আমাদের দেশের মুরুব্বিদের কাছে কম্পিউটার কেসিং সারা জীবন একটি ইউজলেস টিনের বক্স হিসেবেই পরিচিত থাকবে। অবশ্য এখন যারা কম্পিউটার কিনছেন তারা খুব ভালো করেই জানেন, কম্পিউটারের সুস্থতার জন্য তার চ্যাসিসটি কতটা গুরুত্বপূর্ণ। আপনার পিসি ঠান্ডা থাকবে নাকি ওভেন হয়ে যাবে তা ৮০% নির্ভর করে আপনার কেসিঙ্গের মধ্যে কতটুকু বাতাস চলাচল করতে পারে। অবশ্য এর পেছনে ৬/৭ হাজার টাকা খরচ করতে অনেকেই দ্বিধাবোধ করেন। তাই আজ আমরা নিয়ে এসেছি Xigmatek Taurus কেসিঙ্গের রিভিউ, যা আপনারা বাজারে পেয়ে যাবেন ২৫০০ টাকার মধ্যে। কথা না বাড়িয়ে চলে যাই মূল রিভিউতে।
Review
Chassis Details
Xigmatek Taurus হচ্ছে একটি মিনি টাওয়ার মাইক্রো এটিএক্স কেসিং। অর্থাৎ এতে সাপোর্ট করবে মাইক্রো এটিএক্স মাদারবোর্ড। এছাড়া মিনি আইটিএক্স মাদারবোর্ড এর সাপোর্ট পাবেন। এটি বিল্ড করা হয়েছে টিন ও প্লাস্টিকের কম্বিনেশনে। ফ্রন্ট সাইড প্যানেলে দেয়া হয়েছে আক্রিলিক ক্লিয়ার সাইড উইন্ডো, যা দিয়ে আপনি আপনার পিসির ভেতরের অংশ দেখতে পাবেন। আর ব্যাক সাইড প্যানেলে নরমাল কেসিঙ্গের মতই টিনের কভার।
কেসিঙ্গের কালার স্কিম রাখা হয়েছে ব্ল্যাক ও রেডের একটি সুন্দর কম্বিনেশনে। কিন্তু এর লুকই হচ্ছে এর সবচেয়ে বড় নেগেটিভ দিক। ফ্রন্ট প্যানেলে ভালো করে খেয়াল করলে দেখবেন কালো বারের পেছনে প্লাস্টিকের কভার দেয়া হয়েছে। যার কারণে সামনের অংশ দিয়ে এয়ার ইনটেক একেবারেই ইম্পসিবল। যদিও বাম সাইডে মেশ দেয়া আছে, তা খুবই সামান্য পরিমাণে বাতাস টানতে সক্ষম।
I/O Ports
কেসিঙ্গের উপরে দেখতে পাবেন পাওয়ার বাটন, রিসেট বাটন, একটি USB 2.0, একটি USB 3.0 এবং HD Audio ও মাইক জ্যাক। অন্যান্য চ্যাসিসে দুটি USB 2.0 বা USB 3.0 থাকলেও কেন এমন ইনকনসিস্টেন্ট কম্বো দেয়া হল তা বুঝতে পারছি না।
রিয়ার প্যানেলে আপনারা দেখতে পাবেন নরমাল মাদারবোর্ড আই/ও কাট আউট, লাল রঙের এল ই ডি ফ্যান এবং জিপিউ ও অন্যান্য ডিভাইসের জন্য রয়েছে চারটি পিসিআই ব্র্যাকেট। যেহেতু এতে মাইক্রো এটিএক্স মাদারবোর্ড সাপোর্ট করে, এতে আপনি চাইলেও একটির বেশি জিপিউ লাগাতে পারবেন না।
Bottom Part
আমার কাছে এই কেসিঙ্গের যে অংশটি সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে তা হলো এর নীচের অংশটি। এটির নীচে দেয়া হয়েছে দুটি রিমুভেবল প্লাস্টিক লেগ যা কেসটিকে গ্রাউন্ড থেকে প্রায় দুই তিন ইঞ্চি এলেভেট করে রাখে। যার কারণে, কেসিঙ্গের নীচে থাকা পিএসইউর ঠান্ডা বাতাস টেনে নিতে সুবিধা হবে। আর অবশ্য যদি The Verge এর ভাষায় বলতেই হয়, তাহলে কোন প্রকার শর্ট সার্কিট হবে না। পিএসইউ এয়ার ইন্টেকের জায়গায় পাবেন রিমুভেবল ডাস্ট ফিল্টার। তবে সেটিকে রিমুভ করার জন্য আপনাকে সাথে থাকা প্লাস্টিক লেগটি খুলে নিতে হবে।
Inside The Chassis
চলুন দেখে নেয়া যাক চ্যাসিসটির ভিতরের আদ্য পান্ত। সাইড ক্লিয়ার প্যানেল্টি চারটি থাম্ব স্ক্রু দিয়ে আটকানো আছে যা আপনি কোন স্ক্রু ড্রাইভারের সাহায্য ছাড়াই খালি হাতে খুলে ফেলতে পারবেন। সাইড প্যানেল খোলার পর ভেতরে পেয়ে যাবেন একটি প্যাকেট যার মধ্যে পাবেন ম্যানুয়াল, কেবল ম্যানেজ করার জন্য কিছু জিপটাই এবং একটি স্ক্রুর প্যাকেট। প্যাকেট সরানোর পর ভেতরের দিকে খেয়াল করলে দেখতে পাবেন, মাইক্রো এটিএক্স মাদারবোর্ডের জন্য আগে থেকেই স্ট্যান্ড অফ প্রি ইন্সটল করা আছে। মাদারবোর্ড এরিয়ার আসে পাশে বেশ কয়েকটি কেবল কাট আউট দেখতে পাবেন। কাট আউট গুলো কেসিঙ্গের ভেতরে কেবল প্রবেশের জন্য ভালো জায়গা দিলেও, ২৪ পিনের জন্য একটু বড় সাইজের কাট আউট রাখা দরকার ছিল বলে মনে করি। নিচের ডান দিকে দেখতে পাবেন দুটি হার্ডড্রাইভ ট্রে। এর উপরের অংশে লাগাতে পারবেন দুটি ১২০ মিমি. এর ইন্টেক ফ্যান। তবে শুরুর দিকেই বলেছি, এর ফ্রন্ট হচ্ছে রেড প্লাস্টিক দিয়ে কভারড। তাই, কেসিঙ্গে ভালো এয়ার ফ্লো পেতে হলে আপনাকে অবশ্যই বেশ দামী ফ্যানই লাগাতে হবে।
কেসিঙ্গের ভেতরে উপরের দিকে লক্ষ্য করলে দেখবেন সেখানে দুটো ১২০ মিমি. ফ্যানের জন্য জায়গা থাকলেও ফ্যান সাপোর্ট দেয়া হয়েছে মাত্র একটি ফ্যানের জন্য।
Overall Opinion
এবার এই চ্যাসিসটি নিয়ে ওভারঅল মতামত। বিল্ড কোয়ালিটি, লুক ও ফিচার নিয়ে আমার কোন কমপ্লেইন নেই। কিন্তু এই চ্যাসিসে যে কোন কেসিঙ্গের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিনিস ইগ্নোর করা হয়েছে আর তা হল ফ্রন্ট এয়ার ইনটেক। যদি, ফ্রন্টে রেড প্লাস্টিক না রেখে শুধু একটি মেশ রাখত তাহলে কয়েক দশক গুণ বেটার হত এই কেসিংটি। আমার মতে Xigmatek বাজেটের মধ্যে স্টাইলিশ লুক দিতে গিয়ে প্র্যাক্টিকালিটিকে ইগ্নোর করেছে। যারা নরমাল ওয়েব ব্রাউজিং বা মুভি দেখার জন্য ৮/৯ হাজার টাকার জিপিউ সহ পিসি বিল্ড করবেন তাদের তারা কিনতে পারেন। কিন্তু যারা একটি গেমিং সেটাপ করার পরিকল্পনা করছেন তাদেরকে এই চ্যাসিসটি এভয়েড করার পরামর্শ দেব।