টরেন্টিং এর সাথে যারা পরিচিত তাঁরা সকলেই জানেন যে, কোন একটি টরেন্ট সাইট থেকে কোন কিছু ডাউনলোড করার জন্য যে জিনিসটা মাস্ট সেটা হচ্ছে টরেন্ট ক্লায়েন্ট। টরেন্ট টেকনোলজি পিটুপি হওয়ার কারণে ডিরেক্ট ব্রাউজারে বা নরমাল ডাউনলোডার দিয়ে টরেন্ট ডাউনলোড করা যায় না। কিন্তু seedr ব্যবহার করে কিভাবে তা করা যায় তার বিস্তারিত থাকছে আজকের আর্টিকেলে
অনেক সময় আমরা ছোটখাট ফাইলের ক্ষেত্রে টরেন্ট ক্লায়েন্ট এ না গিয়ে ডিরেক্ট ডাউনলোড করতে চায় যা আসলে সরাসরি পসিবল না। কিন্তু কিছু ক্লাউড টরেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার বা টরেন্ট ক্যাশ সার্ভিস প্রোভাইডার রয়েছে তাঁদের মাধ্যমে এটা খুব সহজেই সম্ভব।
টরেন্ট ক্যাশিং কিভাবে কাজ করে?
ব্যাসিক্যালি এই সার্ভিস প্রোভাইডার হচ্ছে নর্মাল ক্লাউড স্টোরেজ সার্ভিস প্রোভাইডার সাথে রয়েছে টরেন্ট ক্লায়েন্ট। তাঁরা যেটা করে সেটা হচ্ছে টরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহার করে আপনার রিকোয়েস্ট করা ফাইল ক্লাউড স্টোরেজে জমা করে দিবে। এইবার ঐখান থেকে আপনি সুবিধামত যেভাবে নর্মাল ফাইল ডাউন-লোড করে ঐভাবে ওয়ান ক্লিকে ডাউনলোড করে নিবেন।
এইরকম সার্ভিস বর্তমানে অনেকেই অফার করছে- তাঁদের মধ্যে zbigz, furk, bitport সহ অনেকেই রয়েছে।
আমরা আজকে যে সার্ভিসটির রিভিউ করতে যাচ্ছি সেটি হল seedr.cc
ওয়েবসাইটির লিঙ্ক যেতে পারবেন এইখানে ক্লিক করে
এত গুলো সার্ভিস থাকতে শুধু এটা রিভিউ করার কারণ কি?
সোজা কথায় উত্তর দিলে সেটা হচ্ছে পে করা ছাড়া seedr.cc যা অফার করছে তা আপাতত অন্য কোনো সার্ভিস প্রোভাইডার করতে পারছে না।
ফ্রিতে একাউন্ট খুললে কি কি সুবিধা পাচ্ছেন?
seedr এ গিয়ে একটা একাউন্ট খোলার বিনিময়ে পাচ্ছেন ২ জিবি স্টোরেজ। আপনি যদি আপনার কোনো ফ্রেন্ড এর রেফারেল লিঙ্ক দিয়ে খুলতে পারেন তাহলে পাবেন ৫০০ এমবি বোনাস। এরপর আপনার রেফারেল দিয়ে অন্য কেউ যদি একাউন্ট খুলে তাহলে উভয়েই পারবে ৫০০ এমবি বোনাস করে বোনাস। কিন্তু এটা আনলিমিটেড না। শুধু মাত্র এইভাবে আপনি হায়েস্ট ২জিবি পর্যন্ত পাবেন। মানে সর্বোচ্চ ৪ জনের রেফারেল কাজ করবে। এটার ক্ষেত্রে সুবিধা হচ্ছে আপনার রেফারেল লিঙ্ক ইউস করে যারা নিউ একাউন্ট করবে তাঁদেরকে কোনো প্রিমিয়াম প্ল্যান কিনলে আপনি রেফারেল বোনাস পাবেন বিষয়টা এমন না। যেটা আমরা অনেক ক্ষেত্রে দেখে থাকি। একাউন্ট খুললেই বোনাস পাওয়া যাবে। তবে আপনার রেফারেল ইউস করে যদি কেউ কোনো প্রিমিয়াম প্ল্যান কিনে সেই ক্ষেত্রে সমপরিমাণ স্টোরেজ আপনার একাউন্টেও দেওয়া হবে।
এছাড়া আরো দুইভাবে ফ্রিতে স্টোরেজ বাড়ানো যায়। তাঁদের রিভিউ করে একটা ব্লগ পোস্ট দেওয়া আরেকটি হচ্ছে তাঁদের নিয়ে টুইটারে পোস্ট দেওয়া। টুইটারে পোস্টের জন্য ৫০০এমবি আর ব্লগ পোস্টের জন্য সর্বোচ্চ ১ জিবি বোনাস তাঁরা এখন পর্যন্ত দিচ্ছে। কিছুদিন আগেও পর্যন্তও তাঁরা পিইন্টারস্ট ও ইউটিউবে তাঁদের রিভিউ পোস্ট দিলে বোনাস স্টোরেজ দিত যা এখন বন্ধ করে দিয়েছে।
ফাইল লিমিট কত জিবি?
এটা একটা বড় ক্রুশিয়াল ফ্যাক্টর কারণ এত এত স্টোরেজ দিয়ে কি হবে যদি ওরা ফাইল লিমিট করে দেয় ১০০-২০০ এমবির মধ্যে?তাহলে তো আপনি স্টোরেজ ফুল ইউটিলাইজ করতে পারবেন না। এইরকম একটি টরেন্ট ক্যাশিং সার্ভিস রয়েছে যারা ফ্রিতে ১০জিবি কিন্তু হাইয়েস্ট ফাইল টরেন্টিং করা যাবে মাত্র ২০০এমবি। এইখানে এইরকম কোন লিমিটেশন নাই। যত জিবি আপনি ফ্রিতে পাবনে তাই হায়েস্ট ফাইল লিমিট।
স্টোরেজের মেয়াদ কতদিন?
এইক্ষেত্রে কোনো মেয়াদ নাই। আপনি ফ্রিতে যা আর্ন করবেন তার মেয়াদ লাইফটাইম। এবং এর জন্য আপনাকে মাসে বা বছরে এত বার লগিন করতে হবে এমন শর্তও নাই এখন পর্যন্ত। কিন্তু তাঁরা ভবিষ্যতে পলিসিতে চেইঞ্জ আনলে সেটা ভিন্ন ব্যাপার।
স্টোরড ফাইলের মেয়াদ কত দিন?
এইখানেও কোনো লিমিটেশন নাই। আপনার ইচ্ছা করলে একটা ফাইল ফ্রিতে আপনি লাইফটাইম রাখতে পারবেন। অনেক ক্ষেত্রে আমরা দেখি ফ্রিতে যে সার্ভিস অফার করা হয়ে থাকে সেইখানে তাঁরা একটা নির্দিষ্ট সময় পর পর সব ডাটা ডিলেট করা দেয় তাঁদের স্টোরেজ বাঁচানোর জন্য অথবা কাস্টমারকে প্রিমিয়াম প্ল্যানে যেতে বাধ্য করার জন্য।
লাইভ স্ট্রিমিং করা যাবে?
সীমিত পরিসরে লাইভ স্ট্রিমিং করা যাবে। ভিডিও কন্টেট এইচডিতে স্ট্রিম করা না গেলেও স্ট্রিম করা যাবে। সাথে মিউসিক স্ট্রিম করা যাবে। এছাড়া বই পড়ার জন্য পিডিএফ, ইপাব ইত্যাদি এক্সটেনশন সাপোর্টেড।
ফ্রি সার্ভিসে কি বিজ্ঞাপন রয়েছে?
আজকাল কম বেশি সব ফ্রি সার্ভিসেই বিজ্ঞাপন রয়েছে। ফেইসবুক ইউটিউব তো একদম মোক্ষম উদাহরণ। কিন্তু এই এখন পর্যন্ত ফ্রি/পেইড উভয় প্ল্যানেই বিজ্ঞাপন মুক্ত। যা একটি ভাল এডভানটেজ।
স্পিড কেমন?
seedr এর মার্কেটিং অনুযায়ী স্পিড হচ্ছে আপ্টু-100MBit/s। অনেস্টলি স্পিকিং- ম্যাক্সিমাম টরেন্ট এর ক্ষেত্রে কম্পেয়ার করে দেখছি সেটা হচ্ছে টরেন্ট ক্লায়েন্ট ব্যবহার করে যে স্পিড পাওয়া যায় তার চেয়ে বেশি স্পিড seedr এ পাওয়া যায়। যদিও আমার আইএসপি টরেন্ট এ এক্সট্রা স্পিড দিয়ে থাকে(bdix ছাড়াও)। এরপর seedr থেকে ডাউন লোড হবে আপনার আইএসপি প্রোভাইড করা স্পিডে। এইখানে অবশ্যই টরেন্ট এর সিডস কম থাকলে স্পিড কম হবে।
ফাইল এড করার পদ্ধতি-
seedr এর ইন্টারফেস থেকে direct llink, magnet link দিয়ে সরাসরি টরেন্ট এড করা যাবে। তাছাড়া .torrent আপলোড করেও টরেন্ট এড করা যাবে। তাছাড়াও seedr এর ইন্টারেফেসে না ডুকেই ক্রোম এক্সটেনশন ব্যবকার করেই ওয়ান ক্লিকেই টরেন্ট এড করা যাবে। এটা আমার কাছে অনেক হ্যাসেল ফ্রি মনে হয়।
seedr ক্রোম এক্সটেনশন ডাউনলোডের লিঙ্ক- link
আরো কিছু এক্সট্রা সুবিধা –
অনেক গুলো টরেন্ট হলে সেখানে কাঙ্খিত টরেন্ট খুঁজে বের করার জন্য রয়েছে সার্চ অপশান। এছাড়া সর্টিং, কপি/পেস্ট তারপর নতুন ফোল্ডার খোলা সবশেষে একসাথে অনেক ফাইল ডিলেট করার অপশান তো রয়েছেই।
ফ্রি প্ল্যানের সীমাবদ্ধতাঃ-
এতক্ষন তো ফ্রিতে দেওয়া সুবিধা গুলোর কথা আলোচনা করলাম। কিন্তু ফ্রি প্ল্যানে তো অবশ্যই লিমিটেশন থাকবেই। তা না হলে প্রিমিয়াম প্ল্যানের সাথে পার্থক্য কিসে থাকবে?
- একসাথে একটি টরেন্ট মাত্র seedr দিয়ে ডাউনলোড করা যাবে। ফ্রি প্ল্যানে একের অধিক টরেন্ট ডাউনলোড সাপোর্ট করে না।
এইক্ষেত্রে একটি ট্রিকস রয়েছে সেটি হচ্ছে- উইশলিস্ট ব্যবহার করা। উইশলিস্টে যে যে টরেন্ট গুলো ডাউনলোড করতে হবে তা এড করে রাখলে একটির পর একটি উইশলিস্ট থেকে ডাউনলোড লিস্টে ট্রান্সফার করে দেওয়া যাবে।
- সার্ভার সিলেক্ট করা যাবে তাঁরা যে সার্ভার ফিক্স করে দিয়েছে ঐ সার্ভার দিয়েই কাজ চালাতে হবে।
- একটি টরেন্ট যদি ২৪ ঘন্টা মধ্যে ডাউনলোড করা না যায় তাহলে ঐটা অটোমেটিক্যালি টরেন্ট ডাউনলোড লিস্ট থেকে ডিলেট হয়ে যাবে।
Seedr এর কিছু সীমাবদ্ধতাঃ-
- বর্তমানে টরেন্টিং এর অন্যতম ভয় ভাইরাস এটাক আরো স্পেসিফিক্যালি বললে র্যানসামওয়ার। কিন্তু ভাইরাস প্রোটেকশন এর জন্য seedr এর সাইটে কোনো ধরনের এন্টিভাইরাস এর ইন্টিগ্রেশন নাই।
- ফোনের জন্য একটি ডেডিক্যাটেড এ্যাপ না থাকা। যদিও তাঁদের ওয়ব সাইটি ফোন, ট্যাবলেট এর জন্য অপ্টিমাইজড তাও একটি অ্যাপ থাকা দরকার বলে মনে করি।
- seedr থেকে অন্য অন্য ক্লাউড স্টোরেজে ফাইল ট্রান্সফার করার অপশন না থাকা।
এছাড়া টরেন্ট থেকে যেভাবে সর্বোচ্চ স্পিড লুফে নেওয়া যায় পড়তে পারেন এইখান