প্রিন্টার ব্যাটেলঃ ইঙ্কজেট বনাম লেজার

আমাদের সকলেরই যেহেতু এতটুকু ধারনা আছে প্রিন্টার কি করে, তাই প্রিন্টার কি? সংজ্ঞা দিয়ে আমাদের এই আর্টিকেল শুরু করছি নাহ। বিপত্তি হলে একরকম প্রিন্টার দিয়ে সব ধরনের চাহিদা মেটানো সম্ভব নাহ। কারো শুধু স্লাইড প্রিন্ট, কারো শুরু ফটো, কারো কালার ডকুমেন্ট বা কারো সব কিছুই করতে হয়। সেজন্য বাজারে হরেক রকমের প্রিন্টার পাওয়া যায়।

তার মধ্যে কমন দুইটা টেকনোলজি হলঃ ইঙ্কজেট এবং লেজার

এছাড়াও আরো কয়েক প্রকার যেমনঃ থার্মাল, ডট প্রিন্টার ইত্যাদি আজকের আলোচনার বাহিরে থাকবে 

ইঙ্কজেট এবং লেজার দুটো প্রযুক্তিইর দাম মোটামুটি হাতের নাগালে এবং একই সাথে উভয়ের কিছু সুবিধা অসুধিবা থাকার কারণে প্রিন্টার কিনার সময় আমাদের চরম দ্বিধাদ্বন্দে ভুগতে হয়। তাই আজকের এই লিখায় যথাসম্ভব উভয়ের নাড়ি নক্ষত্র আলোচনা করা হবে যাতে আপনারা কোনটা কিনবেন এই সিদ্ধান্তে সহজে উপনীত হতে পারেন।

কাজের কথা শুরু করা যাক। মানে আমাদের মূল আলোচনা শুরু যাক।

কিভাবে কাজ করে? 

এইখানে কিছু থিওরিটিক্যাল জ্ঞান বিতরন চলে যাতে করে সামনের সেকশানগুলো একটু বেশি সহজবোধ্য হয়ে যায়। তাও যদি আপনার থিওরিটিক্যাল প্যাঁচাল ভাল না লাগে তাহলে এই পার্ট স্কিপ করতে পারেন।

ইঙ্কজেট প্রিন্টার কিভাবে কাজ করে? 

ইঙ্কজেট প্রিন্টার প্রিন্ট করার জন্য কার্টিজ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ওয়েল, কার্টিজ হলে ছোট বক্স যাতে কালি থাকে। প্রধানত দুই ধরনের কার্টিজ রয়েছে । একটাতে কালো কালি আরেকটা থেকে মেজেন্ডা, ইয়েলো, সায়ান কালি বা ইঙ্ক থাকে। কিছু কোম্পানি কালার কার্টিজে তিন ধরনের কালি একসাথে না করে আলাদা আলাদা কার্টিজ ব্যবহার করে তাদের প্রিন্টারে।

একটা পেইজের উপর এই কার্টিজ এক সাইড থেকে অন্য সাইডে মুভ করতে পারে। কার্টিজে প্রিন্টহেড থাকে, প্রিন্টহেডে আমাদের চুলের চেয়েও ব্যাসে ছোট এমন নজল বা ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। কার্টিজের ভিতরে প্রিন্ট হেডের উপর হিটিং ইলিমেন্ট থাকে যা ইলেক্টিক সিগনালের মাধ্যমে উতপ্ত করা যায়। এখন হিটিং ইলিমেন্টে যখন হিট দেওয়া হয় তখন ইঙ্ক বয়েল হয়ে বাবল বা ফোটো এর মত সৃষ্টি করে সেই বাবল প্রিন্ট হেডের মধ্যে থাকা নজল দিয়ে বের হয়। সাধারণত প্রিন্ট এর সময় ১ লক্ষ বাবল প্রতি সেকেন্ডে বের হয়।

নিচের ছবি দেখলে বিষয়টি আরো ক্লিয়ার হবে আশা রাখি।

 

ইঙ্কজেট প্রিন্টার এর আপডেটেড ভার্সন – ইঙ্ক ট্যাঙ্ক

ইঙ্কজেট এর প্রিন্টার এর প্রধান সমস্যা হল এতে ইঙ্ক এর ধারণ ক্ষমতা খুবই কম থাকে। যার কারণে কিছু পেইজ প্রিন্ট করার পর কার্টিজের কালি শেষ হয়ে যায়। এত সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য প্রিন্টারের সাথে এক্সট্রা ট্যাঙ্ক জুড়ে দেওয়া হয় যেখানে কার্টিজের তুলনায় অনেক বেশি ধারণ ক্ষমতা থাকে। এসব ট্যাঙ্ক থেকে কালি পাইপ এর মাধ্যমে অনবরত কার্টিজে ফ্লো করতে পারে। যার ফলে ঘন ঘন কার্টিজ চেইঞ্জ করার মত ঝামেলা থেকে রেহায় পাওয়া যায়।

লেজার প্রিন্টার কিভারে কাজ ?

লেজার প্রিন্টারের কার্যপ্রণালি অনেকটা জটিল। পারফেক্টলি এক্সপ্লেন করার জন্য আলাদা একটা লিখা শুধু এটার জন্যোই দরকার। তাই শুধু বেসিক আইডিয়া দেওয়া হল।

লেজার প্রিন্টারে মূলত টোনার দিয়ে প্রিন্ট করা হয়। টোনারে কালি বা ইঙ্ক লিকুইড রুপে না থেকে পাউডার আকারে থাকে। যা প্রিন্ট করা হবে তা একটা লেজার লাইট বিমের মাধ্যেমে মিররে ফেলা হয়। মিমর থেকে ঐ লেজার রিফ্লেক্ট হয়ে ড্রামে পড়ে। ঐ ড্রামে টোনার থেকে পাউডার দেওয়া হয় ফলে ড্রামে যা প্রিন্ট করতে হবে তার একটা প্রতিরূপ তৈরি হয়। তারপর কাগজ যখন ড্রামের নিচ নেওয়া হয় তখন ড্রামের প্রতিরূপ কাগজে চলে আসে। এই প্রক্রিয়া অনেক দ্রুত হয়।

প্রিন্টারের কিছু টার্ম যা না জানলেই নয়-

এই সেকশানে কিছু টার্ম আলোচনা করা হবে যা ইঙ্কজেট/লেজার উভয়ের জন্য প্রযোজ্য

Cost per page: সোজা বাংলায় বলতে গেলে প্রতি পেইজ প্রিন্ট করে কত টাকা লাগবে। এটা অনেক সময় স্পেসিফিকেশন এ দেওয়া থাকে। দেওয়া না থাকলেও আপনি সহজে বের করে নিতে পারেন। কার্টিজ/টোনার এর দাম কে কত পেইজ প্রিন্ট করা যায় এটা দিয়ে ভাগ দিয়ে সহজে বের করা যায়।
Print per minute: প্রতি মিনিটে কত পেইজ প্রিন্ট করা যায়।এটা PPM ইউনিটে মেজার করা হয়ে থাকে।
Paper size: A4, Legal, Letter সহ অনেক ধরণের পেইজ সাইজ রয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন টাইপের পেপার রয়েছে।  প্রিন্টার কেনার সময় আপনার রিকোয়েরমেন্ট অনুযায়ী সাপোর্টেড কিনা এটা দেখা জরুরি।
Connectivity: Wired/Wireless সাপোর্টেড কিনা।
Print Resolution: এটা মূলত রেজ্যুলেশন মেজারমেন্ট ইউনিট। একটা হিসাব করা হয় dpi মানে Dots  Per Inch. যত বেশি dpi তত বেশি ক্লিয়ার  এবং ভিভিড প্রিন্ট আসবে।

তাছাড়া প্রিন্টার সাইজ, প্রিন্ট করার জন্য ট্রেতে একসাথে কত পেপার দেওয়া যাবে ডিউটি, সাইকেল, ওয়ারেন্টি ও পাওয়ার কন্সাপশন ইত্যাদি বিষয়ও কন্সিডার করা জরুরি।

কার জন্য কোনটা? ইঙ্কজেট নাকি লেজার

এইবার আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট শুরু করা যাক। এটাতেই আমরা সবচেয়ে বেশি কনফিউশানে পড়ি।
এই সেকশানে ইঙ্কজেট/ইঙ্কট্যাঙ্ক ও লেজার প্রিন্টার উভয়ের সুবিধা/অসুবিধা আলোচনা করা হবে। যা আপনাদেরকে ফাইনাল ডিসিশানে পৌঁছাতে সাহায্য করবে আশা রাখা যাচ্ছে।

বিঃদ্রঃ কালার লেজার প্রিন্টার এর মূল্য মনোক্রোম(ব্ল্যাক ও ওয়াইট) লেজার প্রিন্টার এর মূল্যের কয়েকগুণ বেশি হওয়ার কারনে এবং আমাদের দেশের বাজারে এইভাবিলিটি কম থাকার কারণে কালার লেজার প্রিন্টার এই আলোচনার বাহিরে রাখা হয়েছে। এখানে লেজার প্রিন্টার বলতে মনোক্রোম লেজার প্রিন্টারই বুঝানো হয়েছে।

ইঙ্কজেট বনাম লেজারঃ শুরুতে ক্রয়মূল্য + কার্টিজ/টোনার

ইঙ্কজেট প্রিন্টার এর আপফ্রন্ট কস্ট খুবই কম। আমাদের দেশের বাজার মূল্য অনুযায়ী লোয়েস্ট ইঙ্কজেট প্রিন্টার এর মূল্য ৩হাজারের এর ঘরেই।অন্যদিকে লেজার প্রিন্টার এর আপফ্রন্ট কস্ট প্রায় দ্বিগুন অর্থাৎ ৭ হাজার টাকা।

কিন্তু ইঙ্কজেট প্রিন্টারের মূল অসুধিবা হলে ১০০-১৫০ পেইজ প্রিন্ট করার পর কার্টিজ এর কালি শেষ হয়ে তখন নতুন কার্টিজ ইন্সটল করতে হয়। অনেক সময় দেখা যায় ব্ল্যাক+কালার কার্টিজের মূল্য নতুন প্রিন্টার এর মূল্য এর মূল্য কাছাকাছি বা সমান হয়ে যায়। অপরদিকে লেজার প্রিন্টারের টোনার এর মূল্য ইঙ্কজেট প্রিন্টারের মত বেশি নয় কস্ট পার পেইজ হিসাব করলে।

ইঙ্কজেট প্রিন্টারের ঘনঘন কার্টিজ চেইঞ্জ করার প্রবলেমকে অভারকাম করার জন্য ইঙ্কট্যাঙ্ক সিস্টেমের কথা আপনারা অনেকই জানেন। কিন্তু কথা হল ইঙ্কট্যাঙ্ক সিস্টেম এর প্রিন্টার এর প্রাইস আবার লেজার প্রিন্টার এর চেয়ে বেশি। লোয়েস্ট HP যে প্রিন্টার পাওয়ার যায় তার দাম প্রায় ৯ হাজার টাকা। Epson,Canon & Brother এর মডেল অনুযায়ী এটা আরো বেশি প্রায় ১৩-১৪ হাজার। অরিজিনাল রিফিল বটল এর মূল্য বলা যায় হাতের নাগালে কারণ কস্ট পার হিসেব করলে ইঙ্কজেট প্রিন্টার এর থেকে অনেক কম।

ফুটনোটঃ ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টার কিনে থার্ডপার্টি ইঙ্কট্যাঙ্ক লাগানো যায়। কিন্তু এতে ওয়ারেন্টি থাকবে না এবং প্রিন্টিং কোয়ালিটি ডিগ্রেড করে। যেহেতু এটা অফিশালি সাপোর্টেড না তাই এই বিষয়টি বিবেচনা করা হয়নি। 

ইঙ্কজেট বনাম লেজারঃ স্পিড (ppm)+ কোয়ালিটি(dpi)

স্ট্রেইট কথা হল ইঙ্কজেট/ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টার এর কোয়ালিটি ভাল স্পেশালি ছবি এর ক্ষেত্রে কিন্তু স্পিড কম।অপর দিকে লেজার প্রিন্টার প্রিন্টার স্পিড বেশি কিন্তু কোয়ালিটি ভাল নয়। স্পিড এর বিষয় টা হোম ইউজারদের কাছে মূখ্য না হলেও অফিশাল কাজের ক্ষেত্রে এটা একটা গুরুত্বপূর্ন ফ্যাক্টর কেননা অফিশাল প্রিন্টার গুলো লোড বেশি থাকে এবং একটা প্রিন্টার অনেক স্টাফদের একই সাথে ব্যবহার করতে হয়। লেজার প্রিন্টার টেক্সট বেইজ ডুকমেন্ট খুব শার্প প্রিন্ট করতে পারে।অন্যদিক কালার প্রিন্ট এবং গ্যালারি ফটো প্রিন্ট এর জন্য অব্যশই আপনার ইঙ্কজেট/ইঙ্কট্যাঙ্ক এর দিকে ঝুঁকতে হবে কেননা এঁকে তো ইঙ্কজেট/ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টার ভালো কোয়ালিটি দিচ্ছেই সাথে কালার লেজার প্রিন্টার থেকে ইঙ্কজেট/ইঙ্কট্যাঙ্ক এর মূল্য অনেক কম।

ইঙ্কজেট বনাম লেজারঃ মেইনটেন্যান্স

ইঙ্কজেট/ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টারের ক্লিনিং বা ট্রাবলশুটিং বেশি করতে হয় যেহতু কার্টিজ এর প্রিন্টহেড জ্যাম হয়ে যাওয়া,প্রিন্টহেড এলাইন্মেন্ট, ইঙ্কট্যাঙ্ক প্রিন্টারের পাইপ গুলোতে এয়ার বাবল এসে যাওয়া ও কিছুদিন ব্যবহার না করলে কালি শুকিয়ে যাওয়ার মত সমস্যা এনকাউন্টার করতে হয়।অন্যদিকে লেজার প্রিন্টার এর মেইনটেন্যান্স ইস্যু তুলনামূলক কম।

এছাড়া প্রিন্টারের সাইজ, প্রিন্টিং এর সময় নয়েস ইত্যাদি বিষয়গুলো ইঙ্কজেট ও লেজার প্রিন্টিং টেকনোলজির উপর মোটাদাগে নির্ভরশীল নয় বরং ম্যানুফেকচার এবং মডলের উপর নির্ভরশীল।

এই আর্টিকেলে যথাসম্ভম অনেক বিষয় একসাথে এক জায়গায় একত্রিত করার সর্বাত্মক প্রচেষ্টা করা হয়েছে। তবুও কোনো পয়েন্ট যদি মিস হয়ে যায় তাহলে তা জানানোর জন্য বিশেষ অনুরোধ রইল। আরেকটি বিষয় এই আর্টিকেলে কোন ভুল তথ্য দিয়ে থাকলে তা অবশ্যই অবশ্যই জানাবেন। তা শুধরে নেয়া হবে।

 

Share This Article

Search
kampungbet kampungbet kampungbet toto slot link gacor kampungbet kampungbet kampungbet toto slot kampungbet link slot kampungbet kampungbet kampungbet situs toto situs togel situs slot rtp slot situs judi bola situs slot gacor link slot resmi slot gacor hari ini
toto togel monperatoto situs toto toto togel slot resmi toto togel bandar togel togel online bandar togel slot 4d toto slot toto slot