ইন্টেলের দশম জেনারেশনের প্রসেসরগুলোর বাজারে আসার প্রত্যুত্তরে মিড ও হাই বাজেটে কিছু প্রসেসর রিলিজ করেছে এএমডি। এইটি আসলে বলা যায় 3000 সিরিজেরই Remastered/pro ভার্সন। নাম দেওয়া হয়েছে XT সিরিজ। সিরিজে তিনটি প্রসেসর দেখতে পাচ্ছি আমরা Ryzen 5 3600XT, Ryzen 7 3800XT এবং Ryzen 9 3900XT । আজ আমরা দেখবো আগের প্রসেসরগুলোর তুলনায় কতটুক ভালো পারফর্ম করতে পারে এই সদ্য বাজারে আসা প্রসেসরগুলো।
সংক্ষিপ্ত স্পেসিফিকেশনসঃ
Ryzen 5 3600XT:
এএমডির রিভাইজড 3000 সিরিজের শুরুটা 3600 কে দিয়েই। 250$ প্রাইসে আসা প্রসেসরটি তাই 10600k এর বিক্রিতে ভাগ বসাবে এটি এক প্রকার নিশ্চিত। দাম দেখে মনে হয়েছে এএমডির উদ্দেশ্য যেন 10600k প্রসেসরটিই কারণ অবশিষ্ট i5 প্রসেসরগুলোর দাম এর থেকে বেশ কম।
Cores/Threads | Base Clock/Boost Clock | L3 Cache | TDP | PCIe Version | Lithography | Price |
6/12 | 3.8/4.5Ghz | 32MB | 95W | 4.0 | 7 nm | 250$ |
কি কি থাকছেঃ
কোর এবং থ্রেড সংখ্যা একই রেখে বুস্ট ক্লক সামান্য বাড়ানো হয়েছে। আবার ক্যাশ মেমোরি একই থাকছে, আর্কিটেকচার ও ৭ ন্যানোমিটার কিন্ত TDP পরিবর্তন দেখতে পাচ্ছি আমরা। TDP 65 এর স্থলে 95W দেওয়া হয়েছে।
Ryzen 7 3800XT:
400$ এ আসার কারণে Core i7 10700k এর সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে Ryzen 7 3800XT
Cores/Threads | Base Clock/Boost Clock | L3 Cache | TDP | PCIe Version | Lithography | Price |
8/16 | 3.9/4.7Ghz | 32MB | 105W | 4.0 | 7 nm | 400$ |
কি কি থাকছেঃ
সেম Zen 2 আর্কিটেকচার, 8/16 টি থ্রেড, 32MB ক্যাশ 4.7 Ghz পর্যন্ত বুস্ট ক্লক । টিপিক্যাল Ryzen 7 স্পেকসই দেখা যাচ্ছে । Ryzen 7 3800x এর সাথে তুলনা করলে XT তে কিন্ত আমরা TDP ও একই পাচ্ছি।
Ryzen 9 3900XT:
500$ এর বিশাল দামে আসা এই ফ্লাগশিপ প্রসেসরটি রিপ্লেস করতে যাচ্ছে 3900X কে এবং পাল্লা দিবে Core i9 10900k এর সাথে।
Cores/Threads | Base Clock/Boost Clock | L3 Cache | TDP | PCIe Version | Lithography | Price |
12/24 | 3.8/4.7Ghz | 70MB | 105W | 4.0 | 7 nm | 500$ |
কি কি থাকছেঃ
Intel এর যেরকম i9 তেমনি AMD এর Ryzen 9 । ৭০ মেগাবাইট এর বিশাল ক্যাশ মেমোরি, আগের মতই রাখা হয়েছে 105 ওয়াটের টিডিপি।
থার্মাল সলুশন/কুলারঃ
এএমডির ওয়েবসাইটের ৩টি প্রসেসরের স্পেসিফিকেশনে কোন thermal solution এর উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
ক্লক স্পিড ও অন্যন্য স্পেকস এর তুলনাঃ
আজকে আলোচনা হবে Hardware Unboxed এর রিভিউটির রেফারেন্সে। প্রথমে দেখে নেওয়া যাক পাশাপাশি স্পেসিফিকেশন এর সংক্ষিপ্ত তুলনাঃ
3600X থেকে 3600XT তে আমরা ব্লেন্ডার টেস্টে সামান্য পরিমাণ ক্লক স্পিডের বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি সাথে টেম্পারেচার ও বেশি। আর পাওয়ার ইউসেজ ও সামান্য বেশি।
3800X এবং 3800XT এর মধ্যেও আমরা একই রকম ভাবে খুবই সামান্য ক্লক স্পিডের বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি। পাওয়ার ইউসেজ এবং টেম্পারেচার ও একই রকম ভাবে বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
3900X এবং XT এর ক্ষেত্রেও আগের দুটি টেস্টের মত সামান্য ক্লক স্পিড এর বৃদ্ধির সাথে সাথে বেশি পাওয়ার ব্যবহার ও টেম্পারেচার বৃদ্ধি দেখা গেছে।
Application Benchmarks:
Cinebench:
সিনেবেঞ্চ এর বেঞ্চমার্ক থেকে আমরা দেখতে পাচ্ছি মাল্টিকোর টেস্টে খুবই সামান্য বেশি স্কোর করছে 3600XT, 3800XT এবং 3900XT। যা খালি চোখে রিয়েল লাইফে বলতে গেলে কোনো পার্থক্যই না।
সিঙ্গেল কোরে তুলনামুলক একটু বেশি স্কোর করেছে প্রসেসরগুলো। 3600X এর 507 এর পরিবর্তে XT করেছে 528 , 3800X এর 517 এর বিপরীতে XT ভার্সনটি 539 এবং 3900x এর আপডেট সংস্করণটি করেছে 541।
7-Zip
সেভেন জিপ এর পারফর্মেন্সেও চিত্রটা একই রকম।। নিচের দুটি ভ্যারিয়েন্ট এ সামান্যতম পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে। 3600XT স্কোর করেছে ২ হাজার মত বেশি 3600x থেকে। 3800XT এর স্কোর এক হাজার মত বেশি। 3900XT এর ক্ষেত্রে পার্থক্যটা প্রায় 0%।
Sisoft Sandra:
এখানেও প্রতি ক্ষেত্রেই পারফর্মেন্সে উন্নতি 0% এর কাছাকাছি।
Blender:
ব্লেন্ডার এর ক্ষেত্রেও আমরা আগের টেস্টগুলো থেকে ভিন্ন কোনো চিত্র দেখছি না… নতুন প্রসেসরগুলোর স্কোর পুরাতনগুলোর মতই । হতাশাজনক!
V-Ray Benchmark
তিনটি প্রসেসরেই আমরা প্রায় সমান পরিমাণ বৃদ্ধি দেখতে পাচ্ছি যা তবে পরিমাণটা আগের মতই সামান্য। 3600XT এর ক্ষেত্রে প্রায় ২০০, 3800XT এর ক্ষেত্রে প্রায় ৪০০ মত এবং 3900XT এর ক্ষেত্রে ২৫০ মত। যা রিয়েল লাইফে 0% পার্থক্যেরই সমতুল্য।
Corona 1.3 Benchmark
১ থেকে ৪ সেকেন্ড পর্যন্ত বিশাল!!!!!!!! পার্থক্য দেখা যাচ্ছে এই টেস্টটিতে। কয়েক হাজার টাকা খরচ করবেন কি না আপনি চার সেকেন্ড বাচাতে সেটি আপনারই ব্যাপার।
Chromium Code Compile:
3800XT এর ক্ষেত্রে আমরা ২০০ সেকেন্ড মত উন্নতি দেখতে পাচ্ছি বাকি দুটি প্রসেসরের ক্ষেত্রে সংখ্যাটা ০ থেকে সামান্য বেশি।
DaVinci Resolve Studio 16
এখানেও আলাদা করে কিছু আমরা লক্ষ করছি না। X থেকে XT তে পারফর্মেন্স প্রকৃতপক্ষে একই।
Adobe Premiere Pro and Photoshop 2020
এডোবির দুটি প্রোডাক্টের টেস্টের একটিতেও বিশেষ উন্নতি লক্ষ করা যায়নি কোনো প্রসেসরেই।। আগের টেস্টগুলোর মতই খুবই সামান্য পরিমাণ বেশি স্কোর করেছে নতুন প্রসেসরগুলো। চোখে পড়ার মত বা রিয়েল লাইফে পার্থক্য হওয়ার মত কোনো স্কোর দেখতে পাচ্ছি না আমরা।
গেমিং বেঞ্চমার্কসঃ
Battlefield V:
এতক্ষণ প্রোডাক্টিভিটি বেঞ্চমার্কে আমরা ১/২% পার্থক্য দেখেছি কোনো কোনো ক্ষেত্রে। কিন্ত গেমিং এ এসেও দেখা যাচ্ছে ফ্রেমরেট মাত্র ১ বৃদ্ধি পেয়েছে যা টেস্টের Round-off error বলেও চালিয়ে দেওয়া যায়।
Far cry new dawn
এই গেমটির ক্ষেত্রে 3600XT ছাড়া বাকি দুটি প্রসেসরের ক্ষেত্রে পারফর্মেন্স এর পার্থক্য ১ ফ্রেমরেট ও নয় একদম সমানে এসে ঠেকেছে।। অর্থাৎ এবার প্রকৃতপক্ষেই ০% পার্থক্য প্রসেসরগুলোর নিজেদের মধ্যে এবং পুর্বের প্রসেসরগুলোর সাথে তুলনায়।
Shadow of the Tomb Raider:
প্রসেসর গুলো এক ফ্রেম করে বেশি FPS দিচ্ছে তাদের পুর্বের প্রসেসর থেকে যা বলতে গেলে কিছুই না।। আরো অদ্ভুত ব্যাপার হলো 3900XT, 3800XT দুটি নতুন প্রসেসর এর ফ্রেমরেট ও সমান। যা তাদের মধ্যকার দামের পার্থক্যের ও কোনো ব্যাখা দিতে পারে না।
Red Dead Redemption 2
গেম থেকে গেমে আমরা খালি নাম্বারগুলোই আলাদা দেখতে পাচ্ছি। পারফর্মেন্সে এখন পর্যন্ত ১ ফ্রেমরেট বা ০ ফ্রেমরেট ব্যতীত ৩/৫ ফ্রেম এর ও পার্থক্য লক্ষ করতে পারিনি। যা বড়ই হতাশাজনক।
Gears Tactics and Ghost Recon Breakpoint:
শেষ দুটি গেমেও আমরা দেখছি একই চিত্র। ১ ফ্রেমরেট/২ ফ্রেমরেট এর উন্নতি দেখা গেছে প্রথম গেমটিতে। শেষটিতে এসে প্রতিটি প্রসেসরই পুরাতন প্রসেসরগুলোর সমান এফপিএস ই দিয়েছে।
কারা কিনবেন?
কার্যত মাল্টিটাস্কিং হোক বা গেমিং হোক। আমরা কোনো ক্ষেত্রেই বিশাল উন্নতি দূরে থাক ৫% পর্যন্ত বুস্ট ও দেখতে পাইনি। গেমিং এ সবগুলো টেস্টেই ১-০ এফপিএস এর মধ্যে ছিল পার্থক্য।। মাল্টিটাস্কিং এ বেশিরভাগ সময় ১% বা এর ও কম পার্থক্য ছিল যা অতিরিক্ত দাম দিয়ে প্রসেসরগুলো কেনার কোনো মানেই রাখে না ।
এএমডি আসলে কি লঞ্চ করলো এগুলো কারোরই মাথায় আসছে না। যেন মনে হচ্ছে একই প্রসেসর টেস্ট করা হচ্ছে। বরং প্রসেসরগুলোর দাম তো অতিরিক্ত দেওয়া লাগবেই সাথে বক্সে কুলার ও থাকবে না তার জন্য আলাদা খরচ ও করা লাগবে। ভ্যালু ফর মানি এর জন্য বিখ্যাত এএমডির ক্ষেত্রে এটি অনেক বড় একটি ব্যর্থতাই বলা যায়।
পারফর্মেন্স যেহেতু একই থাকবে সুতরাং অতিরিক্ত দাম নিয়ে এগুলো কারোই নেওয়ার মানে হয় না। তাই চোখ বন্ধ করে এড়িয়ে যেতে পারেন আপনি প্রসেসরগুলো। বরং আগের প্রসেসরগুলোর থেকে ৫০/১০০ ডলার কম দামে লঞ্চ করলে বলা যেত যে অন্তত প্রাইসের দিক দিয়ে ঠিক আছে ।
উপসংহারঃ
অনেকদিন পর যেন এএমডির পক্ষ থেকে হাস্যকর এবং হতাশাজনক রিলিজ দেখা গেলো। নতুন প্রসেসর অথচ পারফর্মেন্সে কোনোই উন্নতি নেই। এক দেড়শো মেগাহার্জ স্পিড বাড়িয়ে যে আসলে কিছুই লাভ হয়নি তা জানতে পারলে হয়তো এএমডির এরকম আগে থেকে কিছু করতো না বরং আরো বড় একটি বুস্ট দিতো প্রসেসরগুলোতে। আরেকটি প্রশ্নচিহ্ন ও যেন একে দিলো এই প্রসেসরগুলো?? এএমডির দৌড় শেষ???? 3300x দিয়ে নতুনভাবে সবাইকে চমকে দেওয়ার পর রাইজেনের এই প্রসেসরগুলো দেখে যেন মনে হচ্ছে যে 3000 সিরিজে আর কোনো কাজ করার জায়গা নেই তাদের। they’ve reached the end.
Test Conducted by Hardware unboxed