SHAREit যা একটি ট্রান্সফার টুল চাইনিজ ডেভেলপাররা তৈরি করেছিল Q1 2013 তে । অ্যাপটি প্রথমেই মার্কেটে এসে সাড়া ফেলে দেয় ব্লেজিং স্পিড এবং সিম্পল মিলিমালিস্টিক ইউজার ইন্টারফেস এর জন্য। শুরুতে শুধুমাত্র এন্ড্রয়েড এর জন্য বের হলেও পড়ে iOS, Mac, Windows প্ল্যাটফর্ম এ বিস্তৃতি লাভ করে। মার্কেট প্লেসে SHAREit এর মত অ্যাপ আগে থেকে থাকলেও কেন জানি SHAREit একটা রেভুলেশন এনে ফেলে। যার কারণে অনেক গুলো মোবাইলে বিল্ট-ইন অ্যাপ হিসেবেই SHAREit আসা শুরু করে। এমনকি মজার ব্যাপার হল ফাইল ট্রান্সফার করার জন্য মানুষ বলতো সেন্ড বা রিসিভ কর/করেন কিন্তু কোন অ্যাপ ম্যানশন করা লাগত নাহ সবাই আপনাআপনি SHAREit ওপেন করে নিত।
আস্তে আস্তে তারা বড় ছেলের মত এক্সট্রা দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ফাইল ট্রান্সফার ছাড়া অনেক ফিচার আনা শুরু করে দেয়। তাদের নামের সাথে মিল রেখেই দেয় CLONEit, LOCKit, CLEANit, LISTENit, Space Analyser, Junk Remover। যার মধ্যে কিছু ফিচার দরকারি যেমনঃ স্পেস এনালাইজার ,আইফোনের জন্য বিল্ট –ইন অডিও/ভিডিও প্লেয়ার ইত্যাদি। কিন্তু এইভাবে ফাইল ট্রান্সফার এর উদ্দেশ্য থেকে সরে গিয়ে তাঁরা প্রতিনিয়ত একগাদা ব্লোটওয়্যারসহ অ্যাপ রিলিজ দিতে লাগল। যার কারনে অ্যাপটি দিন দিন ল্যাগি আনরেস্পন্সিভ হতে শুরু করে। সাথে ট্রান্সফার স্পিড এর করুন দশা মানে অস্বাভাবিক উঠানামা তো আছেই।
যেহেতু এটি একটা ফ্রিওয়্যার যার কারনে কিছু এড দেখাবেই। এবং সবাই এটাকে খুব নরমালিই নিয়েছিল। কিন্তু এক সময় ফুলস্ক্রিন/ পপ আপ এড আসা শুরু করে যা আসলেই ডিসগাস্টিং। অশ্লীল থাম্বনেইল এর সাথে অশ্লীল টাইটেল দিয়ে ভরা এড এর নামে স্প্যামিং করা শুরু করে দেয়। ক্লিকবেইট টাইটেল থাকায় অনেকে প্রলুদ্ধ হয়ে ক্লিক করে ম্যালওয়্যার এটার্ক এর সম্মুখিন হতে হয়। শেষ পর্যায়ে এসে দেখা গেল নটিফিকেশন প্যানেলেও এড দেখাচ্ছে। এক কথায়, এড দেখানো যায় যতসব ওয়ে আছে তাঁরা সব গুলোতে দেখিয়ে যাচ্ছে।
বিরক্তিকর এইসব এড এবং ব্লোটওয়্যারযুক্ত SHAREit থেকে মুক্তি পেতে সবাই বিকল্প অ্যাপ খুজছে । তাই আজকে আপনাদের সামনে SHAREit এর ৩টি বেস্ট অল্টারনেটিভ তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। বেস্ট অল্টারনেটিভ খুঁজার ক্ষেত্রে যে বিষয় গুলো গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে তা হলে।
১। এডবিহিন
২। ক্রস- প্লাটফর্ম সার্পোটেড কিনা
৩। স্মুথ- ল্যাগ বিহিন ইউজার ইন্টারফেস
৪। নো ডাটা ইউজেস ইত্যাদি বিষয়গুলো
তো দেখা যাক বিকল্প গুলো –
Xender
এটিকে লিস্টে একদম টপে রাখার কারন হচ্ছে উপরে লিখা সব প্যারামিটার গুলোই এই অ্যাপটিতে বিদ্যমান। এটি কিছু দিন আগেও রিয়ারলি/ ওকেসনালি এড দেখত কিন্তু রিসেন্টলি একদম এডবিহিন এড ভার্সন রিলিজ করেছে। তাছাড়া এটি ফাইল ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে আপনার ম্যাক্সিমাম ব্যান্ডওইথ ব্যাবহার করবে যার কারনে স্পিড নিয়ে টেনশন এর কিছু থাকছে নাহ।তাছাড়া স্পিড যথেষ্ঠ স্টেবল। এটি সব প্লাট ফর্মেই সার্পোটেড। পিসি থেকে ফাইল ট্রান্সফার করার জন্য কোনো এপ্লিকেশন ইন্সটল এর প্রয়োজন নেই।
পিসি থেকে মোবাইলে এবং মোবাইল থেকে পিসি ট্রান্সফারেরে জন্য Xender খুবই কনভিনিয়েন্ট। তাদের ওয়েব এফটিপি টিপিক্যাল এফটিপির মত নাহ। এইখানে প্রত্যেকটা ফাইল প্রিভিও দেখা যায়। এবং ইমেজ,ভিডিও,মিউজিক, ডকুমেন্ট এর জন্য আলাদা ট্যাব রয়েছে। একসাথে অনেক গুলো ছবি/ফাইল যখন মোবাইল থেকে পিসিতে নিবেন তখন জিপ আকারে ডাউন লোড হবে। পিসি থেকে মোবাইল নেওয়ার জন্য ড্রাগ এন্ড ড্রপ করে পছন্দ মত ফোল্ডারে রাখার অপশান তো আছেই। চাইল এই ওয়েব থেকেই আপনার ফোনের অ প্রয়োজনীয় ফাইল ডিলেট করে দিতে পারবেন।
দুটো ডিভাইসকেই একই নেটওয়ার্কের অধীনে থাকা লাগবে। যেকোনো ব্রাউজার একটা ব্রাউজার ই এনাফ। http://web.xender.com/ এই সাইটে গিয়ে লগিন QR কোড স্ক্যান করলেই হবে। ওহ , আরেকটি বিষয় এটিতে ল্যাগুয়েজ হিসেবে বাংলা ইউস করার অপশান রয়েছে। তাছাড়া হিস্টোরি , ফাইল ম্যানেজার সহ অনেক ফিচার রয়েছে যা আপনারা অ্যাপ টি এক্সপ্লোর করলেই জানতে পারবেন।
Play Store: Xender এন্ড্রয়েডের জন্য ডাউনলোড করুন এইখান থেকে।
App Store: Xender আইফোনের জন্য ডাউনলোড করুন এইখান থেকে।
Send Anywhere
এটি মার্কেট প্লেসে শেয়ার ইট এরও প্রায় ১ বছর আগে থেকে এভাইলেবল। সাথে প্লে স্টোরে এটির রেটিং 4.7। এইটির ফ্লস/ ড্রব্যাক হল এটিতে এড শো করে প্রায় প্রতিটি ট্যাবেই।
এটি অফলাইন – অনলাইন দুইভাবেই কাজ করে। অ্যাপ যথেষ্ঠ স্মুথ এবং ট্রানজিশন কোন ল্যাগ ছিল নেই।
অনলাইনে ডাটা ট্রান্সফাররের ক্ষেত্রে ফাইল সিলেক্ট করার পর সেন্ড দিলে ৬ ডিজিট এর পিন রিসিভারের রিসিভ অপশান গিয়ে পিন দিয়ে দিলে ট্রান্সফার শুরু হয়ে যাবে। এই পদ্ধতি ঝামেলার মনে হলে QR কোড স্ক্যান করে কাম খালাস করে দিতে পারবেন। তাছাড়া একটা সাথে অনেক জনকে দিতে চাইলে লিংক শেয়ার ক্রিয়েট করে শেয়ার করা যাবে। তবে সেই ক্ষেত্রে ফ্রি অ্যাকাউন্ট সাইন আপ করে ফ্রিতে ১০ জিবি ক্লাউড নেয়া লাগবে। তবে ফ্রি ভার্সনে এ তৈরিকৃত লিংক স্থায়িত্ব কাল হচ্ছে ৪৮ঘন্টা বা ২দিন। অফলাইনে ডাটা ট্রান্সফারের জন্য অ্যাপ এর টপ কর্নারে WiFi Direct সুইচ অন করে নিতে হবে। বাদ বাকি স্টেপ গুলো অনলাইনের মতই তবে অফলাইনে ৬ ডিজিটের পিনের পরিবর্তে ৪ ডিজিটের পিন ক্রিয়েট হবে। যার স্থায়িত্ব কাল ১০ মিনিট।
পিসি টু মোবাইল ট্রান্সফার এর ক্ষেত্রে ওয়েব ব্রাউজারে এইলিংক এ গেলেই হবে ।
তাছাড়া তাদের Windows, Mac, Linux প্লাটফর্মের জন্য স্ট্যান্ডলোন আপ্লিকেশন এবং ক্রোম অ্যাপ/এক্সটেনশন রয়েছে। এইলিংক এ সব প্লাটফর্মের ডাউনলোড লিঙ্ক পেয়ে যাবেন।
Send Anywhere PLUS
অ্যাপটির একটি প্রিমিয়াম প্যাকেজ ও রয়েছে যাতে ১ টেরাবাইট ক্লাউড স্টোরেজ সাথে এডফ্রি ও অন্যান্য ফিচার।
Mi Drop
এটি শাওমি ডেভেলাপকৃত অ্যাপ যা ইতিমধ্যে ৫০ মিলিয়নের উপর ডাউনলোড হয়েছে অথচ রিলিজ দেয়া হয়েছিল Q4 2017 এ। এটি যখন রিলিজ দেয়া হয়েছিল তখন স্লোগান ছিল প্রথম এডবিহিন ট্রান্সফার টুল। এ
টিও অন্যান্য ট্রান্সফার টুলের মতই WiFi-Direct ব্যবহার করে।
অ্যাপটি অসম্ভব রকমের স্মুথ, ফাস্ট এবং ইউজার ফ্রেন্ডলি। খুবই সিম্পল ইউআই এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ। এতই সিম্পল যে সেন্ড রিসিভ করার ছাড়াও অতীতে রিসিভ করা ফাইল গুলো দেখার জন্য একটি অপশান ছাড়া অন্য কিছুই নাই। একদম ক্লিন ইউজার ইন্টারফেজ যাকে বলে আরকি।
এন্ড্রয়েডের জন্য ডাউনলোড করুন Mi Drop এইখান থেকে।
ওয়েব ব্রাউজার ইউস করে এটিতেও পিসিতে ফাইল ট্রান্সফার করা যাবে। সেই ক্ষেত্রে টপ কর্নার থেকে Connect to PC তে গিয়ে এফটিপির লিংক নিয়ে ব্রাউজারে বসিয়ে দিলেই হবে। এইখানেও দুইটো ডিভাইসকেই একই নেটওয়ার্কের অধীনে থাকা লাগবে।
এখনও পর্যন্ত এটি প্লে স্টোর মানে এন্ড্রয়েডের জন্য এভাইলেবল। iOS এর জন্য হয়ত ভবিষ্যতে রিলিজ দেয়া হতে পারে।
এই হচ্ছে আমাদের দৃষ্টিকোন থেকে বেস্ট অল্টারনেটিভ। এছাড়া আপনারা যারা SHAREit এর অন্য অল্টারনেটিভ ইউস করছেন এবং কেন তা আপনার কাছে বেস্ট অল্টারনেট তা কমেন্টে জানাতে পারেন।