ব্রডব্যান্ড লাইন নেবার আগে যে বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রাখতে হবে

২০১৯ সাল মানে বর্তমান সময় হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ। ধীরে ধীরে আমরা ২০২১ সালের দিকে মানে “ডিজিটাল বাংলাদেশ” এর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। আর তথ্য প্রযুক্তির সবথেকে বড় অবদান হলো কম্পিউটার। আর কম্পিউটারকে আরো যুগোপযোগী করে তুলেছে ইন্টারনেট। এখন আশেপাশে তাকালে দেখবেন যে রিকশাওয়ালারও স্মার্টফোন ব্যবহার করছে আর সেখানেও ইউটিউবে নার্গিছের গান শুনছে! ইন্টারনেট এর আসল মজা ৪জি বা ৫জি তে নয় বরং ইন্টারনেট এর আসল মজা পেতে হলে আপনাকে ব্রডব্যান্ড লাইনের জগতে আসতে হবে। ৪জি বা ৫জি দিয়ে কি লাভ যদি মাথায় ডাটা লিমিটেড প্যাড়া থাকে! আগে কখনো ব্রডব্যান্ড লাইন ব্যবহার করেন নি বা সামনে যারা ব্রডব্যান্ড লাইন নিতে যাচ্ছেন তাদের জন্যই আমার আজকের এই পোষ্ট। তো চলুন জেনে নেই ব্রডব্যান্ড লাইন নেবার আগে যে বিষয়গুলোর উপর খেয়াল রাখা জরুরী।

পূর্বপ্রস্তুতিঃ

ব্রডব্যান্ড লাইন নেবার আগে সর্বপ্রথম সিদ্ধান্ত নিন যে কি কারণে আপনি লাইন নিচ্ছেন। আপনার উদ্দেশ্য কি! অবশ্যই ইন্টারনেট ব্যবহার করার জন্য কিন্তু এখানেও কথা রয়েছে। আপনি যদি শুধুমাত্র ক্যাজুয়াল ব্রাউজিং আর অফিসের কাজ আর ব্যাক্তিগত বিনোদনের জন্য নেট লাইন নেবার কথা ভাবছেন তাহলে আমি বলবো আপনার লাইন না নেওয়াই উত্তম। কারণ ব্রডব্যান্ড লাইনে কোনো ডাটা লিমিট নেই, আপনি মাসে ১০০ জিবি ব্যবহার করলেও আপনাকে যে পরিমাণের বিল দিতে হবে সারা মাসে ১ জিবি ডাটা ব্যবহার করলেও সেই একই পরিমাণের বিল দিতে হবে। তাই যারা হেভি ইউজার, ইউটিউবার এবং যারা আমার মতো HD গেমসগুলো মুক্তির সাথে সাথেই নেট থেকে ডাউনলোড করে খেলে তাদের জন্য ব্রডব্যান্ড লাইনটি উপযুক্ত।
উদ্দেশ্য ঠিক করা হয়ে গেলে এবার আপনার এই লাইনটিতে কয়জন নিয়মিত ইন্টারনেট ব্যবহার করবে সেটা ঠিক করুন। একটি বাসায় নেট লাইন আনার পর সাধারণ ওই বাসার প্রায় সবাই টুকটাকি নেট লাইন WiFi এর মাধ্যমে ব্যবহার করে থাকে। এবার যারা যারা নেট লাইন নিয়মিত ব্যবহার করবে তাদের মোট সংখ্যার উপর ভিক্তি করে আপনার নেটের স্পিড প্যাকেজটি বাছাই করতে হবে। সেটার ব্যাপারে নিচে বলছি।

সঠিক স্পিড ঠিক করুন!

বর্তমানে 1Mbps থেকে শুরু করে আমার দেখা মতে 100Mbps পর্যন্ত নেট কানেক্টশন (বাংলাদেশে) দেখা যায়। আর এই স্পিডের উপরই আপনার লাইনের মাসিক বিল নির্ভর করবে। কানেক্টশন স্পিড যত বেশি হবে আপনি তত দ্রুত ব্রাউজিং, ডাউনলোডিং এবং আপলোডিং করতে পারবেন। যারা গেমার রয়েছেন তাদের জন্য এই স্পিড কোনো ফ্যাক্ট নয়। যেমন 2Mbps এর লাইনেও আপনি PUBG তে ৬০/৭০ পিং পাবেন এবং 5Mbps এর লাইনেও এই ধরণের পিং পাবেন।
আপনার জন্য সঠিক স্পিড কিভাবে নির্ধারণ করবেন? প্রথমে আপনার বাসায় কে কে নিয়মিত নেট ব্যবহার করবে সেটা দেখুন এবং তারপর তারা কি হেভি ইউজার না নরমাল ইউজার সেটা দেখুন। সর্বশেষে আপনি হেভি ইউজার কিনা সেটাও মাথায় রাখুন। ৪ জন সদস্যদের একটি বাসাতে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 2 কিংবা 3Mbps লাইন হলেই যথেষ্ট। আবার নিজে একা ব্যবহার করলে 1Mbps হলেও হয়। তবে আপনি যদি গেমের ডিক্সের দোকান চালান যেখানে আপনাকে সবসময় ডাউনলোডের উপ্রে থাকতে হয় তাহলে আপনি একা চালালেও কমপক্ষে 10Mbps এর লাইন লাগবে।

কপার ক্যাবল নাকি ফাইবার ক্যাবল?

এবার ক্যাবলের দিকে আসি। বাংলাদেশে আপনি দুই ধরণের নেট কানেক্ট লাইন পাবেন। একটি হচ্ছে কপার ক্যাবল বা CATলাইট আরেকটি হচ্ছে ফাইবার ক্যাবল। কপার ক্যাবল হচ্ছে নরমাল ক্যাবেল যেটায় একটি নিদির্ষ্ট স্পিড লিমিট থাকে। যেমন আপনি ৫০Mbps এর লাইন নিতে হলে আপনাকে বাধ্যতামূলকভাবে ফাইবার ক্যাবলই নিতে হবে। ফাইবার ক্যাবলে লাইনটি আলোর মাধ্যমে আপনার পিসিতে ইন্টারনেট সার্ভিস দিয়ে থাকে। আর ফাইবার ক্যাবলে আপনি কারেন্ট চলে গেলেও ইন্টারনেট সংযোগ পাবেন যেটা কপার ক্যাবলে পাবেন না। বলা বাহুল্য যে ফাইবার ক্যাবলের দাম অপেক্ষাকৃতভাবে অনেক বেশি।

কানেক্টশন রেশিও এবং আপলোড স্পিড

খেয়াল করলে দেখবেন যে একটি ISP এর কার্ডে প্যাকেজগুলোর যে স্পিড দেওয়া থাকে সেটা কিন্তু আসলে ডাউনলোড স্পিড। সেখানে সাধারণত (৯৫% ক্ষেত্রে) আপলোড স্পিড দেওয়া থাকে না। অনেকেই মনে করেন আমি তো কিছুই আপলোড করি না তাই আপনার আপলোড স্পিডের দরকার নেই। কিন্তু একটি নেট কানেক্টশনে ডাউনলোড স্পিডের পাশাপাশি সমান পরিমাণের বা সমান স্পিডের আপলোড স্পিডেরও প্রয়োজন রয়েছে। তা না হলে দেখবেন যে ২০Mbps এর লাইনেও কোনো গেম খেলতে গেলে ২০০/২৫০ পিং পাবেন!

আর কানেক্টশন রেশিও হচ্ছে কিছু কিছু নেট প্যাকেজে দেখবেন অফ আওয়ার / পিক আওয়ার হিসেবে সেট করা থাকে। যেমন সকাল ৮টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত নেট স্পিড 1Mbps থাকে কিন্তু রাত ১২টা থেকে সকাল ৮টা পর্যন্ত নেট স্পিড 5Mbps থাকে। এইরকম প্যাকেজের দামও সাধারণ 5Mbps এর লাইনের দামের থেকে কম হয়ে থাকে। আপনি যদি এই রকম কোনো প্যাকেজ নেবার চিন্তা করেন তাহলে সেটা যাতে আপনার কাজের টাইমটেবিলের সাথে খাপ খায় যাতে সেটার উপর খেয়াল রাখবেন।

উত্তম রাউটার নির্বাচন করুন!

এবার রাউটারের দিকে আসা যাক। বাসার সবাই সব ডিভাইসে নেট লাইন উপভোগ করার জন্য WiFi এর প্রয়োজন আর ওয়াইফাইয়ের জন্য আপনার চাই একটি রাউটার। অনেকেই রয়েছে ভালো স্পিডের নেট লাইন নিলেও রাউটারের ক্ষেত্রে কমপ্রোমাইজ করে বসেন এটা করা উচিত নয়। কারণ রাউটারের মাধ্যমেই আপনার ডিভাইসে ওয়াইফাই আসে আর তাই উত্তম রাউটার কেনা এবং ব্যবহার করা উচিত। বাজারে আপনি ৬০০ টাকা থেকে রাউটার পেয়ে যাবেন তাই বলে কি সবাই ৬০০ টাকার রাউটার ব্যবহার করবেন? অব্যশই নয়!
আবার লক্ষ্য করলে দেখবেন যে কোনো রাউটারে ১টি এন্টিনা আবার কোনো রাউটারে ২/৩/৪টি এন্টেনা থাকে। অনেকেরই ভূল ধারণা রয়েছে যে যত বেশি এন্টিনা থাকবে রাউটারটির WiFi সিগন্যাল তত দূর থেকে পাওয়া যাবে! এন্টেনার উপর আপনার রাউটারের WiFi এর Simontinously User স্পিড নির্ভর করে। আপনার বাসায় যদি ১০ জন এর উপরে নেট ইউজার থাকে তাহলে আপনার ৪ এন্টেনাওয়ালা রাউটারে যাওয়াই উত্তম তাহলে সবাই ন্যায্য স্পিড শেয়ার পাবে।

আমাদের গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের অফিসের ভেতরে যাবার পর আমি তাদের রাউটারটি দেখতে পাই। প্রমাণ সাইজের CPU কেইসের মতো বড় এই রাউটারে পোর্টের সংখ্যা ছিলো ৬২টি! আর এই রাউটারটির WiFi কে কর্পোরেশন অফিস থেকে প্রায় আফ কিলোমিটার দূরেও সিগন্যাল পাওয়া যায়!

সঠিক স্থানে রাউটারকে বসান!

আপনার বাসার রুমগুলোর অনুপাতে সঠিক স্থানে রাউটারকে বসান যাতে বাসার সবগুলো রুমে রাউটারের সিগন্যাল পাওয়া যায়। অনেকেই অভিযোগ করেন যে বাসার বাইরের রাস্তার ওপাশ থেকেও রাউটারের ভালো সিগন্যাল পাওয়া যায় কিন্তু বাসার ভেতরের কিছু রুমে রাউটারের খারাপ সিগন্যাল থাকে। এর কারণ হচ্ছে দেয়াল! দেয়ালে রাউটারের সিগন্যালটি বাধাগ্রস্থ হয়ে থাকে। আবার যারা উপরের ছাঁদ টিনশেডের তাদের জন্য এই সমস্যাটি হয় না!

শক্তিশালি WiFi পাসওর্য়াড দিন এবং এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন!

শক্তিশালি এবং সহজেই অনুমান করা যায় না এই রকম একটি WiFi পাসওর্য়াড সেট করুন। আর অবশ্যই অবশ্যই আপনার রাউটার কনফিগার পেজেরও পাসওর্য়াড দিয়ে রাখুন। মানে যে পেজে গিয়ে ওয়াইফাই পাসওর্য়াড সেট করবেন সেটার, এটা সাধারণত ১৬৮.০.০.১ হয় তবে রাউটার ভেদে এই এড্রেসটি ভিন্ন হতে পারে।
আর প্রিমিয়াম এন্টিভাইরাইস না ব্যবহার করতে পারলেও অন্তত পক্ষে ফ্রি এন্টিভাইরাস ব্যবহার করুন। কারন এখন ইন্টারনেট লাইন রয়েছে তাই ভাইরাস প্রবেশ প্রতিরোধে আপনার এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা উচিত। USB ডিক্স সিকুরিটি বা ব্রাউজার স্ক্যানার বা এই জাতীয় “খুচরা” এন্টিভাইরাস ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। আর এন্টিভাইরাসে অটোমেটিক আপডেট ফিচারটি বন্ধ করবেন না।

পরিস্কার রাখুন!

কম্পিউটার সহ রাউটারকে নিয়মিত পরিস্কার রাখুন। কম্পিউটার রুমে খাওয়াদাওয়া এবং ধুমপান থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে এসি রুমে কম্পিউটার ব্যবহার করুন। রাউটারের এন্টিনা নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করবেন না। আর প্রতি ৩ মাস অন্তর অন্তর রাউটার এডমিন পেজের পাসওর্য়াড পরিবর্তন করুন। আর ব্রাউজারকেও নিয়মিত আপডেট দিয়ে নিবেন।

Share This Article

Search