বাসায় কম্পিউটার রয়েছে কিন্তু জীবনে একবারও সেখানে গেমস চালাননি এমন লোক হয়তো খুঁজলে একটাও পাওয়া যাবে না। নিজে না খেললেও নিজের ছোট বাবুর জন্য, ছোট ভাই বোনের জন্য পিসিতে গেমস আমাদেরকে ইন্সটল করতেই হয়। তবে এই ঈদের মৌসুমে পিসিতে গেমস খেলে কাটিয়ে দেওয়া লোকও আমাদের দেশে নেহাত কম নয়। আমি দেশের বিভিন্ন ব্লগে ভিডিও গেমস নিয়ে সেই ২০১১ সাল থেকে পোষ্ট লিখে আসছি, তাছাড়াও ব্যক্তিগতভাবে ২০০০ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত পিসি গেমিংয়ের সাথে সংযুক্ত ছিলাম। তাই বর্তমান এবং পিসি গেমিংয়ের গোল্ডেন যুগের প্রায় সবগুলো সেরা সেরা গেমস খেলার সৌভাগ্য আমার রয়েছে। আজকের পোষ্টটি পিসি গেমিংয়ের বেস্ট গেমসগুলোর সংক্ষিপ্ত আলোচনা নিয়েই সাজানো হয়েছে।
আজকের এই প্রথম পর্বে ২০০৫ সাল পর্যন্ত রিলিজ পাওয়া পিসি গেমসগুলোর মধ্যে সেরা গেমসগুলো নিয়েই সাজানো হয়েছে।
গোল্ডেন এইজ অফ পিসি গেমিং
আমাদের দেশে না হলেও বিদেশের দেশগুলোতে আমজনতা গেমিং উপভোগ করার জন্য গেমিং কনসোল কিনে থাকে। যেমন প্লেস্টেশন সিরিজ, এক্সবক্স সিরিজ ইত্যাদি। শুধুমাত্র সিরিয়াস প্রফেশনাল গেমিং যারা করে থাকেন তারাই হাই এন্ড পিসি বিল্ড করে থাকেন। কিন্ত আমাদের দেশে প্রফেশনাল গেমিং ছাড়াও ব্যক্তিগত বিনোদনের জন্য পিসিকেই গেমিং প্লাটফর্ম হিসেবে ৯৮% লোক ব্যবহার করে থাকেন।
পিসি গেমিং জগতের গোল্ডেন এইজ বা স্বর্ণযুগ ধরা হয় ১৯৯৫ থেকে ২০০৫ পর্যন্ত সময়কাল কে। MS DOS এর যুগে পিসিতে গেমস খেলার বিষয়টি পপুলার না হলেও মাইক্রোসফট যখন তাদের GUI যুক্ত উইন্ডোজ অপারেটিং সিস্টেম কে মেইনস্ট্রিমে বাজারজাত করা শুরু করে তখন থেকেই পিসিতে গেমস খেলার বিষয়টিও ধীরে ধীরে জনপ্রিয় হতে থাকে।
১৯৯৪/১৯৯৫ সালে DOOM সিরিজের গেমস পিসি আসার পর থেকে পিসি গেমিংয়ের চিত্রটাই বদলে যায়। ডট ডট গ্রাফিক্স দিয়েও যে চমৎকার এক্সপেরিয়েন্স পাওয়া সম্ভব সেটা তখনকার সময়ে DOOM, DOOM 2 গেমসগুলো প্রমাণ করে দেয়। গ্রাফিক্সের দিক থেকে ২০০১ সালের HALO CE গেমটি এখনো আমাদেরকে আশ্চর্য করে থাকে। তো চলুন ভূমিকায় আর কথা না বাড়িয়ে মূল পোষ্টে চলে যাই।
বেস্ট পিসি গেমস
বর্তমান যুগের অধিকাংশ গেমসের গ্রাফিক্স চোখ ধাঁধানো থাকে। আর তাই এই যুগের নতুন গেমারদের জন্য বেস্ট গেমস বলতে সেরা গ্রাফিক্সযুক্ত গেমসকে বুঝে থাকে। কিন্তু শুধুমাত্র গ্রাফিক্স চোখ ধাঁধানো হলেই যে গেমটি বেস্ট হবে সেটা কিন্তু বেশ ভুল।
একটি গেম সেরা হতে হলে তাতে কয়েকটি বিষয় থাকতে হবে:
১। যথাযথ কনট্রোল সিস্টেম।
২। ইন্টারেটিং থিম
৩। গ্রাফিক্স স্টাইল
৪। সাউন্ড এবং মিউজিক
৫। উপযুক্ত গেমপ্লে
৬। স্টোরিলাইন (অফলাইন বা সিঙ্গেল প্লেয়ার গেমসের জন্য)
৭। সলিড লেভেল ডিজাইন
৮। মন ছুঁয়ে যাওয়ার ক্যারেক্টার
৯। ইউনিক ফমুর্লা
লিস্টের সব গেমসই উপরের সবগুলো পয়েন্টকে বিবেচনা করেই তৈরি করা হয়েছে। উল্লেখ্য যে এই লিস্টটি কোনো জরিপ কিংবা ইন্টারনেট থেকে সার্চ দিয়ে তৈরি করা হয়নি, লিস্টটি আমার ব্যক্তিগত ১০ বছরের গেমিং লাইফের অভিজ্ঞতা থেকে বানানো।
৯০ দশকের সেরা গেমস
আমাদের বর্তমান যত ক্যাটাগরির গেমস রয়েছে যেমন রেসিং, শ্যুটিং, এডভেঞ্চার, একশন ইত্যাদি সব ক্যাটাগরির যাত্রা শুরু হয় ৯০ দশক থেকে। ৯০ দশকের সেরা কিছু গেমস নিচে দেওয়া হলো, এগুলো খেলতে হলে হয়তো আপনাকে কিছু Tweaks করে নিতে হবে কারণ বর্তমান উইন্ডোজ সংস্করণে এগুলো অনেকগুলোই চালু হতে কাহিনী করতে পারে।
DOOM II (1993)
সেরাদের সেরা ভিডিও গেমসের লিস্টটি শুরু করছি আমার জীবনের সর্বপ্রথম খেলা ভিডিও গেম DOOM II দিয়ে। ১৯৯৪ সালে গেমটি রিলিজ দেওয়া হয়। অর্থাৎ এটি একটি প্রায় ৩০ বছরের পুরোনো FPS (ফার্স্ট পারসন শুট্যার) ভিডিও গেম। একে FPS স্টাইলের গডফাদারও বলা হয়। গেমটি শুধুমাত্র আমেরিকাতেই তখনকার সময়ে প্রায় ৭৪ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের সেলস করতে সক্ষম হয়।
গেমটিতে আপনি একজন সৈন্য হিসেবে খেলবেন। গেমটিতে ৩০টির মতো লেভেল রয়েছে। প্রতিটি লেভেলে বিভিন্ন ধরণের Hellish দৈত্যদের বিরুদ্ধে আপনাকে যুদ্ধ করতে হবে। ৩০টি লেভেলের সাথে ২টি সিক্রেট লেভেলও রয়েছে। লেভেলগুলো তিনটি সেকশনে বিভক্ত, ১) UAC Underground/Outpost ২) City এবং ৩) Hell
ট্রিগার ওয়ার্নিং: তখনকার সময়ে তখনকার টেকনোলজিতে পিসিতে গেমটি খেলতে কোনো সমস্যা না হলে বর্তমান যুগের পাওয়ারফুল পিসিতে গেমটি খেলার সময় FPS অনেক বেশি থাকবে, আর এই কারণে গেমটির গ্রাফিক্স সিস্টেম (ডট গ্রাফিক্স) অনেকের মাথাব্যাথ্যার কারণ হতে পারে। আমি নিজে এখন এই গেমটি পিসিতে খেললে ৫/৬ মিনিটের মধ্যেই মাথাব্যাথ্যা শুরু হয়।
Duke Nukem 3D (1996)
Proper থ্রিডি গেমের স্বাদ এই গেমটিই তখনকার সময়ে সবার আগে নিয়ে এসেছিল। এটাও একটি FPS গেম। এখানে আপনি Duke Nukem চরিত্রে খেলবেন, যে পৃথিবীতে এলিয়েনের আক্রমণ ঠেকাতে একাই যুদ্ধ করে। গেমটির গেমপ্লে DOOM গেমটির সাথে অনেক মিল রয়েছে। কিন্তু দুটি গেম যদি আপনি খেলে থাকেন তাহলে জানবেন যে Duke Nukem 3D গেমটির গ্রাফিক্স কোয়ালিটির দিক থেকে অনেকটা এগিয়ে রয়েছে। গেমটি এখন খেললেও ইতিহাসের অন্যতম ইউনিক এক্সপেরিয়েন্স আপনি পাবেন, তবে মনে রাখতে হবে যে এটি একটি ১৮+ রেটিংয়ের গেম। অনেক Gore রয়েছে গেমটিতে।
Quake (1996)
DOOM সিরিজের নির্মাতাদের আরেকটি জনপ্রিয় সিরিজ হচ্ছে Quake । তখনকার সময়ে মাল্টিপ্লেয়ারে FPS ধাঁচের গেমিং জনপ্রিয় হয় এই গেমটির মাধ্যমে। সঠিকভাবে মাল্টিপ্লেয়ার উপকরণ আর যথাযথ থ্রিডি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয় এই গেমটিতে। গেমটি হয়তোবা এখন আর খেলতে পারবেন না তবে জেনে রাখা ভালো যে মাল্টিপ্লেয়ার FPS এর গডফাদার কে ছিলো।
Half-Life (1998)
লেজেন্ডারি হাফ লাইফ সিরিজের শুরু হয় ১৯৯৮ সালে মুক্তি পাওয়ার সিরিজের প্রথম গেমটি দিয়ে। গেমটি নির্মাণ করেছে Valve এবং মজার ব্যাপার হচ্ছে গেমটি Valve এর নির্মাণ করা প্রথম গেম। পৃথিবীতে এলিয়েন আক্রমণ হলে একটি রিসার্চ ফ্যাক্টরি থেকে একজন বিজ্ঞানীকে বেঁচে পালিয়ে আসতে হবে, এটাই হচ্ছে গেমটির মূল কাহিনী। গেমটি ৫০টির বেশি গেম অফ দ্যা ইয়ার পুরস্কর পেয়েছে।
Need For Speed II (1997)
লেজেন্ডারি NFS গেমস সিরিজের ২য় গেম এটি। এই গেমটি আপনাদের অনেকেই ছোটবেলায় খেলেছেন। এই গেমটির সাথে আপনাদের অনেকের মতো আমারও অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে। তখনকার সময়ের সেরা রেসিং গেম ছিল এটি।
Commandos (1998)
ছোটবেলায় বড় বড় ভাইদের দেখতাম খুব সিরিয়াস মুড নিয়ে এই গেমটি খেলতো। তখনকার সময়ে এই ওভার দ্যা স্কাই ক্যামেরা টাইপের গেমসগুলো মাথায় বুঝে আসতো না তাই এই গেমটি তখন বুঝি নি। আর এখনো বুঝি না। রিয়েল টাইম ট্যাকটিস টাইপের এই গেমটি খেলতে তেমন পাওয়ারফুল পিসির দরকার হতো না দেখেই তখনকার সময়ে আমাদের দেশে গেমটি বেশ চলেছে।
সেরা পিসি গেমস ২০০০ – ২০০৫
এই ৫টি বছরে পিসি গেমসের প্রচুর উন্নতি এবং বিপ্লব ঘটিত হয়। Halo, GTA, NFS, Call of Duty, Medal of Honor, Farcry সহ বেশ কয়েকটি জনপ্রিয় ভিডিও গেমস সিরিজের সূচনা হয় এই সময়কালেই।
Halo: Combat Evolved (2001)
তখনকার সময়ের সেরা গ্রাফিক্সওয়ালা গেম ছিল এটি। গ্রাফিক্সের পাশাপাশি গেমপ্লে, কনট্রোল, স্টোরিলাইন, সাউন্ড সহ প্রায় সব সেকশনেই গেমটি বাজিমাত করেছে। মাইক্রোসফটের গেম বলা কথা! ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই গেমটি একটি ফার্স্ট পারসন শ্যুটার ধাঁচের গেম। তবে পিসিতে গেমটি ২০০৩ সালে রিলিজ দেওয়া হয়। গেমটির পটভূমি ২৬০০ শতকে যেখানে আপনাকে একজন Supersoldier মাস্টার চিফের ভূমিকার খেলতে হবে। রিং শেপের একটি প্ল্যানেটে আপনাকে এলিয়েনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে হবে।
Grand Theft Auto III (2001)
লেজেন্ডারি জিটিএ সিরিজের প্রথম থ্রিডি গেম হচ্ছে এই জিটিএ ৩। ২০০১ সালে মুক্তি পাওয়া এই গেমটি সিরিজের ৫ম গেম। গেমটি লিবার্টি সিটির কাহিনী নিয়ে সাজানো হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো গেমটিতে আপনি Claude নামের চরিত্রে খেলবেন তবে গেমে একবারের জন্যও ক্যারেক্টারটি কোনো কথা বলেনি। কাহিনী হচ্ছে ব্যাংক লুটতে গিয়ে আপনাকে আপনার গার্লফ্রেন্ড চিট করে আহত করে ফেলে যায়। পরে পুলিশে হাতে ধরা খেয়ে জেল থেকে অন্য জেলে যাওয়ার সময় গাড়ি একসিডেন্টে পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে আসেন, তারপর রিভেঞ্জ এর নেশায় আপনি ধীরে ধীরে লির্বাটি সিটি আন্ডার ওয়ার্ল্ডের সাথে জড়িয়ে পড়েন।
গেমটি এখন মোবাইলেও আপনি খেলতে পারবেন।আর কিছুদিন আগে এর রিমাস্টারেড ভার্সনও বাজারে এসেছে। তবে অনুরোধ থাকবে মূল ভার্সনটি খেলার।
Need for Speed: Underground 2 (2004)
এই গেমটি যারা খেলনি তারা NFS সিরিজের একটি সেরা gold school গেমটি মিস করেছেন। ২০০৪ সালের এই গেমটি সিরিজের অষ্টমতম গেম। গেমটির মাধ্যমেই NFS গেমে ইন্টারএকটিভ স্টোরিলাইন দেওয়া শুরু হয়। আর সিরিজের এটাই প্রথম গেম যেখানে ওপেন ওর্য়াল্ড ফিচারটি দেওয়া হয়। মানে এই গেম থেকে সিরিজের গেমে ফ্রিতে গেমের দুনিয়ার ঘোরাঘুরি করতে পেরেছিল। গেমটিতে ৩১টির মতো গাড়ি রয়েছে। আর ক্যারিয়ার মোডে রয়েছে প্রায় ১০০ ঘন্টার মত গেমপ্লে। মজার ব্যাপার হলো আমি নিজে এখনো গেমটি পুরোপুরি ভাবে গেম ওভার করতে পারিনি। আমার এখনো মনে আছে ছোটবেলায় গেমটি খেলার জন্য বাবার কাছে কান্নাকাটি করে এনভিডিয়ার একটি ২৫৬ মেগাবাইটের গ্রাফিক্স কার্ড কিনেছিলাম।
Need for Speed: Most Wanted (2005)
লেজেন্ডারি ভিডিও গেম এটি। আমাদের দেশে হয়তো এই গেমটিই সবথেকে বেশি জনপ্রিয় একটি রেসিং গেম। এখন পর্যন্ত দেশে কোনো টুর্নামেন্ট হলে রেসিং গেম হিসেবে সেখানে এই ২০০৫ সালের গেমটি থাকেই। সিরিজের নবম গেম নিড ফর স্পিড মোস্ট ওয়ান্টেড। গেমটিতে রয়েছে ইন্টারেস্টিং স্টোরিলাইন এবং পুলিশের সাথে চমৎকার ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ধাঁচের গেমপ্লে আর অসাম মিউজিক। ২০১২ সালে গেমটির রিমেক বের হলেও সেই গেমটি এই অরিজিনালটির মতো ততটা ব্যবসা করতে পারেনি।
Grand Theft Auto: San Andreas
জিটিএ সিরিজের সর্বকালের সবথেকে সেরা ভিডিও গেম হচ্ছে স্যান এনড্রেস। ২০০৪ সালে মুক্তি পাওয়া এই গেমটির স্টোরিলাইন, গেমপ্লে, মিউজিক এগুলোই হচ্ছে গেমটির সবথেকে শক্তিশালী দিক। জিটিএ সিরিজের অন্য কোনো গেমস নাই যেখানে স্টোরিলাইন এত সুন্দর। গেমটি জিটিএ সিরিজের ৫তম গেম, গেমটি ২০০৪ সালে বাজারে আসে। গেমটিতে আপনি কার্ল জনসন (সিজে) এর ভূমিকায় খেলবেন। মায়ের মৃত্যুর খবর শুনে বিদেশে অনেকদিন থাকার পর সিজে নিজের দেশ স্যান এনড্রেসে ফিরে আসে। কিন্তু স্যান এনড্রেসে সেই আগের মতোই গ্যাঙ্গ লাইফ, পুলিশের দুনীর্তি এবং পাওয়ারফুল ক্রিমিনালদের মধ্য দিয়ে গেমটির স্টোরিলাইন এগিয়ে যায়
Project I.G.I. (2000)
গেমটির গ্রাফিক্স তেমন ভালো না, গেমপ্লেও তেমন ভালো না। কিন্তু তারপরেও গেমটি কেন সেরাদের সেরা পিসি গেমসের লিস্টে রয়েছে? সেটা তারাই বুঝবেন যারা ছোটবেলায় গেমটি তখনকার সময়ে খেলেছেন। গেমটি একটি ট্যাকটিক্যাল FPS গেম। বলতে গেলে বলা যায় আমেরিকান নিনজা টাইপের গেম এটি। বিট্রিশ সেনাবাহিনীর স্পেশাল টিমের এজেন্ট ডেভিড জোনস এর হয়ে আপনাকে গেমটি খেলতে হবে। গেমটিতে মিশনগুলো আপনাকে নিনজার মতো মানে সরাসরি যুদ্ধ না করে বুদ্ধি খাটিয়ে পার করতে হবে।
গেমটি তেমন ব্যবসা করতে পারেনি কারণ এতে AI এর প্রোগ্রামিং তেমন ভালো মতো করা হয়নি এবং গেমে মিশনের মাঝে কোনো সেভ করার অপশন নেই, মানে মিশনে মরে গেলে আপনাকে সেই মিশনের শুরু থেকেই আবার খেলতে হবে।
Half-Life 2 (2004)
সিরিজের ২য় গেম এটি। ১৯৯৮ সালের প্রথম গেমের সিকুয়্যাল হিসেবে ২০০৪ সালে গেমটি বাজারে আসে। গেমটিতে শ্যুটিং, পাজল এবং স্টোরিটেলিং এইসব উপাদান রয়েছে। প্রথম গেমের থেকে এখানে নতুন ফিচার হিসেবে গাড়ী এবং ফিজিক্স ভিক্তিক গেমপ্লে যোগ করা হয়েছে। এখানে সেই বিজ্ঞানী Gordon Freeman পৃথিবী থেকে এলিয়েনদের বিতারিত করতে চেষ্টা করে।
Call of Duty 2 (2005)
কল অফ ডিউটি সিরিজের ২য় গেম এটি। গেমটির মাধ্যমেই আমি মাল্টিপ্লেয়ার গেমিং জগতে প্রবেশ করি। সিঙ্গেল প্লেয়ার হিসেবে গেমটির স্টোরিলাইন সাজানো হয়েছে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধকে ঘিরে। গেমটি ল্যানে মাল্টিপ্লেয়ার হিসেবে ২০১৫ সাল পর্যন্ত খুলনায় আমি গেমিং টুর্নামেন্টে খেলে এসেছি। গেমটিতে রয়েছে প্রায় ২৭টি মিশন, আর গ্রাফিক্সও ২০০৫ সালের হিসেবে খারাপ ছিলো না।
The House of the Dead 2 (2001)
আরেকটি নস্টালজিক গেম এটি। মূলত ১৯৯৮ সালে রিলিজ পেলেও গেমটি পিসি ভার্সনে আসতে আসতে ২০০১ সাল লেগে যায়। গেমটি একটি হরর থিমের গান শুটার আরকেইড গেম। গেমটিতে স্টোরিলাইন অরিজিনাল হাউস অফ দ্যা ডেড (১৯৯৬) এর স্টোরিলাইনের সিকুয়্যাল হিসেবে সাজানো হয়েছে। গেমটিতে আপনাকে জুম্বি এবং অনান্য দৈত্যদের বিরুদ্ধে গুলি করে লেভেলে এগিয়ে যেতে হবে। আর প্রতিটি লেভেলে রয়েছে একটি করে ইউনিক বস।
The House of the Dead III (2004)
সিরিজের পরের গেম এটি। গ্রাফিক্সের দিক থেকে প্রচুর আপগ্রেড পাবেন এখানে। আমার এখনো মনে আছে ২০১০ সালের দিকে শ্যামলি শিশু পার্কে গিয়ে আরকেইডে এই গেমটি খেলতাম। গেমটিতে নতুন হিসেবে আপনি মিশন স্টোরিলাইন পাথ সিলেক্ট করতে পারবেন। গেমটিতে ৪টি ভিন্ন ভিন্ন Endings রয়েছে।
Hitman 2: Silent Assassin (2002)
হিটম্যান সিরিজের Old is Gold হিসেবে আপনি হিটম্যান ২ গেমটি খেলতে পারেন। প্রায় ২০ বছর আগের এই গেমটি খেলে আপনি অবশ্যই আশ্চর্য হবেন। ২০০২ সালে এই স্টেলথ ভিডিও গেমটি মুক্তি পায়। গেমটিতে আপনি একজন Genetically Enhanced খুনি এজেন্ট ৪৭ এর ভূমিকায় খেলবেন। এজেন্ট ৪৭ এবং তার ক্লোন ICA (International Contract Agency) তে কাজ করে। গেমটির শুরুতে দেখা যায় যে এজেন্ট ৪৭ তার আগের জীবন থেকে অবসর নিয়ে শান্তিতে জীবনযাপন করতেছিল, কিন্তু সম্প্রতি তার একমাত্র বন্ধু কিডন্যাপ হলে সে আবারো তার অভিসপ্ত জীবনে ফিরে আসে।
হিটম্যান সিরিজের গেমসগুলো যারা খেলেছেন এই গেমটির তার কোনো ব্যাতিক্রম নয়। গেমটির মিশনগুলোতে আপনাকে এক বা একাধিক ব্যক্তিকে খুন করতে হবে। আর সেটা করার জন্য আপনি স্টেলথ কিংবা গানফাইট যেকোনো পথ অনুসরণ করতে পারেন। তবে স্টেলথ হিসেবে বুদ্ধি খাটিয়ে গেমটি খেললে পূর্ণাঙ্গ মজা পাওয়া যাবে।
Max Payne (2001)
রকস্টার স্টুডিওর আরেকটি মাস্টারপিস গেমস সিরিজ হচ্ছে ম্যাক্স পেইন। ২০১২ সালের পর সিরিজের কোনো গেম রিলিজ না পাওয়ার কারণে হয়তো এই যুগের গেমাররা এই সিরিজের সাথে পরিচিত নাও হতে পারেন। সিরিজের প্রথম গেম ২০০১ সালে বের হয়। গেমটি তার বুলেট টাইম ফিচারটির জন্য জনপ্রিয় হয়ে উঠে। সামনে দিকে জাম্প করে Slow Motion এ গুলি করাকেই বুলেট টাইম বলা হয়। সামনের দিকে গেমটি এবং এর সিকুয়্যাল ম্যাক্স পেইন ২ এর রিমেক আসছে বলে জানা গিয়েছে।
DOOM 3 (2004)
আপনার যদি কোনো পাওয়ার ফুল পিসি না থাকে এবং আপনি যদি DOOM সিরিজের ফ্যান হয়ে থাকেন তাহলে ২০০৪ সালের ডুম ৩ গেমটি খেলে দেখতে পারেন। নস্টালজিক এবং মাস্টারপিস এই গেমটির স্টোরিলাইন , লেভেল ডিজাইন বেশ উন্নত। তবে ২০১৬ সালের পর যেই DOOM গেমসগুলোর বের হয়েছে তাদের সাথে এটার কোনো মিল নেই। কারণ বর্তমানের DOOM গেমসগুলো Run-&-Gun টাইপের বেশ ফাস্ট পেস গেম, আর এই ২০০৪ সালের আগের গেমগুলো বেশ স্লো টাইপের।
বি:দ্র: এটাই একমাত্র গেম যেটার গ্রাফিক্সের কারণে সেরা লিস্টে রাখা হয়েছে। গেমটিতে তখনকার সময়ে সর্বপ্রথম রিয়েল টাইম শ্যাডো টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়। বলতে পারেন তখনকার সময়ের RTX ফিচার এটি।
গেমটিতে আপনি একজন স্পেস মারিন হিসেবে খেলবেন। গেমটির পটভূমি ২১৪৫ সালের মঙ্গলগ্রহে। মঙ্গলগ্রহে Survival Horror গেম এটি। মঙ্গলগ্রহ শুনলেই কেমন জানি গাঁয়ে কাটা দিয়ে উঠে। আমার এখনো মনে আছে ২০১২ সালে গেমটির BGF Edition তখনকার ৩জি মডেম দিয়ে ১৬ ঘন্টায় ডাউনলোড করেছিলাম। বর্তমানে আপনি অরিজিনাল DOOM 3 গেমটি নেটে পাবেন না। তবে BGF Edition টা পাবেন সেখানে ২টি DLC সহ দেওয়া রয়েছে। গেমটি ট্রায় করে দেখুন। তবে যারা ইতিমধ্যেই মর্ডান DOOM সিরিজের গেমগুলো খেলেছেন তাদের কাছে এই গেমটি তেমন একটা মজার লাগবে না।
Manhunt (2003)
জনপ্রিয় নির্মাতা রকস্টার স্টুডিও একটি বোল্ড মুভ বলতে পারেন এই ম্যানহান্ট সিরিজ। সিরিজের ২টি গেমই বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিষিদ্ধ হয়েছে। হিসেবে এটি একটি স্টেলথ গেম কিন্তু এখানে আপনাকে বিভিন্ন উপায়ে মানুষ খুন করতে হবে। জিটিএ সিরিজে অহরহ মানুষ খুন করলেও এই গেমে এটা এমন বিশ্রি ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে যে এর Gore এর পরিমাণের জন্যই গেমটি নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
গেমটিতে আপনাকে ফাঁসির আসামি হিসেবে খেলতে হবে। গেমে একজন snuff films নিমার্তা আপনাকে বিভিন্ন ক্রিমিনাল গ্যাঙ্গ মেমবারদেরকে খুন করে প্রতিটি লেভেল পার করতে বলে। আপনার খুনগুলো রের্কড করে সে ফিল্ম বানাচ্ছে। আর আপনি বিট করতে পারলে ফাঁসি থেকে আপনাকে মুক্তি দেওয়া হবে।
Resident Evil 4 (2004)
লেজেন্ডারি রেসিডেন্ট ইভিল সিরিজে অন্য সেরা গেম এটি। যারা এখনো গেমটি খেলননি এখনি গেমটি ডাউনলোড করে খেলতে বসে ফেলুন। এখন গেমটি খেললে এর গ্রাফিক্স আপনাকে মুগ্ধ না করলেও লেভেল ডিজাইন, সাউন্ড, গেমপ্লে এবং স্টোরিলাইন আপনাকে মুগ্ধ করবেই। এটি একটি Survival Horror থার্ড পারসন ভিডিও গেম। সরকারের স্পেশাল এজেন্ট Leon S. Kennedy এর ভূমিকায় আপনি খেলবেন। গেমে প্রেসিডেন্ট এর মেয়ে Ashley Graham কে একটি গ্রাম্য Cult কিডন্যাপ করে স্পেন এর Rural অঞ্চলে লুকিয়ে রাখে। আর আপনার মিশন হচ্ছে মেয়েটিকে উদ্ধার করা। কিন্তু উদ্ধার করতে গিয়ে দেখেন লে হালুয়া!
গেমটির অফিসিয়াল রিমেক আগামী বছর (২০২৩) সালে আসতে যাচ্ছে।
Grand Theft Auto: Vice City (2002)
এই গেমটি নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। ২০ বছর আগের গেম হলে এখনো যদি দেশের কোনো গেমিং ক্যাফেতে যান তাহলে কেউ না কেউ এই গেমটি এখনো খেলছে দেখবেন। দেশের মেইনস্ট্রিম লেভেলের সবথেকে জনপ্রিয় গেম হচ্ছে এই ভাইস সিটি। কারণ ২০০৬, ২০০৭ সালে গেমটির আনঅফিসিয়াল বাংলা ভার্সন বের করে বুয়েটের কয়েক জন শিক্ষার্থী। বাংলায় একে “বাংলা ভাই” গেম বলে চালানো হতো।
মজার ব্যাপার হলো যে ভদ্রলোক গেমটি বাংলায় রুপান্তর করেছেন তিনি গেমটিকে দেশের আইনে কপিরাইটও করেছিলেন! গেমটিতে আপনি টমি ভার্সেট্টির ভূমিকায় খেলবেন। গেমটির পটভূমি ১৯৮৬ সালের ফিকশনাল ভাইস সিটির ক্রিমিনাল জগৎ নিয়ে সাজানো হয়েছে। গেমটি নিয়ে বেশি কিছু বলার নেই। অলরেডি গেমটির রিমেক এবং অ্যান্ড্রয়েড ভার্সন পাওয়া যাচ্ছে। গেমটি মোবাইলে খেলে নস্টালজিক হতে পারেন!
পরিশিষ্ট
এই ছিলো সর্বকালের সেরা পিসি গেমস সিরিজের ২০০৫ সাল পর্যন্ত রিলিজ পাওয়া সেরা ভিডিও গেমস নিয়ে আমার পোষ্ট। আগামী পর্বে ২০০৬ থেকে ২০১৫ এবং শেষ পর্বে ২০১৬ থেকে বর্তমান সময়ের সেরা পিসি গেমস নিয়ে আলোচনা থাকবে। আজকের পোষ্টে হয়তো অনেক গেমসই বাদ গিয়েছে যেগুলো ছোট বেলায় আমরা খেলতাম, যেমন Virtua Cop 2, DX Ball 2 কিন্তু এগুলো লিস্টে রাখা হয়নি কারণ এগুলে নস্টা লজিক গেমস হলেও ‘সেরা গেমস’ তালিকায় বসানোর মত না। আসা করবো আজকের পোষ্টের গেমসগুলো দেখে আপনিও আমার মতো নস্টালজিক হয়ে গিয়েছেন!