দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব কম্পিউটার বা স্মার্ট ডিভাইস ব্যবহার করি সবগুলোরই মোটামুটি মুল ভিত্তি একই ধরনের, সেগুলোকে ট্রাডিশনাল বা ক্লাসিকাল কম্পিউটার বলা যায়। ক্যালকুলেটর থেকে শুরু করে ডেস্কটপ ল্যাপটপ ,সার্ভার পিসি, এমনকি সুপারকম্পিউটার ,সবই আসলে একই ধারণার উপরে কাজ করে, দিনশেষে সেগুলোর working principle একই। তবে আরো উন্নত,শক্তিশালী কম্পিউটার বানানোর ব্যাপারে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। আজকে কথা হবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার (Quantum Computer) এর ধারণা নিয়ে। এটা কি, ট্রাডিশনাল কম্পিউটার থেকে কেন এটা ভিন্ন, কবে নাগাদ এর বাস্তব অস্তিত্ব আমরা দেখতে পেতে পারি, কেন কোয়ান্টাম কম্পিউটার গুরুত্বপুর্ণ, কিভাবে এটি কাজ করবে, এর সম্ভাব্য সুবিধা কিংবা অসুবিধা, সবকিছু নিয়েই কথা হবে আজকের লেখায়।
কোয়ান্টাম কম্পিউটার কি?? What is Quantum Computer
কম্পিউটার কি তা তো আমরা জানিই, যেই ডিভাইস গননার মাধ্যমে বিভিন্ন তথ্য সংরক্ষণ ও বিশ্লেষণ করে, গাণিতিক হিসেব নিকেশ এর মাধ্যমে যাকে দিয়ে বিভিন্ন ধরনের কাজ করিয়ে নেওয়া যায় তাকেই কম্পিউটার বলে। এইসব কাজের মধ্যে দুটি সংখ্যা যোগ করা গুণ করা ভাগ করা থেকে শুরু করে ভিডিও দেখা, গেম খেলা, গান শোনা, গ্রাফিক্স ডিজাইন, জটিল জটিল সব ক্যালকুলেশন,রিসার্চ, সিমুলেশন, ইন্টারনেট ব্রাউজ, স্যাটেলাইট মনিটরিং সবই অন্তর্ভুক্ত। দিনশেষে তথ্য সবই ১ ও ০, দুটি সংখ্যার মাধ্যমেই সংরক্ষিত,বিশ্লেষিত হয়ে থাকে। তথ্যের ক্ষুদ্রতম একক বলা হয় বিট কে। আর ৮টি বিট মিলে হয় এক বাইট।
অন্যদিকে , যদি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কথা যদি বলি, কোয়ান্টাম কম্পিউটার মুলত পদার্থবিজ্ঞানের একটি শাখা কোয়ান্টাম মেকানিক্স বা কোয়ান্টাম বলবিদ্যার উপর ভিত্তি করে কাজ করে। বিট এর বদলে এখানে মৌলিক বা ক্ষুদ্রতম একক হিসেবে ব্যবহার করা হয়/হবে যেটা,তার নাম হচ্ছে qubit (কিউবিট)।
some facts
আমরা আরো বিস্তারিত আলোচনায় যাব,তার আগে আরো কিছু ছোট ছোট বিষয়ে আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করছি।
- প্রথমত কোয়ান্টাম কম্পিউটারের কোনো বাস্তব অস্তিত্ব কিছুদিন আগেও ছিল না। একটা কন্সেপ্ট বা হাইপোথিটিকাল/কাল্পনিক ডিভাইস হিসেবেই এটা প্রচলিত ছিল। তবে বর্তমানে কোয়ান্টাম কম্পিইউটারের বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে।
- কিন্ত এটা নিয়ে বিজ্ঞানীরা কাজ করে যাচ্ছেন। অর্থাৎ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ডেভেলপমেন্ট চলছে।
- কিন্ত কবে নাগাদ এটা সম্পুর্ণভাবে প্রস্তুত হবে তা সম্পর্কে এখনো স্পষ্টভাবে বলা সম্ভব নয়।
- তবে ক্লাসিকাল কম্পিউটারের শুরুর দিকে বিশাল বিশাল আকৃতির কম্পিউটার দেখা যেত, কোয়ান্টাম কম্পিউটার ও সেরকম অবস্থাতেই রয়েছে বর্তমানে। সুপারকম্পিউটার বলতে আমরা বিশাল রেফ্রিজারেটর এর মত যে ডিভাইসগুলোর কথা ভেবে থাকি, ঠিক সেরকমই।
- ল্যাব বা রিসার্চ এরিয়ার গন্ডি পার হয়ে মানুষের ব্যবহারের জন্য, সর্বস্তরে পৌছানোর জন্য কত সময় লাগবে তা এখনো বলা যাচ্ছে না।
- তবে শেষ পর্যন্ত সফলভাবে ও কার্যকরীভাবে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানানো সম্ভব হবে কি না, হলেও তা একদম মাঠ পর্যায়ে,মানুষের ঘরে ঘরে পৌছানো যাবে কি না, সেরকম ভাবে বানানো যাবে কি না, তার আকার আকৃতি কেমন হবে, স্মার্টফোনের মত হাতের মুঠোয় আনা সম্ভব হবে কি না,হলেও তা করতে আরো কত সময় লাগবে তার ব্যাপারেও এখনো কোনো ধারণা নেই।
- বেশ কিছু চ্যালেঞ্জ, বাধা ও সমস্যা রয়েছে বর্তমানের কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলোতে। সেগুলো কাটিয়ে উঠতে কত টা সময় লাগবে তাও বলা কঠিন।
কোয়ান্টাম মেকানিকস (Quantum Mechanics)
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মুল ভিত্তি কোয়ান্টাম মেকানিক্স। এটার ব্যাপারে আমরা আলোচনা করবো অবশ্যই, তবে তার আগে এটা জেনে রাখা ভালো যে আজকালকার দৈনন্দিন জীবনে আমরা যেসব ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস ব্যবহার করছি, তার সবকিছুরই building blocks বা কাচামাল বলতে যেসব ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র যন্ত্রাংশের নাম আমরা জানি, তার সবই আসলে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপর ভিত্তি করেই প্রস্তত। যেমন মেমোরি ডিভাইস এর মধ্যে যে মেমোরি সেল থাকে, ছোট ছোট ডায়োড,ট্রাঞ্জিস্টর, আইসি যেগুলো আধুনিক ডিভাইসগুলোতে ব্যবহার করা হয় সবকিছুই Principles of quantum mechanics এর উপরেই ভিত্তি করে প্রস্তত করা হয় ও সেগুলোর operation, circuit behavior ও সম্পুর্ণরুপে Quantum Mechanics কেই অনুসরণ করে।
তবে, তারপরেও গতানুগতিক কম্পিউটার আর আমাদের আলোচ্য বিষয়,কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মধ্যে পার্থক্যের জায়গা হলো এটা যে ডিভাইসের ছোট ছোট উপাদানগুলোর পাশাপাশি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের রিয়েল টাইম অপারেশন ও সম্পুর্ণ রুপে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর উপরেই নির্ভরশীল।
পার্থক্য
কোয়ান্টাম মেকানিক্স টা আসলে কি তা আলোচনা করার সময় ও বোধহয় এসে গিয়েছে। পদার্থবিজ্ঞানে মোটা দাগে মেকানিক্স বা বলবিদ্যা দুই ভাগে বিভক্ত। এক ক্লাসিকাল বা Traditional Mechanics, আর একটি অপেক্ষাকৃত নতুন ,Quantum Mechanics। ক্লাসিকাল মেকানিক্স এর বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা,সমস্যা ও ভুল থেকেই মুলত কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর প্রয়োজন,চাহিদা, গুরুত্ব ও ব্যবহার কে সমর্থন করে। প্রথাগত বলবিদ্যা ও কোয়ান্টাম বলবিদ্যার কিছু মুল পার্থক্য আমরা এই পর্যায়ে দেখে নিতে পারি-
- পদার্থের অভ্যন্তরে ,নিউক্লিয়াসের উপাদানসমুহ কি কি, তারা কিভাবে আছে, তাদের বৈশিষ্ট্য, বেগ,ভরবেগ,চলাফেরার স্বরুপ এগুলো কিছুই প্রথাগত পদার্থবিজ্ঞান, প্রথাগত বলবিদ্যা সঠিকভাবে ব্যাখা করতে পারে না। বরং, বস্তুর আকার যত ছোট হয়ে যায় ও বেগ যত বৃদ্ধি পায়, প্রথাগত বলবিদ্যা দ্বারা তাকে ব্যাখা করা অনেক বেশি কঠিন হয়ে যায় । অন্যদিকে , পদার্থের মুল ভিত্তি কি কি, পদার্থের মধ্যে কি কি মুল উপাদান আছে, তারা কিভাবে আছে, তাদের বৈশিষ্ট্য, বেগ,ভর,ভরবেগ ,পরিভ্রমণ এর স্বরুপ, কি কি ধরনের শক্তি রয়েছে,শক্তিসমুহের পাল্লা কত এই সমস্ত প্রশ্নের উত্তর অত্যন্ত সফলতার সাথে দিতে পারে Quantum Mechanics~Quantum Physics।
- প্রথাগত গণনা, ধ্রুবক যোগ বিয়োগ গুণ ভাগ বা বিভিন্ন সমীকরণ এর বাইরে Quantum Mechanics একটি নতুন বিষয় এর অবতারণা করে, সেটার নাম হচ্ছে Wave Function। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর কাজ করার অস্ত্র,মুল ভিত্তি সব কিছুই বলা যায় Wave Function কে। কোনো সময়ে কোনো একটা particle এর সমস্ত তথ্য যে Mathematical Function এর মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় তাকে বলে Wave Function। একে গ্রিক অক্ষর শাই দ্বারা প্রকাশ করা হয়।
কিছু মুলনীতি
- Uncertainty principle: হাইজেনবার্গের এই বিখ্যাত নীতিটি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর অন্যতম প্রধান Postulates গুলোর মধ্যে একটা। এই নীতি অনুসারে, একই সময়ে কোনো বস্তুর ভরবেগ ও অবস্থান সঠিকভাবে অনুমান করা সম্ভব নয়।
- প্রথাগত বা ক্লাসিকাল বলবিদ্যা একটি বস্তুর ভবিষ্যত অবস্থা সরাসরি বলে দিতে পারে । অমুক বস্তুটি r পয়েন্টে বর্তমানে আছে, কিছুক্ষণ পর সে কোথায় থাকবে সেটা ক্লাসিকাল মেকানিক্স দাবি করতে পারে, কিন্ত Quantum Mechanics এর ক্ষেত্রে ব্যাপারটি একটু আলাদা। এখানে মুলত probability বা সম্ভাবনার মাধ্যমে উত্তর প্রদান করা হয়। কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর মতে নির্দিষ্ট সময় পর উল্লেখিত বস্তটি r1 থেকে r2 জায়গার মধ্যে থাকতে পারে বা থাকার সম্ভাবনা আছে, এবং সেই সম্ভাবনা কতটা সেটাও calculation মাধ্যমে বের করা যায়।
- বেশ কিছু নিজস্ব mathematical tools রয়েছে Quantum Mechanics এর যা Classical থেকে সম্পুর্ণ আলাদা, এগুলোকে Operator বলা হয়।
- কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর মতে Energy Discrete, Continuous নয়, সুর্য থেকে যে আলো আসে, সেগুলোও ছোট ছোট প্যাকেট বা quanta আকারে আসে।
- কোয়ান্টাম মেকানিক্স আলোর দ্বৈতরুপ, সুপারকন্ডাক্টর, কোয়ান্টাম টানেলিং এর মত বিষয় গুলো খুবই সফলতার সাথে ব্যাখা করতে পারে।
- ক্লাসিকাল বলবিদ্যায় ম্যাক্সওয়েলের ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক থিওরি গুলোই মুল ভুমিকা পালন করে ,অন্যদিকে কোয়ান্টাম মেকানিক্স এর মুল ভিত্তি হলো প্লাংক এর থিওরি।
- ক্লাসিকাল বলবিদ্যার অন্যতম মুল ভিত্তি হলো নিউটনের সুত্র সমুহ, অন্যদিকে Uncertainty principle হচ্ছে Quantum mechanics এর মুল কাঠামোগুলোর মধ্যে একটি।
Quantum computer এর কিছু বৈশিষ্ট্য ও classical এর সাথে পার্থক্য
- আমরা আগেই জেনেছি যে Bit এর পরিবর্তে Quantum Computer এ তথ্যের একক হিসেবে Qubit এর ব্যবহার হয়ে থাকে। এই Qubit এর সাথে bit এর পার্থক্যের জায়গাটা হচ্ছে যে, bit এর হিসেবে শুধুমাত্র 1 অথবা 0 এর মধ্যে যেকোনো একটিই একক সময়ে থাকতে পারে। অন্যদিকে Qubits , superposition property এর কারণে একই সাথে দুটি state এ থাকতে পারে, অর্থাৎ ১,০ বা অন/অফ কিংবা True/false অবস্থা একই সাথে প্রকাশ করতে পারে Qubits।
- আরেকটি property হচ্ছে entanglement, যার মাধ্যমে Qubits গুলো একটি আরেকটির সাথে এমনভাবে যুক্ত থাকে যে একটি স্টেট এর সাথে আরেকটি স্টেট তাৎক্ষণিক ভাবে correlated হয়, তাদের মধ্যকার দুরত্ব যতই থাক না কেন।। এই বৈশিষ্ট্যের কারণেই কোয়ান্টাম কম্পিউটার Qubits manipulate করে করে দ্রুত জটিল জটিল সমস্যা সমাধান করতে পারে।
- আধুনিক বা প্রচলিত কম্পিউটারগুলোতে যে লজিক গেটের প্রিন্সিপ্যাল ব্যবহার হয় তা আমরা জানি, অনুরুপ ভাবে,Quantum Computer এ লজিক গেটের সিরিজের মাধ্যমে ডাটা ট্রান্সমিশন হয়। গেটের মধ্য দিয়ে যাওয়ার সময় যোগ বিয়োগ,গুণ ভাগ এর মত অপারেশন গুলোর মাধ্যমে 1,0 এর অবস্থা যেমন বিপরীত হয়, ১ ,০ হয় বা ০,১ হয়, তেমনিভাবে Qubit গুলোর state ও এই Qunatum Gates এর মাধ্যমে Change হয় Quantum Computer এ।
- উপরে উল্লেখিত Qubit কোয়ান্টাম মেকানিক্সের সমস্ত নীতি ব্যবহার করেই মুলত কাজ করে থাকে।
প্যারালেল কম্পিউটিং
- Parallel and exponential Computing: Quantum Computer এর আরো একটি বৈশিষ্ট্য এটা। একই সাথে একাধিক ক্যালকুলেশন করতে পারার যে ক্ষমতা, সেটাই Parallel computing। যেটা Quantum Computer এর দ্রুততার একটা বড় কারণ।একই সাথে একাধিক কাজ সম্পন্ন করা,সেটাও আবার অনেক বেশি দ্রুত গতিতে, এটা কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে ভিন্ন এক মাত্রায় পৌছে দেওয়ার নেপথ্যে রয়েছে।
- কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ভেতরের যন্ত্রাংশ সম্পুর্ণ আলাদা,ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের মত নয়।
- কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সমস্ত অপারেশন quantum algorithm এর মাধ্যমে হয়ে থাকে, traditional algorithm অনুসারে নয়।
- data measurement ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারে অনেকটাই ভিন্ন। bits কে কোনো ধরনের প্রভাবিত না করে, affect না করে measure করা যায় ক্লাসিক্যাল কম্পিউটিং এ। কিন্ত কোয়ান্টাম কম্পিউটারে Qubit এর measurement এর কারণে এর superposition state 1,0 হয়ে যেতে পারে যার জন্য Qubits এর সুপারপজিশনের ইনফরমেশন সম্পুর্ণ নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এই randomness এর ব্যাপারটি কোয়ান্টাম এলগরিদম এর ডিজাইন ও এপ্লিকেশনে প্রভাব ফেলে।
- কিউবিট এর ধারণাটা একটা Continuous wave এর সাহায্যে দেওয়া যায়, wave এর crust ও trough আছে। এগুলোকে ০,১ ধরে একক সময়ে probability এর মাধ্যমে প্রকাশ করা যায়। প্রতিটি কিউবিটের ০,১ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, একাধিক কিউবিটের প্রবাবিলিটি একত্রিত হতে পারে ,construtively(একই probability state এ) অথবা destructively (বিপরীত phase এ )
Different approaches
quantum mechanics,quantum physics এর জগতকে বিভিন্নভাবে এখন পর্যন্ত ব্যবহার করে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানানোর চেষ্টা করা হয়েছে। মুলত কিভাবে Qubits গুলো বানানো হচ্ছে, তার উপরেই নির্ভর করে এক একটি পদ্ধতির পার্থক্য। প্রত্যেকটিরই সুবিধা অসুবিধা রয়েছে-
- Superconducting qubits: এই পদ্ধতিতে সুপারকন্ডাক্টিং বিভিন্ন materials ব্যবহার করে qubits তৈরী করা হয়। scalability এর দিক দিয়ে এটা বেশ সফল। গুগল,আইবিএম,ইন্টেলের মত জায়ান্ট কোম্পানি সুপারকন্ডাক্টিং কিউবিট দিয়ে কোয়ান্টাম কম্পিউটার ডেভেলপ করছে। গুগলের সম্প্রতি যে কোয়ান্টাম কম্পিউটারটি নিয়ে চারিদিকে আলোচনা হচ্ছে,সেটায় ৭০ টা কিউবিট রয়েছে।
- Trapped ion qubits:এই পদ্ধতিতে তড়িৎচৌম্বক ক্ষেত্র বা ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড ব্যবহার করে আয়নগুলোকে trap and manipulate করে Qubit বানানো হয়। IonQ,Honeywell এর মত কোম্পানি গুলো এই প্রযুক্তিতে কোয়ান্টাম কম্পিউটার বানাচ্ছে।
- Topological qubits: এই পদ্ধতিতে Anyon (not anion) নামের বিশেষ quasiparticle ব্যবহার করা হচ্ছে। এগুলো বিশেষ ধরনের পার্টিকেল যাদের বৈশিষ্ট্য bosons ও fermions এর মাঝামাঝি কিন্ত কোনোটাই নয়। এই পদ্ধতির সম্ভাবনা নিয়ে গবেষণা চলছে।
- কোয়ান্টাম ডটঃ এগুলো এক ধরনের semiconductor particle যেগুলো electron trap and control করতে পারে যা দিয়ে qubits বানানো সম্ভব।
গবেষণা সবসময়ই চলমান রয়েছে যে আরো শক্তিশালী,কার্যকরী qubits কিভাবে বানানো সম্ভব যেগুলোতে error rates কম হবে,decoherence কম হবে, accuracy,speed ,efficiency বেশি হবে।
Quantum Computer এর মুল অংশ কি কি?
আমরা সবাই জানি যে, আধুনিক কম্পিউটার প্রসেসর (যা কি না ALU,CU দিয়ে গঠিত), মাদারবোর্ড,প্রাইমারী-সেকেন্ডারি মেমোরি,পাওয়ার সাপ্লাই ইত্যাদি দিয়ে গঠিত, এবার চলুন জেনে নেওয়া যাক Quantum Computer কি কি দিয়ে গঠিত-
- Qubit: এ সম্পর্কে আমরা আগেই মোটামুটি জেনে এসেছি। আরো কিছু বৈশিষ্ট্য জেনে নিতে পারি, কিউবিট এর বাস্তব অস্তিত্ব রয়েছে ইলেক্ট্রন স্পিন, সুপারকন্ডাক্টিং সার্কিট বা ট্রাপড আয়ন রুপে।
- Quantum Gate: এটার সম্পর্কেও আমরা একটু আগে কিছুটা ধারণা পেয়েছি। Qubit এর Quantum state manipulate,change করাই Quantum Gate এর কাজ। বোঝার সুবিধার্থে আমরা আপাতত Classical logic gate এর সাথে একে মেলাতেও পারি।উদাহরণঃ Pauli-X gate (বিট flip), Hadamard Gate (সুপারপজিশন),CNOT Gate(এনট্যাঙ্গলমেন্ট) ইত্যাদি।
- কোয়ান্টাম সার্কিটঃ একাধিক কোয়ান্টাম গেট মিলে কোয়ান্টাম সার্কিট তৈরী করে যার মাধ্যমে প্রয়োজন অনুসারে ধাপে ধাপে Qubits এর states চেঞ্জ করে final state এ নিয়ে যাওয়া হয়। একাধিক কোয়ান্টাম সার্কিট মিলে আবার কোয়ান্টাম এলগরিদম তৈরী করে । কোয়ান্টাম সার্কিটের কাজ হচ্ছে কোয়ান্টাম ইনফরমেশন এর flow কে visualize করা ও কোয়ান্টাম কম্পিউটেশন এর mathematical representation করা।
- Measurement: কোয়ান্টাম কম্পিউটার থেকে ‘ক্লাসিক্যাল ইনফরমেশন’ বের করে আনার কাজ করে Measurement। এর মাধ্যমে কিউবিট এর কোয়ান্টাম স্টেট পর্যবেক্ষণ করে সেগুলোকে ক্লাসিক্যাল বিটে ভেঙে ফেলার কাজ ও করা হয়।
মেমোরি ও আছে
- মেমোরি ছাড়া কম্পিউটারের ধারণা হজম করা যে কারো পক্ষেই কঠিন। তবে, পাঠকদের নতুন করে আর বিস্মিত হতে হবে না, কেননা কোয়ান্টাম কম্পিউটারেও মেমোরি রয়েছে যেটার নাম কোয়ান্টাম মেমোরি বা কিউবিট স্টোরেজ। qubits গুলোর অবস্থা ধরে রাখার জন্যই মুলত মেমোরির প্রয়োজন। এই ব্যাপারটি কোয়ান্টাম কম্পিউটিং এর অন্যতম কঠিন একটি দিক।
- কন্ট্রোল ইলেক্ট্রনিক্সঃerror control. qubit coherence ধরে রাখা ,gates manipulation, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি কাজে কন্ট্রোল ইলেক্ট্রনিক্স এর প্রয়োজন হয়। কন্ট্রোল ইলেক্ট্রনিক্স গঠিত হয় এমপ্লিফায়ার, পালস জেনারেটর, ক্রায়োজেনিক সিস্টেম ইত্যাদি জটিল ও সুক্ষ যন্ত্র দ্বারা।
- ক্লাসিক্যাল কম্পিউটার ইন্টারফেসঃ কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে কন্ট্রোল, কমিউনিকেট ও ইন্সট্রাকশন প্রদানের জন্য ক্লাসিকাল কম্পিউটারের প্রয়োজন হয় । কোয়ান্টাম কম্পিউটারকে ক্লাসিকাল কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত করার কাজটা করে Classical Computer interface। ইনপুট আউটপুট,রেজাল্ট এনালাইসিস ও এরর কারেকশন এর কাজে ক্লাসিকাল কম্পিউটার অপরিহার্য।
- Quantum Registers হচ্ছে কিউবিটস এর সমষ্টি যা ক্লাসিক্যাল কম্পিউটারের র্যামের মত কাজ করে ।
- কিউবিটগুলোর খুবই নিম্ন তাপমাত্রায় অপারেশন নিশ্চিত করতে ও স্টেবিলাইজ করতে Cryogenic coolers এর প্রয়োজন হয়।
সুবিধাঃ
কোয়ান্টাম কম্পিউটারের মুল সুবিধার জায়গাগুলো আসলে কি? কেন এটা গুরুত্বপুর্ণ?? কেন এটা দুনিয়া বদলে দিতে পারে,কম্পিউটিং এর ভবিষ্যত বদলে দিতে পারে?? চলুন জেনে নেওয়া যাক ক্লাসিকাল কম্পিউটার থেকে কেন Quantum Computer Superior।
- Speed and parallelism: আমরা আগেই জেনে এসেছি যে Quantum Computer অনেক বেশি দ্রুত ক্যালকুলেশন করতে পারে, সমস্যা সমাধান করতে পারে। বিশেষ করে Qubits ,entanglement এর ব্যাপারগুলোর জন্য ও একক সময়ে ১,০ এর প্রকাশ করার সুবিধার জন্য parallel computing খুবই সহজ হয়ে যায় কোয়ান্টাম কম্পিউটারে। প্রথমত এগুলো অনেক বেশি দ্রুত ক্যালকুলেশন করতে পারে, দ্বিতীয়ত একসাথে একাধিক ক্যালকুলেশন করতে পারে,যেটাকে আমরা বলি “সমান তালে কাজ করা”। এর ক্ষমতা সম্পর্কে কিছু ধারণা আমরা হয়তো লেখার শেষ অংশে Google,IBM এর Quantum Computer এর আলোচনার মধ্যে পাব।
- Machine learning algorithm and artificial intelligence: ম্যাশিন লার্নিং এলগরিদম গুলোকে আরো উন্নত, আধুনিক ও কার্যকরী অবস্থায় নিয়ে যাওয়ার সক্ষমতা রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের। প্যারালাল কম্পিউটিং ও একই সাথে ব্যাপক পরিমাণ ডাটা নিয়ে কাজ করার ক্ষমতা থাকায় অপ্টিমাইজেশন,প্যাটার্ন রিকগনিশন ও ডাটা এনালাইসিস এর মত কাজগুলো অনেক বেশি দ্রুততার সাথে করা সম্ভব হবে।
- অপ্টিমাইজেশন, ক্রিপ্টোগ্রাফি, ম্যাটেরিয়াল সিমুলেশনের মত জটিল জটিল সমস্যা দ্রুত ও সঠিকভাবে সমাধানে Quantum Computers ,classical computer থেকে অনেক বেশি এগিয়ে।
- Data encryption, Communication and information security এর ক্ষেত্রেও অনেক শক্তিশালী Algorithm দিতে পারে কোয়ান্টাম মেকানিক্স যা ডিজিটাল সিকিউরিটিকে অন্য একটি ধাপে নিয়ে যেতে পারে।
- পদার্থবিজ্ঞান,গণিত,রসায়ন জীববিজ্ঞান ,ফার্মেসি, ম্যাটেরিয়াল সাইন্স বা ইঞ্জিনিয়ারিং এর অন্যান্য যেসব শাখা রয়েছে, সেসব শাখার বিভিন্ন গুরুত্বপুর্ণ গবেষণা,সিমুলেশন, ক্যালকুলেশন এর কাজ অনেক দ্রুত ও সহজভাবে করার সক্ষমতা রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের। এর ফলে বিভিন্ন আধুনিক ও কার্যকরী ম্যাটেরিয়াল তৈরী, ম্যাটেরিয়াল এর ম্যানুপুলেশন ,বিভিন্ন ড্রাগ এর ডিজাইন ও ইম্প্রুভমেন্ট ও সম্ভব।
- বিভিন্ন রোগের মেডিসিন,স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা, জীবাণু,ব্যাকটেরিয়া ,ভাইরাস নিয়ে গবেষণা ও এগুলোর প্রতিষেধক তৈরীতে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যাপক ভুমিকা রাখার সুযোগ রয়েছে।
- আবহাওয়া, জলবায়ু সংক্রান্ত গবেষণা ,forecasting আরো accurate ভাবে করা ,ক্লাইমেট সিমুলেশন আরো সঠিক ও কার্যকর ভাবে করার সক্ষমতা রয়েছে Quantum Computer এর।
কিছু অসুবিধা,challenges
কোনো কিছুই perfect নয়, সুতরাং কিছু সীমাবদ্ধতা, অসুবিধা রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের, কিছু challenges ও রয়েছে অবশ্যই। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে-
- অত্যন্ত ব্যয়বহুলঃ কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ডেভেলপমেন্ট,মেইনটেনেন্স সবই অত্যন্ত বেশি খরচসাপেক্ষ যা শুধু বড় বড় কোম্পানিগুলো ও সরকারের পক্ষেই বহন করা সম্ভব। অত্যন্ত সুক্ষ সব যন্ত্রাংশ, কুলিং সিস্টেম এর জন্য কোয়ান্টাম কম্পিউটারের খরচ বহন করা মোটেও সহজ কথা নয়। বরং বড় বড় সুপারকম্পিউটারের থেকে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের খরচ আরো অনেক গুণ বেশি।
- qubits ,যেটা কি না কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রধান উপাদান, সেটা অনেক বেশিই সংবেদনশীল একটা বস্তু সেটা অনেক বেশি fragile, অর্থাৎ বিশেষায়িত পরিবেশ অপরিহার্য এর জন্য। নির্দিষ্ট তাপমাত্রা,চাপ, আদ্রতা সবসময়ই বজায় রাখতে হয় কোয়ান্টাম কম্পিউটারের। বরং বাইরের পরিবেশের সাথে সামান্যতম সংস্পর্শে আসলেও কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ক্যালকুলেশন এর মোড় ঘুরে যেতে পারে, ভুল অপারেশন করতে পারে সেটা। একই সাথে বিশেষ ভাবে পারিপাশ্বিক থেকে আলাদা করার জন্য রক্ষণাবেক্ষণ এর খরচ ও আরো বেড়ে যায়।
- কোয়ান্টাম কম্পিউটারে Error correction এখনো সংক্ষিপ্ত ও সীমাবদ্ধ।
- এখনো কোয়ান্টাম কম্পিউটারের এলগরিদম এর সংখ্যা খুব বেশি নয় । বিশেষ কিছু সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে সফলতা দেখা গেলেও এখনো অনেক অনেক ক্ষেত্র রয়েছে যার জন্য এখনো কোনো algorithm প্রতিষ্ঠিত হয়নি। যেকোনো সমস্যাই চিহ্নিত করে কোয়ান্টাম এলগরিদম দিয়ে সমাধান করার ক্ষমতা এখনো হয়নি কোয়ান্টাম কম্পিউটারের।
- ক্লাসিকাল কম্পিউটারের সাথে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের সংযোগ ঘটানো কঠিন ও জটিল একটি প্রক্রিয়া।
- বাস্তব জীবনের কম্পিউটিং, ভিডিও এডিটিং, রেন্ডারিং, গ্রাফিক্স ডিজাইনিং, গেমিং, ব্রাউজিং এর মত কাজ এখনো এটা দিয়ে করা সম্ভব নয়।
- এছাড়াও অনেক অনেক ক্ষেত্র আছে যেখানে এখনো ক্লাসিকাল কম্পিউটার ব্যবহার করাই অনেক বেশি সুবিধাজনক।
- ডিভাইসগুলোর আকার এখনো অনেক বড় যার জন্য মেইন্ট্যানেন্স অনেক জটিল হয়ে যায়। আর তার থেকেও বড় সমস্যা হচ্ছে খুবই উচ্চ শক্তি সম্পন্ন কুলিং সিস্টেমের প্রয়োজন হয় এই ডিভাইসগুলোকে ঠান্ডা রাখতে ।
- ট্রাডিশনাল কম্পিউটার থেকে অনেক বেশি বিদ্যুতের প্রয়োজন হয় কোয়ান্টাম কম্পিউটারে।
গুগল ও IBM এর কোয়ান্টাম কম্পিউটার
সম্প্রতি গুগলের তৈরী কোয়ান্টাম কম্পিউটার হৈচৈ ফেলেছে চারিদিকে। ফেলবেই বা না কেন, একটা কোয়ান্টাম কম্পিউটার যে কতটা শক্তিশালী হতে পারে, কতটা দ্রুততার সাথে কাজ করতে পারে তার একটা ইঙ্গিত মিলেছে এই গুগলের এই জায়ান্ট ডিভাইস থেকেই।
গুগলের এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার,বর্তমানে পৃথিবীতে থাকা সবথেকে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার থেকে ৪৭ বছর ফাস্ট। অর্থাৎ কোনো একটি জটিল ক্যালকুলেশন যেটা কি না বর্তমানের সবথেকে শক্তিশালী সুপারকম্পিউটার দ্বারা সম্পন্ন করতে ৪৭ বছর লাগবে, তা গুগলের সুপারকম্পিউটার মাত্র ৬.১৮ সেকেন্ডে সম্পন্ন করতে পারে। তাদের এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারটিতে রয়েছে Sycamore quantum processor । এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারে Qubits এর সংখ্যা ৭০টি, যা কি না আগের ভার্সন থেকে ১৭ ইউনিট বেশি।
আগের জেনারেশন থেকে বর্তমানের এই ডিভাইসটি 241 মিলিয়ন গুণ বেশি শক্তিশালী ।
IBM এর ও রয়েছে কোয়ান্টাম কম্পিউটার যেটিতে রয়েছে ১২৭টি কিউবিট। এটাকে IBM Eagle ও বলা হয়।