বাংলাদেশে ল্যাপটপে বায়ারদের একটা বিরাট অংশ হল স্টুডেন্ট এবং বিজনেস বা চাকরি রিলেটেড কাজের জন্য। এ ছাড়া ক্যাসুয়াল কাজের জন্য ল্যাপটপের চাহিদা তো আছেই।
ল্যাপটপ কিনতে গেলেই আমরা কনফিউজড হয়ে যাই এবং এক পর্যায়ে সেলারের সাজেশনে বা অন্য কারো সাজেশনে ল্যাপটপ কিনে নিয়ে এসেও অনেকের মনে শান্তি থাকে না। আমরা চেস্টা করবো বাজেট রেঞ্জে সব ধরণের ল্যাপটপের সাথে আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিতে এবং একটা বেসিক ধারনা প্রদান করার জন্য যাতে কিনার সময় কনফিউসানে পড়তে না হয়।
যাইহোক আজকে যে সিরিজের সাথে আমরা পরিচয় করিয়ে দিব এই সিরিজের ল্যাপটপ হল ওয়ান অফ দ্যা বেস্ট বাজেট ল্যাপটপ যেটি বাজেট প্রাইসের ভিত্তিতে পার্ফামেন্সের সাথে আপগ্রেডিবিলিটির সকল সুবিধা দিচ্ছে। শুধুমাত্র স্টুডেন্ট নয় সব ধরণের কাজের জন্য ল্যাপটপটি অলমোস্ট পার্ফেক্ট। অলমোস্ট পার্ফেক্ট বললাম কারন দুনিয়াতে সবকিছুই পার্ফেক্ট নয়।
এছাড়া টেকনোলজিকাল ডিভাইসে কমতি থাকবেই। যাতে করে এর পরের মডেলটি আরো ভাল হয়।
আমাদের ৪৫ হাজার টাকার বাজেট ল্যাপটপের একটি আর্টিকেল আছে। পড়তে ক্লিক করুন এখানে.
যাইহোক মুল কথায় আসি, আজকের ল্যাপটপটি হল ASUS-এর । ল্যাপটপের মুল মডেল হল ASUS X507 যার প্রসেসর এবং অন্যান্য স্পেসিফিকেশন্স এর ভিত্তিতে কিছু সাবমডেল আছে যেমন, X507MA,X507LA,X507UA,X507UF। এছাড়া এই ল্যাপটপগুলোর কালার ভ্যারিয়েন্টও রয়েছে।
প্রাইস এবং স্পেসিফিকেশনের ভিত্তিতে এই ল্যাপটপ সিরিজের প্রাইস ২৪ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ৫৩ হাজার টাকার মধ্যে পাওয়া যাবে।
১। ASUS X507MA
এই ল্যাপটপটি একদমই এন্ট্রি লেভেলের ল্যাপটপ। এর প্রাইস রেঞ্জ হল ২৪ হাজার ৫০০ টাকা থেকে শুরু।
স্পেসিফিকেশন্স বলতে এতে আছে ইন্টেলের Celeron® N4000 Processor. প্রসেসরটি ৪ এম্বি ক্যাশের যার বেস ক্লক ১.১০ গিগাহার্জ এবং এটি ২.৬০ গিগাহার্জ পর্যন্ত বুস্ত পাবে।
১৫.৬ ইঞ্ছের ল্যাপটপটির রেসুলেশন এইচডি(১৩৬৬*৭৬৮) যা একটি এলইডি ডিস্প্লে। ৪ জিবি DDR3 অথবা DDR4 2400মেগাহার্জের মেমরি দেয়া আছে তবে সেম স্লটে ৪ জিবি র্যামটির পরিবর্তে ৮ জিবিতে আপগ্রেড করার সুবিধা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে এক্সট্রা কোন র্যাম স্লট নেই এই মডেলটিতে।
গ্রাফিক্স চিপসেট হিসেবে আছে ইন্টিগ্রেটেড Intel® UHD Graphics 600
স্টোরেজ সুবিধা হিসেবে থাকছে ৫০০ জিবি বা ১ টেরাবাইট হার্ড্ড্রাইভ এবং m.2 SSD লাগানোর সুবিধা। এই রেঞ্জের ল্যাপটপে এসএসডি লাগানোর ফিচার তেমন দেখা যায় না। তবে এসএসডি পিসির বুট স্পিড এবং সফটওয়্যার লোডিং স্পিডকে কমিয়ে নিয়ে আসবে।
আর এখন এসএসডির দাম হাতের নাগালেই চলে এসেছে।
ব্যাটারি হিসেবে আছে ৩ সেলের ৩৩ ওয়াট আওয়ারের একটি ব্যাটারি। এই স্পেসিফিকেশনের ল্যাপটপটি তেমন পাওয়ার হাংগ্রি না তাই সিংগেল চার্জে অনেকক্ষন ব্যাকাপ পাওয়া সম্ভব।
ল্যাপটপটির ওজন ১.৬৮ কেজি।
একই মডেলের একটি পেন্টিয়াম কোয়াড কোর ভার্শনের ল্যাপটপ আছে যার প্রাইস পড়বে ২৯ হাজার ৮০০ টাকার মত। এই ল্যাপটপটির স্পেসিফিকেশন্স একই শুধুমাত্র এতে প্রসেসর হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে Intel® Pentium® Silver N5000 Processor, (4 M Cache, up to 2.7 GHz) প্রসেসরটি।
এই ল্যাপটপগুলো হাল্কা প্রোগ্রামিং বা অফিসিয়াল টাস্কের জন্য। তবে সেলেরন প্রসেসরটির মডেলে ভিসুয়াল স্টুডিওতে কাজ করতে একটু বেগ পেতে হতে পারে।
২। ASUS X507LA/X507UA
এই ল্যাপটপটির সাবমডেল হল intel Core i3 সিরিজের। মডেলটির কয়েকটি জেনারেশনের কোর আই থ্রি ভার্শন বা ভ্যারিয়েন্ট আছে।
প্রাইসিং এর দিক থেকে একদমই এন্ট্রি লেভেলে আছে X507LA তে intel Core i3 5005U মডেলের ভার্শনটি। প্রসেসরের ভ্যারিয়েন্টের আগে বলে নেই এই সিরিজের ল্যাপটপে প্রসেসর মডেল ভিন্ন হলেও বাকি স্পেসিফিকেশন্স যেমন, র্যাম, হার্ড ড্রাইভ ক্যাপাসিটি, ডিস্প্লে সাইজ সবই প্রায় একদমই একই।
এই ল্যাপটপে র্যাম থাকে ৪ জিবি ২৪০০ মেগাহার্জের র্যাম, ১ টেরাবাইট হার্ড ড্রাইভ স্টোরেজ এবং ১৫.৬ ইঞ্চের ডিস্প্লে থাকে।
যাইহোক, intel Core i3 5005U মডেলের ভার্শনটির গোল্ড এবং গ্রে কালার এভেইলেবল যার অফিশিয়াল প্রাইস ৩১৮০০ টাকা।
এছাড়া ASUS X507UA তে ৬ষ্ট জেনের intel Core i3 6006U আছে যা কিনা এর প্রিভিয়াস মডেলের থেকে সামান্য জেনারেশন আপগ্রেড। মডেলটির প্রাইস পড়বে ৩৪৮০০ টাকা।
একই ল্যাপটপের ৭ম এবং ৮ম জেনের প্রসেসরের ভার্শনও আছে। যেখানে ৭ম জেনের intel Core i3 7020U যা কিনা ২.৩০ গিগাহার্জের বেস ক্লক করা। ৭ম জেনারেশনের ভার্শনের দাম পড়বে ৩৬৫০০ টাকা
এবং ৮ম জেনারেশনের প্রসেসরটি হল intel Core i3 8130U যার বেস ক্লক ২.২০ এবং বুস্ট ক্লক ৩.৪০ গিগাহার্জের। বর্তমানে এই ল্যাপটপের বাজার মূল্য হবে ৩৯৮০০টাকা।
প্রতিটি ল্যাপটপের গোল্ডেন এবং গ্রে কালার ভ্যারিয়েন্ট আছে। প্রিভিয়াস জেনারেশনের মডেলগুলো বাজারে নাও থাকতে পারে।
এই সিরিজের ল্যাপটপ স্টুডেন্ট লেভেলের প্রোগ্রামিং, মাইক্রোসফটের অফিসিয়াল কাজ কর্মের ক্ষেত্রে যথেস্ট।
৩। ASUS X507UA/X507UF
এই সিরিজের মডেলটি হল বাংলাদেশের কমন ল্যাপটপ বাজেট রেঞ্জে পড়ে থাকে। আমরা সাধারনরা ল্যাপটপ কিনতে গেলেই একটা কমন বাজেট রাখি যা কিনা ৫০ থেকে ৬০ এর মধ্যে থেকে থাকে।
এই রেঞ্জের মডেলটি হয়তো হতে পারে আপনার জন্য পার্ফেক্ট। এই মডেলটির প্রসেসর কোর আই ফাইভ হয়ে থাকে এবং অফিসিয়ালি বাজারে এর ৮ম জেনারেশনের মডেলই পাওয়া যায়।
এর দুটি ভ্যারিয়েন্ট আছে তার মধ্যে একটি হল শেয়ার্ড গ্রাফিক্সের এবং অপরটি হল এনভিডিয়ার বাজেট জিপিউ চিপসেট Nvidia GeForce MX130 2GB। শেয়ার্ড গ্রাফিক্সের মডেলটি পরিচিত X507UA এবং এক্সটার্নাল জিপিউ ভার্শনটি পরিচিত X507UF নামে।
এই দুই ভ্যারিয়েন্টে শেয়ার্ড গ্রাফিক্সের ডিস্প্লেটি হল ১৫.৬ ইঞ্চের এইচডি ডিস্প্লে এবং এক্সটার্নাল জিপিউ মানে Nvidia GeForce MX130 2GB মডেলটিতে আছে ১৫.৬ ইঞ্চের ফুল এইচডি ডিস্প্লে। জিপিউ এবং ডিস্প্লে এর জন্য প্রাইসের তারতম্য রয়েছে।
এই রেঞ্জে এটি কোন গেমিং ল্যাপটপ না হলেও এক্সটার্নাল জিপিউ থাকাটা একটা বেনিফিট বলা চলে। তবে টুকটাক গেমিং করা যাবে। এছাড়া ভিসুয়াল স্টুডিও বা এর সিমিলার বা এর চেয়ে বেশি ভারী সফটওয়্যারে ভালভাবে কাজ করার জন্য এই সিরিজের ল্যাপটপটি যথেস্ট।
প্রসেসর হিসেবে আছে এতে Intel Core i5 8250U প্রসেসর যার বেস ক্লক ১.৬০ গিগাহার্জ যা আপ্টু ৩.৪০ গিগাহার্জে যেতে সক্ষম।
তবে ওয়েট, প্রসেসরের গিগাহার্জ হিসাব করার আগে বলে দেই কোর আই থ্রী ৮ম জেনের সাথে কোর আই ফাইভ ৮ম জেনের পার্থক্য হল আই থ্রী ডুয়াল কোরের প্রসেসর। কিন্তু কোর আই ফাইভ একচুয়ালি ৪ টি কোর বিশিষ্ট প্রসেসর। তাই বলতে গেলে কোর আই ফাইভ আরো বেটার পার্ফামেন্স দিতে সক্ষম।
র্যাম হিসেবে আছে ৪ জিবি ২৪০০ মেগাহার্জ বাস স্পিডের র্যাম। এক্ষেত্রে র্যাম আপগ্রেড করার সাজেশন রইল। এই সিরিজের ল্যাপটপ কিনে স্লো বা হ্যাং ইস্যুটা মুলত র্যামের জন্য হতে পারে। আপনারা তো জানেন গুগোল ক্রোম বা বর্তমান ব্রাউসারগুলো অনেক র্যামখেকো।
গ্রে কালারের X507UA ল্যাপটপের প্রাইস পড়বে ৪৮৫০০ টাকা এবং X507UF গ্রে এবং গোল্ডেন কালার ভ্যারিয়েন্টের প্রাইস পড়বে ৫৩০০০ টাকা।
শেষকথা, যদিও এটি আসুসের একটি সিরিজের ওভারভিউ ছিল। অফিসিয়াল প্রাইসের কথা বলা হলেও বাজারে প্রাইস কম বা বেশি হতেই পারে। কিনার আগে সবকিছু যাচাই করে নেয়ার সাজেশন রইল এবং যে কোন সাজেশন বা টেক রিলেটেড সমস্যা সমাধানের জন্য আমাদের ফেসবুক গ্রুপ আছেই।
এছারা এই ধরনের সিরিজের ওভারভিও পেতে চোখ রাখুন আমাদের ওয়েবসাইটে এবং ফেসবুক পেজে।
ধন্যবাদ।