OnePlus Bullet Wireless Z-এর বাংলা রিভিও

গত মাসে ওয়ানপ্লাসের Oneplus 8 সিরিজের সাথে OnePlus লঞ্চ করে তাদের নেকব্যান্ড সিরিজের তৃতীয় সদস্য Oneplus Bullet Wireless Z। ঐ লঞ্চিং ইভেন্ট নিয়ে অনেক তর্ক বিতর্ক চললেও একটা জিনিস নিয়ে কারো মধ্যে বিরুপ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়নি তা হল এই নেকব্যান্ড ওয়্যারলেসটি। বলে রাখা ভাল এটি বুলেট ওয়্যারলেসের তৃতীয় সদস্য হলেও এটি মোটেও প্রিভিয়াস ভার্সনের আপগ্রেড নয় বরঞ্চ ডাউন গ্রেড বলা চলে কিছু ক্ষেত্রে যা এটি নাম করন দেখেও আঁচ করা যায়। কারন হল মার্কেটে থাকা realme, xiaomi ও অন্যান্য কোম্পানির নেক ব্যান্ড গুলোর সাথে কম্পিট করার জন্য ওয়ান প্লাস এতে হিউজ প্রাইস কাট করেছে প্রিভিয়াস ভার্সন থেকে যার প্রভাব লক্ষ্য করা গিয়েছে কিছু ক্ষেত্রে।

ভারতে এটির মূল্য ১৯৯৯ রুপি। গ্লোবালি ৪৯ ডলার। চারটি কালারে পাওয়া যাচ্ছে- ব্ল্যাক,মিন্ট,ব্লু ও সিলভার।

বিস্তারিত পোস্ট শুরু করার আগে কিছু ডেসক্লেইমার দেওয়া যাক। আমাদের দেশে বর্তমানে(এই পোস্ট লিখার সময়) যে ভার্সনটি পাওয়া যাচ্ছে তা হলে চাইনিজ। ইন্ডিয়ান ভার্সন এখনো এভাইলেবল নাহ। আমাদের দেশের সেলারগণ মার্কেটিং গ্যামিক এর জন্য দুইটি ভার্সন এর মধ্যে পার্থক্য আছে বলছে। কিন্তু আদতে ইন্ডিয়ান/গ্লোবাল দুইটির মডেল সেম(E303A)। বলে রাখা ভাল ইন্ডিয়ান রিভিওয়ারদের ভিডিও লক্ষ্য করলে দেখা যাচ্ছে ইন্ডিয়ান ভার্সন ও ইম্পোর্টেড ফ্রম চাইনা। তার মানে এট লিস্ট এই মুহুর্তে দুইটার মধ্য সিগনিফিকেন্ট পার্থক্য থাকবে বলে মনে করি নাহ।

গত দুইদিন আগে চট্টগ্রামের একটি অনলাইন বেসড শপ থেকে এটি কিনা হয় ৩৭৯০ টাকা দিয়ে। আমাদের দেশের বাজারের এটি মোটামুটি ৩৪০০-৩৮০০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে চাইনিজ ভার্সনটি। প্রায় দুইদিন এক্সটেন্সিভ ইউস করার পর এর ডিটেলড রিভিও নিয়ে আজকে হাজির হলাম।

আনবক্সিংঃ ওয়ান প্লাসের এর প্রোডাক্ট আনবক্সিং এক্সপেরিয়েন্স বরাবরই প্রিমিয়াম। বক্স খুললেই প্রথমেই চোখে পড়বে ইয়ারবাডটির হাউসিং। সেটি উল্টালে রয়েছে ইয়ারবাডটি। এর পরে তাদের স্লোগান এর নিচে আলাদা চেম্বারে দেওয়া হয়েছে এক্সেসরিজ বক্স। তাতে একপাশে রয়েছে ইউজার ম্যানুয়েল অন্য পাশে চার্জিং এর জন্য ইউএসবি টাইপ সি ক্যাবল ও ২ জোড়া এক্সট্রা ইয়ার টিপস(মোট ৩ জোড়া)। বুলেট ওয়ারলেস ২’তে ক্যারিয়িং পচ থাকলেও এখানে এটা মিসিং। যদিও ম্যাক্সিমাম ইউজার এর কাছে এটি অপশনাল।

লুক ও বিল্ড কোয়ালিটিঃ নেক ব্যান্ডটির মিডেলের অংশটি সফট রাবার এর তৈরি। খুবই ফেক্সিবল। ইচ্ছামত বেন্ড করা যায়। পেঁচিয়ে ইজিলি পকেটেও নেয়া যাবে। নেকব্যান্ডের দুই সাইডের অংশটি আবার প্লাস্টিকের তৈরি সাথে ম্যাট ফিনিশ।নেকব্যান্ডে একটি কুইক সুইচ বাটন সাথে একটি এলইডি। যেটি চার্জের সময় স্ট্যাটিক রেড কালার অন্যান্য সময় ওয়াইট ব্লিঙ্কিং। মাইক্রোফোন ও বাটনের অংশটি আলাদা করে দেওয়া নেকব্যান্ড থেকে। এই ডিজাইনের কারনে দুইদিকে সুবিধা মাইক মুখের কাছাকাছি থাকে এবং বাটনগুলো খুব ইজিলি রিচেবল। এইবার আশা যাক বাডস গুলো দিকে। বাডস এর ডিজাইন এ কোনো চেইঞ্জ আনা হয়নি প্রিভিয়াস ভার্সন থেকে বাডস গুলো ম্যাগনেটিক। এর জন্য এখনি একে মেটালের তৈরি ভেবে বসে থাকবেন নাহ। বুলেট ওয়ালেস ২ এর মেটাল এর বাড দিলেও এখানে দেওয়া হয়েছে প্লাস্টিক। প্লাস্টিকের কারনে ওয়েট কিছুটা কম। বাইরের দিকে গ্লসি ফিনিশ দেওয়া হলেও ইয়ারটিপসের সাইডের অংশটি ম্যাট ফিনিশের। প্লাস্টিক দেওয়া হলেও হাতে আসলে মোটেও চিপ ফিল দেয়া নাহ। প্রিমিয়াম ফিলই পাওয়া যায়। বাটনগুলো খুব একটা ট্যাক্টাইল ফিডব্যাক দেয় নাহ ইন ফ্যাক্ট মাজখানের বাটন প্রেস করতে একটু প্রেসারও দেওয়া লাগে হয়ত এক্সিডেন্টাল চাপ পড়া থেকে বিরত রাখার জন্য এমন ডিজাইন। ক্যাবল কোয়ালিটি ও রিইনফোর্সমেন্ট গুলো ভাল মনে হয়েছে। ওভার অল ডিজাইন রোবাস্ট মনে হয়েছে বিল্ড কোয়ালিটি।

                         

কমফোর্টঃ একটা ইয়ারফোন এর গুরুত্বপূর্ন দিক কমফোর্টাবিলিটি। এটাতে গন্ডগল থাকলে বাকিসব বৃথা। ওয়ান প্লাস বুলেট যেডের ডিজাইন অ্যারগোনোমিক। কানে খুব ভালভাবেই ফিট হয়। ডিজাইনের কারণে এটি খুব ভাল সাউন্ড আইসোলেশন দিবে। এর জন্য অবশ্যই সঠিক ইয়ারটিপস এরও দরকার। সাথে আসা ইয়ার টিপস গুলো ভালো ফিট ও সাউন্ড আইসোলেশন দিবে। সাথে বলা রাখা ভাল এটি একদমই লাইট ওয়েট ডিজাইন হওয়ার কারনে দীর্ঘক্ষন কানে রাখলেও ফ্যাটিগ অনুভব করবেন না।

চিপসেটঃ এটিতে চিপসেট হিসেবে ইউস করা হয়েছে Qualcomm QCC3024 চিপসেট। এটি Bluetooth 5.0 সাপোর্টেড। যার কারণে ১০মিটার পর্যন্ত কোনো সাউন্ড ড্রপ নোটিশ করিনি। এর বেশি ডিস্টান্স হলে ড্রপ হওয়া শুরু হয়। কোডেক হিসেবে থাকছে SBC & ACC। aptX hd খুঁজছেন? হ্যাঁ এতে দেওয়া হয়নি।যদিও এটি খুব বেশি ইম্প্যার্টেন্ট কিছু না অনেকের জন্য। সাথে ওয়ান প্লাসের পক্ষ থেকে cVc নয়েস ক্যান্সেলেশন নিয়েও কিছু বলা হয়নি। যদিও এই চিপসেটে নয়েস ক্যান্সলেশনের সাপোর্ট রয়েছে কোয়ালকোমের পক্ষ থেকে।

ওয়ান প্লাসের হাইলাইটেড ফিচার সমূহঃ

ব্যাটারিঃ ১০ মিনিটে ১০ ঘন্টা মিউজিক টাইম। আমার ইউজেসের ক্ষেত্রে ১০ মিনিট চার্জে ১০ ঘন্টার চেয়েও বেশি ব্যাকাপ পেয়েছি কারন এর রিকোয়েরমেন্ট হচ্ছে 5V/600mAh এর এডাপ্টার। আমাদের সকলের কাছে মোটামুটি এর চেয়ে পাওয়ারফুল এডাপ্টার রয়েছে। ফুল চার্জ হতে ৫০ মিনিটের মত লাগে। যাতে প্রায় ব্যাকাপ পাওয়া যাবে ২০ ঘন্টারও কিন্তু এখানেও আরো বেশি ব্যাকাপ পেয়েছি। কারন হচ্ছে আমি মোটামুটি ৬০-৭০% ভলিউমে ইউস করেছি।

IP55 রেটেড হওয়ার এটি ওয়াটার রেসিস্টেন্স দিবে।সাথে সোয়েটপ্রুফনেসও।

কুইক সুইচিংঃ এই ফিচারটা আমার কাছে খুবই জোস মনে হয়েছে। এর জন্য দেয়া বাটনটি দুইবার প্রেস করলেই  পেয়ারড ডিভাইস গুলোর মধ্যে কানেকশন সোয়াপ করে। এটি খুব দ্রুত’তার সাতেই হয় বলা যায় উইথিন সেকেন্ডস। যারা এক সাথে ফোন পিসি ব্যবহার করে থাকেন তাদের জন্য উপকারি মনে হয়েছে।

লো-লেটেন্সি মুডঃ এটি শুধু ওয়ানপ্লাসের ডিভাইসের জন্য কার্যকরী। আমাদের হাতে ওয়ান প্লাসের ডিভাইস না থাকায় এটি টেস্ট করা যায় নি। কিন্তু অন্যান্য ব্লুটুথ ইন-ইয়ান ফোন থেকে এতে লেটেন্সি কম মনে হয়েছে। তারপর কিছু ডিলে লক্ষ্য করা যায় যা মাননসই এই প্রাইস রেঞ্জে খুব ক্লোজলি নোটিশ করলে।

ম্যাগনেটিক কন্ট্রোলঃ এটিতে আদতে কোনো অন/অফ বাটন নেই। বাডস গুলো ম্যাগনেট এর মাধ্যমে জোড়া লেগে অফ খুলে ফেললে অন। খুলে ফেললে সাথে সাথেই লাস্ট পেয়ারড ডিভাইসের এর সাথে কানেক্ট হয়ে যায়। অফ হলে মিউজিক পস হয়ে যায় এন্ড কানেক্ট করার সাথে সাথে প্লে হওয়া শুরু হয় না। ম্যানুয়েলি বাটন প্রেস করে প্লে করা লাগে। মেবি এটা ওয়ানপ্লাস ডিভাইস গুলোর ক্ষেত্রে কাজ করে। বলা রাখা ভাল অন হলে একটি সাউন্ড এন্ড পেয়ারড ভিডাইস এর সাথে কানেক্ট হলে আরেকটি সাউন্ড দেয়। এন্ড কানেকশন ছুটে গেলে ভিন্ন একটা সাউন্ড দেয়। কানেকশন ট্র্যাক করার জন্য খুব কাজের মনে হয়েছে এই ফিচারগুলো।

ওয়ান প্লাসের ডিডাইসের জন্য কুইক কানেক্ট অন্যান্য ব্রান্ডের ফোনের জন্য ট্র্যাডশনাল ওয়েতে অর্থাৎ সেটিংস এ গিয়ে কানেক্ট করতে হয়।

৩টি বাটন দিয়ে কল রিসিভ,রিজেক্ট, প্লেস, পস নেক্সট/প্রিভিয়াস ট্রেক ইত্যাদি অনায়সে করা যায়। সাথে হোল্ড করে রাখলে ভয়েস এসিস্ট্যান্ট। প্লে/পস করার ক্ষেত্রে আমি বেশ ডিলে নোটিশ করেছি। একটি ফিচার ভাল লেগেছে সেটি হল হায়েস্ট ভলিউমে যাওয়ার পর একটা ওয়ারিং সাউন্ড দেয় যেটি অনেক উপকারি।

মাইক কোয়ালিটি ভালই। যদিও এক্টিভ নয়েস ক্যান্সেলেশন নাই। তবুও অত বেশি নয়েস ও ডিসটর্শন লক্ষ্য করা যায়নি।

সাউন্ডঃ এবার আসা মোস্ট ইম্প্যার্টেন্ট পার্ট সাউন্ড সেকশানে। ওয়ান প্লাস প্রাইস কাট করার জন্য সবচেয়ে বড় বলি টা দেওয়া হয়েছে এই সেকশানে। কারণ প্রিভিয়াস ওয়ানপ্লাস বুলেট ওয়্যারলেস ২’তে দেওয়া হয়েছিল ৩টি ড্রাইভার। কিন্তু লেটেস্ট যেড’ ভার্সনে দেওয়া হয়েছে মাত্র একটি ডাইনামিক ড্রাইভার। এটি ৯.২ মিলিমিটারের। এটি অনেকটা ব্যালেন্সড সাউন্ড প্রোভাইড করে। যারা ব্যাস হেড অর্থাৎ ব্যাস ছাড়া ভাত হজম হয় নাহ তাদেরকে এটি নিরাশ করবে। ওভারঅল একটা পাঞ্চি ব্যাস দিলেও কিছু গানের ক্ষেত্রের ব্যাস হাওয়া মিলিয়ে গেছে মনে হইল। ব্যাস হেভি গান গুলোতে ব্যাস ইজিলি নোটিশ করা যায়। কিন্তু কিছু ইয়ারফোন যেমন অতিরিক্ত বুমবুম ব্যাস পাওয়া যায় ঐটা মিসিং। ভোকাল ফোকাসড একটি ইয়ারফোন এটি। ভোকাল খুবই ক্রিস্প এবং ক্রিস্টাল ক্লিয়ার। লেফট রাইট সেপারেশন ভালই। সাউন্ড সেপারেশন ভালই। ইন্সট্রুমেন্ট গুলোকে ইজিলি আলাদা করা যায়। কিন্তু মিডস/লো’তে কিছুটা ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। কিন্তু ফুল ভলিউমেও কোনো ডিস্টর্শন লক্ষ্য করা যায়নি। ট্রেবল ও ছিল ঠিকঠাক। ওভারওল এটি ওয়ার্ম সাউন্ড প্রোভাইড করবে। যারা টুকটাক মিউজিক সাথে অন্য কাজ ও করতে হয় তাদের জন্য এটি ভালই বলা যায়। এই প্রাইস রেঞ্জে(realme & xiaomi) বাদবাকি নেক ব্যান্ড গুলোর তুলনায় এটি আসলে ভালই বলা চলে।

তো আসলে এটি কাদের জন্য?

আসলে যারা মিউজিক এর ব্যাপারে খুব খুঁতখুঁতে তাদের জন্য আসলে এটি নাহ। তাদের জন্য এই জন্য ওয়্যারড ইয়ার ফোন গুলো ফার ফার বেটার রেসাল্ট দিবে। কিন্তু যাদের ডিসেন্ট একটা সাউন্ড সাথে লং ব্যাটারি লাইফ সহ এইসব ফিচারস দরকার তাদের জন্য আসলে এটি বেস্ট বাই বলা যায়।

ওয়ানপ্লাসের এই প্রোডাক্টটি আসলে সাউন্ড সেকশন ছাড়া সব দিকেই টপ-নচ একটি প্রোডাক্ট। এক গাদা ফিচারস এতে দেওয়া হয়েছে। সাউন্ড এর দিকে আসলে প্রিভিয়াস জেনেরাশন এর সাথে তুলনা করলে ডাউনগ্রেড হলেও ওভারঅল আউটপুট প্রাইস অনুপাতে ভালই বলা যায়।

Share This Article

Search