APK vs AAB: থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোরের দিন কি শেষ?

এন্ড্রয়েড অ্যাপের এক্সটেশন হচ্ছে APK, যারা একবারও Play Store বাদে আলাদাভাবে অ্যাপ সাইডলোড করেছেন তারা সবাই এই ফরম্যাটের সাথে পরিচিত। Play Store হোক আর থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোর হোক, এখন পর্যন্ত বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এন্ড্রয়েড অ্যাপ্ললিকেশনের জন্য APK ফরম্যাট ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কিন্তু সম্প্রতি গুগুলের একটি সিদ্ধান্ত অনুসারে APK ফরম্যাট কে রিপ্লেস করতে যাচ্ছি গুগলের প্রোপায়েটরি ফরম্যাট AAB। Google এর এই সিদ্ধান্তের ব্যাপক আলোচনা সমালোচনার জন্ম দিয়েছে। Google এই সিদ্ধান্ত মূলত নিয়েছে windows 11 এ নেটিভলি এন্ড্রয়েড অ্যাপ সাপোর্টের ঘোষনার পরপরই। অনেকে মনে করেন Windows 11 এ এন্ড্রয়েড অ্যাপ সাপোর্ট(Amazon Store) লিমিটেড করে দিতে ভবিষ্যতের জন্য এখন থেকেই এই পদক্ষেপ।

APK & AAB কি এবং কিভাবে কাজ করে?  কখন থেকে এটি চালু হতে যাচ্ছে? হঠাৎ কেন এই পদক্ষেপ? এতে কি সুবিধা অসুবিধা হতে পারে ইত্যাদি হবে আজকের আর্টিকেলের বিষয়বস্তু। তো শুরু করা যাক-

APK vs AAB: বেসিক ধারণা 

APK এবং AAB দুইটা একদম ভিন্ন ফরম্যাট। বিষয়টি এমন নয় যে, আমরা ছবি কিংবা একাধিক ভিডিও এর ক্ষেত্রে অনেকগুলো এক্সটেশন ফরম্যাট দেখে থাকি। একেকটি এক্সটেশন ফরম্যাটের কাজ একই হলেও একেকরকম সুবিধা অসুবিধা আছে এমন না।  APK হচ্ছে এন্ড্রয়েড অ্যাপ্ললিকেশন ফরম্যাট যার পূর্ণরুপ হচ্ছে Android application package।  এই APK তে একটি অ্যাপ্ললিকেশন রান করার জন্য যাবতীয় রিসোর্স যেমনঃ কোড, লেআউট ইমেজ ও ভিডিও ইত্যাদি সব একসাথে দেওয়া থাকে। এইখানে একটি বিষয় লক্ষ্যণীয় হচ্ছে, আমাদের বিভিন্ন জনের হাতে বিভিন্ন ফোনগুলোর মধ্যে অনেকদিকেই তফাৎ রয়েছে। যেমনঃ স্ক্রিন সাইজ, প্রসেসর আর্কিটেকচার ইত্যাদি। তাই একটি ইউনিভার্সাল অ্যাপ বানিয়ে তা পাবলিশ করা হয়। কিন্তু দেখা যায় অনেককিছুই স্পেসিফিক ইউজারদের প্রয়োজন হয় না। এই কারণে একদিকে ফোনের স্টোরেজ সংক্রান্ত বাড়তি লাগে, ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথ বেশি খরচ হওয়ার পাশাপাশি অপ্রয়োজনীয় অনেক রিসোর্স থাকার ফলে অ্যাপ বাল্কি হয়ে যায়। স্টার্টআপ টাইম বেড়ে যাওয়া, রিসোর্স হাংগ্রি হয়ে যাওয়া থেকে শুরু করে অনেক সমস্যার সৃষ্টি করে। যদিও কয়েকটি APK পাবলিশ করে এই সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডেভেলপার’রা  অ্যাপ বানানো সময় সবকিছু একসাথে বান্ডেল করেই বানায় APK হিসেবে পাবলিশ করতে দেখা যায়।

 

এইসব সমস্যা থেকে কিছুটা হলেও রক্ষা পেয়ে ২০১৮ সালের অগাস্ট মাসে Google Play Store এ ডেভেলপারদের জন্য নতুন একটি অপশান চালু করে। সেটি হচ্ছে AAB বা Android App Bundle। ডেভেলপার’রা তখন থেকে Play Store এ নতুন কোনো অ্যাপ সাবমিট করার সময় APK এর পাশাপাশি AAB সিলেক্ট করে পারত।  কিন্তু AAB হচ্ছে গুগলের নিজস্ব পাবলিশিং ফরম্যাট APK এর মত ইউনিভার্সাল প্যাকেজিং ফরম্যাট নয়। AAB’তে ডেভেলপারকে যাবতীয় রিসোর্স সব গুগলের কাছে AAB ফরম্যাটে সাবমিট করতে হবে। তারপর Google ঐবান্ডেল থেকে ইউজারের লোকেশন, ফোনের রিকোয়েরমেন্ট অনুযায়ী একটি APK জেনারেট করবে যা ইউজারের ফোনে ইন্সটল হবে। যার ফলে স্টার্টাপ ডিলে কমে ও অ্যাপ স্পিড আগের চেয়ে বৃদ্ধি পাবে। এই ফরম্যাটের কারনে অ্যাপ সাইজ কমপক্ষে ১৫% কমে যাবে জানিয়েছে Google। এছাড়া AAB’তে Play Feature Delivery থাকার কারণে একটি অ্যাপ ওপেন হওয়ার জন্য যা যা দরকার তা ডাউনলোড করেই দ্রুততম সময়ে অ্যাপ রান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করবে।

এছাড়া ডেভেলপার চাইলে নির্দিষ্ট ডিভাইসের জন্য নির্দিষ্ট ফিচার এনাবেল করতে পারবে। AAB’র অ্যাপগুলো ১৫০ এম্বির মধ্য হয়ে যাবে যদি বাড়তি ডাটার দরকার হয় বিশের করে গেইমের জন্য তা Play Asset Delivery এর মাধ্যমে পাঠানো হবে। Play Asset Delivery নিয়ে বিস্তারিত জানতে পারবেন এইখানে। ইতিমধ্যে অনেক নামিদামি অ্যাপ AAB ফরম্যাটে চলে গিয়েছে। যাদের মধ্যে আছে AirBnB, Netflix ও Twitter সহ আরো অনেকে।

 

APK vs AAB: অ্যাপ সিগনেচার 

এইবার অ্যাপ সিগনেচার নিয়ে কিছু কথা বলা যাক। এন্ড্রয়েড অ্যাপ সিকিউরিটির জন্য অ্যাপ সাইনিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাপ সাইনিং দ্বারা অ্যাপ টেম্পারিং বন্ধ করা হয়। যখন একটা অ্যাপ প্লেস্টোর থেকে ইন্সটল করার পর যদি থার্ড পার্টি কোনো স্টোর থেকে আপডেট ইন্সটল করতে চান তখন অ্যাপ সিগনেচার মিলানো হয় যদি মিলে তাহলেই ইন্সটল করা যায়। যদি ঐ অ্যাপ ম্যালওয়ার দিয়ে টেম্পার্ড থাকে তাহলে অ্যাপ সিগনেচার মিলবে না। অ্যাপ সিগনেচার যা কিনা “পাবলিক কি” নামে পরিচিত জেনারেট করা হয়ে থাকে একটি “প্রাইভেট সাইনিং কি” থেকে। এই “কি” ডেভেলপার’রা প্রোভাইড করে থাকে এবং তা পাবলিক্যালি হাইড থাকে। কিন্তু App Bundle এ যেহেতু Google এ APK জেনারেট করবে তাই “প্রাইভেট সাইনিং কি” AAB হিসেবে সাববমিট করার সময় দিতে হবে। যার ফলে অ্যাপ সাইনিং অনেকটায় Google এর কন্ট্রোলে চলে যাবে। এই “কি”র সিকিউরিটির ব্যাপারে Google জানিয়েছে তাঁদের অন্যান্য “কি” এর সাথে রাখা হবে যা অত্যন্ত হাই সিকিউরিটি ডাটাবেইজে সংরক্ষিত।

AAB নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত

তো, ২০১৮ সালে চালু হওয়া একটি ফরম্যাট নিয়ে এখন এত শোরগোল কেন? উত্তর হচ্ছে, এতদিন যাবত একজন ডেভেলপারের কাছে APK এবং AAB দুইটি অপশান থাকলেও সামনের মাস অর্থাৎ অগাস্ট থেকে নতুন করে যেসব অ্যাপ Play Store স্টোরে সাবমিট করা হবে সব AAB ফরম্যাটেই করতে হবে। আপাতত পুরাতন যেসব অ্যাপ Play Store এ আছে সেসব অ্যাপকে এখনো AAB আওতায় আনার জন্য কোনো প্রকার বাধ্যবাধকতা দেওয়া হয়নি।

AAB ফরম্যাটের যেমন সুবিধা আছে কিছুক্ষেত্রে তেমন ডেভেলপারদের জন্য সহ থার্ড পার্টি অ্যাপের স্টোরের জন্য বেশ কিছু অসুবিধা আছে। প্রথমত, ডেভেলপারদের হাত থেকে “সাইনিং কি” এর কন্ট্রোল Google এর হাতে চলে যাওয়া। যার কারণে অনেক ডেভেলপারদের আছে যারা Play Store এর পাশাপাশি থার্ড পার্টি অ্যাপ স্টোরে(Amazon Store, Huawei AppGallery) এ একই সাথে অ্যাপ পাবলিশ করে থাকে। তাঁদের জন্য ঐসব স্টোরের জন্য আলাদাভাবে APK ফরম্যাটে যাওয়ার জন্য কিছু বাড়তি কাজ হবে এবং বিভিন্ন স্টোরের জন্য বিভিন্নভাবে ভার্সন আপডেট করতে হবে ডেভেলপারদের। যদিও Google জানিয়েছে Play Console থেকে ডেভেলপার’রা চাইলে APK ডাউনলোড করে নিতে পারবে। APK যেমন সহজেই সাইড লোড করা যায় সেইভাবে AAB করা যাবে না যেহেতু এন্ড্রয়েড প্যাকেজ ইন্সটল এখনো সরাসরি AAB আনপ্যাকিং সাপোর্ট করে না। AAB সাইড লোড করতে হলে ভিন্ন উপায়ে করতে হবে যা সময়সাধ্য। তাছাড়া অনেক অ্যাপ মডেড বা ক্র্যাকড ভার্সন পাওয়া যেত তা ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও সাধারণ ইউজারদের ব্যবহারে APK/AAB তেমন প্রভাব ফেলবে না।

 

Share This Article

Search