যে কোন কম্পিউটারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং অপরিহার্য অংশ হচ্ছে তার সেন্ট্রাল প্রসেসিং ইউনিট বা সিপিউ। যে কোন কম্পিউটার কেনার সময় সরবপ্রথম যে জিনিসটা মাথার মধ্যে আসে তা হচ্ছে কোন প্রসেসরটা নেয়া যায়। সেটা ডেস্কটপ বলুন কিংবা ল্যাপটপই বলুন, সিপিউ সিলেকশন আমাদের টু ডু লিস্টের সবার প্রথমেই থাকে। কিন্তু এই প্রসেসর নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের বিস্তর কিছু ভুল ধারণা রয়েছে যা তাদের পিসি কেনাকে অনেকটাই বাধা এবং ক্ষতিগ্রস্ত করছে। আজ আমরা আপনাদের কিছু বেসিক ভুল ধারণা নিয়ে তথ্য দেব এবং সেগুলোর সমাধান আসলে কি হতে পারে তাও জানাতে চেস্টা করব।
এর আগে আমরা রাইজেন সিপিউ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভুল ধারণা সম্পর্কে একটি আর্টিকেল প্রকাশ করেছিলাম। চাইলে সেটি পড়ে আসতে পারেন এখানে ক্লিক করে।
ডুয়াল কোর দিয়ে গেমিং হয়
মানুষের মধ্যে বিশেষ করে মুরুব্বি মানুষের মধ্যে এখনো একটি ভুল ধারণা রয়ে গেছে যে ডুয়াল কোর প্রসেসর দিয়ে এখনো গেমিং করা যায়। কিন্তু এই কথাটা যদি ২০০৬/২০০৭ সালে বলা হত তাহলে মেনে নেয়া যেত কারণ তখনকার গেমগুলো সিঙ্গেল কোরের বেশি তেমন একটা খুব ব্যবহার করত না। কিন্তু প্রায় ৮/১০ বছর ধরেই দেখা যাচ্ছে প্রতিটি গেম এখন মিনিমাম তিনটি কোর ব্যবহার করছে। আর বর্তমান সময়ের বড় বড় যে গেম গুলো আছে সেগুলোর রেকমেন্ডেশনে ৬ কোরের প্রসেসরের কথা উল্লেখ করা হচ্ছে।
যখন ২০১৯ সালে এসে আমাদের মিনিমাম চার কোরের প্রসেসর লো সেটিংসে গেম খেলার জন্য লাগছে সেদিকে কিভাবে এখনো আমরা ডুয়াল কোর প্রসেসর দিয়ে গেম খেলতে পারব। তাছাড়া ডুয়াল কোর প্রসেসর তার কোর সংখ্যা ও পাওয়ার লিমিটের কারণে গ্রাফিক্স কার্ড সম্পূর্ণ ভাবে ইউটিলাইজ করতে পারে না। তাই আপনি যখন পিসি কিনবেন তখন অবশ্যই চার কোরের সিপিউ নেবেন। চার কোরের সিপিউ শুরু হয় ইন্টেলের i3 8th gen হতে এবং এ এম ডির রাইজেন 3 2200G/3200G হতে।
ইন্টেল বা এ এম ডির মাদারবোর্ডে অন্য কোম্পানির সিপিউ বসবে
আমাদের দেশের মানুষদের আরো একটি কমন ভুল ধারণা হচ্ছে ইন্টেলের মাদারবোর্ডে এ এম ডির প্রসেসর বা এ এম ডি মাদারবোর্ডে ইন্টেলের প্রসেসর বসানো যাবে। এমন প্রশ্ন সোশ্যাল মিডিয়ার অনেক জায়গাতেই দেখা যাবে। এই ভুল ধারণার সংক্ষিপ্ত উত্তর হচ্ছে ইন্টেলের প্রসেসর এ এম ডি মাদারবোর্ডে বসবে না এবং এ এম ডির প্রসেসরের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি সেইম।
কারণ এ এম ডি এবং ইন্টেলের প্রসেসর ডিজাইনে একদমই মিল নেই। এ এম ডি সিপিউর কানেক্টরে গোল্ডেন পিন থাকে যা AM4 সকেট ব্যবহার করে। অপর দিকে ইন্টেলের প্রসেসরের ক্ষেত্রে কোন প্রকারের পিন সিপিউর মধ্যে থাকে না। বরং মাদারবোর্ডের মধ্যে সেই পিনগুলো ইন্টিগ্রেট করে দেয়া হয় যা কিনা বর্তমানে LGA1151 সকেট হিসেবে পরিচিত। যাই হোক, মেইন্সট্রিম ছাড়াও HEDT এবং সার্ভার পিসির ক্ষেত্রেও ব্যাপারটি সত্যি। সুতরাং খেয়ালে রাখবেন পিসি কেনার সময় যেন ইন্টেল সিপিউর জন্য এ এম ডি বা তার উল্টোটা যেন চেয়ে না বসেন।
বর্তমান জেনারেশনের মাদারবোর্ড লিস্ট
Intel | H310, B360, B365, H370, Z370, Z390, X299 |
AMD | A320, B450, B350, X370, X470, X570, X399 |
সব সিপিউ ওভারক্লক করা যায়
এই ধারণাটি অবশ্য আংশিক সত্যি। এ এম ডি তাদের রাইজেন লাইন আপে যে সকল প্রসেসর রিলিজ করেছে সেগুলোর সবগুলোকেই আপনি ওভারক্লক করতে পারবেন। তবে ওভারক্লক করার জন্য আপনার এটলিস্ট B অথবা X সিরিজের মাদারবোর্ড প্রয়োজন হবে।
অপরদিকে ইন্টেলের ক্ষেত্রে কথাটি ভিন্ন। আপনারা যদি খেয়াল করে দেখেন ইন্টেলের প্রসেসরের নাম প্রধাণত দুই প্রকার। কিছু প্রসেসরের নামের শেষে ‘K‘ বর্ণটি থাকে আর বাকি প্রসেসরের শেষে এটি থাকে না। মূলত যে সকল প্রসেসরের নামের শেষে ‘K‘ থাকে সেগুলোকেই মূলত ওভারক্লক করা যায়। যেমনঃ 8700K, 9700K, 9600K, 9900K ইত্যাদি। অপরদিকে যে সকল প্রসেসরের নামের শেষে ‘K‘ নেই যেমন 9100, 9500, 8700 ইত্যাদি প্রসেসরকে ম্যানুয়াল ওভারক্লক করা যাবে না। তবে এই সব নন কে প্রসেসরে ইন্টেল বুস্ট ক্লক দিয়ে রাখে যা অনেকটা দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান।
ওভারক্লক করলে সিপিউর আয়ু কমে যায়
আমাদের দেশের মানুষদের অন্যতম কমন ভুল ধারণা হচ্ছে যে ওভারক্লক করলে সিপিউর লাইফটাইম অর্থাৎ আয়ু কমে যায়। মানে, যদি একটি সিপিউ ৬ বছর চালানো যেত, সেটিকে ওভারক্লক করলে ৪ বছর চালানো যাবে এমন টাইপ ধারণা। আসলে এই কথাটিও প্রায় ৯০% এর মত ভুল।
৯০% ভুল কেন বললাম সেটি নিয়ে পরে আলোচনায় আসছি। আসলে ওভারক্লকিং জিনিসটি এখনো কাস্টম লিকুইড কুলিং সিস্টেমের মত বেশ আনকমন একটি জিনিস বাংলাদেশের মানুষের কাছে। ওভারক্লক করলে সিপিউর পারফর্মেন্স অনেকাংশেই বেড়ে যায়, কিন্তু লাইফটাইম কমে না। তাই আপনারা নিশ্চিন্তে ওভারক্লক করতে পারেন তবে………
তবে হচ্ছে ওভারক্লক করার জন্য ভোল্টেজ নিয়ন্ত্রণ করার প্রয়োজন হয়। আপনি যখন ওভারক্লক করবেন তখন আপনার মূল লক্ষ্য থাকবে যত কম ভোল্টেজে সম্ভব আপনার সিপিউকে একটি নির্দিষ্ট স্পীডে স্ট্যাবল রাখা। যদি আপনি হাই ভোল্টেজ ব্যবহার করেন তাহলে সেক্ষেত্রে সিপিউর লাইফটাইম কমে যাবে। ইন্টেল সিপিউর ক্ষেত্রে ১.৩২৫ ভোল্ট এবং রাইজেনের ক্ষেত্রে ১.৪০০ ভোল্টের উপরে উঠতে রেকমেন্ড করব না।
বেশি কোর থাকা মানেই বেশি গেমিং পারফর্মেন্স
আরো একটি ভুল ধারণা হচ্ছে যে সিপিউতে বেশি কোর থাকলেই গেমিঙ্গে বেশি পারফর্মেন্স পাওয়া যাবে। অর্থাৎ, চার কোরের প্রসেসর থেকে ৬ কোরে বা ৬ কোরের প্রসেসর থেকে ৮ কোরে বেশি পারফর্মেন্স পাওয়া যাবে। এই ধারণাটিও হচ্ছে আংশিক ভুল।
অবশ্যই আপনি যখন পিউর পারফর্মেন্সের কথা বিবেচনা করবেন যেমন ভিডিও এডিট, হেভি প্রোগ্রামিং, রেন্ডারিং ইত্যাদি প্রফেশনাল কাজ তখন যত বেশি কোরের সিপিউ আপনার কাছে থাকবে তত বেশিই পারফর্মেন্স আপনি পাবেন। গেমিঙ্গের ক্ষেত্রে চার কোরের সিপিউ হতে ছয় কোরে অবশ্যই বেশি পারফর্মেন্স পাওয়া যাবে। কিন্তু বিভিন্ন বেঞ্চমার্ক থেকে দেখা গিয়েছে ছয় কোরের সিপিউ হতে আট কোর বা দশ কোরের সিপিউর গেমিং পারফর্মেন্স খুব একটা বেশি না। অর্থাৎ আপনার যদি ছয় কোর বিশিষ্ট সিপিউ চালান আর সাথে যদি থাকে একটি ভালো মানের জিপিউ তাহলে আপনাকে বিষদ চিন্তাই করতে হবে না। ছয় কোরের সিপিউতে আপনি তেমন মেজর গেমিং পারফর্মেন্স মিস করবেন না।
পরিশেষে
আজ এতটুকুই ছিল সিপিউ নিয়ে বাংলাদেশের মানুষের ভুল ধারণা সম্পর্কে। এগুলো ছাড়াও আরো অনেক ভুল ধারণা আছে যা আজ ধরা হয় নি। তবে ভবিষ্যতে সেগুলো নিয়েও আলোচনা করা হবে বলে আশা রাখছি। আর আপনি যদি কম্পিউটার নিয়ে কোন সমস্যার সম্মুখীন হন সেগুলোর সমাধান পাওয়ার জন্য বা আপনার সকল কম্পিউটার সম্পর্কিত প্রশ্নের উত্তর পাওয়ার জন্য পিসি হেল্পলাইন ও ডিসকাশন ফেসবুক গ্রুপে এড হতে পারেন।