এমন গেমস খুব কমই আছে যারা সিরিজ হিসেবে কয়েকটি গেমস রিলিজ করেও জনপ্রিয়তা ধরে রাখতে পেরেছে। তাদের মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে Mass Effect সিরিজ। সিরিজের লেটেস্ট গেম Andromeda নিয়ে আজ কিছু বলবো না, আজ সিরিজের প্রথম ৩টি মাস্টারপিস গেম Mass Effect , Mass Effect 2 এবং Mass Effect 3 নিয়ে কথা বলবো। অরিজিনালি Mass Effect গেমটি ২০০৭ সালে, Mass Effect 2 গেমটি ২০১০ সালে এবং Mass Effect 3 গেমটি ২০১২ সালে রিলিজ পায়। আমার সৌভাগ্য হয়েছে গেমগুলোর রিলিজের পরপরেই খেলা নেওয়া, যারা সিরিজের ৩টি গেমস খেলেনি তারা গেমিং জগতের অনেক বড় কিছু মিস করেছেন।
সিরিজের জনপ্রিয় প্রথম ৩টি গেমসকে রিমাস্টার করে ২০২১ সালে Mass Effect Legendary Edition রিলিজ করেছে EA Games । আজ এই গেমটি নিয়েই পিসিবিতে দু’চারটি কথা বলতে চলে এলাম। রিমাস্টার বা রিডিজাইন বলতে গেমিং জগতে আমরা পুরাতন গেমকে মর্ডান যুগের সাথে তাল মিলিয়ে নতুন ইঞ্জিন, নতুন উপাদান দিয়ে নতুন করে রিলিজ করাকে বুঝায়। কিন্তু Mass Effect সিরিজকে ডেভেলপাররা খুব চমৎকারভাবে রিডিজাইন না করে অরিজিনাল Elements কে যার যার স্থানে ঠিক রেখে মর্ডানাইজ করেছেন। যা খুবই প্রশংসার যোগ্য ।
নির্মাতা: BioWare
পাবলিশার: Electronic Arts
সিরিজ: Mass Effect
ইঞ্জিন: Unreal Engine 3
রিলিজ: মে ১৪, ২০২১
Legendary Edition এ সবথেকে বেশি Tweak করা হয়েছে প্রথম গেম ২০০৭ সালের Mass Effect গেমটিকে। যারা অরিজিনাল ২০০৭ ভার্সনের গেমটিকে খেলেছেন তারা জানেন গেমটি অন্য ২টি গেমের থেকে একটু আলাদা, কিন্তু লেজেন্ডারি এডিশনে গেমটিকে অন্য দুটি গেমের সাথে সমান সমান ভাবে সেট করা হয়েছে।
Mass Effect 1
Mass Effect গেমে সবথেকে বেশি গ্রাফিক্স, গেমপ্লে ও Elements কে Revamp করা হয়েছে। তবে পোষ্টের শুরুতেই বলেছি এটা Remaster নয় বরং এটাকে রিডিজাইন বলতে পারেন। সিরিজের এই গেমটির World Design বেশ চমৎকার ও সাজানো গোছালো। Charecters এর বেলায়ও একই কথা বলা যায়। প্রতিটি ক্যারেক্টারের নিজস্ব ব্যক্তিত্ব রয়েছে, রয়েছে নিজস্ব অনেকগুলো ডায়ালগ এবং ডায়ালগ অপশন থেকে নিজের পছন্দমত বেছে নেওয়ার সুযোগ।
যা যা ভালো লেগেছে:
১। গেমটি যেহেতু আমি আগেও অরিজিনালটি গেম ওভার দিয়েছি, তারপরেও এবারের ভার্সনে আমার সবথেকে পছন্দের বিষয়টি ছিল স্টোরিলাইন। Mass Effect গেমটির স্টোরিলাইনে আপনার কাছে অনেকগুলো অপশন দেওয়া রয়েছে, আপনি যেভাবে প্রতিটি অপশন বেছে নিবেন স্টোরিলাইন সেভাবেই আগাবে। এমনকি এই ডিসিশনগুলো সিরিজের বাকি দুটি গেমেও প্রভাব ফেলবে। গেমে রোমান্সের অপশন রয়েছে তবে সেগুলোতে না আগালে আপনি সিরিজের কোনো গেমেই রোমান্স এর দেখা পাবেন না ।
২। গেমটির গ্রাফিক্সের পর সবথেকে যে সেকশনে ডেভেলপাররা কাজ করেছেন সেটা হচ্ছে Gameplay, বিশেষ করে Combat সিস্টেমে অনেক উন্নতি করা হয়েছে। অরিজিনাল গেমটির কমবাট সিস্টেম একটু ভারী ভারী ছিলো যা সিরিজের অন্য ২টি গেমের সাথে মিল খায় না। কিন্তু Legendary Edition এ গেমটির কমবাট সিস্টেম একটু Easy করে, হালকা করে সিরিজের বাকি ২টি গেমের সাথে মিল করে দেওয়া হয়েছে।
৩। সর্বশেষ যে বিষয়টি ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে গেমটির সিস্টেম রিকোয়ারমেন্টস। Legendary Edition এর ৩টি গেমসকেই আপনি ৮ জিবি Ram, লো এন্ড জিপিইউ আর এন্ট্রি লেভেল প্রসেসর ওয়ালা পিসিতে খুব সুন্দর খেলতে পারবেন। আমি i3 10100, 16GB ram, GT 730 জিপিইউতে তিনটি গেমেই ৫০ থেকে ৬০ FPS পেয়েছি।
যেগুলো ভালো লাগেনি:
১। এটা Legendary Edition না কিন্তু অরিজিনাল গেমেও এটা রয়েছে, স্টোরিলাইন গেমে খুবই ছোট মনে হয়েছে আমার কাছে। যদি আপনি কোনো সাইড কোয়েস্ট না খেলেন এবং ট্রেইনার ব্যবহার করে স্টোরিলাইন এনজয় করতে থাকেন তাহলে ৪/৫ ঘণ্টার মধ্যেই গেমটি ওভার হয়ে যাবে যেটা আমার কাছে ব্যক্তিগত ভাবে ভালো লাগেনি। এখন বলতে পারেন স্টোরিলাইন ১০০% করতে সাইড কোয়েস্ট করেন না কেন? সেটার জন্য পরের পয়েন্টটি দেখুন।
২। সবথেকে বাজে লেগেছে গেমটির সাইড কোয়েস্টগুলো। একট জনমানব শুন্য গ্রহে নেমে Mako (গাড়ী) নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে ড্রাইভ করে যেয়ে এক ধাঁচের বিল্ডিয়ে গিয়ে গোলাগুলি। মানে সাইড কোয়েস্টগুলোর স্টাইল বলতে গেলে প্রায় একই রকম। একই কাজ আপনি ৩০টি ভিন্ন ভিন্ন গ্রহে গিয়ে করলে কতটা বোরিং হয়ে যাবেন তা একবার ভাবুন।
Mass Effect 2
সিরিজের সবথেকে Fan Favorite গেম হচ্ছে Mass Effect 2 । আর লেজেন্ডারি এডিশনে গেমটির গ্রাফিক্স (লাইটনিং) এ সবথেকে বেশি ফোকাস করা হয়েছে। আর বাকি ২টি গেমের মতোই এখানে আপনি সকল DLC কে একত্রে পেয়ে যাবেন। যার ফলে গেমের গেমপ্লে টাইম অনেক বেড়ে যাবে। প্রথম গেমের আপনার বেছে নেওয়া কিছু ডিসিশন এই গেমের স্টোরিলাইনে ইমপ্যাক্ট করবে।
গেমটিতে রয়েছে –
* ৬টি স্টোরি মিশন
* ৭টি Dossier মিশন
* ১২টি Loyalty মিশন
* ২০টি N7 Anomalies
* ৪টি DLC Quest-Lines
যা যা ভালো লেগেছে:
১। Combat System: Mass Effect 2 গেমের সবথেকে যে জিনিসটি ভালো লেগেছে সেটা হচ্ছে এর কমবাট সিস্টেম। প্রথম গেমে অস্ত্রে রিলোড ছিলো না, ছিলো Cooldown । কিন্তু Mass Effect 2 গেমে রিলোড সিস্টেম তথা ammo-clips যোগ করা হয়েছে। তবে প্রথম গেমে Cover বেইসড কমবাট না থাকলে এই গেমে আপনাকে অবশ্যই গেমে ৭০% টাইমেই Cover এ থেকে যুদ্ধ করতে হবে। মানে একটু কৌশল খাটিয়ে ফাইট করতে হবে। এছাড়াও এ গেমে Heavy Weapon যোগ করা হয়েছে, যদিও তাদের গুলির সংখ্যা খুবই কম। Nuke Launcher ছাড়া অন্য কোনো হেভি ওয়েপন আমার কাছে কাজের মনে হয় নাই।
২। Level Design: প্রথম গেমে লেভেল ডিজাইন অনেক ক্ষেত্রে একই রকম লাগলেও Mass Effect 2 গেমের লেভেল ডিজাইন খুব Versatile এবং চমৎকার করে সাজানো হয়েছে। প্রতিটি মিশনের লেভেল ডিজাইন অন্য মিশনের থেকে আলাদা। যেমন Omega তে শহুরে শহুরে ভাব রয়েছে, Collector Zone গুলোতে একটু হরর হরর ভাইব রয়েছে, প্রতিটি প্ল্যানেটের ডিজাইন অন্যদের থেকে আলাদা মনে হবে।
৩। The Squad: Mass Effect 2 গেমটি আপনার টিম কেন্দ্রিক একটি গেম। এক কথায় বলতে গেলে গেমের প্রথম অংশে আপনি আপনার টিম মেম্বারদের রিকুইট করবেন, দ্বিতীয় অংশে আপনি তাদের বিভিন্ন ইস্যু শুনবেন এবং সলভ করবেন, আর তৃতীয় অংশে স্টোরিলাইনের মিশন ক্যারি করবেন। প্রতিটি ক্যারেক্টারের নিজস্ব কিছু মিশন রয়েছে যেগুলো কমপ্লিট করলে তাদের গোপন পাওয়ার এবং স্কিন আনলক হবে।
যা যা ভালো লাগেনি:
১। One Time Only: গেমটির সব থেকে যে জিনিসটি খারাপ লেগেছে যে এটার অনেক Elements কে গেমে One Time Only হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। যেমন কোনো মিশন খেলতে গিয়ে পাশের রুমের Shotgun Upgrade কে যদি আপনি মিস করে যান তাহলে সামনে গিয়ে আপনি কোথাও সেটাকে কিনতে কিংবা অন্যভাবে রিকোভার করতে পারবেন না। Safe এর বেলাও একই কথা প্রযোজ্য।
২। Mini Game: ৩ নম্বর গেমে এটাকে উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে আর ১ নম্বর গেমে এটা ছিলোই না। Mass Effect 2 গেমে রয়েছে বিরক্তিকর Mini Game । বিশেষ কোনো দরজা, Safe কিংবা মিশন ট্রিগার করতে হলে আপনাকে পাজল ভিক্তিত কিছু Mini Game খেলতে হবে যা এক কথায় বলতে গেলে বিরক্তিকর।
৩। Daddy Tissues: আরেকটি বিষয় খেয়াল করলে লক্ষ্য করবেন যে, আপনার টিমের অধিকাংশেরই Daddy Issue রয়েছে।
Mass Effect 3
সিরিজের ৩য় এবং শেষ গেম হচ্ছে Mass Effect 3 । যেটা অরিজিনালি ২০১২ সালে রিলিজ পেয়েছিল। প্রথম গেমটির সেভগেম আপনি ২য় গেমে ইম্পোট করে সেখান থেকে খেলা শুরু করতে পারবেন এবং একই ভাবে ২য় গেমের গেমওভার দিয়ে আপনি ৩য় গেমে সেভগেমটি Import করে সেখান থেকেই স্টোরিলাইনটি আবারো মুরু করতে পারবেন। এই জিনিসটাই আমার সবথেকে ভালো লাগে। প্রতিটি গেমে আপনার ক্যারেক্টার, আপনার গেমের সিদ্ধান্তগুলো এবং আপনার বৈশিষ্ট্যসমূহ ৩টি গেমে একই রকম থাকবে। Third Person Shooter ক্যাটাগরিতে এটিও একটি একশন আরপিজি গেম। আর অন্য দুটি গেমের মতোই কমবাটে আপনাকে সহযোগীতা করবে আপনার বেছে নেওয়া দুজন টিম মেম্বার। স্টোরিলাইনে মূল মিশন এবং সাইড মিশনগুলো খেলে আপনি নিজের ক্যারেক্টারের পাশাপাশি আপনার টিমের ক্যারেক্টারগুলোরও লেভেল আপ করতে পারবেন। আর আগের দুটি গেমের মতোই আপনার সিদ্ধান্তগুলোকে Good আর Bad ক্যাটাগরিতে ফেলে আপনার ক্যারেক্টারের Paragon আর Renegade পয়েন্টে ভাগ করে দেওয়া হয়েছে।
গেমটির মূল কাহিনী হচ্ছে পুরা গ্যালাক্সিতে Reaper নামের একটি এডভান্স মেশিন জাতি আক্রমণ করছে আর আপনাকে এটার থেকে পুরা গ্যালাক্সিকে বাঁচাতে হবে। আগের ২টি গেমের মতো এই গেমটিতেও লেজেন্ডারি এডিশন হিসেবে গেমপ্লে আর গ্রাফিক্সের দিক দিয়ে কিছুটা আপগ্রেড আনা হয়েছে। যদিও অরিজিনাল ২০১২ Version টির গ্রাফিক্সও খারাপ না। তবে এবার আপনি যদি ৪কে সেটিংস দিয়ে খেলেন তাহলেই গেমের গ্রাফিক্স আপডেটগুলোকে দেখতে ও উপভোগ করতে পারবেন।
যা যা ভালো লেগেছে:
১। ক্যারেক্টার ডিজাইন এবং স্টোরিলাইন
২। পলিশ গেমপ্লে
৩। আগের ২টি গেমের স্টোরি চয়েজ এখানে এসে নাড়া দিবে
৪। সবগুলো DLC দেওয়া রয়েছে।
যা যা ভালো লাগিনি:
১। সাইড মিশনগুলো বেশ লম্বা ও বড়
২। লেজেন্ডারি এডিশনের সবথেকে কম ডেভেলপড গেম এটা
পরিশিষ্ট
যারা অরিজিনাল ৩টি গেম ছোট বেলায় আমার মতো খেলেছেন তারা সহ যারা এখনো এই মাস্টারপিস সিরিজটি খেলেনটি তাদেরকে বলবো ইদের বন্ধে গেমটি অবশ্যই আপনারা চেক করে দেখতে পারেন। তিনটি গেম মিলিয়ে প্রায় ১০০ ঘন্টার উপরে গেমপ্লে এবং প্রায় ৪০টির বেশি DLC দিয়ে গেমটি আপনার কাছে বেশ ভালো লাগবে আশা করি। রিমেক হলেও গেমসগুলো আপনি ১৬ জিবি Ram আর ১০ জেন প্রসেসর সাথে এন্ট্রি লেভেলের জিপিইউ দিলে 1080P তে বেশ ভালোভাবেই খেলতে পারবেন।