২০২১ সাল চলছে মানে ডিজিটাল বাংলাদেশের যুগে বসবাস করছি। এখন সবকিছুই হবে ডিজিটাল! তাহলে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য কেন আপনি স্টেশনে লম্বা লাইনে দাঁড়াবেন? অনান্য সেবা ডিজিটাল হবার মতো ট্রেনের টিকেট ক্রয় করার সার্ভিসটিও এখন অনলাইনে চলে এসেছে। অনেকেই জানেন না যে ২০১৩ সাল থেকেই অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার সেবাটি বাংলাদেশ রেলওয়ে চালু করে রেখেছে। আমরাই মাত্র কয়েক বছর হল এই সেবাটি ব্যবহার করতে শুরু করেছি কেবল। bd train ticket কিভাবে অনলাইনে কাটতে হয় সেটা আজ বিস্তারিত ভাবে পয়েন্ট টু পয়েন্ট এখানে দেখানো হবে।
অনলাইন থেকে ট্রেনের টিকেট আপনি বিকাশ, রকেট সহ কার্ডের মাধ্যমে কিনতে পারবেন। কেনার পর আপনাকে ট্রেনের টিকেটের একটি ডিজিটাল কপি দেওয়া হবে, তারপর আপনাকে ট্রেনের টিকেটের ডিজিটাল কপিটি জাস্ট প্রিন্ট করে নিয়ে যাত্রার সময় সাথে রাখতে হবে। ট্রেনের টিকেট চেকিংয়ের সময় প্রিন্ট কপিটি দেখালেই হবে! তো চলুন দেখে নেই কিভাবে অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটবেন।
কম্পিউটারের মাধ্যমে:
যারা মোবাইলের মাধ্যমে ট্রেনের টিকিট কাটতে চান তারা ২য় ধাপে চলে যান। আমরা এখন কম্পিউটারের মাধ্যমে কিভাবে bd train ticket কাটতে হয় সেটা দেখবো। এজন্য গুগল ক্রোম ব্রাউজার ব্যবহার করলে উত্তম।
১) প্রথমে www.esheba.cnsbd.com সাইটে চলে যান। এটা বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-টিকেটিং সার্ভিস ওয়েবসাইট। প্রথমে আমাদেরকে একটি একাউন্ট তৈরি করতে হবে, এজন্য উপরের রেজিস্টেশন বাটনে ক্লিক করুন।
২) রেজিস্টেশন উইন্ডো চলে আসবে। এখানে আপনার নাম, ইমেইল এড্রেস, মোবাইল নাম্বার এবং এই সাইটের জন্য একটি পাসওর্য়াড দিয়ে একাউন্ট খুলে ফেলুন।
৩) তারপর আপনার দেওয়া মোবাইল নাম্বারে একটি OTP কোড আসবে, সেটা এখানে বসিয়ে দিলেই রেজিস্টেশন সম্পন্ন হবে।
৪) এবার আপনার ইমেইল/ফোন এবং পাসওর্য়াড দিয়ে সাইটে লগইন করে ফেলুন। (পরের বার টিকেট কাটার সময় রেজিস্টেশন করতে হবে না, সরাসরি লগইন করলেই হবে। )
৫) প্রথম বার আপনার প্রোফাইলে আপনি চলে আসবেন। এখানে প্রথমবারের জন্য আপনাকে আপনার প্রোফাইলটি সেট করে নিতে হবে।
৬) এখানে আপনাকে আপনার এরিয়ার পোস্টাল কোড, আপনার জন্মতারিখ, লিঙ্গ, ঠিকানা এবং একটি আইডেন্টিফিকেশ নাম্বার দিয়ে প্রোফাইলটি আপডেট করতে হবে। NID নাম্বার অথবা NID না থাকলে বার্থ সার্টিফিকেইট নাম্বার দিয়ে প্রোফাইলটি আপডেট করতে হবে।
৭) আপডেট সঠিক ভাবে করতে পারলে ড্যাসবোর্ডের উপরে আপনার তথ্যগুলো দেখানো হবে:
৮) এবার ইসেবার হোমপেজে চলে আসুন।
হোমপেজে মাঝখানের ডানদিকে দেখবেন ছোট একটি বক্স রয়েছে, সেখান থেকেই আপনার ট্রেনের টিকিট কাটার কার্যক্রম শুরু করতে হবে।
Route ঘরে FROM অংশে ক্লিক করে যে স্টেশন থেকে যাত্রা শুরু করবেন সেটা খুঁজে বের করুন। TO ঘরে যে স্টেশনে নামবেন সেটা সিলেক্ট করুন।
এবার Date ঘরে ক্লিক করুন। আপনি ৫ দিন পরের পর্যন্ত টিকেট কাটতে পারবেন। ডেট সিলেক্ট করে নিয়ে Class ঘর থেকে এসি, স্নিগ্ধা, এস চেয়ার থেকে আপনার পছন্দের ক্লাসটি সিলেক্ট করে নিন।
এবার সিট সংখ্যা বেছে নিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে অনলাইনে টিকেট কাটার ক্ষেত্রে আপনি সর্বোচ্চ ৪টি সিট বুকিং করতে পারবেন। সব কিছু করা হয়ে গেলে Find বাটনে ক্লিক করুন।
আপনার সিলেক্টকৃত তারিখে যদি কোনো ট্রেন ওই রূটে যাত্রা করে তাহলে সেটার বিবরণ এখানে আপনি দেখতে পাবেন। ট্রেনটি আপনার পিকআপ স্টেশনে কখন আসবে; আপনার নামার স্টেশনে কখন পৌঁছাবে এবং টোটাল টিকেটের মূল্য এখানে দেখতে পাবেন। সবকিছু ঠিক থাকলে হলুদ রংয়ের Details বাটনে ক্লিক করুন।
ডিটেলইস বাটনে ক্লিক করার পর টিকেটটি ক্রয় করার ‘Purchase’ বাটনটি দেখতে পাবেন। এছাড়াও Availability ট্যাবে ক্লিক করার পর তিনটি শ্রেণীতে কতগুলো টিকেট এভেইলেবল রয়েছে সেটাও দেখতে পাবেন।
এই যে দেখুন এভাবে একটি শ্রেণীতেও কোনো টিকেট নেই সবস্থানে ০ দেখাচ্ছে তার মানে হচ্ছে উক্ত তারিখের সকল অগ্রিম টিকেট বুকিং হয়ে গিয়েছে।
টিকেট ক্রয় করার জন্য Purchase বাটনে ক্লিক করুন।
এবার টিকেটিং অটো এবং ম্যানুয়াল দুটো ভাবে দেওয়া থাকবে, অটোতে দিলে সিট অটোমেটিক নির্ধারিত হয়ে যাবে আর ম্যানুয়াল ট্যাব থেকে Available সিট পজিশন আপনি সিলেক্ট করে নিতে পারবেন।
সিট পজিশন সিলেক্ট করে দেওয়ার পর আপনি Buy Ticket অপশনে ক্লিক করবেন।
টার্ম চলে আসবে, I agree বাটনে ক্লিক করুন।
এবার টিকেটের মূল্য পরিশোধ করতে হবে। এ জন্য আপনি রকেট, বিকাশের মাধ্যমে মোবাইল ব্যাংকিং করে মূল্য পরিশোধ করতে পারেন অথবা কার্ডের মাধ্যমেও মূল্য পরিশোধ করতে পারেন।
বিকাশের মাধ্যমে টিকেটটি কিনে নিন।
সব কিছু ঠিক ঠাক মতো করতে পারলে অনলাইনে আপনি সফলভাবে অনলাইনে bd train ticket কাটতে পেরেছেন।
টিকেট কাটার ৫ মিনিটের মধ্যে আপনার ইমেইলে টিকেটের অনলাইন কপিটি চলে আসবে। এটাকে প্রিন্ট করে যাত্রার দিন সাথে রাখলেই চলবে।
মোবাইলের মাধ্যমে:
মোবাইলের মাধ্যমেও অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কাটার ব্যবস্থা রয়েছে। এক্ষেত্রে প্রথমে আপনাকে প্লেস্টোর থেকে বাংলাদেশ রেলওয়ের ই-সেবা অ্যাপটি আপনার অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনে ইন্সটল করে নিয়ে সেখান থেকে ট্রেনের অনলাইন টিকেট কেটে নিতে হবে। তো চলুন দেখে নেই মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে কিভাবে bd train ticket কাটবেন।
প্রথমে প্লেস্টোর থেকে Rail Sheba অ্যাপটি ইন্সটল করে নিন। তারপর অ্যাপটি চালু করুন।
আগে থেকে ইসেবা সাইটে একাউন্ট করা থাকলে এই অ্যাপে লগইন করে ফেলুন। আর একাউন্ট করা না থাকলে সাইন আপ অপশনে ট্যাপ করে রেজিস্টেশন করে নিন। তারপর লগইন করুন।
ইসেবা অ্যাপে আপনি হোমপেজে বেশ কয়েকটি অপশন দেখতে পাবেন। এদের মধ্যে ট্রেনের টিকেট কাটার জন্য উপরের প্রথম অপশন ‘Purchase’ য়ে ট্যাপ করতে হবে; ট্রেন সম্পর্কে তথ্য জানতে ‘Information’; আপনার নিজের ব্যক্তিগত ট্রেনের অনলাইন টিকেটের হিস্টোরি জানতে `History’ ইত্যাদি অপশন এখানে রয়েছে। উপরের একদম বাম দিকের হ্যামবার্গার মেন্যুতে ট্যাপ করলে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য এবং অ্যাপের অনান্য সেটিংস দেখতে পাবেন।
টিকেট কাটার জন্য পারচেজ অপশনে ট্যাপ করুন।
এখানে চারটি অপশন আসবে। From, To, Jouney ডেট এবং ফাইন্ড ট্রেন। প্রথমে আপনাকে From Station থেকে যে স্টেশন দিয়ে আপনি যাত্রা শুরু করবেন বা ট্রেনে উঠবেন সেটা সিলেক্ট করুন।
এবার যে স্টেশনে যাত্রা শেষ করবেন সেটা To Station অপশনে ট্যাপ করে সিলেক্ট করে ফেলুন।
আর ওয়েবসাইটের মতোই এখানেও আপনি বর্তমান দিন থেকে আগামী ৪ (চার) দিনের অগ্রীম টিকেট বুক করতে পারবেন।
সব তথ্য দেওয়া হয়ে গেলে সবুজ রংয়ের Search Train বাটনে ট্যাপ করুন।
আপনাকে সিলেক্টকৃত দিনের ওই রূটের সকল ট্রেন দেখানো হবে।
যে ট্রেনে যাত্রা করতে চান সেটার নিচের Class অপশন থেকে টিকেট শ্রেণী, আর Adult ও Child অপশন থেকে আপনার যাত্রী সংখ্যা সিলেক্ট করে দিন।
এবার নিচের Any Seat কিংবা Select Seat এর মধ্য থেকে যেকোনো একটিতে ট্যাপ করুন। Any Seat অপশনে ট্যাপ করলে সিস্টেম আপনাকে ট্রেনের সিট অটোমেটিকভাবে পজিশন সেট করে দিবে।
অথবা আপনি Select Seat অপশনে ট্যাপ করে আপনার সিট পজিশন নিজে নিজেই করে নিতে পারবেন।
সিট সিলেক্ট করা হয়েছে । এবার নিচের PAY NOW অপশনে ট্যাপ করে টিকেট বিল দেওয়া শুরু করতে হবে।
ট্রেনের অনলাইন টিকেট কাটার টার্ম চলে আসবে, এখান থেকে I Agree বাটনে ট্যাপ করুন।
ট্রেনের টিকেটের মূল্য আপনি এখান থেকে কার্ড কিংবা বিকাশ বা রকেটের মাধ্যমে পে করতে পারবেন।
টাকার পরিশোধ করার ১০ মিনিটের মধ্যে অ্যাপের Journey History সেকশনে আপনার এই টিকেটটি কনফার্ম করা হবে, তখন সেখানে যাত্রার নাম তারিখ আর ইস্যু ডেট সহ চলে আসবে।
এবং টাকা পরিশোধ করার ৩০ মিনিটের মধ্যে আপনার ইমেইলে ট্রেনের অনলাইন টিকেটটি ইমেইল করা হবে। আপনাকে এবার টিকেটটি কালার প্রিন্ট করে নিয়ে যাত্রার দিন সাথে রাখতে হবে এবং টিটি ট্রেন টিকেট চেক করার সময় এই প্রিন্ট কাগজটি দেখালেই চলবে।
গ্রামীণফোন GPAY:
অফিসিয়াল অ্যাপ এবং সাইট ছাড়াও গ্রামীণফোনের GPAY সার্ভিসের মাধ্যমেও ট্রেনের টিকেট কাটা যাচ্ছে। এক্ষেত্রে আপনার একটি গ্রামীণফোন সংযোগ থাকা লাগবে। আপনার গ্রামীণফোন সংযোগ থেকে *৭৭৭# ডায়াল করে প্রথমে আপনাকে GPAY ওয়ালেট তৈরি করে নিতে হবে। বিস্তারিত জানতে গ্রামীণফোনের ওয়েবসাইটে থেকে ঘুরে আসুন এখানে ক্লিক করে।
বি.দ্র.
১) অনলাইনে টিকেট সেকশনটি দুভাগে বিভক্ত। একটি হচ্ছে ইসেবা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে কেনা টিকেট এবং আরেকটি হচ্ছে মোবাইল অ্যাপ দিয়ে কেনা টিকেট। এখন মোবাইল অ্যাপ দিয়ে অধিকাংশ মানুষ অনলাইনে ট্রেনের টিকেট কেটে থাকে বিধায় অনেক সময়ই আপনি কাংখিত ট্রেনের টিকেটটি মোবাইল অ্যাপে বুকিং করতে পারবেন না।
মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে উপরের বার্তাটি শো করলে আপনি কম্পিউটারের মাধ্যমে ইসেবা সাইটে গিয়ে ট্রাই করে দেখতে পারেন।
২) উল্লেখ্য যে অনলাইনের মাধ্যমে টিকেট কাটার জন্য কিছু এক্সট্রা % ফি দিতে হয়।
৩) ইমেইল থেকে টিকেটের অনলাইন কপিটি সবসময় কালার প্রিন্ট করার চেষ্টা করবেন।
৪) অনলাইন কপি প্রিন্ট করে নিয়েই সরাসরি ট্রেনে যাত্রা শুরু করা যাবে, আলাদা করে স্টেশনে অনলাইন কপি দেখিয়ে মূল ট্রেনের টিকেট সংগ্রহ করার ঝামেলা বর্তমানে নেই, তবে আগে এই ঝামেলাটা ছিলো।
আনঅফিসিয়াল স্মার্টফোন রেজিষ্টার করবেন যেভাবে. . . .
NID কার্ডের জন্মতারিখ, জন্মস্থান, ছবি ও স্বাক্ষর পরিবর্তন করার গাইডলাইন!