আর্টিকেলের শুরুতে এই হেডসেটকে নিয়ে একটা স্পয়লার দিয়ে দেই। Fantech HG15 Captain 7.1 হেডসেটটিকে অনেকটা কিছুদিন আগে রিলিজ হওয়া Xiaomi Pocophone F1 স্মার্টফোনটির সাথে তুলনা করতে পারেন। আপনারা জানেন, ফোনটির বিল্ড কোয়ালিটি সাধারণ মানের হলেও এর মধ্যে দেয়া আছে ল্যাটেস্ট ও গ্রেটেস্ট সকল হার্ডওয়্যার। আমাদের রিভিউ করা হেডসেটটিও অনেকটা এরকম। মাত্র দুই হাজার টাকা বাজেটেই এই হেডসেটে পাওয়া যাচ্ছে 7.1 ভার্চুয়াল সারাউন্ড সাউন্ড এবং অবশ্যই আরজিবি লাইটিং। বর্তমানে এই হেডসেটের দাম হচ্ছে ২১০০ টাকা আর কোথায় পাওয়া যাবে তা জানতে নিচের বাটনে ক্লিক করুন।
Fantech HG15 Captain 7.1 হেডসেট কিনতে ক্লিক করুন
Specification
রিভিউতে যাওয়ার আগে দেখে নিন হেডসেটটির সাধারণ স্পেসিফিকেশন।
Fantech HG15 Captain 7.1 Review
এই হেডসেটটি আমি ব্যাবহার করেছি প্রায় এক সপ্তাহের মত। আর এই এক সপ্তাহে হেডসেটটির মেজর সুবিধা ও অসুবিধা সম্পর্কে জানা হয়ে গেছে।
Build Quality
যেহেতু HG15 Captain 7.1 হেডসেটের দাম মাত্র ২১০০ টাকা, তাই একেবারে হাই কোয়ালিটি বিল্ড এর থেকে আশা না করাই শ্রেয়। স্পীকার বেইজ হচ্ছে পাতলা ও হালাক প্লাস্টিকের, হাতে নিলে মনে হবে সামান্য দুই ফুটের ড্রপেই হয়ত ফেটে যেতে পারে। ফোম কুশনগুলো তেমন একটা ডিপ না, যার কারণে হেডসেট মাথায় দিলে কানের সাথে বেইজটি লেগে যায়। যদিও বলা হচ্ছে এটি একটি ওভার ইয়ার হেডসেট, ইয়ার কাফগুলোর সাইজ সাধারণের থেকে কিছুটা ছোট সাইজের। আমি ব্যাবহার করে অনেকটা অন ইয়ার হেডসেটের ফিল পেয়েছি। হেডসেটের বাম স্পীকার বেইজে পাবেন ডেডিকেটেড ভলিউম কন্ট্রোল হুইল ও আরজিবি লাইটিং অন/অফের বাটন।
মাথার জন্য এতে দেয়া হয়েছে হেড স্ট্র্যাপ। এই হেড স্ট্র্যাপের ভিতর দিয়েই নেয়া হয়েছে হেডসেটের স্পীকার ও আরজিবি লাইটিং এর কেবল। স্ট্র্যাপের সাপোর্ট হিসেবে আছে পাতলা স্টিল ফ্রেম। স্ট্র্যাপের স্ট্রেচ ডিস্ট্যান্স আমি বলব মাঝারি দূরত্বের। তবে, বেশি টানাটানি করলে কি রেজাল্ট পাওয়া যাবে তা জানার রিস্ক নেয়া হয় নি। সংক্ষেপে, একটি এন্ট্রি লেভেলের হেডসেটের যেমন বিল্ড কোয়ালিটি হবার কথা তার থেকে সামান্য ডাউন কোয়ালিটির বিল্ড এটির। আমার মতে, স্পীকার বেইজকে আরো ইম্প্রুভড করতে পারত Fantech।
Comfort
এবার আসা যাক হেডসেটে ব্যাবহার করার সময় কি ধরণের কম্ফোরট লেভেল পাওয়া যায়, সেটির দিকে। আর ইনিশিয়ালি, কমফোরট লেভেল তেমন একটা বেশি নয়। আগেই বলা হয়েছে, হেডসেটের ইয়ারকাফের সাইজ অন্যান্য ওভার ইয়ার হেডসেটের ইয়ার কাফ থেকে কিছুটা ছোট। এতে করে সাধারণ ব্যাবহারের সময় তেমন একটা অসুবিধা না হলেও যতই সময় যাবে, কান জ্বলতে থাকবে। এমনকি, এক/সোয়া এক ঘন্টা ব্যাবহার করার পর কান ব্যাথাও শুরু হয়েছিল আমার।
আরো একটি সমস্যার কথা যেটা না বললেই নয়, সেটি হচ্ছে হেডসেটের স্পীকার বেইজ গরম হয়ে যাওয়ার ফ্যাক্ট। আপনারা জানেন, এই হেডসেটে রয়েছে সার্কুলার ইলুমিনেটেড আরজিবি লাইটিং। কিন্তু এই লাইটিং হচ্ছে হেডসেটটির একটি মেজর ফ্ল এর উৎস, আর তা হচ্ছে হেডসেট বেইজ ওভারহিট হওয়া। আরজিবি লাইটিং চালু করার দশ থেকে পনের মিনিট পরেই বেইজ গরম হওয়া শুরু করে। তাই, আরিজিবি লাইটিং চলা অবস্থায় হেডসেট কানে রাখলে, কান আনায়াসে গরম হয়ে যায়।
Sound Quality
আমার মতে, Fantech HG15 Captain 7.1 হেডসেটের সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে এর সাউন্ড কোয়ালিটি। অনেক হেডসেটের ডিফল্ট সাউন্ড কোয়ালিটি সামান্য কমের দিকে হয়ে থাকে। সফটওয়্যার দিয়ে EQ কাস্টোমাইজ করে পছন্দমত সাউন্ড কোয়ালিটি বের করে আনতে হয়। কিন্তু, এই হেডসেটের ডিফল্ট সাউন্ড কোয়ালিটি ছিল অনেকটাই লাউড ও ক্লিয়ার।
ভয়েস, মিউজিক, এফেক্ট সব কিছুতেই এর ডিফল্ট সাউন্ড কোয়ালিটিকে দশে ৮ দেয়া যায়। তাছাড়া, এর জন্য থাকা সফটওয়্যার দিয়ে EQ কাস্টোমাইজ করে সাউন্ড কোয়ালিটিকে আরো রিচ করা যায়। গেম, মুভি, গান প্রায় সব কিছুতেই সমান প্রিমিয়াম সাউন্ড পেয়েছি।
Virtual 7.1 Surround Sound
২১০০ টাকার হেডসেটে ভার্চুয়াল 7.1 সারাউন্ড সাউন্ড কেমন হতে পারে সেটা পরখ দেখার আগ্রহ ছিল। এবং সারপ্রাইজিংলি, হেডসেট আমাকে ডিসেপয়েন্ট করেনি। সফটওয়্যার থেকে এই ফিচার এক্টিভেট করে নেয়া যাবে। এরপর কমফোরট অনুযায়ি স্পীকার সেট আপ করে নিতে পারবেন।
Games Tested: Ring of Elysiam, Paladins, Battlefield 1, Nier: Automata, The Evil Within 2
সারাউন্ড সাউন্ড ছিল আমি বলব প্রায় ৭০% একুরেট। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মিসরিড করেছি (হয়ত আমি নুব গেমার বলে এমন হতে পারে)। পায়ের আওয়াজ, গানশট, শত্রুর গলা ইত্যাদি কোন দূরত্বে অবস্থান করছে সেটা খুব ভালোভাবেই অনুধাবন করা যাচ্ছিল।
Mic Quality
অন্যান্য হেডসেটের মতই এই হেডসেটে পাচ্ছেন একটি মাইক্রোফোন। তবে, লুকের দিক থেকে এই মাইকের একটি নেগেটিভ দিক রয়েছে। হেডসেটের মাইকের মধ্যে রয়েছে কমলা কালারের উজ্জ্বল লাইট। একে ওয়েবসাইটে একটি এট্রাক্টিভ দিক হিসেবে উল্লেখ করা হলেও, গেমিং এর সময় এই ইলুমিনেশন অনেকটা ডিস্ট্রাক্টিং। তাই মাইক অনেকটা নিচে নামিয়ে গেম খেলতে হয়। মুভি দেখা বা অন্যান্য সাধারণ কাজের সময়ও ব্যাপারটা একই।
মাইক কোয়ালিটি আসলে একটি ২ হাজার টাকার গেমিং হেডসেটে যেমন আশা করার কথা তেমনি। এই ধরণের বাজেট রেঞ্জের মাইক কোয়ালিটি কিছুটা ডাউন কোয়ালিটির হয়ে থাকে। এই হেডসেটের ক্ষেত্রেও এটি ব্যাতিক্রম নয়। মাইক্রোফোনের রিচ অনেকটাই খারাপ। ভালো করে আওয়াজ ইনপুট দেবার জন্য মাইকটিকে একেবারে মুখের কাছে এনে কথা বলতে হয়, যা হেডসেট পরে রাখার সময় করা সম্ভব হয় না। অনলাইন গেমিঙ্গে চ্যাট করার জন্য যথেস্ট হলেও অন্যান্য কাজ না করাই শ্রেয়।
Software Support
এই হেডসেটের জন্য পাচ্ছেন একটি বেসিক কন্ট্রোল সফটওয়্যার। এই সফটওয়্যার দিয়ে আপনি সাউন্ডের ইকুলাইজার, থ্রি ডি ইফেক্ট ও ৭.১ ভার্চুয়াল সারাউন্ড সাউন্ড নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন। আর এই সফটওয়্যারের সুবিধা হচ্ছে, আপনি এখানে হেডসেটের জন্য বিভিন্ন ধরণের সাউন্ড প্রিসেট সেভ করে রাখতে পারবেন।
Overall Opinion
এই এক সপ্তাহ ব্যাবহার করে বুঝতে পারলাম Fantech HG15 Captain 7.1 হেডসেটটি মূলত টার্গেট করা হয়েছে সম্পূর্ণ বাজেট অরিয়েন্টেড ইউজারদের দিকে যারা সবচেয়ে কম খরচের মধ্যে প্রিমিয়াম ফিচারগুলো চাচ্ছেন। ভালো সাউন্ড কোয়ালিটি ও কিছুটা একুরেট 7.1 সারাউন্ড থাকলেও এর ছোট সাইজের ইয়ারকাফ, গরম হয়ে যাওয়ার ইস্যু, কান ব্যাথা এবং কিছুটা ফ্র্যাজাইল বিল্ড কোয়ালিটি হেডসেটটি সাধারণ গেমারদের কাছে রেকমেন্ড করা তেমন একটা সম্ভব হচ্ছে না। ওয়েবসাইটে কম দামের মধ্যে প্রিমিয়াম ফিচার অফার করার কথা বলা হলেও, সাউন্ড কোয়ালিটি ও আরজিবি লাইটিং ছাড়া আর কিছু প্রিমিয়াম লাগে নি আমার কাছে। যারা আমার মত একটু বড় সাইজের মাথার অধিকারী মানুষদের বলব এই হেডসেট এড়িয়ে চলার জন্য। কিন্তু যাদের মাথা বা কানের সাইজ একটু ছোট তারা আনায়াসে ব্যাবহার করতে পারবেন।