২০০৯ সালে সাতোশি নাকামোতো নামের জনৈক ব্যক্তি বা গ্রুপের মাধ্যমে বিটকয়েন নামের ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সির উদ্ভব হয়। এরপর নানান জনের নানান বিশ্লেষণ আসা শুরু করে। অনেকের মত এটি প্রচলিত অর্থ ব্যবস্থায় নিয়ে আসবে নতুন রেভ্যুলেশন। অনেকে আবার এর সাথে ইন্টারনেটের তুলনা করেছে। ইন্টারনেট যেমন প্রচলিত অনেককিছুই একদম সম্পূর্ণ রূপে পরিবর্তন করে দিয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে আগে মানুষের যোগাযোগের মাধ্যম চিঠিকে পরিবর্তন করে ইমেইলকে প্রতিস্থাপিত করে দিয়েছে ইন্টারনেট তেমনি বিটকয়েন ক্যাশলেস ট্রানজেকশনকে অন্য মাত্রায় নিয়ে যাবে। ১০ বছরের বেশি সময় নানান উত্তাল পাতাল পার করে বর্তমানে বিটকয়েনের রয়েছে অনেক দেশে লেনদেনের বৈধতা। বিটকয়েনর কনসেপ্টকে কাজে লাগিয়ে এখনও নিত্যনতুন ক্রিপ্টোকারেন্সির মোড়ক উন্মোচিত হচ্ছে।
সম্প্রতিতে টেক জায়ান্ট টেসলার সিইও জানায় টেসলার গাড়ি কিনতে ব্যবহার করা যাবে বিটকয়েন এবং টেসলা ১.৫ বিলিয়ন ডলার বিটকয়েনে ইনভেস্ট করে। তাছাড়া বিটকয়েনের মার্কেট ভ্যালু বর্তমানে ১ট্রিলিয়ন ডলার পার করেছে। তারপর আবার বিটকয়েনকে নিয়ে আলোচনা সমালোচনা বাড়তে থাকে সবজায়গাতে। অন্যদিকে বর্তমানে ইতিহাসের সর্বোচ্চ ডলার রেটের ভ্যালু হোল্ড করেছে একটি বিটকয়েন (as of 21 feb 2020 1BTC = 57,490.40 USD)
বিটকয়েনের কথা শুনলে আমরা অনেক টার্মিনোলজির কথা শুনে থাকি যেমনঃ ব্লকচেইন, ক্রিপ্টোকারেন্সি, মাইনিং, জিপিউ হ্যাশ পাওয়ার, প্রুফ ও ওয়ার্ক ইত্যাদিসহ অনেক কিছু। দুইপর্বের আর্টিকেলে বিষয়গুলো কিভাবে একটির সাথে আরেকটি রিলেটেড সর্বোপরি বিটকয়েনের বিশেষত্বগুলো কি, অসুবিধা আছে কিনা ও কিছু ফ্যাক্টস নিয়ে প্রথম পর্ব। অন্যদিকে কিভাবে থিওরিটিক্যালি বিটকয়েন কাজ করে, কেন এটি এত সিকিউর? মাইনারা এত এত জিপিউ দিয়ে আসলে কিভাবে লাভবান হয়সহ আরো অনেক প্রশ্নের উত্তর দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা করা হবে।
Bitcoin কি ও কেন?
বিটকয়েন হল ব্লকচেইন ভিত্তিক পৃথিবীর প্রথম পিয়ার টু পিয়ার(P2P) ডিজিটাল ক্রিপ্টোকারেন্সি। অর্থাৎ থার্ড পার্টির দরকার ছাড়ায় একজনের সাথে আরেকজন লেনদেন করতে পারে। যেকেউ চাইলেই তার কম্পিউটার নিয়ে বিটকয়েন নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে লেনদেনে অংশ নিতে পারবে। লেনদেন জন্য একটি ওয়ালেট আইডিই যথেষ্ট। তবে লেনদেন ভেরিফাইড করার জন্য স্বেচ্ছায় অনেকজন কাজ করে থাকে তাঁদেরকে মাইনার বলা হয় বিনিয়ময়ে তারা কিছু রিওয়ার্ড পেয়ে থাকে। এটি একটি ওপেন সোর্স প্রজেক্ট যার কারণে ইনস-আউট সকলেই কাছে উন্মক্ত। সাতোশি নাকামোতো এর আসল পরিচয় এখন জানা যায়নি। সে নিজেকে জাপানিজ বলে দাবি করলেও অনেক বিশেষজ্ঞদের মত হচ্ছে সাতোশি নাতাকোমোর পিছনে আমেরিকান কেউ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি কারণ যে ওয়াইট পেপার দ্বারা বিটকয়েনের রোডম্যাপ জানিয়েছিল তার লিখার ধরন আমেরিকান ছিল। আবার এই নামের পিছনে যে একজন ব্যক্তিই রয়েছে সেটিও নিশ্চিত করা বলা যাচ্ছে না এখনও হতে পারে একটি গ্রুপও।
যে কারণে বিটকয়েন এত সাড়া পাচ্ছে বা বিটকয়েনের বিশেষত্বগুলো কি?
Virtual
আমাদের বর্তমান প্রচলিত কারেন্সিতেও ডিজিটাল বা ভার্চুয়াল কারেন্সি রয়েছে। যেমনঃ অনলাইন ব্যাংকিং এর মাধ্যমে আমরা ডলার বা টাকা দিয়েই লেনদেন যেমন করতে পারি তেমনি আবার ডলার বা টাকার একটা ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স রয়েছে। কিন্তু বিট কয়েন সম্পূর্ণই ভার্চুয়াল। অর্থাৎ চাইলেই বিটকয়েনকে হার্ড বিটকয়েনে কনভার্ট করা যাবে না ডলার বা টাকার মত। কিন্তু বিটকয়েন থেকে ডলারে কনভার্ট করা যাবে।
তবে সম্প্রতি বিটকয়েনকে প্রচলিত মুদ্রার মত করে রূপ দিয়েছে কিন্তু সেটি অফিশিয়াল কিছু না। সেই হার্ড বিটকয়েনকে তার ভিতরের কোড দিয়েই অনলাই ট্রান্সজেকশন করতে হবে।
Decentralized
এই কারেন্সি ডিসেন্ট্রালাইজড। প্রচলিত মুদ্রা ব্যবস্থায় একক অধিপত্ত্য থাকে সেদেশের ব্যাংকের বা সরকাররের। যেমনঃ ডলারের দেখভাল করে ফেডেরাল রির্জাভ ব্যাংক অফ আমেরিকা। বাংলাদেশের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক। আরো সহজ ভাষা বললে বিটকয়েনে ট্রানজেকশন করতে থার্ড পার্টির দরকার হয় না। আমরা জন্য প্রচলিত অর্থ ব্যবস্থায় লেনদেন করি ব্যাংক মিডল ম্যান হিসেবে ট্রানজেকশন ভেরিফাই করে থাকে। এটি বিটকয়েন উদ্ভাবনের অন্যতম কারণ বলা যায়। কারণ সাতোশি নাতাকোমো এমন একটি কারেন্সি সিস্টেম চেয়েছিল যেটিতে সরকার বা থার্ড পার্টির কর্তৃত্ব থাকবে না। কারণ সরকার চাইলে প্রতিটি লেনদেন ট্র্যাক করতে পারে। ক্ষেত্রেবিশেষে লেনদেন ও একাউন্টও স্থগিত করে দিতে পারে। তাছাড়া ডিসেন্ট্রালাইজড হওয়ার কারণে যেমনে থার্ড পার্টির প্রয়োজন চলে যায় অন্যদিকে ট্রানজেশকশনের জন্য কোনো নির্দিষ্ট ফি দেওয়া লাগে না(উঠানামা করে)। যেখানে প্রচলিত কারেন্সিতে অনেক ট্রানজেশকশন ফি গুনতে হয়।
Transparent & Secure
একটা ট্রানজেকশনকে একটি নেটওয়ার্ক যেখানে আবার অনেকগুলো নোড(কম্পিউটার) রয়েছে যাদের দ্বারা ভেরিফাইড হতে হয় এবং একবার হয়ে ভেরিফাইড গেলে ব্লকচেইনের লেজারে ব্লক আকারে যুক্ত হয়ে যায়। ঐ নেটওয়ার্কের সকলের কাছে একটি করে কপি চলে যায় যা কারনে বিটকয়েনকে ডিস্ট্রিবিউটেডও বলা হয়। আবার প্রতিটি ট্রানজেকশন একবার হয়ে গেলে একে রিভার্স করার সুযোগও নাই। ব্লকচেইনের সিকিউরিটির কারণে পর্ববর্তীতে একে অল্টার করার সুযোগ অনেকটা ইম্পসিবল বলা যায়। আবার প্রতিটি ট্রানজেকশনের তথ্য অন্য সবার কাছে থাকার কারণে যে কেউ চাইলে একে পরবর্তীতে পরিক্ষা করে দেখতে পারবে ব্লকচেইন লেজারে। এক্ষেত্রে কোন ওয়ালেট আইডি থেকে কোন ওয়ালেট আইডিতে ট্রানজেকশন হয়েছে কত বিটকয়েন ট্রানজেকশনে হয়েছে তা দেখা যায়।
Limited
ডিসেন্ট্রালাইজড হওয়ার পাশাপাশি বিটকয়েনের কনভেনশন অনুযায়ী সর্বোচ্চ ২১ মিলিয়ন পর্যন্ত বিটকয়েন মাইন করা যাবে। যার কারণে ইচ্ছামত প্রিন্টিং বা মুদ্রা সংযোজন করা যাবে না। কিন্তু সেন্ট্রালাইজড ব্যাংকিং সিস্টেমে অনেক ফ্যাক্টর বিবেচনা করে কর্তৃপক্ষ চাইলে লিকুডিটি সংযোজন করতে পারে। যেমনঃ আমেরিকার মোট ডলারের ৩০% গত বছরে অর্থনীতিতে যোগ করা হয়েছে। যার কারণে বিটকয়েনের মুদ্রাস্ফীতির ঝুঁকি কম। এছাড়া টাকা বা ডলার নকল ছাপানোর সুযোগ থাকলেও বিটকয়েনের ক্ষেত্রে এই সুযোগ নেই।
Fast
সাধারণত(অনলাইন ছাড়া) টাকা পাঠাতে বা রিসিভ করতে ব্যাপক সময় লাগে ফিজিক্যালি। তাছাড়া ভিন্ন ভিন্ন কারেন্সি লেনদেন করতেও ব্যাপক সময় লাগে কারণ সেই ট্রান্সজেকশনকে ফেডেরাল রির্জাভ ব্যাংক অফ আমেরিকার মাধ্যমে ভেরিফাইড হতে হয়। কিন্তু বিটকয়েন ইউনিভার্সাল হওয়ায় পৃথিবীর যেকোনো প্রান্ত খুব কম সময়ে লেনদেন করা যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সাধারণত বিটকয়েনে একটি লেনদেন সম্পন্ন হতে এভারেজে ১০ মিনিট সময় লাগে কিন্তু অন্যান্য ক্রিপ্টোকারেন্সি যেমনঃ ইথিরিয়াম, লাইটকয়েন এমন আরো অনেক ক্রিপ্টোকারেন্সিতে অনেক কম সময়ে করা যায়।
Privacy & Anonymous
ট্র্যাডিশনাল ব্যাংকিং সিস্টেমে ট্রানজেকশনের জন্য অনেক রকম তথ্য যেমনঃ ফোন, এড্রেস ইত্যাদি দিতে হয় কিন্তু বিটকয়েনের জন্য একটি ডিজিটাল ওয়ালেট আইডি ছাড়া অন্য কোনো কিছুর দরকার হয় না। এই ওয়ালেট আইডি জাস্ট রেন্ডম নাম্বারের ও লেটারের সিকোয়েন্স। যার কারণে ঐ ওয়ালেট আইডি পিছনে বাস্তবে কে এটা জানার কোনো সুযোগ নাই।
Disadvantages
বিটকয়েন এখনও ভোলাটাইল অর্থাৎ ডলারের ইক্যুইভেলেন্সে এর দাম বাড়তে বা কমতে পারে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হচ্ছে বিটকয়েন সহ ক্রিপ্টোকারেন্সির অর্থনীতি এখনো ইয়াং। গ্লোবাল অনেক বিষয়ের পজিটিভ নেগেটিভ কারনে দাম উঠা নামা করতে পারে। যেহেতু বিটকয়েন ট্রানজেকশনে আনএনোমিটি পাওয়া যায় যার কারণে ফ্রড এক্টিভিটি বা ব্ল্যাক মার্কেট ট্রানজেকশন হওয়ার একটি সম্ভাবনা থেকেই যায়। সম্পূর্ণ ভার্চুয়াল হওয়াতে ওয়ালেটের পাসওয়ার্ড হারিয়ে গেলে বা হার্ডড্রাইভের কিছু হলে বিটকয়েনও হারিয়ে যাওয়ার পসিবিলিটিও বেশি। আবার যেহেতু এখনও পৃথিবীর সবদেশে এখনো অনুমোদিত না তাই এখনও ঠিক ঐভাবে ইউভারসালনেস গেইন করতে পারেনি বলা যায়।
Disclaimer: যেহেতু বিটকয়েন লেনদেন বাংলাদেশের এখনও অনুমোদিত না তাই এই আর্টিকেল পড়ে কেউ যদি বিটকয়েন মাইন বা লেনদেন করে বা করতে উৎসাহী হয় তার দায়দ্বায়িত্ব পিসি বিল্ডার বাংলাদেশের উপর বর্তাবে না। কারণ আমাদের এই আর্টিকেল সম্পূর্ণ এডুকেশনাল উদ্দেশ্য তৈরি করা।