Intel HD গ্রাফিক্সের জন্য সেরা মডার্ন গেমস! (১ম পর্ব)

এই পোষ্টের টাইটেল নিয়ে একটু ঝামেলায় রয়েছি। আমি এখানে বুঝাতে চেয়েছি যে আপনি কিভাবে লো এন্ড পিসি / ল্যাপটপে গেমিং করবেন! মানে নতুন নতুন গেমস তো আর Smoothly খেলতে পারবেন না কিন্তু আপনার লো এন্ড পিসি বা ল্যাপটপের জন্য সেরা গেমসগুলো নিয়েই আমার আজকের এই পোষ্ট। পোষ্টটি নিয়ে আপনাদের কাছ থেকে ভালো সাড়া পেলেই আমি ২য় পর্ব লিখবো।
এখানে লো এন্ড পিসি বলতে আমি এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ড ব্যাতিত পিসি বা ল্যাপটপগুলোর কথা বুঝিয়েছি। আর এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ড নাই তারমানে অবশ্যই আপনার পিসিতে / ল্যাপটপে ইন্টেলের HD গ্রাফিক্স কার্ড সিরিজ রয়েছে। তবে মনে রাখবেন Intel HD 5500 সিরিজের নিচের মডেলগুলোতে 3D গেমস চালানোই বোকামি হবে।

আমি পোষ্টটির জন্য আমার পুরোনো ল্যাপটপটি ব্যবহার করবো। যেটা ২০১৬ সালে মামার কাছ থেকে জন্মদিনের উপহার হিসেবে পেয়েছিলাম। এটার কনফিগারেশন হচ্ছে:

> ইন্টেল কোর আই ৩ 5005U 2.0GHz প্রসেসর (3MB L3 Cache)
> ৪ গিগাবাইট DDR3 র‌্যাম। (চার গিগাবাইট)
> Intel HD 5500 2GB ইন্ট্রিগেটেড গ্রাফিক্স

এই ল্যাপটপে আমি ব্লগিং মানে টাইপিং আর নেট ব্রাউজিং ছাড়া অন্য কিছু করিনা কারণ অন্য কিছুর করার কথাও না। কিন্তু এই কনফিগারেশনে যদি কোনো ভিডিও গেম “খেলার মতো” স্পিড পায় তাহলে আপনি অবশ্যই আপনার পিসিতেও গেমটি খেলতে পারবেন।

বি:দ্র: যদিও পোষ্টটিতে Low End পিসি বা ল্যাপটপের উপর গেমিং নিয়ে বানানো হয়েছে কিন্তু আমি Strongly রেকোমেন্ড করবো এক্সটারনাল গ্রাফিক্স কার্ড ছাড়া ডেক্সটপে হেভি গেমিং না করতে আর গেমিং ল্যাপটপ ছাড়া ল্যাপটপে গেমিং একদমই করা উচিত নয়।

Battlefield 1

জনপ্রিয় শুটিং গেমস সিরিজ ব্যাটলফিল্ড এর ১৫তম সংষ্করণ Battlefield 1 গেমটি ২০১৬ সালে বাজারে আসে। আর এর গ্রাফিক্স এবং ১ম বিশ্বযুদ্ধের পটভূমির জন্য গেমটি বেশ জনপ্রিয় হয়! কারণ প্রথম বিশ্বযুদ্ধের চাইতে গেমিং ইন্ডাস্ট্রি ২য় বিশ্বযুদ্ধের উপর বেশি গেমস বানিয়েছে। আর মজার ব্যাপার হচ্ছে এই গেমটি আপনি লো এন্ড পিসিতেও চালাতে পারবেন!
মনে রাখবেন গেম চালাতে পারা আর ভালোভাবে খেলতে পারার মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। উপরের কনফিগারেশনের ল্যাপটপে গেমটি ২০ থেকে ৩০ FPS এ লো গ্রাফিক্সে বেশ ভালোই চলেছে। যা থেকে আমি নিজেও অবাক হয়েছি। কারণ গেমটির সাইজ প্রায় ৬০ জিবির উপরে আর এটা ডাউনলোড করতে আমার ৩ দিন লেগেছে! কিন্তু পারসোনাল চয়েজের কারণ গেমটি নামিয়ে ইন্সটল করে চালিয়ে তো আমি অবাক!

https://www.youtube.com/watch?v=MmfTAW59WKA

COD: Ghost

২০১৩ সালে গেম এটা। মানে বেশ পুরোনোই কিন্তু গ্রাফিক্সের দিক থেকে তখনকার সময়ের অন্যতম সেরা গেম আর কল অফ ডিউটির স্টাইলিশ গেম বলে এই গেমটির উপর অনেকেরই আগ্রহ ছিলো। কিন্তু তখনকার সময়ে ডুয়েল কোর পিসির দামও বেশ চড়া ছিলো বলে আমার মতো অনেকেরই গেমটি খেলা হয় নি। কিন্তু উপরের কনফিগারেশনে গেমটি লো গ্রাফিক্সে বেশ ভালোই পারফরমেন্স দিয়েছে। FPS ছিলো সবোর্চ্চ ২৫/২৭ এভারেজে ছিলো ২০ আর কমপক্ষে ১৫ পেয়েছি। যা ভালো না হলেও গেমটি একবার কস্ট করে গেম ওভার দিতে পারেন আপনি। আর সাইজের দিক থেকে বলতে গেলে গেমটির সেটআপ ফাইল ২৫ গিগাবাইট যেটা ডাউনলোড করতে আমার লেগেছে ৪ ঘন্টা আর ইন্সটল করতেও লেগেছে ৪ ঘন্টার মতো (BlackBox Repack) ।

উল্লেখ্য যে, উপরের ভিডিওতে ৮ গিগাবাইট র‌্যাম থাকার কারণে তিনি ৭২০P রেজুলেশনে মিডিয়াম সেটিংয়ে এই FPS পেয়েছেন।

Assassin Creed III Remastered

এখন একটা মজার কাহিনী শোনাই আপনাদের। Assassin Creed সিরিজের গেমসগুলো এনভিডিয়া কার্ডের জন অপজিমাইজ করে বানানো হয় (সাধারণত)। মাঝে Liberation HD এবং Rogue এই দুটি গেম AMD এর জন্য কাস্টমাইজ করা হয়েছিলো। আর তাই Assassin Creed III গেমটি আপনি এই কনফিগারেশনে খেলতে পারবেন না প্রচুর ল্যাগ দিবে।

কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে এ বছরের মার্চে রিলিজ পাওয়া (২০১৯) Assassin Creed III Remastered সংস্করণটিতে হাই গ্রাফিক্স থাকলেও এই গেমটি উপরের কনফিগারেশনের ল্যাপটপে নামে আমার ল্যাপটপে ভালোই চলেছে। কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, গেমটিতে লো গ্রাফিক্সে 800 x 600 রেজুলেশনে আপনাকে খেলতে হবে । তাহলে আপনি ২০ থেকে ২৫ FPS পাবেন।

 

Assassins Creed Liberation HD

এটা অরিজিনাল ভার্সন টা, কারণ এটার Remastered এডিশনটা চলবে না। কিন্তু অরিজিনাল টার নামের সাথে HD লাগনো রয়েছে তাই সেটার গ্রাফিক্সও আপনার কাছে খারাপ লাগবে না। আর বলতে গেলে গেমটিতে গ্রাফিক্স সেটিংস হাই বা লো করার কোনো অপশন রাখে নি UBIsoft তাই অনেকেই ভাবতে পারেন গেমটি উপরের কনফিগারেশনে নাও চলতে পারে। কিন্তু আমি নিজে এই গেমটি বেশ কয়েক বছর আগেই উপরের কনফিগারেশনের থেকে লো কনফিগারেশনের পিসিতে বেশ স্মুথ ভাবেই খেলেছি। যদিও তখন AMD এর ২৫৬ মেগাবাইটের গ্রাফিক্স কার্ড ছিলো। কিন্তু উপরের কনফিগারেশনের ল্যাপটপে আপনি আরামসে গেমটিতে ৩০ FPS য়ে খেলতে পারবেন আর আপনার মাদারবোর্ড যদি ৮০ সিরিজের হয় তাহলে সেখানে 60FPS ও পেয়ে যেতে পারেন।

 

Assassins Creed Rogue

এসাসিন্স ক্রিড সিরিজের এটাই একমাত্র গেম যেটা আপনি AMD ভিক্তিক গ্রাফিক্স কার্ডে হাই সেটিংস দিয়ে কোনো প্রকার ল্যাগ ছাড়াই খেলতে পারবেন । আর সে কারণেই ইন্টেল এইচডি গ্রাফিক্সের উপরের কনফিগারেশনের ল্যাপটপে আপনি গেমটিকে মিডিয়াম গ্রাফিক্স সেটিং দিয়েও ২৫ থেকে ৩০ FPS পেয়ে যাবেন আর লো গ্রাফিক্স দিলে তো পারফরমেন্স আরো ভালো পাবেন! তাই যারা গেমটি এখনো খেলে দেখেন নি কিন্তু লো এন্ড পিসির কারণে পিসিতে চলবে কিনা ভেবে খেলছেন না তারা আজই গেমটি খেলে দেখতে পারেন, বেশ কাহিনীতে টুইস্ট রয়েছে গেমটির! আর Black Flag এর মতো জাহাজেরও মিশন রয়েছে এই গেমটিতে।

Wolfenstein The Old Blood

2015 সালের হেভি একটি গেম হচ্ছে Wolfenstein The Old Blood । কিন্তু হেভি হলেও AMD অপটিমাইজ হবার কারণে আপনি ইন্টেল এইচডি কনফিগারেশনেও গেমটিকে গেম ওভার দিতে পারবেন। যারা ২০০৬ সালের Wolfenstein গেমটি খেলেন নি তাদের জন্য বলছি, এটি হলো একটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পটভুমির উপর Zombie স্বাদের একটি একশন এডভেঞ্চার ফাস্ট পারশন শুটার গেম সিরিজ। তবে এই গেমটি Wolfenstein সিরিজের একটি stand-alone সংষ্করণ।

উল্লেখ্য যে, উপরের ভিডিওতে ৮ গিগাবাইট র‌্যাম থাকার কারণে উচ্চ রেজুলেশনে খেলতে পেরেছেন। ৪ গিগাবাইট র‌্যামের পিসিতে একে ৮০০ x ৬০০ রেজুলেশনে আপনাকে চালাতে হবে ভালো স্পিড পাবার জন্য।

Watch Dogs

বর্তমানে সাইবার পাঙ্ক গেম নিয়ে যেমন গেমিং দুনিয়ায় হাইপ চলছে ঠিক তেমনি ২০১৪ সালে এই Watch Dogs গেমটি নিয়েও তেমনি হাইপ ছিলো। জিটিএ সিরিজকে টেক্কা দিতে UBI Soft এর ওপেন ওয়ার্ল্ড গেমস সিরিজ হচ্ছে ওয়াচ ডগস। কিন্তু এখন আপনি চাইলেই গেমটিতে উপরের কনফিগারেশনের পিসি / ল্যাপটপে খেলে নিতে পারেন যদি আগে না খেলে থাকেন। তবে ৪ গিগাবাইট র‌্যাম হলে রেজুলেশন অনেক কমিয়ে খেলতে হবে আপনাকে।

NFS Most Wanted (2012)

উপরের কনফিগারেশনে আপনি ২০১২ সালের মোষ্ট ওয়ান্টেড পর্যন্তই খেলতে পারবেন। তবে ৮ গিগাবাইট র‌্যাম হলে Rivals পর্যন্ত সকল NFS গেমের স্বাদ আপনি নিতে পারবেন। ৪ গিগাবাইট র‌্যামের পিসিতে আপনাকে অবশ্যই 800 x 600 রেজুলেশনে খেলতে হবে আর তখনই আপনি মিডিয়াম গ্রাফিক্স সেটিংয়ে ২৫/৩০ FPS পেতে পারেন।

The Elder Scrolls V: Skyrim

স্কাইরিম গেমটি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। 96% স্কোর নিয়ে এই জনপ্রিয় গেমটি ২০১১ সালের শেষের দিকে বাজারে আসে। আর বর্তমানে বিশ্বের সবথেকে বেশি Mods রয়েছে এই গেমটির উপর। আর এই গেমটি আপনি উপরের কনফিগারেশনে 1024 x 768 রেজুলেশনে ২৫ FPS এভারেজে খেলতে পারবেন। যারা এখনো এই গেমটি খেলেননি তারা একটি মাস্টারপিস গেম মিস করছেনে, এক্ষুনি খেলে দেখুন গেমটি, ডাউনলোড সাইজ ১০ থেকে ১২ জিবির মতো হবে।

WWE 2K15

https://www.youtube.com/watch?v=dAR4d6ObRTA

এই কনফিগারেশনে WWE গেমস খেলার মন চাইলে আপনি WWE 2K15 গেমটি খেলতে পারেন। তবে অবশ্যই লো রেজুলেশন এবং লো সেটিংস দিয়ে খেলতে হবে। তবে এর ম্যাচ টু ম্যাচ লোডিং টাইম খুবই বেশি লাগবে তাই অনেক সময় বোরিং হয়ে যেতে পারেন।

DOOM

২০১৬ সালের ডুম সিরিজের রিবুট এই মাস্টারপিস গেমটিকেও আপনি এই কনফিগারেশনে খেলতে পারবেন তবে সমস্যা হচ্ছে এখানে কিছু কাস্টম টুইকিং করে নিতে হবে আপনাকে তাহলে ৮০০ x 600 রেজুলেশনে ৪০ FPS পর্যন্ত স্পিড আপনি পেতে পারেন। আর সেটার ভিডিও আমি এখানে দিয়ে দিচ্ছি।

DOTA 2

ডটা গেম নিয়ে কোনো কিছু নতুন করে বলার নেই। কিছুদিন আগে ডটার চ্যাম্পিয়নশীপ লীগ হয়ে গেল। আর ১ম স্থান অর্জনকারী OG টিম প্রায় ১৫ মিলিয়ন ডলারের বেশি প্রাইজ পয়েন্ট নিয়ে নিলো। আর এই কনফিগারেশনে মাল্টিপ্লেয়ার খেলতে চাইলে আপনি ডটা ২ খেলতে পারেন। তবে লো গ্রাফিক্স দিয়ে আপনি 1280 x 768 রেজুলেশনে আরামসে ৩০ থেকে ৪০ FPS পেতে পারেন। তবে ৬০ FPS পেতে হলে 800 x 600 বা ৮ গিগাবাইট র‌্যাম হলে ১০২৪ x ৭৬৮ রেজুলেশনে আপনাকে আসতে হবে।

 

পরিশিষ্ট

১ম পর্ব এখানেই শেষ হচ্ছে। কিন্তু আপনাদের ভালো রেন্সপন্ড পেলেই ২য় পর্ব নিয়ে আসবো আমি। আর যাবার আগে একটি কথা, আপনি কখনোই এই কনফিগারেশনে GTA V গেমটি চালাতে পারবেন না। কারণ জিটিএ ৫ গেমটি প্রচুর র‌্যাম খায়, এখানে Intel HD গ্রাফিক্স সমস্যা নয়, সমস্যা হচ্ছে 4GB র‌্যাম। নুন্যতম ৮ গিগাবাইট র‌্যাম ছাড়া জিটিএ ৫ আপনি ইন্সটল না দিলেই ভালো হবে।

আর কোনো গেমস ডাউনলোড দেবার আগে আপনি ইউটিউবে এভাবে সার্চ দিয়ে দিবেন:

GTA V on Intel i3 5005u 4GB Ram Intel HD 5500

এখানে GTA V এর সাথে আপনার গেমের নাম লিখবেন, Intel i3 5005u এর স্থানে আপনার প্রসেসরের বিস্তারিত লিখবেন, র‌্যাম লিখবেন এবং আপনার গ্রাফিক্স কার্ডের মডেলটি লিখবেন।

Share This Article

Search