অবশেষে দেশের বাজারে ঢুকেছে বহুল প্রতিক্ষিত AMD এর APU। যদিও সবথেকে Higher ও দামী ভ্যারিয়েন্টটিই ঢুকেছে। বিশ্বব্যাপী GPU এর যেমন সংকট, দাম ও অবিশ্বাস্য রকমের বেশি। সেজন্য পিসি বিল্ড করতে পারছেন না অনেকেই। বাজারে Ryzen 7 4750G APU ঢোকায় তাই অনেকের মধ্যেই আগ্রহ তৈরী হয়েছে এই APU টিকে ঘিরে, জেগেছে অনেক প্রশ্নও, যেমন কেনা উচিত হবে কি না,value for money হবে কি না ইত্যাদি । চলুন আলোচনা করা যাক।
Ryzen 7 4750G Pro Specification:
প্রথমেই বহুল আলোচিত APU টির ভেতরে কি রয়েছে, অর্থাৎ স্পেসিফিকেশনগুলো হালকা চোখ বুলানো যাক।
৮ কোর ১৬ থ্রেড বিশিষ্ট এই প্রসেসরটির Base clock 3.6 Ghz ,boost clock 4.4 Ghz. রয়েছে 8MB L3 Cache। প্রসেসরটি TSMC 7nm FinFET আর্কিটেকচারে তৈরী।PCIe express version 3.0 ও সকেট হিসেবে চিরচেনা AM4 সাপোর্টেড motherboard ই ব্যবহার করতে হবে। প্রসেসরটির TDP মাত্র ৬৫ ওয়াট যা অবশ্যই ভালো একটি দিক। সর্বোচ্চ ৩২০০মেগাহার্জ (DDR4) পর্যন্ত র্যাম লাগানো যাবে।
GPU Specs:
গ্রাফিক্স প্রসেসিং ইউনিট, অর্থাৎ যেটি নিয়ে আমাদের আগ্রহ সবথেকে বেশি এই প্যাকেজটির ক্ষেত্রে, সেদিকে একটু তাকানো যাক। RX Vega Graphics ইউনিট এর clock speed 2.1 Ghz ও GPU Cores ব্যবহ্বত হয়েছে ৮টি।
এই APU টি চালাতে AMD এর A520 বা B550 মাদারবোর্ডের প্রয়োজন হবে।
বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে আলোচনাঃ
গত কয়েক মাস যাবত বিশ্বজুড়েই Chip Shortage, মাইনার,স্ক্যালপার দের উপদ্রব এর কারণে GPU এর মারাত্মক Shortage দেখা দিয়েছে। স্টক এর অবস্থা খুবই করুণ, সাথে রয়েছে ৩,৪,৫ গুণ বেশি দামের ধাক্কা। এর জন্য অনেক মাস যাবতই পিসি বিল্ড বা আপগ্রেড করতে পারছেন না অনেকেই।
Content Creation, editing, programming এর জন্য হোক বা গেমিং এর জন্য হোক, GPU না থাকায়,দাম বেশি থাকায় পিসি বিল্ড করা একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাড়িয়েছে। এমতাবস্থায় ৩৩ হাজার টাকা মুল্যের এই APU অর্থাৎ CPU+GPU Combo কিরকম ভ্যালু ফর মানি হতে পারে, কতটুকু যুক্তিযুক্ত ও effective সমাধান হতে পারে, কাদের জন্য উপযুক্ত হতে পারে তা আলোচনার আগে ৩৩ হাজারে বর্তমান বাজারে কিরকম Combo পাওয়া যাবে তার দিকে একবার তাকানো জরুরি।
GT 710,730 এর মত কার্ডগুলো দিয়ে ডিসপ্লে আউটপুট ছাড়া বর্তমানে আদৌ আর কোনো কাজ করা সম্ভবই নয়। এই কার্ডগুলো ও বিক্রি হচ্ছে ৫-৭ হাজার টাকার আশেপাশে। 9/10 হাজার টাকায় রয়েছে GT 1030 যেটিও একেবারেই শক্তিশালী কার্ড নয়। very low 1080p/720p তে গেমিং করা, ডিসপ্লে আউটপুট এর কাজ ছাড়া আদৌ কিছু করা সম্ভব নয় এই কার্ডগুলো দ্বারা, অবশ্যই আমরা গেমিং বলতে আজকাল 720p low, 1080p low সেটিং এ গেমিং এর কথা বুঝাই না ও কেওই এই সেটিংস ও রেজুলুশনে গেমিং করার জন্য নতুন পিসি বিল্ড করেন না। ডিসপ্লে আউটপুট এর উদ্দেশ্য থাকলে ইন্টেলের non f ভ্যারিয়েন্ট নেওয়াটাই অধিক যুক্তিযুক্ত।
Dedicated GPU এর কথা আরো বলতে গেলে আসে GTX 1050 Ti যেটির সঠিক ও স্বাভাবিক দাম হলো ১৩-১৪ হাজার টাকা (সাথে ১৩/১৪ হাজার টাকার প্রসেসর এ ভালো Combo হতো স্বাভাবিক সময়ে) । যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ২৫-৩০ হাজার টাকার রেঞ্জে যা নেওয়ার কথা চিন্তাও করা যায় না। সুতরাং আমাদের হাতে বলতে গেলে ৩০ হাজার টাকায় ভালো CPU+GPU Combo পাওয়া একান্তই অসম্ভব।
বেশ কয়েক বছর লাইট AAA গেমিং, esports gaming এর জন্য Ryzen 5 3400G প্রসেসরটি অনেক ভালো একটি পছন্দ ছিল, প্রচুর পিসি বিল্ড হয়েছে এই APU টি দিয়ে। কিন্ত বর্তমানে প্রসেসিং পাওয়ার বা GPU ability দুইদিক দিয়েই ২০২১ সালে এই APU খুব বেশি ভালো পারফর্মেন্স দিতে সক্ষম নয়, তার থেকেও বড় কথা এই প্রসেসরটির বর্তমানে যা দাম, তা একেবারেই তার পারফর্মেন্স কে জাস্টিফাই করে না, ১৭-১৮ হাজার টাকা দামে এটি মোটেও value ফর মানি নয়।
Ryzen 7 4750G Pro এর পারফর্মেন্সঃ
সবথেকে গুরুত্বপুর্ণ অংশে আমরা চলে এসেছি। যেহেতু আমাদের হাতে কোনো রিভিউ ইউনিট নেই, এবং নিজে কিনে পরীক্ষা করার মত ও সুযোগ নেই বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে, তাই 3rd Party Review গুলোই ভরসা পারফর্মেন্স সম্পর্কে আন্দাজ পেতে। প্রথমেই Tomshardware এর Application Benchmark এর রেজাল্ট দেখে নেওয়া যাকঃ (এখানে তারা আলাদা GPU ব্যবহার করেছে, এর কারণে আপনি এই APU এর raw প্রসেসিং পাওয়ার সম্পর্কে ধারণা পাবেন)
মোটামুটি সবগুলো টেস্টেই দেখা যাচ্ছে যে Ryzen 7 Pro 4750G এর Ability মোটামুটি Ryzen 5 3600X,3600XT, কিছু কিছু ক্ষেত্রে 3700X এর মত(মোটামুটি এগুলোর থেকে হালকা বেশিই স্কোর করতে দেখা যাচ্ছে)। এবং Intel প্রসেসর এর সাথে তুলনা করলে 10600k,10700f এর সমতুল্য পারফর্মেন্স ডেলিভার করতে সক্ষম এই APU টি। অর্থাৎ প্রসেসর এর পারফর্মেন্স এর সাথে দামের তুলনা করলে এই ডিলটিকে খারাপ বলা যাচ্ছে না।
এবার একটু Ryzen vs Ryzen Comparison এর দিকে তাকানো যাক (এক্ষেত্রে কিছু পাদটিকা রয়েছে, GURU3D এর করা টেস্টিংটিতে প্রসেসর হিসেবে একটূ Lower variant অর্থাৎ Ryzen 5 Pro 4650G রয়েছে, এর মানে হলো আমাদের আলোচনার বিষয়বস্ত যেটি কি না Ryzen 7 4750G,সেটির পারফর্মেন্স আরো বেশ কিছুটা বেশি পাওয়া যাবে Ryzen 5 Pro 4650G থেকে) সুতরাং পাঠকদের একটু বিবেচনা করে নিতে হবে এটা ও স্কোরগুলো মনে মনে হিসাব করে নিতে হবে যে 4750G এর থেকে কিছুটা বেশি স্কোর করবে, এবং এখানে ভিন্ন ভিন্ন মেমোরি চিপ ও ভিন্ন ভিন্ন বাস স্পিডের স্কোর উল্লেখ রয়েছে, স্টান্ডার্ড হিসেবে ৩২০০ মেগাহার্জ এর স্কোরটাতেই গুরুত্ব দেওয়া উচিত হবে)
গ্যালারি(Mobile,FB Browser থেকে ছবি চেঞ্জ করতে ডানে বামে sweep করুন)
গ্যালারি(সিনেবেঞ্চ ও অন্যন্য)
উপরের চার্টগুলো থেকে মোটামুটি আমার মনে হয় পাঠকরা যথেষ্ট ধারণা পেয়ে গিয়েছেন Ryzen 7 Pro 4750G এর ক্ষমতা সম্পর্কে।
গেমিং পারফর্মেন্সঃ
এবার দেখে নেওয়া যাক গেমিং এ কিরকম পারফর্মেন্স পাওয়া যেতে পারে Ryzen 7 Pro 4750 থেকে।সিদ্ধান্ত নেওয়া ও ধারণা পাওয়ার সুবিধার্থে Anandtech,Tomshardware এবং Guru3d,৩টি সাইটের বেঞ্চমার্ক ই দেওয়া হলো।
উপরে আমরা দেখতে পাচ্ছি বেশ কিছু AAA গেম রয়েছে, সেগুলোতে ফ্রেমরেট মোটামুটি ৬০ এর আশেপাশে দেখা যাচ্ছে।(যদিও 720p medium রেজুলুশনে) গেমিং এ smooth performance এর রেঞ্জ যদি ৪০ এফপিএস ধরা হয়, সেক্ষেত্রে এই রেজাল্টকে যথেষ্ট ভালো বলা যায়। ৫০ FPS এর আশেপাশে দেখা যাচ্ছে F1 2019 এর স্কোর। World of Tank এর মত টাইটেলগুলোতে প্রচুর এফপিএস পাওয়া যাবে তা দেখা যাচ্ছে গ্রাফ থেকে কেননা 720p তে ৩৫০ এফপিএস দিতে দেখা যাচ্ছে, সুতরাং 1080p তেও ২০০+ এফপিএস পাওয়া যাবে তা বলাই যায়। GTA V এ HIGH Settings এ ৬০ এফপিএস এর আশেপাশে পাওয়া যাবে।Wolfenstein Youngblood এও Low তে 60 FPS এর আশেপাশে পাবেন।
আগেই উল্লেখ করেছি যে Guru3d এর বেঞ্চমার্কটি Ryzen 5 4650G এর। সেক্ষেত্রে 4750G তে আরো কিছু বেশি ফ্রেমরেট পাওয়া যাবে তা মোটামুটি ধরে নেওয়াই যায়। এবং settings tweak করে ফ্রেমরেট আরো অনেকটাই বাড়িয়ে নেওয়া যাবে।
Esports Titles:
গেমারদের মধ্যে আবার বড় একটি অংশ অনলাইনে ব্যাটেল রয়েল,Competitive FPS,Sports games খেলে থাকেন। Esports গেমগুলোর মধ্যে CSGO তে 1080p Very High তে ৯০-১০০ FPS ও মিডিয়াম/লো তে ১৫০ এফপিএস এর আশেপাশে পাওয়া যাবে।Battlefield V তে Texture high রেখে 70/80% scale এ ৬০ এফপিএস এর আশেপাশে পাওয়া যাবে। Call of Duty Warzone এও Low তে ৭০-৯০ এফপিএস পাবেন আপনি, যেটি যথেষ্ট ভালো এক্সপেরিয়েন্স দেবে।PUBG তে ৬০ ও Fortnite এও লো সেটিংসে ৯০ এফপিএস এর আশেপাশে পাওয়া যাবে। একই রকমের পারফর্মেন্স পাবেন Rainbow Six Seige থেকেও।
League of Legends এ very high সেটিংসে ১১০ এফপিএস এর আশেপাশে FPS পাওয়া যাবে গড়ে। Dota 2 তে fastest preset এ ১২০-১৩০ এফপিএস এর আশেপাশে পেতে পারেন। Overwatch এ লো সেটিংস এ ৮০ এফপিএস এর আশেপাশে, F1 2020 তে একই সেটিংস এ 60 এর আশেপাশে বা কিছু কম পাওয়া যেতে পারে। Forza Horizon 4 এ লো সেটিংস এ ৬০-৭০ এফপিএস পাওয়া যাবে। Doom Eternal এ লো তে 60-90 এফপিএস এর আশেপাশে থাকবে ফ্রেমরেট। Dirt 5 এ পাবেন ৪৫-৫০ FPS। Rocket League এ Performance Preset ইউজ করে ৮০ এফপিএস মত পাওয়া যাবে।
উপসংহারঃ
এই তথ্যগুলো Youtube এ বিস্তর ভিডিও দেখে আমি সংগ্রহ করেছি। সারমর্ম মোটামুটি এরকম যে বেশিরভাগ Competitive Battle Royale ,FPS গেমে আপনি ৬০-৭০ এফপিএস পাবেন, কিছু ক্ষেত্রে ৮০-৯০ এফপিএস ও পাবেন Low সেটিংস এ। যা যথেষ্ট স্মুদ এক্সপেরিয়েন্স দিবে। সেটিংস হালকা মিডিয়াম-হাই-লো মিক্স করে কোয়ালিটি আরো বাড়িয়েও নিতে পারবেন চাইলে। তবে বেশিরভাগ AAA টাইটেলে Low তে ৩০এফপিএস এর বেশি পাওয়া যাবে না। GTA 5 এ যদিও হাই তে ৬০ এফপিএস পাওয়া যাবে।
এ ছাড়া যারা ফিফা, PES ,Cricket এর মত গেম খেলবেন তারা হাই তেই খেলতে পারবেন, ফিফা তে হাই সেটিংস এ ১০০FPS পাওয়া যাবে। PES,Cricket এও হাই সেটিংস এ ৬০-৯০ এফপিএস পাওয়া যাবে।
সিদ্ধান্তঃ কারা কিনবেন, কারাই বা কিনবেন না?
গেমারদের মধ্যে যারা অনলাইনে পাবজি ফর্টনাইট ওভারওয়াচ এর মত গেম, Battle Royale, Esports, Competitive FPS ফিফা/পেস ক্রিকেট বা Forza Horizon/রকেট লীগ এসব গেম খেলতে চান,যারা লো সেটিংস এ খেলতে পারবেন ৬০ এফপিএস পাওয়া টাই যাদের জন্য প্রধান উদ্দেশ্য তারা নিসন্দেহে এই প্রসেসরটি নিতে পারেন। আপনার গেমিং এ একেবারেই সমস্যা হবে না। বর্তমানে পরিস্থিতি বিবেচনায় এটি ভালো ডিল।
যারা গেমিং এর পাশাপাশি Productivity, Multitasking,Content creation, programming এর মত কাজ করেন, Blender,V-ray সহ অন্যন্য প্রোগ্রাম নিয়ে কাজ করেন সাথে হালকা গেমিং করবেন Esports বা Online, তাদেরকেও বলবো এই প্রসেসরটি নিতে।
কারা নিবেন না?
যারা খুবই ভারী ভারী AAA গেম হাই/আল্ট্রা সেটিংস এ High Framerate এ খেলতে চান, ৫০/৬০+ এফপিএস আশা করছেন তাদের ক্ষেত্রে এই প্রসেসর নেওয়া একেবারেই ঠিক হবে না। বড় বড় AAA টাইটেলগুলোতে এই প্রসেসর দিয়ে GPU ছাড়া যেকোনো সেটিংস এই ৬০ এফপিএস কেন ৫০/৪৫ এফপিএস পাওয়াও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই অসম্ভব। সুতরাং এ ধরণের ইউজার এভয়েড করবেন এই প্রসেসরকে।
তবে যাদের প্রোফেশনাল কাজ,Multitasking,Productivity এর কাজ এমন লেভেলের যাতে করে এক লাখ/দেড় লাখ টাকার পিসি লাগে, তাদের ক্ষেত্রেও সুবিধা হবে না এই প্রসেসরটিতে। তারাও এভয়েড করবেন।
আরো একটি বিষয় বিবেচনায় রাখা জরুরি সেটি হচ্ছে আপনার কাজের ধরন, আপনার ব্যবহারকৃত সফটওয়্যার/প্রোগ্রামটি যদি CPU resource,CPU Speed এর উপর বেশি নির্ভরশীল হয় সেক্ষেত্রে এই প্রসেসরটি নিতে পারেন।
কত দামে পিসি হতে পারে?:
মোটামুটি ৫০ হাজার এর আশেপাশে একটি পিসি বিল্ড করে ফেলা সম্ভব এই প্রসেসর সহ। ৫০ হাজারে মাদারবোর্ড, এসএসডি/হার্ডডিস্ক, পাওয়ার সাপ্লাই,Ram কেসিং সহ বিল্ড হয়ে যাবে এই প্রসেসরটি দিয়ে। সুতরাং যারা GPU ছাড়া ৫০ হাজারের আশেপাশে পিসি বিল্ড করতে চাচ্ছেন, তাদের জন্য এটি একটি ভালো প্যাকেজ।যদিও এখন র্যামের দাম অনেক বেশি, তাও অনুরোধ থাকবে অন্তত 4×2 জিবি ৩২০০ মেগাহার্জ কিংবা 8×2 জিবি ৩২০০ মেগাহার্জ এর র্যাম নেওয়ার।