রেসিডেন্ট ইভিল গেমস সিরিজটি ইদানিংকালে বেশ সমস্যার মধ্য দিয়েই যাচ্ছিলো, কিন্তু গত বছরের Resident Evil 7 গেমটি দিয়ে সিরিজটি নতুন করে গেমারদের মাঝে জনপ্রিয় হয়ে উঠে। আর ইতিমধ্যেই বহুল প্রতিক্ষিত Resident Evil 2 Remake গেমটি এ সপ্তাহে পিসি এবং কনসোলে রিলিজ পেয়েছে। PS1 সময়কালের জনপ্রিয় এই গেমটি কি বর্তমান মর্ডান যুগেও জনপ্রিয় হতে পারবেন নাকি এটাও অন্যকোনো সাধারণ “রিমেক” হিসেবেই থেকে যাবে? এটা এখন সময়ের ব্যাপার।
আমার নিজের ব্যক্তিগত মতামত বলতে গেলে গেমটির সবকিছুই আমার ভালো লেগেছে কিন্তু লিওন এর ফেস ডিজাইনটি আমার কাছে মোটেও পছন্দ হয়নি। রেসিডেন্ট ইভিল ৬ গেমটি লিওনের চেহারাও মোটামুটি লেগেছিলো কিন্তু আমার নিজের কাছে রেসিডেন্ট ইভিল ৪ গেমটির লিওনের ফেইস ডিজাইনিং বেশ চমৎকার লেগেছে। আর সিরিজের ফ্যানবয় হওয়ার কারণে সবথেকে খারাপ গেম Operation Raccon City টাও আমার কাছে মোটামুটি লেগেছে। তো যখন শুনলাম যে Capcom একদম শুরু থেকে পূর্ণাঙ্গভাবে রেসিডেন্ট ইভিল ২ এর রিমেক বানাচ্ছে তখন বেশ ভালোই লাগলো, কারণ সিরিজের সবথেকে সমালোচিত জনপ্রিয় গেম হচ্ছে এটি।
গেমটি খেলার সময় প্রথমেই যে জিনিসটি আপনার চোখে পড়বে সেটা হচ্ছে এর ক্যামেরা এঙ্গেল। না এটা রেসিডেন্ট ইভিল ৭ এর মতো কোনো FPS বা ফার্স্ট পারসন ভিউতে নয়। গেমটিতে এবার দুটি ক্যামেরা এঙ্গেল রাখা হয়েছে, একটি হলো ওভার দ্যা সোল্ডার ভিউ এবং অপরটি হচ্ছে থার্ড পারসন ভিউ। আর আপনি চাইলে গেমটি খেলার সময় যে কোনো মূহুর্তেই ক্যামেরা এঙ্গেলগুলোর মধ্যে সুইচিং করতে পারবেন। আর আরেকটি কথা হচ্ছে শুটিং! হ্যাঁ গেমটিতে শুটিং বিষয়টা বেশ বাস্তবিকভাবেই সাজানো হয়েছে যেটা প্রসংশাযোগ্য। গেমটিতে জোম্বি মারার সময় কোথায় শুট করছেন সে ব্যাপারে আপনাকে খেয়াল রাখতে হবে।
অন্যদিকে প্রতিটি অস্ত্রের নিজস্ব আলাদা বৈশিষ্ট্য রয়েছে আর এগুলো ব্যবহারের সময় তাদেরকে আপনার মনে রাখতে হবে। যেমন শটগানের কথাই ধরুন, এটি ক্লোজ রেঞ্জে বেশ শক্তিশালি কিন্তু এটা দিয়ে খানিকটা দূরবর্তী জোম্বিদের টার্গেট না করাই শ্রেয়! আর সিরিজের আগের গেমসগুলোর মতোই প্রতিটি অস্ত্রকে আপনি আপগ্রেড করতে পারবেন তাই শুরু দিকে 9mm পিস্তলকে গুরুত্ব না দিলেও আপগ্রেড করতে করতে একসময় এটাও বেশ শক্তিশালি অস্ত্র হয়ে উঠবে।
রেসিডেন্ট ইভিল ৭ গেমটি কিন্তু একটি মাস্টারপিস ছিলো, কিন্তু ওই গেমটিতে সিরিজের অরিজিনাল স্বাদ পাওয়া যায় নি। ফার্স্ট পারসন ভিউ এবং স্টোরিলাইন ও গেমপ্লে খানিকটা সিরিজের সাথে খাপ খায় না। এই রিমেক গেমটি দিয়ে ক্যাপকম আমাদেরকে আবারো ক্ল্যাসিক রেসিডেন্ট ইভিল গেমের স্বাদ আবারো উপহার দিতে পেরেছে। আমি বলবো সিরিজের সেরা গেম হচ্ছে এটি। গ্রাফিক্সের কথা আর নাই বা বললাম কারণ ২০১৯ সালের AAA গেমে গ্রাফিক্স তো বেশ হবেই! তবে গেমটির প্রসংশা করার মতো ব্যাপার হচ্ছে এর কাস্টিং। Cast বা অভিনয়ের দিক থেকেও গেমটি সেরা। গেমটিতে পাচ্ছেন দুদার্ন্ত একটি কাহিনী এবং ভয়েস এক্টিং আর সেটার সাথে গেমটির ক্যারেক্টার ডিজাইনিংও বেশ চমৎকার হয়েছে । জোম্বিদের ব্যাপারে একটি মজার কাহিনী হচ্ছে, গেমটির নিমার্তা টিমের কয়েকজন প্রোগ্রামাদের সাম্প্রতিক একটি ইন্টারভিউ থেকে জানা গিয়েছে যে গেমটির বেসিক লেভেলের জোম্বিরদের মডেলগুলো গেমটির নির্মাতা টিমের স্টাফদের আদলে তৈরি করা হয়েছে!
গেমটির মন্দ দিকসমূহ:
এবার আসি মূল অংশে! অর্থ্যাৎ গেমটির সমালোচনা নিয়ে। আমার গেমসের রিভিউগুলো যারা আগে পড়েছেন তারা জানেন যে আমি রিভিউতে গেমটির মন্দ এবং ভালো দুটি দিকগুলোই আপনাদের সামনে উপস্থাপন করি যাতে গেমটির সকল সাইডগুলো নিয়েই আপনি আমার এই পোস্ট থেকে ধারণা নিতে পারেন। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো গেমটি তার রিলিজের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই ৩ মিলিয়ন কপি বিক্রি করে ফেলেছে, উল্লেখ্য যে ১৯৯৮ সালের অরিজিনাল Resident Evil 2 গেমটি তার জীবনদশায় মোট ৫ মিলিয়নের মত কপি বিক্রি করতে সক্ষম হয়েছিলো। অর্থ্যাৎ এই গেমটি ইতিমধ্যেই সুপার হিট হয়ে গিয়েছে। আর বলতে পারেন ২০১৯ সালের প্রথম Game of the Year টাইটেলের জন্য এটিকে বাছাই করা হতে পারে। কিন্তু সবকিছুরই কিছু মন্দ বা Bad সাইড রয়েছে। তো চলুন দেখে নেই Resident Evil 2 রিমেক গেমটির মন্দ দিকগুলোকে।
ক্যাম্পেইনগুলোর মাঝে বৈচিত্র নেই
ওয়েল সিরিজের আগের গেমসগুলোর কথা বাদ দিলে এই গেমটির বিক্রির মূল পয়েন্ট হচ্ছে গেমটিতে আপনি ২টি সিঙ্গেল প্লেয়ার ক্যাম্পেইন উপভোগ করতে পারবেন। গেমটিতে আপনি লিওনের ভূমিকায় খেলতে পারবেন যে একজন নতুন পুলিশ সদস্য এবং তাকে দায়িত্ব গ্রহণ করার প্রথম দিন থেকেই এই জোম্বি ভাইরাসের সমাধান বা Cure খুঁজতে বেরিয়ে পড়তে হয়; অন্যদিকে আপনি একজন তরুণ কলেজ স্টুডেন্ট Claire এর ভূমিকায় খেলতে পারবেন যে এই জোম্বিদের মাঝে তার ভাইকে খুঁজে বেরাচ্ছে। আর বলা বাহুল্য যে এই দুটি ক্যাম্পেইনই তাদের কাহিনীতে এতটাই মুগ্ধকর যে কোনটি রেখে কোনটি আগে খেলবেন সেটা আপনার জন্য ডিসাইড করা বেশ কঠিন হবে। তবে এখানেই গেমটির প্রথম ডাউনপয়েন্ট আমি দেখলাম। কারণ লিওন বা Claire যারই ভূমিকায় প্রথমবার গেমটি ওভার করেন না কেন, পরবর্তীতে নতুন করে যখন আপনি অন্য ক্যারেক্টার নিয়ে খেলা শুরু করবেন তখন দেখবেন যে সেখানে তেমন কোনো কিছুর পরিবর্তন হয় নি। সেই একই পাথ এবং সেই একই ধাঁচের পাজলগুলোকে সমাধান করে আপনাকে গেমটিতে এগিয়ে যেতে হবে। তবে নতুন হিসেবে কিছু সাইড মিশন এবং নতুন কাটসিন পাবেন এই আরকি। তবে দুটি ক্যারেক্টারের অস্ত্রের সিলেক্টশন কিন্তু ভিন্ন হবে বলে রাখছি!
ছুঁড়ির ব্যবহার বেশ দুর্বল!
গেমটি খেলার আগে আপনার আরেকটি বিষয় জেনে রাখা দরকার যে গেমটিতে Melee বা ছুঁড়ির ব্যবহারকে বেশ দুর্বল ভাবে রাখা হয়েছে। সিরিজের আগের গেমসগুলোর তুলনায় এই গেমটিতে অস্ত্রের “বিকল্প” হিসেবে আপনি Melee উপর ভরসা করতে পারবেন না। তবে উল্লেখ্য যে সিরিজটি কখনোই melee combat এর জন্য জনপ্রিয় ছিলো না তবে অস্ত্রের বিকল্প হিসেবে এই ছুঁড়ির উপর আরেকটু পাওয়ার দিলে ভালোই হতো।
বুলেটপ্রুফ জোম্বি!
মানে এক কথায় বলা যায় যে এই গেমটির অধিকাংশ জোম্বিরা বলতে গেলে প্রায় বুলেট প্রুফ! গেমটি খেলতে গিয়ে প্রায় অধিকাংশ সময়ই দেখবেন যে জোম্বির মাথায় হেডশট দিলেও সে মরবে না। টানা ৪/৫ টা হেডশট দিলেও দেখবেন যে মাটি থেকে পড়ে গিয়েও আবার জোম্বিরা উঠে গিয়েছে। এমনকি গেমটিতে এমন অনেক জায়গায় পাবেন যেখানে একটি জোম্বিকে ৯ থেকে ১২ বার হেডশট দেবার পরে মরা গেলো! তবে অবশ্য এটা প্রাথমিক Sidearm মানে পিস্তলের ব্যাপারে বলা হয়েছে।
গেমটির ভালো দিক:
সুন্দর পাজল সিস্টেম!
রেসিডেন্ট ইভিল গেমস সিরিজটি শুধুমাত্র এর ভৌতিক উপাদানগুলোর জন্যই কেবল জনপ্রিয় নয়; সিরিজের গেমসগুলোর ইউনিক পাজল বা ধাধাঁগুলোর জন্যেও কিন্তু সিরিজটি বেশ জনপ্রিয়। আর এই গেমটিতেও তার কোনো ব্যাতিক্রম ঘটেনি। এই গেমটিতেও রয়েছে অনেক সুন্দর পাজল সিস্টেম যা একদিকে যেমন আনন্দদায়ক ঠিক অন্যদিকেও প্যাড়াদায়ক! তাই গেমটি আপনার ব্রেইনেরও হালকা পাতলা টেস্ট নিয়ে থাকবে।
চ্যালেঞ্জিং কমবাট সিস্টেম!
সত্যি কথা বলতে গেলে ওয়েস্টার্ন কালচালে জোম্বি নিয়ে এতটাই হইচই করা হয় যে এখন আর আগের মতো কেউ জোম্বিদেরকে ভয় পায় না। তবে বিশেষ করে এই পরিস্থিতিতে জোম্বিরদের ভয়কে ধরে রাখার জন্য দুটি পদ্ধতি রয়েছে একটি হচ্ছে World War Z স্টাইলের মতো হাজারখানেক জোম্বিদের মাঝে আপনাকে ফেলে দিতে হবে আর দ্বিতীয় হচ্ছে স্টেলথ এবং চ্যালেঞ্জিং পরিবেশে আপনাকে জোম্বির মোকাবেলা করতে হবে। আর রেসিডেন্ট ইভিল সিরিজটি দ্বিতীয় পদ্ধতিটি অনুসরণ করে থাকে। যেমন গেমটি আপনাকে একটি লম্বা হলওয়েতে রেখে দেবে যেখানে পুরো হল জুড়ে ২টি কিংবা ৩টি জোম্বি থাকবে, আর অন্ধকারাচ্ছন্ন এই পরিবেশে আপনাকে দেওয়া হবে একটি হ্যান্ডগান। অর্থ্যাৎ বেঁচে থাকতে হলে আপনাকে গেমটিতে সুযোগের সৎব্যবহার করতে হবে।
রিমেক গেমসগুলোর আইডল!
বর্তমানে আপনি দেখবেন যে রিমেক বা Remaster গেমসগুলোকে নামে মাত্র গ্রাফিক্স বা গ্র্যাফিক্যাল আপডেট দিয়ে নির্মাতারা কোনো রকমে চকচকে গেম রুপান্তর করেই কাজ শেষ বলে মনে করে। যেমন মেট্রো ২০৩৩ গেমটি এবং Metro 2033 Redux এই দুটি গেমের কথাই ধরুণ। বলতে গেলে একজন সাধারণ গেমারের কাছে এই দুটি গেমের মধ্যে পার্থক্যের কিছুই থাকবে না কারণ আপনি গেমসগুলোকে Medium গ্রাফিক্স সেটিংস দিয়ে খেলে থাকেন। কিন্তু Resident Evil 2 রিমেক গেমটির দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন যে শুধুমাত্র গ্রাফিক্সের দিক থেকে নয়, বরং গেমপ্লে, ভয়েস, এনিমেশন সহ প্রায় প্রতিটি দিকেই এই গেমটিতে পরিবর্তন আনা হয়েছে। রিমেক বা Remaster গেমসগুলো এই রকমই হওয়া উচিত।
গ্রাফিক্স এবং পরিবেশ বেশ চমৎকার!
সিরিজের পর পর দুটি গেমসের গ্রাফিক্স এবং পরিবেশ সেটিংস বেশ চমৎকার করে সাজানো হয়েছে। গত বছরের রেসিডেন্ট ইভিল ৭ গেমটির গ্রাফিক্স আর পরিবেশ সেটিংস তো বলার বাইরের মতো সুন্দর আর এবারের গেমটিও কিন্তু কম যায় না। কারণ গত বছরের গেমটির থেকে ক্যাপকম বেশ সুন্দর একটি জিনিস ধরতে পেরেছে আর তা হলো গেমটিতে সঠিক পরিমাণের আলোকপাতের ব্যবহার করা! অন্য কথায় বলতে গেলে আলোর ব্যবহার একদম নুন্যতম পরিমাণে করা! আর এই ভয়ানক অন্ধাকারাচ্ছন্ন পরিবেশে নতুন টাইপের শত্রুকে পারফেক্টভাবে যোগ করা হয়েছে, মানে স্টোরিলাইনের সাথে সঠিকভাবে ঠিক রেখে এগুলোকে করা হয়েছে।
সত্যিকারের “রিমেক!”
অরিজিনাল গেমটির রিলিজের প্রায় ২১ বছর পর এবং কয়েকটি কনসোল জেনারেশন পার হয়ে যাবার পর গেমটির রিমেক বের হলো। কিন্তু গেমটিতে অরিজিনাল গেমের অরিজনাল স্টোরিলাইন, ক্যারেক্টার এবং গেমপ্লে টাইপগুলো কিন্তু সঠিক ভাবেই ঠিক রাখা হয়েছে আর গেমটির ভিজুয়্যাল দিকগুলোর ক্ষেত্রে একদমই নতুন করে মেকওভার করা হয়েছে। মানে একটি আদর্শ রিমেকের সবকিছুই গেমটিতে রয়েছে। একই সাথে আরেকটি চমৎকার ব্যাপার হচ্ছে অরিজিনাল গেমটির কিছু কিছু স্থানে আপগ্রেডের প্রয়োজন ছিলো যা এই গেমটিতে সঠিকভাবেই আপগ্রেড করা হয়েছে। অনেক গেমস রয়েছে যেগুলোর বাগ বা সমস্যাগুলোকে রিমেক গেমেও একই ভাবে রেখে দেওয়া হয়ে থাকে, যা এই গেমটিতে করা হয়নি। তাই গেমটি আপনাকে হতাশ করবে না আমি বলতে পারি।
পরিশেষে বলা যায় যে, ২০১৯ সালের প্রথম ট্রিপল A রেটিংয়ের গেম হচ্ছে এই Resident Evil 2 RE গেমটি। যারা এখনো ভাবছেন যে গেমটি খেলবেন কিনা তাদের কে বলতে পারি যে সিরিজের অন্যতম সেরা এবং ক্ল্যাসিক গেম হচ্ছে এটি। তবে ভিজুয়্যালের দিক থেকে বেশ চড়া থাকার জন্য গেমটি খেলতে হলে আপনার বেশ পাওয়ারফুল পিসির প্রয়োজন হবে।
নিমার্তা:
Capcom R&D Division 1
প্রকাশ করেছে:
ক্যাপকম
সিরিজ:
রেসিডেন্ট ইভিল
খেলা যাবে:
মাইক্রোসফট উইন্ডোজ ভিক্তিক পিসিতে
প্লেস্টেশন ৪ এবং
এক্সবক্স ওয়ান কনসোলে
মুক্তি পেয়েছে:
২৫ জানুয়ারী, ২০১৯
খেলার ধরণ:
সারভাইবাল হরর
খেলার টাইপ:
সিঙ্গেল প্লেয়ার
সিস্টেম রিকোয়ারমেন্ট: