ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সের জন্য সেরা মর্ডান গেমসের প্রথম পোষ্টেই আমি বলেছিলাম যে সে পোষ্টে যদি ভালো সাড়া পাই তাহলেই এর ২য় পর্ব আমি নিয়ে আসবো। আর আপনারা আপনাদের কথা রেখেছেন আমিও আমার কথা রাখছি। যারা প্রথম পর্বটি দেখেন নি তাদের জন্য বলছি, আমাদের অনেকের পিসিতেই গ্রাফিক্স কার্ড নেই, সাধারণত ডিজাইনার এবং হেভি বা প্রো গেমার না হলে গ্রাফিক্স কার্ড লাগেও না! আমি এখানে এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ডের কথা বলছি।
এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ড না থাকলে ডেক্সটপ বা ল্যাপটপ যেখানেই হোক সেখানে ইন্ট্রিগেটেড বা ইন্টারনাল গ্রাফিক্স কার্ড থাকবে, যেটা অধিকাংশ সময়ই হয় Intel HD গ্রাফিক্স সিরিজ। আর বলা বাহুল্য যে হেভি গ্রাফিক্সের গেমসগুলো কিন্তু এই Intel HD গ্রাফিক্স সিরিজ অনেক সময়ই সার্পোট করে না। আর সেখানেই আমার এই পোষ্ট। এই পোষ্ট সিরিজ থেকে আপনি আপনার Intel HD গ্রাফিক্সের পিসি বা ল্যাপটপের জন্য সেরা গেমসের লিস্ট পাবেন।
আর বরাবরের মতোই গেমসগুলোকে আমার ব্লগিং ল্যাপটপে ট্রাই করে দেখা হয়ে যে যেখানে চলে কিনা। আমার ল্যাপটপে চললে আপনাদের ডেক্সটপ বা ল্যাপটপেও গেমটি আরামসে চলবে। আমার ল্যাপটপের কনফিগারেশন হচ্ছে:
> 2.0 গিগাহার্জের কোর আই ৩ পঞ্চম জেনারেশন প্রসেসর
> ২ গিগাবাইটের Intel HD 5500 গ্রাফিক্স কার্ড
> 4 গিগাবাইট র্যাম (DDR3)
এখন লক্ষ্য রাখতে হবে যে, নুন্যতম 4 গিগাবাইট র্যাম যাতে আপনার পিসিতে থাকে। কারণ এর নিচে থ্রিডি গেমস খেলার কথা ভাবাই যায় না, উইন্ডোজ ১০ অপারেটিং সিস্টেম ভালোমতো কাজ করতে গেলেও 4 গিগাবাইট র্যাম থাকা প্রয়োজন!
গত পোষ্টের ফেসবুক কমেন্টে একজন বলেছিলেন যে, তার Intel HD কার্ডের পিসি নাকি বর্তমানের অধিকাংশ গেমসই নাকি বেশ ভালোই চলে। আমার পোষ্টকে ফালতু বলেছেন তিনি। এখানে একটা কথা লক্ষ্য করবেন। একটি থ্রিডি গ্রাফিক্সের গেমস কিন্তু শুধুমাত্র আপনার পিসি গ্রাফিক্স কার্ডের উপর ভিক্তি করে চলে না, আপনার প্রসেসর, র্যাম এবং মাদারবোর্ডের উপরেও কিন্তু গেমস চলার অনেক ভূমিকা থাকে।
এখন আপনার পিসিতে Intel HD কার্ড রয়েছে কিন্তু র্যাম রয়েছে ১৬ গিগাবাইট, প্রসেসর রয়েছে অষ্টম প্রজন্মের আই ৭ আর মাদারবোর্ডও রয়েছে ভালো তাহলে সেখানে ইন্টেল এইচডি থাকার পরেও অনেক গেমসই বেশ ভালোই চলবে।
Metro Exodus
Resolution: 1380 x 768
Graphic Settings: Lowest + Mod
FPS: Min 15 – Max 45
প্রথমে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম! ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সে কিভাবে ২০১৯ সালের একটি হেভি গ্রাফিক্স ওয়ালা গেম (যেটার আবার RTX ফিচারও রয়েছে) চলে? উত্তর হচ্ছে “খেলার মতো” স্পিড না পেলেও গেমটি গেমওভার আপনি ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সে করতে পারবেন। তবে এর জন্য আলাদা করে Low Config ফাইল লাগবে যেটা উপরের ভিডিও Description বক্সে দেওয়া আছে। আর মনে রাখবেন এই গেমটি ৮ গিগাবাইট র্যামের নিচে না চালানোই বেটার! মেট্রো সিরিজের তৃতীয় গেম এটি আর যারা আগের দুটি গেম খেলেননি তাদের কে বলবো কাহিনী বোঝার জন্য আগের দুটি গেম প্রথমে খেলে আসুন যেগুলোও ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সে অনায়াসেই চলবে (Redux ভার্সন সহ)।
Resident Evil 7
Resolution: 720p
Graphic Settings: Very Low
FPS: Min 10 – Max 25
রেসিডেন্ট ইভিল সিরিজের সম্প্রতি কালের জনপ্রিয় গেমটি হলো রেসিডেন্ট ইভিল ৭ । রেসিডেন্ট ইভিল ৪ গেমটির পর সিরিজের অন্য কোনো গেম জনপ্রিয় না হওয়ায় সিরিজটি ডুবতে বসেছিলো। কিন্তু ৭ গেমটির মাধ্যমে সিরিজে একটু অন্যরকম ভয় অন্যরকম স্বাদ আনা হয় আর তাতেই কেল্লা ফতে গিয়েছে! আর মজার ব্যাপার হলো এই গেমটিকে আপনি ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সেও খেলে নিতে পারবেন! আর মনে রাখতে হবে যে রেসিডেন্ট ইভিল সিরিজের এটাই সর্বশেষ গেম যেটাকে ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সে আপনি খেলতে পারবেন। কারণ Resident Evil 2 (remake) গেমটি ইন্টেল এইচডি তে ৩/৪ FPS পায়।
Battlefield: Bad Company 2
https://www.youtube.com/watch?v=McXJth_61p4
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 22 – Max 46
ব্যাটলফিল্ড গেমস সিরিজের সবথেকে সেরা Fan Favorite গেম হচ্ছে Bad Company 2 । গেমটি ২০১০ সালে রিলিজ করা হয়, আর নামের মতোই গেমটি Bad Company গেমের ডাইরেক্ট সিকুয়্যাল হিসেবে মুক্তি দেওয়া হয়েছিলো। গেমটি তৈরি করা হয়েছে Frostbite 1.5 ইঞ্জিণ দিয়ে তাই ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সের পিসিতেও মোটামুটি গ্রাফিক্স দিয়ে আপনি গেমটিকে অনায়াসে খেলতে পারবেন। তবে লো গ্রাফিক্স দিলে বেশ ভালোই FPS পাবেন আপনি।
Mafia II
Resolution: 720p
Graphic Settings: Low
FPS: Min 22 – Max 40
মাফিয়া ২ গেমটি খেলেননি এমন লোক খুবই কম রয়েছে! গডফাদার গেমের মতোই এই গেমটি একজন মাফিয়া কর্মীর জীবনী নিয়ে কাহিনী বানিয়েছে EA গেমস। আর কাহিনীর সাথে সাথে এর গ্রাফিক্স ও বেশ ভালো। ২০১০ সালের হিসেবে তো ভালোই। আর এটা কিন্তু একটি ওপেন ওয়ার্ল্ড একশন এডভেঞ্চার গেম মানে জিটিএ এর মতো। যারা যারা এখনো এই গেমটি খেলেননি তারা এক্ষুনিই গেমটি খেলে নিতে পারেন। গেমটির সিকুয়্যাল মাফিয়া ৩ ও বাজারে চলে এসেছে তবে সেটা বেশ হেভি একটি গেম। ২০১০ সালের হলেও Mafia II গেমটি এনভিডিয়া গ্রাফিক্সের জন্য অপটিমাইজ, তাই Intel HD গ্রাফিক্সেরও আপনাকে লো গ্রাফিক্স সেটিংসয়ে গেমটি খেলতে হবে।
Sleeping Dogs
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 17 – Max 32
জিটিএ সিরিজের পর ওপেন ওয়ার্ল্ড গেম খেলে সবথেকে বেশি মজা পেয়েছি Sleeping Dogs গেমটি খেলে। মনে করুন একটি জিটিএ গেমকে বানানো হয়েছে চাইনিজ পটভূমি এবং চাইনিজ প্লেয়ার কে নিয়ে, তাহলেই এই গেমটির স্বাদ আপনি কল্পনা করতে পারবেন। সরাসরি Shoot and Run এর থেকে গেমটিতে চাইনিজ কুংফু বা Hand-to-hand কমবাট এর ব্যবহার বেশি রয়েছে আর সেটাই গেমটির একটি ইউনিজ ফিচার। এ ছাড়াও হংকংয়ের ভাষায় গান শোনার অভিজ্ঞতাও আপনি গেমটিতে অর্জন করবেন। ২০১২ সালে গেমটি রিলিজ হলেও পরবর্তীতে ২০১৪ সালে গেমটির Remastered এডিশন বের হয়, আর বর্তমানের এই এডিশনটি স্ট্রিমে মাত্র ১০ ডলারে বিক্রি হচ্ছে।
Life is Strange (Series)
(Life is Strange)
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 20 – Max 31
(Life is Strange: Before The Storm)
Resolution: 720p
Graphic Settings: Low
FPS: Min 25 – Max 40
(Life is Strange 2)
Resolution: 720p
Graphic Settings: Low
FPS: Min 17 – Max 32
ভিডিও গেমে ছায়াছবির মতো স্বাদ পেতে চান তাহলে এই সিরিজের গেমসগুলোকে খেলে দেখতে পারেন। Life Is Strange হচ্ছে একটি এপিসোড ভিক্তিত গ্রাফিক্স এডভেঞ্চার ভিডিও গেম। গেম সিরিজটি নির্মাণ করেছে Dontnod Entertainment আর পাবলিশ করেছে Sqaure Enix । সিরিজের প্রথম গেমে আপনি Max Caulfield নামের একজন ১৮ বছর বয়সী ফটোগ্রাফি স্টুডেন্ট এর ভূমিকায় খেলবেন। যে কিনা সময়কে কনট্রোল করতে পারতো মানে Rewind Time এর ক্ষমতা তার ছিলো। এই ক্ষমতা বলে সে জানতে পারে যে তার শহরে একটি ভয়াবহ ঘুর্ণিঝড় আসছে আর সে তার শহরকে তার পরিবার এবং বন্ধুকে বাঁচানোর কাহিনী নিয়েই এই গেমটি। Life is Strange : Before The Storm গেমটিতে ম্যাক্স এর বন্ধু Chloe Price এর ভুমিকায় খেলবেন আর Life is Strange 2 গেমটিতে আপনি নতুন ক্যারেক্টার এবং নতুন পটভূমি পাবেন।
Mirror’s Edge
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 16 – Max 36
বেশ পুরোনো গেম এটি, ২০০৮ সালের শেষের দিকে এই গেমটি মুক্তি পায়। আর তাই Intel HD গ্রাফিক্সে খেলতে তেমন বাগ পেতে হবে না। যারা পার্কআউট স্টাইলের মুভমেন্ট পছন্দ করেন তাদের এই গেমটি বেশ ভালো লাগবে। আর EA এর গেম বলে কথা! 720p রেজুলেশনে মিডিয়াম গ্রাফিক্সে গেমটিতে ২০ থেকে ৩০ মতো FPS পাবেন, আর লো সেটিংয়ে কম রেজুলেশনে খেললে ৫০ FPS পর্যন্ত পেয়ে যেতে পারেন।
Modern Warfare 3
https://www.youtube.com/watch?v=npll_0_ZxlE
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 28 – Max 60
এই গেমটি নিয়ে নতুন করে বলার কিছু নেই। ২০১১ সালের মর্ডান ওয়ারফেয়ার তথা কল অফ ডিউটির সাব সিরিজের ৩য় গেম এটি। আর গেমটি সুনামের সাথে সাথে বেশ দুনার্মও কামাই করেছে! কারণ এতে একটি মিশন থাকে যেখানে আপনাকে রাশিয়ান সন্ত্রাসী হয়ে একটি শপিং মলের সকল মানুষের উপর গুলিবর্ষণ করতে হয়। তবে মজার ব্যাপার হলো একটু বেশি র্যাম থাকলেই আপনি Intel HD গ্রাফিক্সেও গেমটিতে 60FPS পেতে পারেন! আরো মজার ব্যাপার হলো গেমটি আমি পেন্টিয়াম ৪ পিসিতেই গেম ওভার দিয়েছিলাম সেকালে!
Just Cause 2
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 28 – Max 50
ওপেল ওয়ার্ল্ড একশন এডভেঞ্চার (মানে জিটিএ এর মতো) গেমস যদি আপনার পছন্দ হয়ে থাকে তাহলে Just Cause সিরিজের সবগুলো গেমই আপনার কাছে ভালো লাগবে। সিরিজের ২য় গেম পর্যন্ত আপনি Intel HD গ্রাফিক্সের হাই সেটিংস দিয়ে অনায়াসেই খেলতে পারবেন। তবে আর যাই করেন না কেন, গ্রাফিক্স সেটিংসের Shadow আর Motion Blur এই দুটা জিনিস অন করে খেলবেন, তাহলে গেমটির আসল গ্রাফিক্স মজা বুঝতে পারবেন। আমার ল্যাপটপে আমি এই গেমটি কিছুদিন আগেও আরেকবার গেম ওভার দিয়েছিলাম। মিডিয়াম গ্রাফিক্সে আমি ৫০ থেকে ৬০ FPS পেয়েছি। তবে বেশি একশনপূর্ণ সিনে FPS কমে গিয়ে 30 এর নিচে চলে গিয়েছিলো বৈকি।
Farcry 3
Resolution: 1280 X 720
Graphic Settings: Low
FPS: Min 18 – Max 33
ফারক্রাই সিরিজের ৩য় গেম হলেও সিরিজটি জনপ্রিয় হয় মূলত ফারক্রাই ৩ গেমটি দিয়েই। বিশেষ করে ভিলেন Vaas এবং ১৮+ জিনিসপাতি আর অসাম গ্রাফিক্সে জন্যই গেমটি মেইনস্ট্রিম গেমারদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠে। ২০১২ সালের শেষের দিকে মুক্তি পেলেও এই গেমটির গ্রাফিক্স দেখলে আজও আপনি অবাক হবেন। আর আমার কনফিগারেশনে ফার ক্রাই সিরিজের শেষ খেলার যোগ্য গেমসও হচ্ছে এটি। আপনি Intel HD গ্রাফিক্সে Farcry 4 চালাতে পারবেন ঠিকই কিন্তু খেলতে পারবেন না কারণ FPS পাবে ৪ থেকে ৬/৭!
Saints Row : The Third
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 20 – Max 38
ফারক্রাই সিরিজের মতোই এই Saints Row সিরিজটি প্রথম জনপ্রিয় হয় এর তৃতীয় সংষ্করণ Saints Row 3 গেমটির মধ্য দিয়েই। আর জিটিএ এর মতোই এটাও হচ্ছে একটি Open World একশন এডভেঞ্চার গেম কিন্তু এটা জিটিএ এর থেকে বেশ আলাদা। গেমটি ২০১১ সালে রিলিজ হলেও এর গ্রাফিক্স বেশ কড়া! বিশেষ করে যারা এই যুগে ভাইস সিটি খেলেন তাদের কাছে তো কড়া হবেই!
The Saboteur
Resolution: 720p
Graphic Settings: Medium
FPS: Min 17 – Max 28
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পটভূমির উপর Open world একশন একভেঞ্চার গেম হচ্ছে এটি। আর বলা বাহুল্য যে আপনাদের অনেকেই গেমটি এখনো খেলেননি। কারণ গেমটি তেমন জনপ্রিয় হয়নি। কিন্তু আমার কাছে ব্যক্তিগতভাবে গেমটি একটি মাস্টারপিস। জিটিএ সিরিজের কোনো গেম যদি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের উপর কাহিনী করে নির্মিত হতো তাহলে এরকমই হতো, আর EA গেম বলে কথা!