ইন্টেলের 300 সিরিজ মাদারবোর্ড পরিচিতি

আপনারা আশা করি ইতিমধ্যেই ইন্টেলের ৯তম প্রজন্মের প্রসেসরগুলোর দাম লিক হওয়ার ব্যাপারটি জেনে গিয়েছেন। আর আজ আমি চলে এলাম ইন্টেলের অষ্টম প্রজন্মের 300 সিরিজের মাদারবোর্ডগুলোর মাঝে তুলনামূলক কিছু কথা বলার জন্য। আর একটি কথা উল্লেখ্য যে আগামীতে ৯তম প্রজন্মের প্রসেসরের সাথে মাদারবোর্ডও আসবে কিন্তু আপনি এই অষ্টম প্রজন্মের মাদারবোর্ডেও ৯তম প্রজন্মের প্রসেসরগুলো চালাতে পারবেন, কোনো সমস্যা হবে না। বাজারে বর্তমানে ইন্টেলের অষ্টম প্রজন্মের প্রসেসর চলছে যা গতবছরের (২০১৭) অক্টোবরে বাজারে ছাড়া হয়েছিলো। তবে অষ্টম প্রজন্মের নতুন 300 সিরিজের মাদারবোর্ডগুলোর সম্পূর্ণ লাইনআপ মুক্তি শেষ হয় এপ্রিল , ২০১৮ সালে। প্রথম দিকে অষ্টম প্রজন্মের প্রসেসরের জন্য কেবলমাত্র আপনি Z370 মাদারবোর্ডটিই একমাত্র অপশন হিসেবে পেতেন কিন্তু এখন আপনি বাজারে ইন্টেলের অষ্টম প্রজন্মের H310, B360, H370, Z370 মাদারবোর্ডগুলোকে পাবেন।  আর কেবল গতকাল বিশ্বব্যাপী অফিসিয়ালি Z390 মাদারবোর্ডটি রিলিজ পেল। এদের মধ্যে আপনি কোনটি কিনবেন কেন কিনবেন সেটা নিয়ে আজ আলোচনা করবো। তো চলুন ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে সরাসরি পোষ্টে চলে যাই:

Z390 vs. Z370 vs. H370 vs. B360 vs. H310

পুরোনো পিসি থেকে যদি নতুন অষ্টম প্রজন্মের “Coffee Lake” প্রসেসরে আপগ্রেড করতে চান কিংবা নতুন অষ্টম প্রজন্মের প্রসেসর যদি কিনতে চান তাহলে আপনার চাই একটি অষ্টম প্রজন্মের মাদারবোর্ড। কারণ এই প্রজন্মের প্রসেসরগুলো আগের প্রজন্মের মাদারবোর্ডে সার্পোট করবে না বা খাপ খাবে না। মানে সম্প্রতিক সময়ের Skylake এবং Kaby Lake ১০০ এবং ২০০ সিরিজের মাদারবোর্ডেও সার্পোট করবে না। তো আপনার Z390 vs. Z370 vs. H370 vs. B360 vs. H310 এদের মধ্যে যেকোনো একটি মডেল কে বেছে নিতে হবে যদি আপনি অষ্টম প্রজন্মের এবং আপকামিং নবম প্রজন্মের প্রসেসরগুলো চালাতে চান। ৩১০ থেকে শুরু করে ৩৯০ মানে হচ্ছে মডেল নাম্বার যত উপরের দিকে যাবেন, ফিচার ততই বেশি থাকবে এবং দামের দিকটা ততটাই উপরে উঠতে থাকবে।  আর আজকের পোষ্টে নিচের দিক থেকে মানে বাজেট মাদারবোর্ড থেকেই শুরু করছি।

H310

 

ইন্টেলের অষ্টম প্রজন্মের 300 সিরিজের মাদারবোর্ডের এন্ট্রি লেভেলের চিপসেট হচ্ছে এই H310 । যারা অষ্টম প্রজন্মের প্রসেসরগুলো চালাতে চান কিন্তু মাদারবোর্ডে অতিরিক্ত এক্সট্রা ফিচার চান না কিংবা যারা বাজেটের মধ্যে অষ্টম প্রজন্মের পিসি ব্যবহার করতে চান তাদের জন্য এই H310 চিপসেটের মাদারবোর্ড হচ্ছে একমাত্র অপশন। H310 চিপসেটে আপনি কি কি পাচ্ছেন? H310 মাদারবোর্ডে আপনি পাবেন ১০টি USB পোর্টস যা USB 2.0, 3.0, 3.1 এইসব আলাদা কনফিগারেশনে বিভক্ত থাকবে। থাকছে 4টি SATA পোর্টস যেখানে আপনি স্টোরেজ ড্রাইভগুলোকে ব্যবহার করতে পারবেন। রয়েছে 6 টি PCI-Express 2.0 Lanes যেখানে আপনি ইউএসবি, ইথারনেট, M.2 ইত্যাদি PCIe কম্পোনেন্টগুলোকে ব্যবহার করতে পারবেন। আর সর্বশেষে রয়েছে প্রতি চ্যানেলের জন্য একটি DIMM Slot ।  মানে এই মাদারবোর্ডে আপনি PCIe 3.0, RAID অপশনগুলো এবং Intel Optane Memory টেকনোলজির মতো উন্নত ফিচারগুলো পাবেন না। শুরুতেই বলেছি যারা বাজেটের মধ্যে অষ্টম প্রজন্মের পিসি বিল্ড করতে চান এবং যারা সিম্পলের মধ্যে থাকতে চান তাদের জন্য এই মাদারবোর্ডটি তৈরি করা হয়েছে। আর বাংলাদেশে এই মাদারবোর্ডের দাম শুরু হবে ৫ হাজার ৯০০ টাকা থেকে। গিগাবাইট ব্রান্ডের H310 এর দাম ৭ হাজার টাকা হবে।

B360

 

নিম্ন-মধ্য বাজেটের ইন্টেলের অষ্টম প্রজন্মের মাদারবোর্ড চিপসেট হচ্ছে এই B360 । এই মাদারবোর্ডে আপনি পাবেন ১২টি USB পোর্টস যা 2.0 / 3.0 / 3.1 কনফিগারেশনে বিভক্ত থাকবে। পাবেন স্টোরেজ ড্রাইভ ব্যবহার করার জন্য ৬টি SATA পোর্টস। পাবেন ১২টি PCI-Express 3.0 Lanes, প্রতি চ্যানেলে 2 DIMM Slot ব্যবহার করার সুযোগ থাকবে এবং থাকবে ইন্টেল Optane Memory ব্যবহারের সুযোগ। যদিও এই বাজেটে ইন্টেল Optane Memory ব্যবহার করা যাবে না কারণ এগুলো দাম তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি তবে আপনি যদি ভবিষ্যৎতে সুপার ফাস্ট Intel Optane Memory তে আপগ্রেড করতে চান তাহলে B360 মাদারবোর্ডে সে সুযোগটি আপনি পাবেন। বাংলাদেশে B360 মডেলের মাদারবোর্ডগুলো দাম শুরু হয় ৭ হাজার ৬০০ টাকা থেকে।

H370

মধ্য বাজেটের অষ্টম প্রজন্মের মাদারবোর্ড হচ্ছে এই H370 । এই মাদারবোর্ডে আপনি পাবেন ১৪টি USB পোর্টস যা 2.0 / 3.0 / 3.1 কনফিগারেশনে থাকবে। স্টোরেজ ড্রাইভ ব্যবহার করার জন্য পাবেন ৬টি SATA পোর্টস। পাবেন 20 টি PCI-Express 3.0 Lanes, প্রতি চ্যানেলে 2টি DIMM Slot এবং Optane Memory ব্যবহার করার সুযোগ। তো B360 মাদারবোর্ডের থেকে এটা পার্থক্য হচ্ছে এখানে আপনি বেশি পরিমাণের USB পোর্টস এবং PCI-E 3.0 Lanes পাবেন। এই মাদারবোর্ডটির দাম বাংলাদেশে ১১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে থাকে। অষ্টম প্রজন্মের মধ্য বাজেটের মাদারবোর্ড হওয়ায় আপনার বাজেটে যদি থাকে তাহলে সরাসরি এই H370 চিপসেটে আপনি চলে আসতে পারেন।

Z370

 

উল্লেখ্য যে H370 মাদারবোর্ডের সাথে Z370 মাদারবোর্ডের তেমন কোনো পার্থক্য নেই। এই মাদারবোর্ডে আপনি পাবেন ১৪টি USB পোর্টস যা 2.0 / 3.0 / 3.1 কনফিগারেশনে থাকবে। স্টোরেজ ড্রাইভ ব্যবহার করার জন্য পাবেন ৬টি SATA পোর্টস। পাবেন 24 টি PCI-Express 3.0 Lanes, প্রতি চ্যানেলে 2টি DIMM Slot এবং Optane Memory ব্যবহার করার সুযোগ। কিন্তু হাই এন্ড বাজেটের এই মাদারবোর্ডে আপনি পাবেন ওভারক্লকিং ফিচার যা অষ্টম প্রজন্মের নিচের সারির কোনো মাদারবোর্ডেই পাবেন না। তাই আপনি যদি অষ্টম প্রজন্মের ওভারক্লকিং ফিচারগুলো প্রসেসর কিনে থাকেন (Unlocked K-Series Chip) তাহলে আপনাকে অবশ্যই Z370 মাদারবোর্ডটি ব্যবহার করতে হবে। তাই আপনি যদি ওভারক্লকিং ফিচারটি না চান কিংবা আপনার প্রসেসরটি ওভারক্লকিং ফিচারের না হয়ে থাকে তাহলে আপনার জন্য H370 মাদারবোর্ডটিই বেস্ট হবে। এই মডেলের মাদারবোর্ডের দাম বাংলাদেশে ১২ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু হয়ে মেনুফ্যাকচার ব্রান্ড ভেদে ২৫/২৬ হাজার টাকা পর্যন্ত হতে পারে।

Z390

 

300 সিরিজের এই মাদারবোর্ডটি একেবারেই নতুন। তাই বাংলাদেশে আগামী ১/২ মাসের আগে এই চিপসেটের মাদারবোর্ড সিরিজ আপনি পাবেন না। এই মাদারবোর্ডটি ইন্টেলের আপকামিং 9th জেনারেশনের প্রসেসরের জন্য লক্ষ্য রেখেই বিল্ড করা হয়েছে। অষ্টম প্রজন্মের প্রসেসরও আপনি এই মাদারবোর্ডে চালাতে পারবেন। এই মাদারবোর্ডে পাবেন ২৪টি PCIe 3.0 Lanes, ১৪টি USB পোর্টস যাদের মধ্যে থাকবে ২য় প্রজন্মের USB 3.1 পোর্টের সার্পোট। স্টোরেজ ড্রাইভ ব্যবহার করার জন্য পাবেন ৬টি SATA পোর্টস। পাবেন 2/2 Dual Memory Channels, Intel Optane Memory, Intel Rapid Storage Technology (RST), পাবেন ইন্ট্রিগ্রেটেড 802.11ac WiFi MAC, ইন্ট্রিগ্রেটেড SDXC (SDA 3.0) সার্পোট এবং ওভারক্লকিংয়ের সাপোর্ট।  বাংলাদেশে পুরোপুরি ভাবে এই Z390 মাদারবোর্ডটি আসলে তারপরে এই বোর্ডটি নিয়ে আমি আলাদা একটি বিস্তারিত পোষ্ট করবো।

 

এই ছিলো ইন্টেলের অষ্টম প্রজন্মের 300 সিরিজের মাদারবোর্ডগুলো। এখন আমাদেরকে প্রয়োজন এবং বাজেট অনুসারে সঠিক মাদারবোর্ডটি কিনে ফেলতে হবে। তবে একটি জিনিস খেয়াল করবেন তা হলে ইন্টেলের এই চিপসেটগুলোতে যে যে ফিচার দেওয়া রয়েছে সেগুলো কয়েকটি ফিচারকে আল্টিমেইটলি নাও পেতে পারেন। কারণ ম্যানুফেকচার ব্রান্ড অনেকসময় দাম কমানোর জন্য সে সকল ফিচারগুলো মাদারবোর্ড থেকে উঠিয়ে নিয়ে থাকে। তাই কোনো মাদারবোর্ড কেনার সময় ম্যানুফেকচার ব্রান্ডের কনফিগারেশনটি ভালো করে দেখে নিবেন। আর সে জন্যই একই মাদারবোর্ড ম্যানুফেকচার ব্রান্ডের ভেদাভেদের কারণে বিভিন্ন দামের হয়ে থাকে। অন্যদিকে আপনি যদি বাজেট পিসি বিল্ড করে থাকেন কিংবা অষ্টম প্রজন্মের পেন্টিয়াম ৪ বা ডুয়াল কোর এর মতো এন্ট্রি লেভেলের প্রসেসর ব্যবহার করেন তাহলে আপনার জন্য H310 মাদারবোর্ডটিই যথেষ্ট হবে। তার মানে এই নয় যে এই প্রসেসর দিয়ে আপনি B360 মাদারবোর্ড ব্যবহার করতে পারবেন না, হ্যাঁ অবশ্যই পারবেন কিন্তু আপনার প্রসেসরটি ততটা শক্তিশালি নয় তাই শুধু শুধু টাকা খরচ করে কি লাভ? অন্যদিকে আপনি যদি অষ্টম প্রজন্মের কোর আই ৩ বা আই ৫ প্রসেসর ব্যবহার করেন তাহলে আপনাকে অন্তত B360 মাদরবোর্ডটি ব্যবহার করা উচিত। কারণ এই প্রসেসরগুলো বেশ পাওয়ারফুল আর B360 বা H370 এই প্রসেসরের জন্য সেরা চয়েজ হবে। কিন্তু বাজেট টাইট থাকলে H310 তেও চলে আসতে পারেন কিছু করার নেই তবে আমি রেকোমেন্ড করবো এটলিস্ট B360 টি ব্যবহার করার জন্য। আর কোর আই ৭ ব্যবহার করলে চোখ বন্ধ করে H370 ব্যবহার করবেন কারণ আই ৭ এর পারফরমেন্সের সাথে H310 বা B360 খাপ খাবে না, আরেকটি কথা হলো আপনার প্রসেসরটি যদি i3, i5, i7 এর আনলকড মানে ওভারক্লকিং ফিচারের হয়ে থাকে তাহলে Z370 মাদারবোর্ড আপনাকে অবশ্যই ব্যবহার করতে হবে যদি ওভারক্লকিং ফিচারটি উপভোগ করতে চান তবে। আর অদূর ভবিষ্যৎতে যদি নবম প্রজন্মের প্রসেসর ব্যবহার করার প্ল্যান থাকে তাহলে আর কিছুদিন অপেক্ষা করে বাংলাদেশে Z390 আসার পর এটা কিনে নেওয়াই আপনার জন্য সেরা হবে।

যারা এ এম ডি রাইজেন প্রসেসরের জন্য মাদারবোর্ড খুজছেন তারা চাইলে পড়ে আসতে পারেন এই আর্টিকেলটি

Share This Article

Search