমবে তা নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন।

Share This Article

Search